সৌদিতে যাচ্ছেন ট্রাম্প, দেবেন ১০০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির প্রস্তাব
Published: 25th, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী মে মাসে সৌদি আরব সফর করবেন। সফরে রিয়াদকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের অস্ত্র বিক্রির একটি বিশাল প্যাকেজ প্রস্তাব করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ওয়াশিংটন। সংশ্লিষ্ট ছয়টি প্রত্যক্ষ সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
এর আগে জো বাইডেনের প্রশাসন ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বৃহত্তর চুক্তির অংশ হিসেবে রিয়াদের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি চূড়ান্তের চেষ্টা করেছিল। তবে তা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। এবার ট্রাম্প প্রশাসন আরও বিস্তৃত ও বিশেষ করে অস্ত্র বিক্রির ওপর জোর দিয়ে নতুন প্রস্তাব নিয়ে তোড়জোড় শুরু করেছে।
বাইডেনের প্রস্তাবে চীনের কাছ থেকে অস্ত্র ক্রয় বন্ধ এবং বেইজিংয়ের বিনিয়োগ সীমিত করার বিনিময়ে সৌদি আরবকে আরও উন্নত মার্কিন অস্ত্রশস্ত্রের জোগান দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবে একই ধরনের শর্তাবলি অন্তর্ভুক্ত আছে কি না, তা নিশ্চিত করতে পারেনি রয়টার্স।
তবে হোয়াইট হাউস ও সৌদি সরকারের যোগাযোগ দপ্তর তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। আমাদের নিরাপত্তা সহযোগিতা বজায় রাখা এই অংশীদারত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং আমরা সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা চাহিদা পূরণে তাদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব।’
সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র জানিয়েছে, মার্কিন বেসরকারি সমরাস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিন করপোরেশন সৌদি আরবকে সি-১৩০ পরিবহন বিমানসহ বিভিন্ন উন্নত অস্ত্র ব্যবস্থা সরবরাহ করতে পারে। একটি সূত্র জানিয়েছে, লকহিড ক্ষেপণাস্ত্র এবং রাডারও সরবরাহ করবে।
চারটি সূত্রের খবর অনুযায়ী, আগে রেথিয়ন টেকনোলজিস নামে পরিচিত, বর্তমানে আরটিএক্স করপোরেশন—এই সংস্থাটিও ট্রাম্পের এই প্যাকেজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। প্যাকেজে বোয়িং, নর্থরপ গ্রুমম্যান করপোরেশন এবং জেনারেল অ্যাটমিক্সের মতো প্রধান মার্কিন প্রতিরক্ষা ঠিকাদাররাও যুক্ত থাকছে।
বিষয়টির সংবেদনশীলতার কারণে কোনো সূত্রই তাদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।
আরটিএক্স, নর্থরপ এবং জেনারেল অ্যাটমিক্স মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে। বোয়িং তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের জন্য করা অনুরোধে সাড়া দেয়নি। লকহিড মার্টিনের একজন মুখপাত্র বলেছেন, বিদেশে সামরিক সরঞ্জাম ও অস্ত্র বিক্রি প্রকৃতপক্ষে সরকার থেকে সরকার লেনদেনের বিষয়। অন্য দেশের সরকারের কাছে বিক্রয় সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর যুক্তরাষ্ট্রের সরকার সবচেয়ে ভালো দিতে পারবে।
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘকাল ধরে সৌদি আরবকে অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে। ২০১৭ সালে ট্রাম্প প্রায় ১১০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির প্রস্তাব করেছিলেন। ২০১৮ সাল পর্যন্ত মাত্র ১৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি শুরু হয়েছিল। তবে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের পর কংগ্রেস এই চুক্তিগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে।
২০২১ সালে বাইডেন প্রশাসনের সময় খাশোগি হত্যা এবং ইয়েমেন যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য সৌদি আরবের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে কংগ্রেস দেশটির কাছে আক্রমণাত্মক অস্ত্র বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
মার্কিন আইন অনুসারে, বড় আকারের আন্তর্জাতিক অস্ত্র চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার আগে কংগ্রেস সদস্যদের পর্যালোচনা করা বাধ্যতামূলক। কংগ্রেসে অনুমোদনের পরই কেবল এ ধরনের চুক্তি হতে পারে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহকে প্রভাবিত করার পর ২০২২ সালে বাইডেন প্রশাসন সৌদি আরবের ওপর কঠোর অবস্থান কিছুটা শিথিল করতে শুরু করে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ওয়াশিংটন যখন গাজা যুদ্ধ নিয়ে পরবর্তী পরিকল্পনার জন্য রিয়াদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছিল, তখন ২০২৪ সালে অস্ত্র বিক্রির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র স দ আরব র প রস ত ব সরবর হ আরব র র ওপর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
এডিবির বিনিয়োগ করা একাধিক প্রকল্প কাজে আসছে না
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে খুলনা পর্যন্ত ১৬৫ কিলোমিটারের দীর্ঘ গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বাংলাদেশে গ্যাস নেই জেনেও তারা এ প্রকল্পে বিনিয়োগ করে। গত দেড় দশকে এ গ্যাসলাইন দিয়ে মাত্র এক দিন গ্যাস সরবরাহ হয়েছে। এরপরও ‘কল্পিত’ গ্যাস সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হয়েছে খুলনায়। কেন্দ্র দুটি বসে থাকছে। এডিবির বিনিয়োগ করা একাধিক প্রকল্পই কাজে আসছে না।
বাংলাদেশে এডিবির বিনিয়োগ বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য দিয়েছে বেসরকারি সংস্থা এনজিও ফোরাম অন এডিবি ও কোস্টাল লাইভলিহুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (ক্লিন)। মঙ্গলবার বাংলামোটরের একটি রেস্তোরাঁয় যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিশ্লেষণ প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, এডিবির বিনিয়োগ করা বেশ কিছু প্রকল্প জ্বালানি খাতে ঝুঁকি তৈরি করেছে।
‘বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে এডিবির বিনিয়োগ ঝুঁকি উন্মোচন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্লেষণ প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন এনজিও ফোরাম অব এডিবির জীবাশ্ম জ্বালানি প্রচারাভিযানকারী শারমিন বৃষ্টি। এতে বলা হয়, ১৯৭৩ সাল থেকে বাংলাদেশে ১০৬টি প্রকল্পে ১৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে এডিবি। এর অধিকাংশই জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এডিবির এমন একমুখী বিনিয়োগ নীতির ফলে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে ক্রমেই ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এডিবির ৫৮তম বার্ষিক সাধারণ সভায় বাংলাদেশে সংস্থাটির বিনিয়োগ নীতিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে প্রাধান্য দেওয়ার দাবি জানায় সংগঠন দুটি।
বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে এডিবির দীর্ঘদিনের বিনিয়োগ মডেলের কড়া সমালোচনা করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। এতে বলা হয়, জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন, তেল-গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ খাতে এডিবির বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে এডিবির বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত ঝুঁকি বিবেচনায় না নেওয়ার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। ফলে এডিবির ৯ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ৬৭টি জ্বালানি প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে। এটি এশিয়ার বহুজাতিক আর্থিক সংস্থাটির পরিকল্পনা, দক্ষতা এবং দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়া সংস্থাটির একাধিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও গ্যাস সঞ্চালন লাইন বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এনজিও ফোরাম অন এডিবির নির্বাহী পরিচালক রায়ান হাসান উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এডিবি বাংলাদেশে ২ হাজার ৮৮৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মোট ৪ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে প্রায় ৮৩ শতাংশ অর্থায়ন জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর প্রকল্পে, মাত্র আড়াই শতাংশ সৌরবিদ্যুতে। বায়ু বিদ্যুতে এখন পর্যন্ত কোনো বিনিয়োগ নেই। তিনি বলেন, প্রতি মেগাওয়াটে জীবাশ্ম-জ্বালানিভিত্তিক প্রকল্পে বিনিয়োগ ২.০৪ মিলিয়ন ডলার, যেখানে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে তা মাত্র ০.৫১ মিলিয়ন ডলার। এই পরিসংখ্যান এডিবির টেকসই উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিকে গভীরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
এডিবির বাংলাদেশে জ্বালানি খাতে অর্থায়ন বিশ্লেষণ করে ক্লিন-এর প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী বলেন, এডিবি খুলনায় ২২৫ ও ৮০০ মেগাওয়াটের দুটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ করেছে। অথচ এসব প্রকল্প গ্যাসের অভাবে বছরের পর বছর বসে আছে; জনগণের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি বহুজাতিক উন্নয়ন ব্যাংক হিসেবে এডিবি এ কাজটি করতে পারে না।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু সংকটের সম্মুখভাগে দাঁড়িয়ে আছে। অথচ এডিবি এখনো জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পে অর্থায়ন করে চলেছে, যা বাসযোগ্য ভবিষ্যৎ কেড়ে নিচ্ছে। ফলে এডিবিকে অবশ্যই তার জ্বালানি নীতি পরিবর্তন করে শতভাগ নবায়নযোগ্য উৎসের দিকে যেতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, জরুরি ভিত্তিতে এডিবির জ্বালানি নীতি সংস্কার প্রয়োজন। প্যারিস চুক্তির সঙ্গে অর্থায়নকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানিতে এডিবির সব রকমের অর্থায়ন বন্ধ করারও দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।