চট্টগ্রামের রাউজানে গত আট মাসে ১২ খুনের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। বৃহস্পতিবার থানা প্রশাসনকে নিয়ে বৈঠক করেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এ বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও উন্নতি করে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার ওপর জোর দেওয়া হয়। এদিকে চট্টগ্রামের রাউজানে সন্ত্রাসীদের গুলিতে ইব্রাহিম হত্যাকাণ্ডের ঘটনার দুইদিন পর এজাহার দিয়েছেন নিহতের মা খালেদা বেগম। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া। তিনি জানান, এজাহারে আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জনকে আসামি করা হয়। 

এজাহারে বলা হয়, ‘মৃত্যু নিশ্চিত করতে ইব্রাহিমের মাথা, পিঠে, কোমরে, নাভির নিচে ও ডান পায়ে পাঁচটি গুলি করে সন্ত্রাসী রায়হান ও ইলিয়াছ। এই কিলিং মিশনে অংশ নেয় ১২ থেকে ১৩ জন।’
 
মামলার এজাহোরে নাম ঠিকানাসহ এক নম্বর আসামি করা হয় বদিউল আলমের ছেলে রায়হানকে। এরপর পর্যায়ক্রমে আসামি হিসেবে রয়েছে- নুরুল আমিনের ছেলে মোঃ ইলিয়াছ, আবু বক্করের ছেলে মোঃ আলী, আনোয়ার মিয়ার ছেলে খোরশেদ, কবির আহমদের ছেলে মো.

বাছা, আবদুল মোনাফের ছেলে মো. আইয়ুব, আজিজুর রহমানের ছেলে মো. আলতাফ ও এস এম শফির ছেলে এস এম শহিদুল্লাহ রনি।’

গত আট মাসে রাউজানে খুন হয়েছে ১২ জন। বেশিরভাগ খুনই হয়েছে প্রকাশ্য দিবালোকে। কাউকে গুলি করে, কাউকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু মামলার এজাহার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ১০টি খুনের ঘটনাতেই আসামির ঘরে লেখা আছে ‘অজ্ঞাতনামা’। তিনজন খুন হয়েছেন কয়েকদিন নিখোঁজ থাকার পরে। পুলিশ এটা জানলেও তাদের উদ্ধারে তাৎক্ষণিক কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি মামলা হওয়ার পরেও উদ্বেগজনকভাবে নিস্ক্রিয় রাউজান থানা পুলিশ। ১২ খুনের মধ্যে তাই ১০টিতেই তারা কোন আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেননি। তদন্ত প্রক্রিয়াতেও পুলিশের উদাসীনতা রয়েছে বলে সমকালকে অভিযোগ করেছেন বাদীরা। বিষয়টি নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সমকালে ‘একের পর এক খুন, আসামি অজ্ঞাত’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। চট্টগ্রামে এসে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও গত বুধবার এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। 

গত মঙ্গলবার দিনদুপুরে প্রকাশ্যে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রাণ হারান রাউজান সদর ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডের গাজীপাড়ার মো. আলমের ছেলে ইব্রাহিম। এরপর থেকে পুরো এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর দুইদিন আগে ১৯ এপ্রিল খুন হন বাগোয়ান ইউনিয়ননের গরীবুল্লাহ পাড়ার যুবদল কর্মী মানিক আবদুল্লাহ। সব মিলিয়ে গত আটমাসে ১২ জন খুন হওয়ায় আতঙ্ক বিরাজ করছে রাউজানে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল অব্যাহত থাকলেও ভয় কাটেনি স্থানীয় বাসিন্দাদের। 

রাউজানের স্থানীয় বাসিন্দা রহিম আজম সমকালকে বলেন, আমরা আতঙ্কিত। ভয়ে কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। খুনি সন্ত্রাসী রায়হান এখনও এলাকায় আছে। সে কারণে অনেকেই এলাকায় নেই।
 
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় ইউএনও জিসান বিন মজিদ ও পরিদর্শক (তদন্ত) নিজাম উদ্দিন বক্তব্য রাখেন। এসময় সন্ত্রাসীদের যে কোনো মূল্যে গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা। 

প্রসঙ্গত, ২২ এপ্রিল দুপুর দেড়টায় গুলি করে হত্যা করা হয় যুবদলকর্মী ইব্রাহিমকে। তিনি রাউজান সদর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের শমশের নগর গাজী পাড়ার এলাকার মোহাম্মদ আলমের ছেলে। ইব্রাহিম হত্যার পর সন্ত্রাসীরা দুই কিলোমিটার অদূরে আরও একটি কিলিং মিশনে গিয়ে অটোরিকশা চালকের হাতে পায়ে গুলি করে ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে। গুলিবিদ্ধ সিএনজি চালক নাঈম উদ্দিনকে (২৫) চমেকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন হত

এছাড়াও পড়ুন:

বনানীতে ছুরিকাঘাতে নিহত পারভেজের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে: ছাত্রদল সভাপতি

রাজধানীর বনানীতে ছুরিকাঘাতে নিহত প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা জাহিদুল ইসলাম পারভেজের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে দাবি করেছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, অজ্ঞাত ফোন নম্বর থেকে প্রতিনিয়ত হুমকি দেওয়া হচ্ছে, পারভেজের ছোটবোন মাইলস্টোন কলেজে পড়াশোনা করেন, তিনিও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তারা আমাদের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছেন। 
 
বৃহস্পতিবার দুপুরে পারভেজের কবর জিয়ারত ও পরিবারের খোঁজখবর নিতে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বিরুনিয়া পাঠকবাড়ী গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ছাত্রদল সভাপতি। 

এ সময় তিনি বলেন, নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের পক্ষ থেকে বনানী ও ভালুকা মডেল থানা পুলিশকে অবগত করা হয়েছে। পারভেজের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সকল নেতৃবৃন্দ পাশে থাকবে।

কেন্দ্রীয় সভাপতি আরও বলেন, বিগত সাড়ে ৮ মাসে এই দেশে আইনশৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতি ঘটেছে এবং নির্দলীয় সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর কন্ট্রোল রয়েছে কিনা আমরা সন্দিহান। এর আগে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের ভালুকায় আগমন উপলক্ষে উপজেলার কালারমাস্টার এলাকায় ছাত্রদল নেতা শরিফ আহমেদের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে স্বাগত জানান। পরে ভালুকা উপজেলা ছাত্রদলের ব্যানারে পারভেজের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ভালুকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে একটি বিক্ষোভ মিছিল অংশ নেন রাকিবুল ইসলাম। এ সময় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, গত ১৯ এপ্রিল রাজধানীর বনানীতে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজকে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইব্রাহিমের মাথা, পিঠে ও পায়ে ৫টি গুলি করে রায়হান ও ইলিয়াছ
  • দেশজুড়ে যৌথ বাহিনীর অভিযানে বিপুল অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেপ্তার ২০৪
  • বনানীতে ছুরিকাঘাতে নিহত পারভেজের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে: ছাত্রদল সভাপতি
  • পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা শুরু ২৫ এপ্রিল
  • আট দিন পর চবির অপহৃত ৫ শিক্ষার্থী উদ্ধার
  • কলেজ কর্তৃপক্ষের কি কোনো দায় নেই
  • আরাকান আর্মির উপস্থিতি ভিডিওতে যেভাবে এসেছে তা সঠিক নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • বিশ্বব্যাপী ক্যান্সারের মতো ছড়াচ্ছে সাইবার অপরাধ
  • জামিনে মুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নজরে রাখার নির্দেশ দিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা