অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের কারখানাগুলোতে স্বচ্ছন্দে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে একটি স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বৃহস্পতিবার দোহায় সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেছেন, ‘অনেকে বলেছেন, গ্যাসের অভাবে তারা কারখানা স্থাপন করতে পারছেন না। তাই, আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করতে চাই যাতে পর্যাপ্ত গ্যাস (বিদেশ থেকে) আনা যায়।’

তিনি বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের দোহা সফরের সময় কাতার এনার্জির সঙ্গে একটি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। বাংলাদেশের কারখানাগুলোতে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে মিগগির স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনালটি স্থাপন করা হবে। খবর-বাসস

প্রধান উপদেষ্টার দোহা সফর সম্পর্কে তিনি বলেছেন, এই সফর অত্যন্ত সফল এবং ফলপ্রসূ হয়েছে। আমি বলব এটি সবচেয়ে সফল এবং অত্যন্ত আকর্ষণীয় সফরগুলোর মধ্যে একটি।

শফিকুল আলম আশা প্রকাশ করেছেন, এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের সুনাম বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে এবং অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে আসবেন। দেশের অর্থনীতির উত্থান-পতনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সময় ৩শ’ ২০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ ছিল, কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তা কমিয়ে ৬০ কোটি মার্কিন ডলারে নিয়ে এসেছে।

প্রেস সচিব বলেছেন, অবশিষ্ট ঋণ কয়েক মাসের মধ্যে পরিশোধ করা হবে। তিনি আরও বলেছেন, ‘এটি বিশ্বের বাইরে ইতিবাচক সংকেতের অনুভূতি যে আমরা ব্যবসার জন্য প্রস্তুত।’ চার দিনের সফর শেষে প্রফেসর ইউনূস আজ শুক্রবার পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যে যোগদানের জন্য দোহা থেকে ইতালির রোমের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ য স সরবর হ বল ছ ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ওয়াসার পানিতে লাল কেঁচো, সাদা পোকা!

রাজধানীর খিলগাঁওয়ের তিলপাপাড়া এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম। সপ্তাহ দুই হয়ে গেল তাঁর বাসায় ওয়াসার সরবরাহ করা পানির সঙ্গে লাল কেঁচো ও সাদা পোকা আসছে। এর মধ্যে দুবার বাসার ট্যাঙ্কি পরিষ্কার করলও সমস্যার কিনারা হয়নি। ঝুঁকি না নিয়ে বাধ্য হয়ে এখন পানি কিনে খাচ্ছেন।

শান্তিবাগের বাসিন্দা মনির হোসেনের কাছে পানির কষ্ট আরও বিরক্তিকর। বললেন, ওয়াসার পানি দেখে গা ঘিনঘিন করে। দুর্গন্ধ তো আছেই, সঙ্গে পানিতে কিলবিল করে ছোট ছোট কেঁচো। ফুটিয়ে যে খাব, সেটারও রুচি হয় না। 

কল্যাণপুর মসজিদ গলিতেও ওয়াসার পানির একই হাল। সেখানকার বাসিন্দারা জানান, মার্চের শুরু থেকেই পানির এমন দুরবস্থা। ওয়াসায় অভিযোগ দিয়েও ফল আসেনি। উল্টো তারা ট্যাপের মুখে পাতলা কাপড়ের ছাকনি ব্যবহার ও ট্যাঙ্কি পরিষ্কারের পরামর্শ দেয়। 

কয়েক মাস ধরেই রাজধানীর তেজগাঁও, মালিবাগ, মগবাজার, মধুবাগ, বাসাবো, মানিকনগরসহ বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে ওয়াসার পানির সঙ্গে পোকা আসার অভিযোগ মিলেছে। ঢাকা ওয়াসা ব্যাপারটি আমলেই নিচ্ছে না। সরকারি সংস্থাটি বলছে, উৎস পর্যায়ে পানির মান সঠিক আছে। গ্রাহকের রিজার্ভ ট্যাঙ্ক ও ওভারহেড ট্যাঙ্ক ঠিকমতো পরিষ্কার না করায় সেখানে এসব ছোট ছোট প্রাণীর অস্তিত্ব তৈরি হচ্ছে। গ্রাহকরা ট্যাঙ্কগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করলে এ ধরনের জীবাণু তৈরির কোনো সুযোগ নেই। এই দায় ওয়াসার নয়, গ্রাহকের। 

গ্রাহকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি ঢাকা ওয়াসা কয়েকটি এলাকার পানির নমুনা নিয়ে তাদের নিজস্ব গবেষণাগারে পরীক্ষা করে। এ ধরনের একটি নমুনার প্রতিবেদন সমকালের হাতে এসেছে। সেখানে ব্যাপক মাত্রায় ক্ষতিকর কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব মেলে।

ওয়াসার গবেষণাগারের প্রতিবেদনটি দেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাকিলা নারগিস খান সমকালকে বলেন, ‘বাসাবাড়ির ট্যাপের পানি সংগ্রহ করে ওয়াসা প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সেখানে ১২টি কলিফর্মের অস্তিত্ব মিলেছে। পানির পানযোগ্যতার মান পরীক্ষার ক্ষেত্রে আরও যেসব নিরীক্ষা লাগে, তা ওয়াসা করেনি।’ তিনি বলেন, ‘ঢাকার অনেক স্থানে ওয়াসার পাইপলাইনের সঙ্গে স্যুয়ারেজ লাইনের সংযোগের অভিযোগ আছে, যে কারণে পানিতে অনেক সময় মলমূত্রের দুর্গন্ধ পাওয়া যায়। মলমূত্রে ফিকল কলিফর্ম নামে মারাত্মক ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকে। গবেষণায় হয়তো ফিকল কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। কাজেই এই রিপোর্ট দিয়ে বোঝা যাবে না ওয়াসার পাইপলাইনের পানি মানবস্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর। সাধারণ যে কলিফর্মের অস্তিত্ব তারা পেয়েছে, সেটাও মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর– এতে কোনো সন্দেহ নেই।’ 

এ ব্যাপারে বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ সমকালকে বলেন, ‘কলিফর্ম ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া। এটি পেটে গেলে ডায়রিয়া, পেটব্যথা, শারীরিক দুর্বলতসহ নানা সমস্যা হতে পারে।’ 

ওয়সার গবেষণা প্রতিবেদন থেকে দেখা গেছে, বাসাবাড়ির পানিতে প্রতি লিটারের পিএইচ পাওয়া গেছে ৬ দশমিক থেকে ৮ দশমিক ৫। ট্রিবিউডিটি মিলেছে ১ দশমিক ৫৭, যার মাত্রা হওয়া প্রয়োজন ৫। বেসিনে সলিড ওয়াটার পাওয়া গেছে ৪১৯ মিলিগ্রাম, অ্যামোনিক্যাল মিলেছে ১ দশমিক ৫-এর স্থলে দশমিক ০৩। ক্লোরিন মিলেছে শূন্য দশমিক ১। কলিফর্ম মিলেছে ১২। 

এ ব্যাপারে ঢাকা ওয়াসার ল্যাবরেটরির ডেপুটি চিফ মাইক্রোবায়োলজিস্ট ড. মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমরা ফিকল কলিফর্মের বিষয়ও অনেক সময় প্রতিবেদনে উল্লেখ করি। হয়তো এ ক্ষেত্রে সেটা উল্লেখ করা হয়নি। কলিফর্মের যে চিত্র রিপোর্টে এসেছে, সেটা ওয়াসার পানির উৎস পর্যায় বা সরবরাহ পর্যায়ে মেলেনি। সেটা মিলেছে গ্রাহকের ট্যাপের পানিতে। অর্থাৎ সেটা তৈরি হয়েছে গ্রাহকের ট্যাঙ্কিতে। আর কোনো স্থানে ভালো পানিও কিছু দিন থাকলে ব্যাকটেরিয়ার জন্ম হয়। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।’ 

রাজধানীর বেশ কিছু এলাকার পানিতে পোকা আসার বিষয়টি স্বীকার করেন ঢাকা ওয়াসার একাধিক কর্মকর্তা। মূলত সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার থেকে সরবরাহ করা পানিতে পোকা পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, ওই শোধনাগার থেকে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সরকার শিগগির স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করবে: প্রেস সচিব
  • দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: পেঁপে ছাড়া ৫০ টাকার নিচে নেই কোনো সবজি
  • পেঁয়াজের দাম বেড়েছে, সবজি চড়া
  • চালের দাম যেটুকু কমে বাড়ে তার চেয়ে বেশি
  • ওয়াসার পানিতে লাল কেঁচো, সাদা পোকা!
  • এলএনজি সরবরাহের জন্য সমঝোতা স্মারক নবায়নের প্রতিশ্রুতি কাতারের
  • টিসিবির জন্য দুই কোটি ২০ লাখ লিটার পাম অয়েল কিনবে সরকার
  • আরও এক কার্গো এলএনজি কেনা হচ্ছে, দাম প্রতি ইউনিট সাড়ে ১২ ডলার
  • জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দুই প্রস্তাব অনুমোদন, ব্যয় ৫৯৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা