ডোনাল্ড ট্রাম্প খুব দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রকে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় করস্বর্গ (ট্যাক্স হেভেন) বা কর ফাঁকির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করছেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের নির্দেশে কোম্পানির প্রকৃত মালিকদের পরিচয় শেয়ার করার যে স্বচ্ছতার নিয়ম ছিল, তা থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। এ ছাড়া ট্রাম্প প্রশাসন জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক কর সহযোগিতা কাঠামো তৈরির আলোচনায়ও অংশ নেয়নি।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র বিদেশি দুর্নীতির বিরুদ্ধে করা আইন প্রয়োগ করতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির ওপর কড়াকড়ি তুলে নেওয়া হয়েছে। এটি একটি বড় পরিকল্পনার অংশ, যার লক্ষ্য গত ২৫০ বছরের প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক রীতিনীতিকে ধ্বংস করা।

ট্রাম্প প্রশাসন আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করেছে, স্বার্থের দ্বন্দ্ব উপেক্ষা করেছে, রাষ্ট্রীয় ভারসাম্য ও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা ভেঙে ফেলেছে এবং কংগ্রেসের বরাদ্দ করা অর্থ আটকে রেখেছে। ট্রাম্প একটি কর ভালোবাসেন, সেটি হলো আমদানি শুল্ক। তিনি মনে করেন যে এই কর বিদেশিরা দিচ্ছে যার মাধ্যমে ধনীদের কর কমানো সম্ভব। তাঁর বিশ্বাস, এই শুল্ক বাণিজ্য–ঘাটতি কমাবে এবং যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন ফিরিয়ে আনবে। কিন্তু বাস্তবে শুল্কের খরচ বহন করেন আমদানিকারকেরা, যার ফলে দেশে মূল্যবৃদ্ধি হয়। সবচেয়ে খারাপ সময়ে, যখন যুক্তরাষ্ট্র মূল্যস্ফীতির ধাক্কা থেকে সবে উঠতে শুরু করেছে, তখন এই শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

সাধারণ অর্থনীতির নিয়ম অনুসারে, বাণিজ্য–ঘাটতি মূলত অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় ও বিনিয়োগের ব্যবধানের ফলে হয়। ধনীদের জন্য কর কমালে এই ব্যবধান আরও বাড়ে। কারণ, তখন জাতীয় সঞ্চয় কমে যায়। তাই এমন নীতি আসলে বাণিজ্য–ঘাটতি আরও বাড়িয়ে দেয়। রোনাল্ড রিগ্যানের সময় থেকেই রক্ষণশীলেরা দাবি করে আসছেন যে কর কমালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ে, ফলে রাজস্ব কমে না। কিন্তু বাস্তবে রিগ্যানের সময় তা হয়নি, ট্রাম্পের সময়ও হয়নি।

গবেষণা দেখা যায়, ধনীদের কর কমালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বা কর্মসংস্থানে কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়ে না। বরং এতে আয়বৈষম্য তীব্রতর হয় এবং তা স্থায়ী হয়।  ট্রাম্প শুধু নীতিগতভাবে নয়, বাস্তবিকভাবেও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য–ঘাটতি বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্র এখন সেবা খাতনির্ভর অর্থনীতি। তাদের বড় রপ্তানি পণ্য হলো পর্যটন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা। কিন্তু ট্রাম্প এগুলোও ধ্বংস করে দিয়েছেন। আজকের দিনে কে চাইবে যুক্তরাষ্ট্রে এসে জানার আগেই গ্রেপ্তার হয়ে সপ্তাহব্যাপী আটক থাকতে?

শিক্ষা ও গবেষণা খাতে বাজেট কাটা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে; ফলে এসব খাতেও আস্থা নেমে গেছে। এই ভুল নীতির ফলাফল দেখা যাচ্ছে: যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার চীন এখন পাল্টা ব্যবস্থা নিচ্ছে। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে মন্দার ভয় (স্ট্যাগফ্লেশন) মার্কেট কাঁপিয়ে দিচ্ছে। অথচ এটা কেবল শুরু।

আজকের বিশ্বে, যেখানে ধনী ব্যক্তি ও কোম্পানি সহজেই দেশান্তর করতে পারে, সেখানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া কর সংগ্রহ কার্যকর হয় না। তাই কোম্পানির মালিকানার প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ বন্ধ করে, বেনামি ক্রিপ্টো লেনদেনকে উৎসাহ দিয়ে, জাতিসংঘের কর চুক্তির প্রক্রিয়া পরিত্যাগ করে এবং বৈশ্বিক ন্যূনতম কর উদ্যোগ থেকে সরে এসে যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টত একটি নীতি গ্রহণ করেছে। এটি কর ফাঁকি ও দুর্নীতিকে সহজতর করে।

বিদেশি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ বন্ধ রাখার অর্থ ঘুষ-দুর্নীতিও যুক্তরাষ্ট্র এখন সহ্য করছে। এই পুরো কর্মকাণ্ড যেন ট্রাম্প, মাস্ক ও তাঁদের ধনী বন্ধুদের নেতৃত্বে এক নতুন ধরনের পুঁজিবাদ গড়ে তোলার প্রয়াস; যেখানে কোনো আইন থাকবে না। এটি শুধু কর ফাঁকি নয়, বরং আইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ।

সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত হলো ক্রিপ্টোকারেন্সি। নিয়ন্ত্রিণহীন ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ, অনলাইন ক্যাসিনো ও জুয়া প্ল্যাটফর্মগুলো এখন অবৈধ অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। ট্রাম্প এই খাত থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেন। এমনকি তিনি ‘কৌশলগত ক্রিপ্টো রিজার্ভ’ গঠনের নির্দেশনাও দিয়েছেন এবং হোয়াইট হাউসে প্রথম ক্রিপ্টো সম্মেলন করেছেন। মার্কিন সিনেট সেই বিলও বাতিল করেছে, যেখানে ক্রিপ্টো প্ল্যাটফর্মগুলোকে ব্যবহারকারীদের তথ্য জানাতে বাধ্য করার কথা ছিল।

ট্রাম্প নিজেই একটি বিতর্কিত মেম কয়েন (মজার টোকেন) ইস্যু করেছেন এবং শিগগিরই ‘মনোপলি’ নামের একটি ক্রিপ্টো গেম প্রকাশেরও পরিকল্পনা করছেন। বর্তমানে তিনি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (এসইসি) একজন ক্রিপ্টোপন্থীকে বসিয়েছেন। তাঁর নাম পল অ্যাটকিনস। তিনি একটি নীতিনির্ধারণী দলেও আছেন, যারা ক্রিপ্টো এবং ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক ব্যবস্থাকে সমর্থন করে।

ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল লক্ষ্য হলো গোপনীয়তা। ডলার, ইউরো, ইয়েন দিয়ে যেখানে আমরা স্বাভাবিকভাবে সবকিছু করতে পারি, সেখানে ক্রিপ্টোর চাহিদা শুধু অর্থ লুকাতে চাওয়া মানুষেরাই তৈরি করে। মূলত যাঁদের উদ্দেশ্য মাদক ব্যবসা, কর ফাঁকি বা অর্থ পাচার, তাঁরাই এই ডিজিটাল মুদ্রার প্রসার চান।

এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের পক্ষে চুপ করে বসে থাকা চলবে না। ইতিমধ্যে বৈশ্বিক ন্যূনতম ১৫ শতাংশ করনীতি চালু হয়েছে, যা ৫০টির বেশি দেশ বাস্তবায়ন করছে। জি২০-এর ভেতর ব্রাজিলের নেতৃত্বে সুপার ধনীদের ন্যায্য কর প্রদানের বিষয়ে ঐকমত্য গড়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র যদি নিজেকে এসব চুক্তি থেকে গুটিয়ে নেয়, তবু বিশ্ব এগিয়ে যেতে পারে। কারণ, অতীতে দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্র সব সময় চুক্তি দুর্বল করতে চাইত, অথচ শেষে সই করত না। যেমনটা বহুজাতিক কোম্পানির কর নিয়ে ওইসিডি আলোচনায় হয়েছিল।

আজকের এই পরিস্থিতি আমাদের শেখায় যে চরম বৈষম্যরোধের একমাত্র উপায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং সমতাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। যুক্তরাষ্ট্রের এই স্বেচ্ছাবিচ্ছিন্নতা আমাদের সামনে একটি সুযোগ এনে দিয়েছে। এটি এমন একটি নতুন, সমতাভিত্তিক বৈশ্বিক করব্যবস্থা গড়ে তোলার সুযোগ করে দিয়েছে, যেখানে থাকবে ‘জি-টোয়েন্টি মাইনাস ওয়ান’, অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বাকি বিশ্ব।

জোসেফ ই.

স্টিগলিৎজ বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ সবচ য়

এছাড়াও পড়ুন:

আসছে ঘূর্ণিঝড় মৌসুম, কতটা প্রস্তুত আমরা?

আমাদের চারপাশে সড়ক ও নৌ দুর্ঘটনা, অগ্নিকাণ্ডসহ নানা দুর্যোগ প্রতিনিয়ত ঘটছে। তাই নাগরিক জীবনে এগুলো প্রায় স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। তবে যতক্ষণ এ ধরনের বিপর্যয় আমাদের ব্যক্তিজীবনে নেমে না আসে, ততক্ষণ তা নিয়ে আমরা ভাবি না। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড় এক ভয়াবহ বাস্তবতা। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য এটি এক আতঙ্কের নাম। 

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার (ন্যাপ) তথ্যমতে, দেশে ১৫টি দুর্যোগের হার সময়ের সঙ্গে বাড়বে। এর মধ্যে জলবায়ু ঝুঁকি ছাড়াও রয়েছে অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, খরা, নদনদীতে বন্যা, নদীভাঙন, আকস্মিক বন্যা ও শহরাঞ্চলের বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, তীব্র তাপপ্রবাহ, তীব্র শীত, বজ্রপাত, ভূমিধস, সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধি ও অম্লতা। সময়ের পরিক্রমায় আবারও আসছে ঘূর্ণিঝড় মৌসুম। কিন্তু আমরা এ নিয়ে কতটা সচেতন? 

বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে বাতাসের প্রচণ্ড ঘূর্ণায়মান গতি ও বায়ুমণ্ডলীয় উত্তাল অবস্থার ফলে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়। সাধারণত মার্চ থেকে জুলাই এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় হয়ে থাকে। এর মধ্যে মে এবং নভেম্বরে সবচেয়ে বেশি ঝড় আঘাত হানে। একটি গবেষণায় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ১৯৪৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৭৫ বছরে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়, প্রবল ঘূর্ণিঝড় ও নিম্নচাপ বিশ্লেষণ করেছে। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, এই সময়ে বঙ্গোপসাগরে ১৫১টি প্রবল ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে নভেম্বরে সর্বোচ্চ ৫১টি, মে মাসে ৩০টি এবং অক্টোবরে ২৯টি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে।

এ ছাড়া ১৯৭০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন উৎস থেকে সংগৃহীত ঘূর্ণিঝড়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ৫৫ বছরে বাংলাদেশে মোট ৪২টি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে। সময় অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়ের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়: ১৯৭০ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত (৩০ বছর) → ২১টি ঘূর্ণিঝড়, গড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ১৩৮ কিমি/ঘণ্টা এবং ২০০০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত (২৫ বছর) → ২২টি ঘূর্ণিঝড়, যেখানে গড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ১৪১ কিমি/ঘণ্টা। উপরোক্ত পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, সময় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ও তীব্রতা দুটোই বেড়েছে। বিশেষ করে ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ চারটি ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়েছে, যা অন্য যে কোনো বছরের তুলনায় বেশি। এ ছাড়া ১৯৭১, ২০০৭ এবং ২০২৪ সালে তিনটি করে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে। বাংলাদেশ একাধিক উচ্চ তীব্রতার ঘূর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ১৯৭০, ১৯৯১, ২০০৭, ২০১৯ এবং ২০২৩ সালের ঘূর্ণিঝড়, যেগুলো ছিল অত্যন্ত বিধ্বংসী। বিশেষ করে ২০১৭ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের স্পষ্ট প্রভাব নির্দেশ করে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে বিশ্বের অন্যান্য সাগরের পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরের তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে ঘূর্ণিঝড় আগের তুলনায় আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে এবং ভূমিতে আঘাত হানার পর ক্ষতির মাত্রাও বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে সমুদ্রপৃষ্ঠ এবং ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা একসঙ্গে বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসছে, যা ভবিষ্যতে আরও বিধ্বংসী ঝড়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষত বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য এই ক্রমবর্ধমান শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, দুর্যোগ প্রশমন এবং অভিযোজনের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। 

প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড় আমাদের অর্থনীতি, পরিবেশ ও জনজীবনকে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে ফেলে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই দুর্যোগের মাত্রা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। আমরা যদি এখন থেকেই যথাযথ ব্যবস্থা না নিই, তাহলে ভবিষ্যতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। এখন আমাদের সামনে দুটি পথ খোলা– ১. আমরা কি প্রতিবার দুর্যোগের পরে ক্ষতি সামলাতে ব্যস্ত থাকব? ২. নাকি আগেভাগেই প্রস্তুতি নিয়ে জানমাল রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নেব?

দেশের কৃষির ওপর ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব এতই ব্যাপক, এর ফলে খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি উৎপাদন, কৃষকের জীবনযাত্রা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দারিদ্র্য বিমোচনসহ সামাজিক নিরাপত্তা অর্জনে জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপ সারাবিশ্বে প্রশংসিত। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দায় না যতটা আমাদের, তার চেয়ে বেশি বৈশ্বিক। আমাদের মতো স্বল্পোন্নত দেশকে বাঁচাতে উন্নত দেশগুলোকেই এগিয়ে আসতে হবে। তেমনি ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই জানমাল রক্ষায় সরকার থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ জরুরি। এতে দেশের মানুষ যেমন নিরাপদ থাকবে, তেমনি অর্থনীতিও রক্ষা পাবে। 

লেখক: প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (কৃষি পরিসংখ্যানবিদ, আবহাওয়ার তারতম্য ও জলবায়ু পরিবর্তন গবেষক) এবং সদস্য, এগ্রোমেট ল্যাব, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) 
niaz.sust@gmail.com

সম্পর্কিত নিবন্ধ