জব্বারের বলীখেলায় আবার চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার ‘বাঘা’ শরীফ
Published: 25th, April 2025 GMT
আবদুল জব্বার স্মৃতি বলীখেলায় টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কুমিল্লার মো. শরীফ। আজ শুক্রবার ঐতিহাসিক লালদীঘি মাঠে অনুষ্ঠিত বলীখেলার ফাইনাল খেলায় তিনি একই এলাকার রাশেদকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। ৩১ মিনিটের এই দ্বৈরথে কেউ কাউকে ছাড় দেননি। তবে কৌশলগত ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় শরীফকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। তিনি ‘বাঘা’ শরীফ নামে পরিচিত।
আজ বিকেল ৪টা থেকে রিংয়ে বলীখেলা শুরু হয়। ৯০ জন বিভিন্ন বয়সী বলী এতে অংশ নেন। বিকেলে বেলুন উড়িয়ে বলীখেলার উদ্বোধন করেন নগর পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ। পুরস্কার বিতরণী পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন।
বলীখেলার শুরু থেকে লালদীঘির মাঠ এবং আশপাশ ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। ঢোলের বাদন ছাপিয়ে গগন কাঁপানো হর্ষধ্বনি তোলেন উপস্থিত নানা বয়সী মানুষ। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের মধ্যে তাঁরা বলীখেলা উপভোগ করতে থাকেন। বলীখেলায় ১৮ বছর বয়সী ফয়সাল যেমন ছিলেন, তেমনি সত্তোরোর্ধ্ব মফিজ উদ্দিনও ছিলেন। ছিলেন ব্যবসায়ী, ছাত্র, চাকরিজীবীরাও।
প্রথম রাউন্ড শেষে কোয়ার্টার ফাইনালে আটজন মুখোমুখি হন। লটারির মাধ্যমে তাঁদের নির্বাচন করা হয়। এই আটজনের মধ্য থেকে জয়ী চারজন সেমিফাইনালে মুখোমুখি হন। এই চারজনই ছিলেন কুমিল্লার। এর মধ্যে ২০২৩ সালের চ্যাম্পিয়ন শাহজালাল বলীকে হারিয়ে দেন গতবারের রানারআপ রাশেদ। দ্বিতীয় সেমিতে শরীফ জিতেছেন কামালের বিরুদ্ধে। তৃতীয় স্থান নির্ধারণীতে জিতেছেন কামাল।
শেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ ফাইনাল। এবারও ২০২৪ সালের মতো মুখোমুখি হন শরীফ ও রাশেদ। গতবারের ফাইনালের পুনরাবৃত্তিই হয়েছে। তবে গতবার যেখানে ১১ মিনিটে ফলাফল আসে, এবার তা আসতে সময় লেগেছে। একপর্যায়ে দুজনের যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হওয়ার প্রস্তাবও নাকচ করে দেন বলীখেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শওকত আনোয়ার। তিনি রিংয়ে উঠে মাইকে ঘোষণা দেন, একজনকে জিততেই হবে।
৩১ মিনিটে এসে শরীফ রাশেদকে ঝাপটে ধরে ফেলে দিতে উদ্যত হন। তখন রাশেদ নিজেকে রক্ষা করতে রিংয়ের রশি ধরে রাখেন। রেফারিরা এই কৌশলকে অবৈধ ঘোষণা করে শরীফকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। শরীফ পেশায় মাংস বিক্রেতা। রাশেদের মুরগির খামার রয়েছে।
এভাবে ফল নির্ধারণ করাকে রাশেদ মেনে নিতে পারেননি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জয়ী শরীফ শিরোপা অক্ষুণ্ন রেখে উৎফুল্ল। তিনি বলেন, ‘এবার একটু বেশি ঘাম ঝরাতে হয়েছে। এই জয়ে আমি আনন্দিত।’ চ্যাম্পিয়ন শরীফ পুরস্কার হিসেবে পান ৩০ হাজার টাকা। রাশেদকে দেওয়া হয় ২০ হাজার টাকা।
প্রতিবছর বাংলা ১২ বৈশাখ এই বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়। বলীখেলাকে ঘিরে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা বসে লালদীঘির আশপাশের এলাকায়। এর আগে বৃহস্পতিবার থেকে লালদীঘির মাঠ ও আশপাশের এলাকায় শুরু হয়েছে বৈশাখী মেলা। ঝাড়ু ও তালপাতার হাতপাখা ছিল নারী-পুরুষের প্রথম পছন্দ। গৃহস্থালির বিভিন্ন সামগ্রী, শিশু-কিশোরদের খেলনা, গৃহসজ্জার জিনিস, তৈজসপত্র, ঝাড়ু, কুড়াল, আসবাব, গাছপালা, কী নেই এই মেলায়! আগামীকাল শনিবার শেষ হবে এই প্রাণের মেলা। ১৯০৯ সালে বকশিরহাটের ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুবসমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে এই বলীখেলার প্রচলন করেছিলেন। এবার ১১৬তম আসর। মাঝখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং করোনার কারণে তিন বছর বলীখেলা হয়নি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জব্বারের বলীখেলায় আবার চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার ‘বাঘা’ শরীফ
আবদুল জব্বার স্মৃতি বলীখেলায় টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কুমিল্লার মো. শরীফ। আজ শুক্রবার ঐতিহাসিক লালদীঘি মাঠে অনুষ্ঠিত বলীখেলার ফাইনাল খেলায় তিনি একই এলাকার রাশেদকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। ৩১ মিনিটের এই দ্বৈরথে কেউ কাউকে ছাড় দেননি। তবে কৌশলগত ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় শরীফকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। তিনি ‘বাঘা’ শরীফ নামে পরিচিত।
আজ বিকেল ৪টা থেকে রিংয়ে বলীখেলা শুরু হয়। ৯০ জন বিভিন্ন বয়সী বলী এতে অংশ নেন। বিকেলে বেলুন উড়িয়ে বলীখেলার উদ্বোধন করেন নগর পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ। পুরস্কার বিতরণী পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন।
বলীখেলার শুরু থেকে লালদীঘির মাঠ এবং আশপাশ ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। ঢোলের বাদন ছাপিয়ে গগন কাঁপানো হর্ষধ্বনি তোলেন উপস্থিত নানা বয়সী মানুষ। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের মধ্যে তাঁরা বলীখেলা উপভোগ করতে থাকেন। বলীখেলায় ১৮ বছর বয়সী ফয়সাল যেমন ছিলেন, তেমনি সত্তোরোর্ধ্ব মফিজ উদ্দিনও ছিলেন। ছিলেন ব্যবসায়ী, ছাত্র, চাকরিজীবীরাও।
প্রথম রাউন্ড শেষে কোয়ার্টার ফাইনালে আটজন মুখোমুখি হন। লটারির মাধ্যমে তাঁদের নির্বাচন করা হয়। এই আটজনের মধ্য থেকে জয়ী চারজন সেমিফাইনালে মুখোমুখি হন। এই চারজনই ছিলেন কুমিল্লার। এর মধ্যে ২০২৩ সালের চ্যাম্পিয়ন শাহজালাল বলীকে হারিয়ে দেন গতবারের রানারআপ রাশেদ। দ্বিতীয় সেমিতে শরীফ জিতেছেন কামালের বিরুদ্ধে। তৃতীয় স্থান নির্ধারণীতে জিতেছেন কামাল।
শেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ ফাইনাল। এবারও ২০২৪ সালের মতো মুখোমুখি হন শরীফ ও রাশেদ। গতবারের ফাইনালের পুনরাবৃত্তিই হয়েছে। তবে গতবার যেখানে ১১ মিনিটে ফলাফল আসে, এবার তা আসতে সময় লেগেছে। একপর্যায়ে দুজনের যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হওয়ার প্রস্তাবও নাকচ করে দেন বলীখেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শওকত আনোয়ার। তিনি রিংয়ে উঠে মাইকে ঘোষণা দেন, একজনকে জিততেই হবে।
৩১ মিনিটে এসে শরীফ রাশেদকে ঝাপটে ধরে ফেলে দিতে উদ্যত হন। তখন রাশেদ নিজেকে রক্ষা করতে রিংয়ের রশি ধরে রাখেন। রেফারিরা এই কৌশলকে অবৈধ ঘোষণা করে শরীফকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। শরীফ পেশায় মাংস বিক্রেতা। রাশেদের মুরগির খামার রয়েছে।
এভাবে ফল নির্ধারণ করাকে রাশেদ মেনে নিতে পারেননি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জয়ী শরীফ শিরোপা অক্ষুণ্ন রেখে উৎফুল্ল। তিনি বলেন, ‘এবার একটু বেশি ঘাম ঝরাতে হয়েছে। এই জয়ে আমি আনন্দিত।’ চ্যাম্পিয়ন শরীফ পুরস্কার হিসেবে পান ৩০ হাজার টাকা। রাশেদকে দেওয়া হয় ২০ হাজার টাকা।
প্রতিবছর বাংলা ১২ বৈশাখ এই বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়। বলীখেলাকে ঘিরে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা বসে লালদীঘির আশপাশের এলাকায়। এর আগে বৃহস্পতিবার থেকে লালদীঘির মাঠ ও আশপাশের এলাকায় শুরু হয়েছে বৈশাখী মেলা। ঝাড়ু ও তালপাতার হাতপাখা ছিল নারী-পুরুষের প্রথম পছন্দ। গৃহস্থালির বিভিন্ন সামগ্রী, শিশু-কিশোরদের খেলনা, গৃহসজ্জার জিনিস, তৈজসপত্র, ঝাড়ু, কুড়াল, আসবাব, গাছপালা, কী নেই এই মেলায়! আগামীকাল শনিবার শেষ হবে এই প্রাণের মেলা। ১৯০৯ সালে বকশিরহাটের ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুবসমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে এই বলীখেলার প্রচলন করেছিলেন। এবার ১১৬তম আসর। মাঝখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং করোনার কারণে তিন বছর বলীখেলা হয়নি।