কাশ্মীরে নিরাপত্তাব্যবস্থায় যথেষ্ট গাফিলতি ছিল বলে মেনে নিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে এই স্বীকারোক্তির পাশাপাশি সরকারের পক্ষে বিভিন্ন দলের নেতাদের বলা হয়, এমন গাফিলতি ভবিষ্যতে যাতে না হয়, সে জন্য সতর্ক থাকা হবে।

ওই বৈঠকে সরকারের পক্ষে থেকে এ কথাও বলা হয়, এই হামলার মদদদাতা পাকিস্তানকে কড়া জবাব দেওয়া হবে।

গত বৃহস্পতিবার সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হলেও বৈঠকের চরিত্র নিয়ে বিরোধী নেতাদের নানা রকম প্রশ্নের মুখোমুখি সরকারকে হতে হয়। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। অন্য বিরোধী নেতারাও তাঁকে সমর্থন করেন। এই সংকটকালে প্রধানমন্ত্রী কেন বিহারের জনসভা বাতিল করলেন না, এ বিষয়ে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেন।

নামে সর্বদলীয় বৈঠক হলেও জম্মু–কাশ্মীরের শাসক দল ন্যাশনাল কনফারেন্স, বিরোধী দল পিডিপি, বাম দল আরএসপি ও সিপিআইএমএলের মতো দলকে কেন ডাকা হলো না, তা জানতে চাওয়া হয়। বিরোধীরা এমন কথাও বলেন, এটা আদৌ সর্বদলীয় বৈঠক নয়। এটা বড়জোর সংসদীয় দলের বৈঠক বলা যেতে পারে। তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে বৈঠকে যোগ দেওয়া সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রস্তাব দেন, সব দলের নেতাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উচিত প্রকৃত অর্থে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা।

এই সংকটকালে সব দল সরকারের পাশে থাকার কথা বললেও বৈঠকে কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতা ও গাফিলতির বিষয়টি বড় হয়ে ওঠে। বিভিন্ন নেতা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এত বড় একটা ঘটনা ঘটতে চলেছে, অথচ গোয়েন্দারা তা টের পর্যন্ত পেলেন না! ঘটনাস্থলে একজন নিরাপত্তারক্ষীও কেন ছিলেন না, সেই প্রশ্ন তোলা হয়। বলা হয়, এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। এর পেছনে ছিল এক গভীর চক্রান্ত। অথচ কেউ তা টের পেল না কেন? এই ব্যর্থতার দায় পুরোপুরি সরকারের।

সরকারের পক্ষে গাফিলতি ও ব্যর্থতা মেনে নেওয়া হয়। তবে বলা হয়, প্রশাসনকে না জানিয়ে স্থানীয় ট্যুর অপারেটররা ওই রুট খুলে দিয়েছিল। সন্ত্রাসীরা সেই সুযোগ নিয়েছে। সরকার জানায়, প্রতিবছর জুন মাসে অমরনাথযাত্রার আগে পহেলগামের রুট পর্যটকদের জন্য খোলা হয়। কিন্তু এবার স্থানীয় ট্যুর অপারেটররা ২০ এপ্রিল থেকেই সরকারের অজান্তে তা খুলে দেয়। ফলে প্রশাসন নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের সুযোগ পায়নি।

বিরোধীরা জানতে চান, সন্ত্রাসবাদমুক্ত দাবি করা সত্ত্বেও কী করে সন্ত্রাসীরা অত্যাধুনিক অস্ত্র হাতে দাপাদাপি করে, তা বোধগম্য নয়। এর অর্থ একটাই, জম্মু–কাশ্মীর এখনো সন্ত্রাসমুক্ত নয়। সরকারের দাবি অসাড়। ভুয়া।

ওই বৈঠকে বিরোধী নেতারা শাসক দল বিজেপির হিন্দু–মুসলমান তত্ত্বেরও কড়া সমালোচনা করেন। বিভিন্ন নেতা বলেন, হিন্দুত্ববাদীরা এই ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে ও দেখাতে চাইছে। সাম্প্রদায়িকভাবে দেখানো হচ্ছে। সেই প্রচার করা হচ্ছে। বিজেপি নেতাদের কেউ কেউ খোলাখুলিভাবে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি করে চলেছেন। এই অপচেষ্টা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার বলে বিরোধী নেতারা মন্তব্য করেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র প

এছাড়াও পড়ুন:

আ.লীগকে নিষিদ্ধ ও গণহত্যার বিচারের দাবিতে ইনকিলাব মঞ্চের ‘শহীদি স

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা এবং জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানকালে গণহত্যাসহ বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে ‘শহীদি সমাবেশ’ করেছে ইনকিলাব মঞ্চ।

শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল পৌনে ৫টায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে শহীদি সমাবেশে চারটি দাবি তুলে ধরেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি।

ইনকিলাব মঞ্চের দাবিগুলো হলো:
১. আগামী ১০০ দিনের মধ্যে জুলাই গণহত্যার দৃশ্যমান বিচার শুরু করতে হবে এবং আওয়ামী লীগকে নির্বাহী আদেশ, আদালতের রায় ও রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।

২. শাপলা চত্বরের ঘটনার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে জাতিসংঘের সহায়তায় একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে শহীদদের তালিকা প্রকাশ ও বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।

৩. পিলখানা হত্যাকাণ্ড বিষয়ে গঠিত কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করতে হবে।

৪. দেশের সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগের গণহত্যার বিচারের বিষয়ে স্পষ্ট ধারা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

শহীদি সমাবেশে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি বলেছেন, “দাবি আদায়ে আগামী ১০০ দিন দেশের ৬৪ জেলায় গণসংযোগ চালানো হবে। দাবি পূরণ না হলে আগামী ৩৬ জুলাই (৫ আগস্ট) ‘মার্চ ফর বাংলাদেশ’ কর্মসূচি ঘোষণা করে শাহবাগ থেকে সচিবালয় ঘেরাও করা হবে।

শহীদি সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা, জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তি এবং শহীদ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/রায়হান/রফিক 

সম্পর্কিত নিবন্ধ