অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার যে প্রথা ভাঙছেন পোপ ফ্রান্সিস
Published: 25th, April 2025 GMT
পোপ ফ্রান্সিসকে ধরা হয় ক্যাথলিক চার্চের মহান সংস্কারক হিসেবে। সহনশীলতা ও ভালোবাসার বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন সারা বিশ্বে। ক্যাথলিক চার্চের বহু বছরের পুরোনো নিয়ম, প্রথা, আচার—সবকিছুতেই আধুনিকতার ছোঁয়া এনেছেন। পোপের জন্য নির্ধারিত বাসস্থানে থাকতেন না, থাকতেন দুই বেডরুমের ছোট্ট একটি বাসায়। খাওয়ার সময় ডেকে নিতেন কর্মচারীদের। নিজে শরণার্থীদের পা ধুয়ে দিয়েছেন, সারা বিশ্বে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন শান্তির বাণী। এমনকি মৃত্যুর আগের দিনও দুই হাতে প্রার্থনা করেছেন গাজাবাসীর জন্য, আহ্বান জানিয়েছেন যুদ্ধবিরতির। শেষকৃত্যেও তার ব্যতিক্রম ঘটছে না। তাঁকে সমাহিত করা হবে কয়েক শতাব্দীর প্রথা ভেঙে।
পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর খবর ঘোষণা করা হয় ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স ব্যাসেলিকা গির্জার ঘণ্টা বাজিয়ে। সঙ্গে সঙ্গে নিয়ম অনুযায়ী কাজ শুরু করে দেন কার্ডিনালরা। প্রথমে সিলগালা করে দেওয়া হয় তাঁর বাসস্থান। যাতে তাঁর রেখে যাওয়া কোনো কাগজপত্র কিংবা কাজে কেউ কোনো পরিবর্তন আনতে না পারেন। অতঃপর তাঁকে পোপের সাজে সাজিয়ে রাখা হয় কফিনে। পোপের ইচ্ছানুযায়ী তাঁর খোলা কফিন রাখা হয়েছে ভ্যাটিকান সিটির কাসা সান্তা মার্তার চ্যাপেলে। সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে ফেলা হবে তার ‘ফিশারম্যানস রিং’। ডাকটিকিট চল হওয়ার আগে এই সিল দিয়ে যেকোনো নথি স্বাক্ষর করতেন পোপরা। এখন মূলত পোপের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয় আংটি। এর মধ্যেই চলবে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার কাজ। আগামীকাল ২৬ এপ্রিল অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আগপর্যন্ত চ্যাপেলে থাকবে তাঁর মরদেহ।
পোপদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য সাধারণত তিনটি কফিন প্রস্তুত করা হয়। এটি মূলত করা হয় পোপের পবিত্রতা রক্ষা ও বিশেষ সম্মানার্থে। প্রতিটি কফিনের আছে আলাদা তাৎপর্য।
কিউপ্রেসাস কাঠের তৈরি প্রথম কফিনপ্রথম কফিন তৈরি করা হয় কিউপ্রেসাস কাঠ দিয়ে। এই কফিনে শোয়ানো থাকে পোপের দেহ। সঙ্গে তাঁকে নিবেদিত লেখা শংসাবচন। এই কফিনে আরও থাকবে সোনা, রুপা ও তামার তিন ব্যাগ মুদ্রা। যে কয় বছর তিনি পোপের দায়িত্ব পালন করেছেন, ঠিক ততগুলো মুদ্রা থাকবে ব্যাগে। পোপ ফ্রান্সিসের জন্য তিনটি ব্যাগের প্রতিটিতে থাকবে ১২টি করে মুদ্রা। কিউপ্রেসাস কাঠকে ধরা হয় সবচেয়ে সাধারণ কাঠ। সেই রোমান সাম্রাজ্যের সময় থেকে এখন পর্যন্ত ইতালির মাঠেঘাটে অহরহ দেখা যায় কিউপ্রেসাস গাছ। এর কাঠের কফিন প্রমাণ করে পোপ আর দশজনের মতো সাধারণ মানুষ ছিলেন। তাঁর মৃত্যুও সাধারণ মানুষের মতো হয়েছে। তিনটি সিল্ক রিবন দিয়ে বেঁধে সিল করা হয় কফিন। অতঃপর পোপের মৃতদেহ প্রবেশ করানো হয় দ্বিতীয় কফিনে।
সিসার তৈরি দ্বিতীয় কফিনদ্বিতীয় কফিনটি তৈরি করা হয় সিসা দিয়ে। এই কফিনে লেখা থাকে পোপের পুরো নাম, পোপ হিসেবে তাঁর সময়কাল এবং কফিনে আঁকা হয় স্কাল ও ক্রসবোনের তৈরি প্রাচীন লাতিন একটি চিহ্ন ‘মেমেনতো মোরি’। যার অর্থ ‘মনে রেখো তোমারও মৃত্যু হবে’। সিসার কফিনে আরও থাকে দায়িত্বে থাকাকালে পোপের স্বাক্ষরিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি ও তাঁর কার্যালয়ের সিলমোহর। এই কফিন মরণশীল মানুষকে যেন মৃত্যুর কথা আরেকবার মনে করিয়ে দেয়। আর এই কফিন সিলগালা করে প্রবেশ করানো হয়ে তৃতীয় কফিনে।
এল্ম কাঠের তৈরি তৃতীয় কফিনতৃতীয় কফিন তৈরি করা হয় রোমের সবচেয়ে দামি এল্ম কাঠ দিয়ে। এল্ম কাঠকে ধরা হতো রোমান সাম্রাজ্যের সবচেয়ে সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে। পোপের মাহাত্ম্য ও সৌন্দর্য বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে ব্যবহার করা হয় এল্ম কাঠের কফিন। স্বর্ণের পেরেক ঠোকা হয় এই কফিনে। সিলগালা করার আগে একজন বিশপ পোপের অর্জনগুলো পড়ে শোনান। তারপর সেটিকে একটি তামার পাত্রে বদ্ধ করে রেখে দেওয়া হয় কফিনের মধ্যে।
তারপর সেন্ট পিটার্স ব্যাসেলিকায় সমাহিত করা হয় পোপের দেহ। পোপের তিনটি কফিন শুধু পোপের মাহাত্ম্য, অর্জন ও জনপ্রিয়তার সাক্ষী নয়; বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি টাইম ক্যাপসুলও বটে। যাতে আজ থেকে হাজার বছর পরও পোপের অর্জন, গুণাবলি ও জীবনযাত্রা সম্পর্কে মানুষ অবহিত হয়।
আরও পড়ুনপোপ ফ্রান্সিস সম্পর্কে কিছু অজানা চমকপ্রদ তথ্য২১ এপ্রিল ২০২৫পোপ ফ্রান্সিসের কফিন কেমন হবেপোপ ফ্রান্সিসের জন্য তিনটি কফিন তৈরি হচ্ছে না। গত বছর শেষকৃত্যের কিছু প্রথায় পরিবর্তন আনেন তিনি। সেখানে তাঁর শেষকৃত্যের জন্য একটি কফিন তৈরির নির্দেশ দিয়ে গেছেন। সে অনুযায়ী প্রস্তুত করা হয়েছে সাধারণ কাঠের তৈরি একটি কফিন। এই কফিন সিলগালা করার ব্যবহার করা হবে দস্তার প্রলেপ। তাঁর কফিনটিও একেবারে আগাগোড়া সমান হবে না। মাথার দিকটা হবে তুলনামূলক চওড়া এবং পায়ের দিকটা চাপা। তবে বাকি সব প্রথা একই রকম থাকছে। কফিনে তাঁর মৃতদেহের সঙ্গে থাকবে ১২টি সোনা, রুপা ও তামার মুদ্রা। লেখা থাকবে তঁর নাম, সময়কাল ও অর্জনের কথা।
পোপ ফ্রান্সিস চেয়েছিলেন তাঁর বিদায় হবে সাধারণ মানুষের মতো। যেভাবে যিশুখ্রিষ্ট পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন একজন কাঠমিস্ত্রি হিসেবে, ঠিক সেভাবে কোন জাঁকজমক ছাড়া নীরবে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন নিজের প্রিয় গির্জায়। যে কারণে সেন্ট পিটার্স ব্যাসেলিকায় সমাহিত করা হচ্ছে না তাঁকে। তিনি থাকবেন রোমের ব্যাসিলিকা অব সেন্ট মেরি মেজরে। যেখানে জীবনের বড় একটা সময় কাটিয়েছেন তিনি। শনিবার বাংলাদেশ সময় বেলা ২টায় শুরু হবে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আনুষ্ঠানিকতা।
সূত্র: ইউএসএ টুডে ও মিডিয়াম
আরও পড়ুনপ্রেমিকাকে না পেয়ে যেভাবে পোপ হয়েছিলেন ফ্রান্সিস ২১ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ত য ষ ট ক র য় র ক উপ র স স এল ম ক ঠ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
কর্তা ও সরকার বংশের ৫৬ বছরের বিরোধ, কী থেকে শুরু, কেন এখনো মেটে না
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগের কথা। কর্তা বংশের ওয়াছিল উদ্দিন কর্তা ছিলেন কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। আজ থেকে ৫৬ বছর আগে সেই সময় মৌটুপি গ্রামে একটি সালিস বসে। ওয়াছিল সালিসে রায় ঘোষণা করেন। রায় চ্যালেঞ্জ করে বসেন সরকারবাড়ির আ. ওহাব সরকার।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, তখন ওয়াছিল উদ্দিন বলেন, ‘কর্তার রায় চ্যালেঞ্জ করছে সরকার। আমার আর কী দরকার?’ সেই থেকে কর্তা বংশ ও সরকার বংশের বিরোধ শুরু।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, এই সালিসের কিছুদিন পর আ. ওহাব সরকারকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এর সঙ্গে কর্তা বংশের লোকজন জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ। তিন বছর পর ওয়াছিল উদ্দিন কর্তার ছেলে কফিল উদ্দিন কর্তা খুন হন। সেই ঘটনায় সরকার বংশের নাম আসে। সেই থেকে দুই বংশের বিরোধ পাকাপোক্ত হয়। এর পর থেকে বংশ দুটির লোকজন বিবাদ ছাড়া কোনো বছর পার করেছেন, এমনটা হয়নি। ৫৬ বছর ধরে চলছে এই বিরোধ।
৫৬ বছরে ঝরেছে ১৪ প্রাণগ্রামবাসীর দেওয়া তথ্যমতে, ৫৬ বছরে দুই পক্ষের ১৪ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছেন শত শত মানুষ। মামলা হয়েছে শতাধিক। সুযোগ পেলেই এক পক্ষ অপর পক্ষের আসবাব, গবাদিপশু, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাসহ সর্বস্ব লুটে নিতে এতটুকু সময়ক্ষেপণ করে না। রান্নার চুলা ভেঙে ফেলে। শৌচাগার নিশ্চিহ্ন করে দেয়। টিউবওয়েল উপড়ে ফেলে। পাকা ফসলে দেয় মই।
সুযোগ পেলেই এক পক্ষ অপর পক্ষের আসবাব, গবাদিপশু, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাসহ সর্বস্ব লুটে নিতে এতটুকু সময়ক্ষেপণ করে না