মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আড়ালে পাঁচ দেশে টাকা পাচার
Published: 25th, April 2025 GMT
চট্টগ্রামে ‘সেলিম অ্যান্ড ব্রাদার্স’ মোবাইল ব্যাংকিং ডিস্ট্রিবিউশন হাউসের আড়ালে পাঁচ দেশে কোটি কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে এক দম্পতির বিরুদ্ধে। তারা হলেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর খালাতো ভাই মোহাম্মদ মামুন সালাম ও তাঁর স্ত্রী কানিজ ফাতেমা। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের বিদেশে টাকা পাচার এবং লিবিয়ার মানব পাচার চক্রের মুক্তিপণ আদায়ের ‘গেট কিপার’ হিসেবে কাজ করার অভিযোগ পেয়েছে সিআইডি।
হুন্ডির মাধ্যমে দেশি-বিদেশি মুদ্রা পাচার ও মানব পাচারের মাধ্যমে টাকা পাচারের অপরাধে গত বছরের ১৫ অক্টোবর তাদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করে সিআইডি। মামলায় মামুন সালাম ও তাঁর স্ত্রী, টাকা পাচারকারী তানভীর হাসান ও তাঁর বড় ভাই মালয়েশিয়া প্রবাসী সজল ইসলামসহ অজ্ঞাত আটজনকে আসামি করা হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম বিভাগ। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুবাই, মালয়েশিয়া, চীন, ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য আমদানির অর্থ ব্যবসায়ীরা সালামের মোবাইল ব্যাংকিং ডিস্ট্রিবিউশন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিশোধ করেছেন বলে দেখানো হয়েছে। তবে এ টাকার কোনো পণ্য দেশে আসছে কিনা, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এই চ্যানেলে কয়েকশ ব্যবসায়ী নিয়মিত টাকা পাঠিয়েছেন দেশের বাইরে। এ ছাড়া সালামের প্রতিষ্ঠানে দেশে টাকা জমা দিয়ে পাচারকারীরা বিদেশ থেকে ডলার নিয়েছেন, যার সত্যতাও পেয়েছে তদন্ত সংস্থা।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২২ সালের ১৭ আগস্ট সালাম ও কানিজের বিরুদ্ধে টাকা পাচারের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে সিআইডি। ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত আড়াই বছরে সেলিম অ্যান্ড ব্রাদার্সের ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা সন্দেহজনক লেনদেনের সত্যতা পায়। কিন্তু মন্ত্রীর আত্মীয় হওয়ায় সে সময় কিছুই করতে পারেনি সংস্থাটি। গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট তৎকালীন আওয়ামী সরকার পতনের পর তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে সিআইডি।
তদন্ত সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সালাম-কানিজ দম্পতির ব্যাংক হিসাবে জমা হওয়া অর্থ তারা মোবাইল ব্যাংকিং ডিস্ট্রিবিউশনের মাধ্যমে ই-মানিতে রূপান্তর করেছেন। পরে তাদেরই নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট নম্বরে পাঠিয়ে দেন। বাকি টাকা তারা ব্যাংক থেকে ক্যাশ গ্রহণ করেছেন। এই দম্পতির দুটি ব্যাংকে ‘সেলিম অ্যান্ড ব্রাদার্স লিমিটেড’ নামে যৌথ হিসাব নম্বর রয়েছে।
দেশের ভিন্ন ভিন্ন এলাকার কয়েকশ ব্যবসায়ী বিভিন্ন সময় দেশের বাইরে থেকে নিয়ে আসা পণ্যের দাম পরিশোধ করতে এই প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকে টাকা দিয়েছেন। যাদের সঙ্গে অভিযুক্তদের কোনো প্রকার ব্যবসায়িক সম্পর্ক নেই। এর মধ্যে অভিযুক্ত তানভীর তাঁর ভাই সজলের কাছে এই চ্যানেলে দেশ থেকে টাকা পাঠান, যা সজল বিদেশি মুদ্রায় গ্রহণ করেন।
সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) আব্দুল্লাহ আল ইয়াসিন সমকালকে বলেন, মানি লন্ডারিং মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে। আসামিদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
কোন কোন দেশে টাকা পাচার
চীন থেকে মোবাইলসামগ্রী আমদানির নামে ব্যবসায়ী আল আমিন ৮ লাখ টাকা; ব্যবসায়ী মো.
এদিকে দুবাই থেকে আসা স্বর্ণের দাম পরিশোধে মোজাম্মেল হক হুমায়ূন সাড়ে ৩৬ লাখ এবং ভারতে চিকিৎসার জন্য ৬ লাখ টাকা নেন দোকানের মালিক নাজমুল ইসলাম। এ ছাড়া স্বামীকে লিবিয়ার জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করতে সাদিয়া সুলতানা নামে এক নারী সেলিম অ্যান্ড ব্রাদার্সের একটি ব্যাংকে মানব পাচার চক্রের সদস্যদের মুক্তিপণ হিসেবে ৬ লাখ ৩০ হাজার ৫০০ টাকা জমা দেন এবং একই চ্যানেলে দেশ থেকে আসামি তানভীর তাঁর ভাই সজলের কাছে দুই কিস্তিতে ১ কোটি টাকা পাঠান, যা সজল মালয়েশিয়া থেকে টাকার সমপরিমাণ রিঙ্গিত গ্রহণ করেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আমদ ন র ন ম ব যবস য় তদন ত স আইড
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত-পাকিস্তানকে ‘সর্বোচ্চ ধৈর্য’ ধরতে বললেন জাতিসংঘ মহাসচিব
কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তৈরি হওয়া উত্তেজনার মধ্যে দেশ দুটিকে ‘সর্বোচ্চ ধৈর্য’ ধরার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এ নিয়ে ‘খুবই উদ্বিগ’ বলেও জানিয়েছেন তিনি।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে আন্তোনিও গুতেরেসের এ বার্তা সাংবাদিকদের জানান। খবর আল-জাজিরার
স্টিফেন ডুজারিক সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব ‘খুবই উদ্বিগ্ন’। সার্বিক পরিস্থিতিতে ‘খুব নিবিড়ভাবে নজর’ রাখছেন তিনি।
জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ভারত ও পাকিস্তানকে ‘সর্বোচ্চ ধৈর্য’ ধরার আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, সাম্প্রতিক পাল্টাপাল্টি বেশ কিছু পদক্ষেপের ফলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি যাতে আরও খারাপের দিকে না যায় এ জন্য দেশ দুটিকে সর্বোচ্চ ধৈর্য্য ধরার অনুরোধ করছেন তিনি।
জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যেকোনো সমস্যা অর্থবহ আলোচনা ও পারস্পরিক সম্পৃক্ততার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা সম্ভব বলে আমরা বিশ্বাস করি এবং এটাই হওয়া উচিত।’