বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে যেমন প্রত্যাশা করেছিলাম, তেমন হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে। আমরা মনে করি, এই সরকার আমরা যেমন করে প্রত্যাশা করেছিলাম, তেমন করে হয়নি। গণঅভ্যুত্থানের তার যে পূর্ণ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি সরকার দরকার ছিল, সেটি আমরা পাইনি। না পাওয়ার ফলে আমরা অনেক কিছু নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে এবং গণঅভ্যুত্থানে জনগণকে সুফল পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছি। 

শুক্রবার দুপুরে প্রেস ক্লাবের সামনে ‘শহরের গরিব শ্রমজীবী মানুষের জন্য বিনা মূল্যে রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিশুদ্ধ পানির’ দাবিতে মানববন্ধন এবং গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। যৌথভাবে এ আয়োজন করে ভাববৈঠকি, জুলাই কমিউনিটি অ্যালায়েন্স মিরপুর ও গণঅভ্যুত্থান সুরক্ষা মঞ্চ।

ফরহাদ মজহার বলেন, আমরা ড.

ইউনূসকে বলতে চাই, তার যে সীমাবদ্ধতা এবং বাংলাদেশের রাজনীতির যে সীমাবদ্ধতা এটা আমরা বুঝতে পারি এবং আমরা তার সঙ্গে ১০০ ভাগ রয়েছি। কিন্তু কিছু কিছু কাজ তাকে অবিলম্বে শুরু করতে হবে। এইখানে আপনার কোনো রকম তালবাহানের সুযোগ নেই। তার মধ্যে একটি প্রধান বিষয় হচ্ছে পানি। বাংলাদেশের জনগণকে সুপেয় পানি নিশ্চিত করা, এটা তার প্রথম একটা কর্তব্য। কারণ পানির সঙ্গে আমাদের জীবন রক্ষার সম্পর্ক জড়িত।

তিনি বলেন, সরকারকে প্রথম কাজ করতে হবে জনগণের সুপেয় পানি নিশ্চিত করার। ফলে আমরা এই সরকারকে সর্বোচ্চভাবে সহায়তা করব, যেন ঢাকা শহরে অবিলম্বে মানুষ বিনা পয়সায় সুপেয় পানি পায়। অত্যন্ত কম মূল্য পানি সরবরাহ করুন, যারা গরিব তারা যেন কিনতে পারে এবং একেবারেই যাদের সামর্থ্য নাই বা যারা শ্রমজীবী মানুষ তাদের বিনা পয়সায় পানি সরবরাহ করুন। আমরা মনে করি পানি পাওয়ার অধিকার গরিব মানুষের রয়েছে, পাবলিক প্লেসে বিনা পয়সায় পানি পাওয়ার অধিকার নাগরিকদের রয়েছে। ফলে আমরা অতিসত্বর এটা বাস্তবায়ন দেখতে চাই।

ফরহাদ মজহার আরও বলেন, নদীমাতৃক দেশের সম্পদ পানি। পানি আমাদের অর্থনৈতিক বিকাশের ভিত্তি। ফলে বাংলাদেশে আগামী উন্নয়নের যে নীতি, সে উন্নয়নের নীতিরও গোড়াতে (মূলে) থাকবে পানি। বাংলাদেশ মাত্রই এটা পানিভিত্তিক সংস্কৃতি, নদী ভিত্তিক সংস্কৃতি ফলে পানি আমাদের জীবন রক্ষা করে, প্রতিটি জীবের প্রাণ রক্ষা করে। এই নীতির ভিত্তিতে প্রধান উপদেষ্টাকে অবিলম্বে একটি পানি কমিশন গঠন করতে হবে এবং জনগণকে সুপেয় পানির নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। এখানে তালবাহানা করার কোনো সুযোগ নেই। 

তিনি আরও বলেন, এই যে পানির মতো সম্পদ আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন। এই মিস্টি পানির দাম বিভিন্ন দেশে জ্বালানির দামের চেয়েও বেশি, দুধের দামের চেয়েও বেশি। এই সম্পদ সুরক্ষার মধ্য দিয়ে আমরা তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে যেকোনো ধনী দেশের কাতারে পৌঁছাতে পারি। এটা আমাদের অর্থনৈতিক সম্পদ। ফলে সুপ্রিয় পানি যারা নষ্ট করছে, বিষ দিয়ে, টক্সিক রাসায়নিক দ্রব্য নদীতে, সাগরে ফেলে দিয়ে, তাদের ক্রিমিনাল (অপরাধী) হিসেবে গণ্য করতে হবে। তার জন্য অবিলম্বে আমাদের ফৌজদারি আইন দরকার এবং যেসব বিষ আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ, পানি নষ্টের জন্য দায়ী সেই সব বিষ বন্ধ করার নির্বাহী আদেশ আমরা চাই।

মানববন্ধন ও গণসমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, রিকশাচালক স্বপন মিয়া, উবিনীগের গবেষক সীমা দাস সীমু, লেখক ও প্রকৌশলী সাদিক মোহাম্মদ আলম, বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ, এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব প্রীতম দাশ, সচেতন নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক অ. মেজর আহমেদ ফেরদৌস, অ্যাক্টিভিস্ট জাহিদুল ইসলাম নাহিদ, ছাত্র সমন্বয়ক ফরহাদ হোসেন, গণ আকাঙ্ক্ষা মঞ্চের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ অন্তর প্রমুখ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফরহ দ মজহ র গণঅভ য ত থ ন ফরহ দ মজহ র আম দ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আন্দোলন মনে হয় বিক্রি হয়ে যাচ্ছে: তাহির জামান প্রিয়র মা

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা সামসি আরা জামান বলেছেন, আজকে আট মাস পরে আমার উপলব্ধি হচ্ছে আন্দোলন মনে হয় বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। সবাই মনে হয় সবার জায়গা থেকে বাণিজ্য করছে। মামলা বাণিজ্য হচ্ছে যতটুকু বুঝি। এরা কারা করছে আমরা সবাই বুঝি। খুনি হাসিনাকে যেমন আশেপাশে সবাই ফ্যাসিস্ট হতে সাহায্য করেছিল, আমি চাই না আর কেউ ফ্যাসিস্ট হোক।

বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ৪২তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন শামসি আরা জামান। এ সময় প্রিয়র চার বছর বয়সী মেয়ে সাবিরা জামানও তার সঙ্গে ছিলেন।

সামসি আরা জামান বলেন, আমি এত রাজনীতি বুঝি না। আমি মা। ১৯ জুলাই যখন আমার ছেলে নিহত হয়, ২০ আগস্ট যখন মামলা করতে আসি, আমাকে ১৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। আমি হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম, গেটের বাইরে দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি ছেলেরা হাততালি দিয়ে স্লোগান দিচ্ছে, প্রিয় ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই। আস্তে আস্তে পুরো থানা ভরে গেলো। আন্দোলনে যেভাবে একসঙ্গে এত মানুষ জড়ো হয়ে স্লোগান দিচ্ছিল। আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।

তিনি বলেন, সব জায়গায় এখন ক্ষমতার চর্চা চলছে, কে কীভাবে কে ক্ষমতায় যাবে। যে ক্ষমতাকে ফ্যাসিস্ট হিসেবে বিদায় করেছে, সেই আবার ক্ষমতার লড়াই দেখছি। এই সংগঠন ক্ষমতার জন্য না, জনগণের জন্য মানুষের জন্য কাজ করছে। আগামীতে কেউ যেন ফ্যাস্টিস্ট না হয়ে উঠতে পারে সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে, আমিও সঙ্গে থাকবো।

সমাবেশ শেষে একটি বর্ণিল শোভাযাত্রা অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড়, টিএসসি, দোয়েল চত্বর হয়ে জিমনেশিয়ামে গিয়ে শেষ হয়।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনির সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাগীব নাঈম। এ ছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, শামসুল আলম সজ্জন ও বাকী বিল্লাহ; সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূর আলম, রাকসুর সাবেক ভিপি রাগীব আহসান মুন্না প্রমুখ।

রাগীব নাঈম তার বক্তব্যে বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারকে হটাতে সক্ষম হলেও ফ্যাসিবাদী কাঠামোর সম্পূর্ণ বিলোপ এখনো সম্ভব হয়নি। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিতে টালবাহানা, সকল শহীদ পরিবারে সহায়তা পৌঁছাতে না পারা, শ্রমিকদের উপর নির্বিচার গুলি চালানো, ছাত্র আন্দোলনে ন্যাক্কারজনক পুলিশি হামলা অব্যাহত রাখাসহ নানা ঘটনা আমরা লক্ষ্য করছি।

তিনি বলেন, এসব ঘটনায় সরকারের ভূমিকা ও নিষ্ক্রিয়তা নিশ্চিতভাবেই শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানি। হাসিনার পতনের বছরপূর্তি হবার আগেই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন থেকে দূরে সরে যাওয়ার ঘটনা আমাদেরকে পুনর্বার রাজপথে নামার আহ্বান জানাচ্ছে।

অনুষ্ঠিত সমাবেশে সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের আহ্বায়ক তামজীদ হায়দার চঞ্চল বলেন, জুলাইয়ে শুরু হওয়া সংগ্রাম এখনও শেষ হয়নি। স্বাধীনতাবিরোধী ও ধর্মকে স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারকারীদের কাছে সরকার একরকম আত্মসমর্পন করে বসে আছে। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, দেশি-বিদেশী স্বার্থান্বেষী মহলের আজ্ঞাবহতা বর্জন করে সরকারকে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের পথে ফিরে আসতে বাধ্য করা হবে।

সম্মেলনে শুভকামনা জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বাংলাদেশ হরিজন ছাত্র পরিষদ, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলন্সহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

ছাত্র ইউনিয়নের ৪২তম সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে। আগামী ২৬ এপ্রিল বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বরে সংগঠনের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে পুনর্মিলনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যেমন প্রত্যাশা করেছিলাম, এই সরকার তেমন করে হয়নি: ফরহাদ মজহার
  • মতপার্থক্যের মধ্যেও জাতীয় ঐক্য ধরে রাখার আহ্বান সাইফুল হকের 
  • আন্দোলন মনে হয় বিক্রি হয়ে যাচ্ছে: তাহির জামান প্রিয়র মা