ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় পর্যটকসহ ২৬ জন নিহত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার প্রতিশোধমূলক একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়েছে; যার মধ্যে স্পর্শকাতর সিদ্ধান্তটি হলো সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত বা প্রত্যাহার।

পানি চুক্তি স্থগিতকে পাকিস্তান ‘পানি যুদ্ধ’ ঘোষণার শামিল হিসেবে বর্ণনা করে পাল্টা তারাও কয়েকটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে; যা দুই দেশের সম্পর্ককে একেবারে তলানিতে নিয়ে ঠেকিয়েছে। সব কিছুর ঊর্ধ্বে ভারত পানি চুক্তি স্থগিত করায় চাষাবাদ, জীবিকা, নগরজীবন টিকিয়ে রাখা ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার দিক থেকে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে পাকিস্তান।

পহেলগাম হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জরুরি নিরাপত্তা বৈঠক ডেকে পাকিস্তানের সঙ্গে ইন্ডাস ওয়াটার ট্রিটি বা ইন্ডাস পানি চুক্তি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। প্রাচীন সিন্ধু নদীকে ‘ইন্ডাস’ বলা হয়। ফলে এই চুক্তি উভয় দেশে সিন্ধু পানি চুক্তি হিসেবেও পরিচিত। 

আরো পড়ুন:

ভারতের সঙ্গে সিমলা চুক্তি বাতিল পাকিস্তানের, উত্তেজনা চরমে

বাণিজ্য-ভিসা-আকাশসীমা বন্ধসহ ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের একগুচ্ছ পদক্ষেপ

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু পানি চুক্তি হয় ১৯৬০ সালে। এরপর ৬৫ বছরে দুই দেশের মধ্যে অনেক টানাপোড়েন হলেও এভাবে সিন্ধুর পানি বন্ধ করার ঘোষণা আসেনি কোনো দেশের পক্ষ থেকে। এখন ভারত বলছে, সীমানা পার হয়ে আসা সন্ত্রাসীদের জন্য চিরদিনের একটি শিক্ষা হয়ে থাকবে; সন্ত্রাস না থামা পর্যন্ত চুক্তিটি ‘স্থগিত’ রাখা হবে। এটি দুই দেশের জন্য বিশেষ করে পাকিস্তানের জন্য ঐতিহাসিক মুহূর্ত এবং দীর্ঘমেয়াদি সংকটের বার্তা।

ছয় দশকের বছরের বেশি সময় ধরে যুদ্ধ, সংঘাতের আশঙ্কা এবং সম্পূর্ণ কূটনীতি ভেঙে পড়া সত্ত্বেও পানি চুক্তিটি টিকে ছিল। পানি, যা ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্কের অনেক কিছুর ঊর্ধ্বে ছিল, তা আগে কখনো এতটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি; চুক্তির অবস্থান থেকে কেউ সরে আসার ঘোষণা দেয়নি।

সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতে ভারতের নেওয়া সিদ্ধান্ত সম্ভবত দুই দেশের জন্য এমন একটি ফাঁটল নির্দেশ করে, যা থেকে অনুমান করা যায় এখন কীভাবে তারা তাদের মধ্যে অন্যান্য সম্পদের ভাগাভাগি নিষ্পত্তি করবে। এই পরিপ্রেক্ষিত ধরে আগামী দিনগুলোতে ভূ-রাজনীতি নিয়ে বহু আলোচনা হবে, সেটি বলা যায় বৈকি। 

সিন্ধু পানি চুক্তি প্রত্যাহার করার ভারতের একতরফা সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের নদী, ফসল, মানুষ ও নীতিনির্ধারকদের ওপর প্রগাঢ় প্রভাব ফেলবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

আগামী দিনগুলো এবং মাসগুলোতে পাকিস্তানের জন্য যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, তা হলো- ভারতের হুট করে পানি বন্ধ করার হুমকির মধ্যেই শুধু থাকা নয়, বরং পানি ব্যবস্থাপনার নির্ভরযোগ্যতা হারানোর শঙ্কাও তাড়া করবে দেশটিকে। কারণ, এই পানি ব্যবস্থাপনার ওপর কোটি কোটি পাকিস্তানি নির্ভরশীল।

সিন্ধু পানি চুক্তি যেভাবে কাজ করে
ভারত সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার ফলে কী ঘটতে পারে, তা বোঝার আগে এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, চুক্তিটি আসলে কীভাবে কাজ করে। অনেক বছরের আলোচনার পর ১৯৬০ সালে বিশ্ব ব্যাংকের মধ্যস্থতায় সই হওয়া সিন্ধু পানি চুক্তি বিশ্বের সবচেয়ে টেকসই আন্তঃসীমান্ত পানি চুক্তিগুলোর মধ্যে একটি হয়ে ওঠে।

ইন্ডাস বেসিনের প্রবাহিত ছয়টি নদী দুই দেশের অধিকারের মধ্যে পড়েছে। ভারতের অধিকার রয়েছে তিনটি পূর্ব নদী- রবি, বিয়াস ও সুতলেজের ওপর। পশ্চিমের তিনটি নদী- সিন্ধু, ঝিলম ও চেনাবের ওপর রয়েছে পাকিস্তনের অধিকার। এই ছয়টি নদী ইন্ডাস বেসিনের প্রায় ৮০ শতাংশ পানির উৎস।

চুক্তির অংশ হিসেবে, ভারত পশ্চিমের নদীগুলোকে সীমিত কাজে যেমন- জলবিদ্যুৎ ও সেচের জন্য ব্যবহার করার অধিকার রাখে। তবে তারা নদী তিন প্রবাহ সংরক্ষণ বা পরিবর্তন করতে পারে না। এসব শর্ত নির্দিষ্ট এবং প্রয়োগযোগ্য। এর মধ্যে প্রকৌশল ডিজাইন, কর্মকাণ্ডে বৈশিষ্ট্য এবংতা পরস্পরকে অবহিত করার পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। 

চুক্তির কাঠামো অনুযায়ী, পাকিস্তানের জন্য এটি কেবল পানির যোগান ব্যবস্থাই নয়; সম্পূর্ণ সেচ এবং পানি ব্যবস্থাপনার নিশ্চয়তা দেয়।

চুক্তিটি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা এবং সংঘাত সমাধানের জন্য একটি স্থায়ী কৌশল হিসেবেও কাজ করে। চুক্তির আলোকে একটি স্থায়ী ইন্ডাস কমিশন রয়েছে, যেটি পরিচালনা জন্য উভয় দেশের একজন করে কমিশনার রয়েছেন। তাদের কাজ হলো, তথ্য বিনিময় করা, নতুন প্রকল্প পর্যালোচনা করা এবং নিয়মিত বৈঠক করা।

সিন্ধু চুক্তি নিয়ে উদ্ভূত সমস্যা যেভাবে সমাধান হয়
চুক্তি নিয়ে কোনো প্রযুক্তিগত প্রশ্ন উঠলে সেটি প্রথমে কমিশনের কাছে যায়। কমিশন যদি মতপার্থক্য দূর করতে ব্যর্থ হয়; তখন সেটি নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানোর সুযোগ রয়েছে। আইনগত বিরোধগুলো আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে পাঠানোরও সুযোগ রাখা হয়েছে চুক্তিতে। এখানে বিশ্ব ব্যাংক উভয় ফোরামে ভূমিকা পালন করে। এই প্রক্রিয়াটি আগে ভারতের ব্যাগলিহার এবং কিশানগঙ্গা বাঁধ নিয়ে উদ্ভূত বিরোধ সমাধান করতে ব্যবহৃত হয়েছে। চুক্তিটির মধ্যেই যেকোনো দেশের একতরফা পদক্ষেপ প্রতিরোধ করার বিধান রয়েছে; যদি তা পাশ কাটানোর সুযোগ কেউ না পায়।

সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, সিন্ধু পানি চুক্তির মেয়াদ শেষের কোনো তারিখ নেই এবং চুক্তি স্থগিত করার কোনো বিধানও নেই। 

চুক্তির ১২ অনুচ্ছেদে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, এটি কেবল পারস্পরিক সম্মতির মাধ্যমে পরিবর্তন বা সংশোধন করা যেতে পারে; যা শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কখনো করা হয়নি।

ভারতের সিদ্ধান্ত কি বাস্তবতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে
এখন প্রশ্ন হলো: ভারত কি চাইলেই পাকিস্তানে পানি প্রবাহ স্থগিত বা ‘বন্ধ’ করতে পারে? সরাসরি উত্তর হলো, ‘না’। বিশেষ করে উচ্চ প্রবাহ মৌসুমে (বরফ গলার সময়) যে পরিমাণ পানির প্রবাহ ঘটবে, তা বন্ধ করার ক্ষমতা ভারতের নেই।

সিন্ধু, ঝিলম ও চেনাব নদী দৈর্ঘে-প্রস্থে বিশাল। মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যখন বরফ গলে এই নদী তিনটি হাজার হাজার কোটি ঘন মিটার পানি বহন করে। নদীগুলোর কিছু উপরের দিকে ভারতের ব্যাগলিহার ও কিশানগঙ্গা বাঁধের মতো কিছু প্রকল্প রয়েছে। তবে সেগুলোর কোনোটিই ওই পরিমাণ পানি ধরে রাখার জন্য ডিজাইন করা হয়নি। এগুলো নদীর প্রবাহ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প, যার খুব সীমিত পানি সংরক্ষণ ক্ষমতা আছে। এখন ভারত যদি তার সমস্ত বাঁধের মধ্যে উত্তরের পানির প্রবাহ সমন্বয়ও করে, তবে এটি কেবল মৌসুমী প্রবাহের গতি সামান্য পরিবর্তন করতে পারবে; তার বেশি কিছু নয়।

এই উচ্চ প্রবাহের মৌসুমে পশ্চিমের নদীগুলোর সামগ্রিক পানি প্রবাহ অতিমাত্রায় বড় রূপ নেয়; যা ওপরের অঞ্চলকে না ভাসিয়ে সাধারণত ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠে না। ভারত এরই মধ্যে চুক্তির আওতাধীন পূর্বের নদীগুলোর বেশিরভাগ প্রবাহ ব্যবহার করে, তাই ওই নদীগুলোতে নতুন কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হলে নিম্নপ্রবাহে ব্যত্যয় ঘটবে। এটি পাকিস্তানের জন্য একটি উদ্বেগ।

পাকিস্তানের জন্য আরো একটি প্রাসঙ্গিক উদ্বেগ হলো- শুকনো মৌসুমে কী হবে, যখন বেসিনের মধ্যে প্রবাহ কম থাকে, পানি সংরক্ষণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় এবং হাতে সময়ও কম থাকে? এ নিয়ে চুক্তিতে স্পষ্ট বিধিবিধান না থাকায় সংকট প্রকট রূপেই অনুভূত হতে পারে।

মাঝারি থেকে দীর্ঘমেয়াদে উভয় দেশের জন্য পানি ব্যবস্থাপনার চিত্র আরো জটিল হয়ে ওঠতে পারে। যদি ভারত চুক্তির কাঠামোর বাইরে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে এটি পাকিস্তানের জন্য নতুন অবকাঠামো তৈরির দরজা খুলে দেবে; যা পানি প্রবাহের সময়কাল এবং পানির পরিমাণের ওপর আরো বেশি নিয়ন্ত্রণ আরোপের সুযোগ দেবে।

এদিকে নতুন করে যেকোনো বৃহৎ বাঁধ নির্মাণ বা পানি আটকে রাখার প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে অন্তত বছর লেগে যাবে। ভারত অধিগৃহীত কাশ্মীরে পানি সংরক্ষণের জন্য সম্ভাব্য স্থান পাওয়া কঠিন হবে এবং তাতে ভূতাত্ত্বিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। খরচ হবে অপরিসীম। আর রাজনৈতিক ঝুঁকি- সে তো আরো বেশি হবে।

পাকিস্তান অনেক দিন ধরে বলে আসছে, পশ্চিমের নদীগুলোতে নতুন করে পানি সংরক্ষণ করার উদ্যোগ ভারতের জন্য যুদ্ধের কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে। বর্তমানে স্যাটেলাইটের যুগে এই কাঠামোগুলো অদৃশ্য থাকবে না। এগুলো রাজনৈতিক এবং সম্ভবত সামরিকভাবে বিরোধিতার মুখে পড়বে।

ভারতের এ ধরনের উদ্যোগে পানি বিজ্ঞানগত সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। যেমন: চেনাব বা ঝিলমের মতো নদীগুলো উচ্চ প্রবাহ ধরে রাখলে ভারত নিজেই উপরের অঞ্চলে বন্যার ঝুঁকি তৈরি করবে। ইন্ডাস বেসিন থেকে পানি সরিয়ে ভারতের অন্যান্য অংশে পাঠানোর ধারণাটি অবকাঠানো নির্মাণ এবং জ্বালানির বিশাল খরচ দিক বিবেচনায় খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে।

ভারতের জন্য সুনামহানি ও কৌশলগত ঝুঁকি
ইন্ডাস বেসিন নিয়ে ভারতের জন্য সুনামহানি হওয়ার এবং কৌশলগত ঝুঁকিও রয়েছে। ভারত নিজেই ব্রহ্মপুত্র এবং অন্য নদীগুলোর নিম্নপ্রবাহের সঙ্গে যুক্ত। এসব নদী চীন থেকে উৎসারিত হয়ে ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত। ভারতের এই বাস্তবতা ঐতিহাসিকভাবে নিম্নপ্রবাহে থাকা অন্যান্য দেশের অধিকার সুরক্ষার কবচ বলা যেতে পারে।

ফলে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের মাধ্যমে একতরফা কোনো উদ্যোগ নিয়ে সেটি ভারতের জন্য বিশ্বে একটি খারাপ নজির স্থাপন করবে, যা একদিন তার বিরুদ্ধেই ব্যবহার হতে পারে। ভারতকে এর মূল্য চোকাতে হতে পারে; একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজেকে নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলতে পারে।

পাকিস্তানের জন্য সম্ভাব্য প্রভাব
যদিও ভারতের মাধ্যমে বিঘ্ন তৈরির ভৌত ও রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতা বাস্তব, তারপরও চুক্তিটি অরিক্ষত হয়ে পড়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। এটি এমন কারণে নয় যে, পানি আগামীকালই বন্ধ হবে, বরং ব্যবস্থাটির অনিশ্চয়তা দূর করা জরুরি। 

সিন্ধু, ঝিলম ও চেনাবের প্রবাহ পাকিস্তানের কৃষি, শহর-নগর এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ভিত্তিশিলা। এই মুহূর্তে, পাকিস্তানের কাছে এসব নদীর পানির কোনো বিকল্প নেই। 

ভারত বিঘ্ন সৃষ্টি করতে চাইলে পাকিস্তানের জন্য তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে। পাকিস্তানের সেচ ব্যবস্থা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এবং এটি প্রায় সম্পূর্ণভাবে পশ্চিমী নদীগুলোর প্রবাহের ওপর নির্ভর করে। কৃষকরা তাদের চাষের পরিকল্পনা করে থাকে পানির প্রবাহের মৌসুম ঘিরে। খালগুলোতে পানি প্রবাহের ডিজাইনও করা হয়েছে নদীর সঙ্গে মিলিয়ে। যদি সেই ছন্দ সামান্যও ব্যাহত হয়, তবে পানির ব্যবস্থা আস্তে আস্তে ভেঙে পড়তে পারে।

সবচেয়ে তাত্ক্ষণিক ঝুঁকি হলো পূর্বাভাসযোগ্যতার ঘাটতি
ভারত সিন্ধু চুক্তি থেকে সরে আসায় পাকিস্তানের জন্য তাৎক্ষণিক ঝুঁকি হবে পূর্বাভাসযোগ্যতার ঘাটতি। যদিও পাকিস্তানে আসা পানির মোট পরিমাণ পরিবর্তন না-ও হতে পারে, তবে যখন সেই পানি পৌঁছবে, তখন সামান্য পরিবর্তনও বাস্তব সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। গরমকালে চাষের শেষে সময়ে পানির সংকট হতে পারে বা শীতকালে প্রবাহে অপ্রত্যাশিতভাবে কমে যেতে পারে। ফলে ফসল ফলানোর মৌসুম নষ্ট হতে পারে, কম ফলন হতে পারে এবং ফসল ফলাতে ব্যয় বাড়তে পারে।

মিষ্টি পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় ইন্ডাস ডেলটা এরই মধ্যে সংকুচিত হচ্ছে। উপরের নদীগুলোর প্রবাহ কমে সেই পতনকে আরো ত্বরান্বিত করতে পারে, যা উপকূলীয় জীবিকা এবং মৎস্য সম্পদের জন্য উদ্বেগ তৈরি করবে।

নদীর পানি ব্যবহারের সময়সীমা বা প্রবাহের অভাব সরকারকে পানি বরাদ্দের বিষয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করতে পারে। এ থেকে আন্তঃপ্রদেশ দ্বন্দ্ব বৃদ্ধিরও ঝুঁকি বাড়বে। বিশেষ করে পাঞ্জাব ও সিন্ধুর মধ্যে, যেখানে পানি ভাগাভাগির বিতর্ক এরই মধ্যে রাজনৈতিকভাবে উত্তেজনা তৈরি করে রেখেছে।

পাকিস্তানের বিদ্যুতের এক-তৃতীয়াংশ জলবিদ্যুৎ থেকে আসে, যা তারবেলা, মঞ্জলা ও অন্যান্য বাঁধের মাধ্যমে প্রবাহিত পানি ব্যবহার করে উৎপন্ন হয়। যদি উপরের প্রবাহ কমে যায় বা ভুল সময়ে প্রবাহ ঘটে, তবে এটি উৎপাদনের সক্ষমতায় ধস নামাবে। এসব কেবলই অনুমান নয়। কারণ, পাকিস্তান ইতোমধ্যে পানি সংকটের দেশে পরিণত হয়েছে। এতদিন এই সংকট কাটিয়ে ওঠার প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে চললেও এবার ভারতের ঘোষণা পাকিস্তানে পানির অভাব আরো তীব্র করে তুলবে পারে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
সিন্ধু পানি চুক্তি দীর্ঘস্থায়িত্বের জন্য বিশ্বে প্রশংসিত হলেও ভারতের ঘোষণাটি হঠাৎ-ই এসেছে, এমন বলা যায় না। গত দশক ছিল এই চুক্তি নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বাড়তে থাকা টানাপোড়েনের গল্পের দশক।

ঝিলম নদীর ওপর নির্মিত ভারতের কিশানগঙ্গা বাঁধে পানি প্রবাহ সংকুচিত করা নিয়ে আন্তর্জাতিক সালিশ আদালত ২০১৩ সালে পাকিস্তানের পক্ষে রায় দেন। ঝিলমের নিম্নপ্রবাহে ন্যূনতম পরিবেশগত পানি ছাড়ার জন্য ভারতকে বাধ্য করেন আদালত। একইসঙ্গে বাঁধের জন্য পানি সংরক্ষণের সীমা পুনর্বহাল করা হয়। এই রায় চুক্তির কার্যকারিতার ধারাবাহিকতার প্রমাণ দেয়।

কিন্তু ২০১৬ সালে উরি সন্ত্রাসী হামলার পর সেই সমাধানসূত্রের গল্প বদলে যেতে শুরু করে। ভারত স্বাভাবিক সহযোগিতার দুয়ার বন্ধ করে দেয় এবং বিলম্বিত প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত করা শুরু করে দেয়। তখনো ভারত বলেছিল, ‘চুক্তির মধ্যে’ কাজ করছে তারা।

২০২৩ সালে পরিবর্তনের শুরু
২০১৬ সালে বলা ভারতের কথা ২০২৩ সালে এসে আরো পাল্টে যেতে থাকে। তখন ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তির ১২(৩) অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব দেয়। এই অনুচ্ছেদে উভয় দেশের সম্মতির মাধ্যমে চুক্তি পরিবর্তনের সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে পাকিস্তান সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।

এরপরের মাসগুলোতে উভয় দেশ প্রতিযোগিতামূলক আইনি কৌশল গ্রহণ করে। ভারত একটি নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ প্যানেল নিয়োগ করেছে, যারা বাঁধ ডিজাইনে প্রযুক্তিগত প্রশ্ন পর্যালোচনা করছে। পাকিস্তান যায় আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে। ২০২৫ সালের শুরুতেও উভয় দেশের সেই তৎপরতা অব্যাহত ছিল। তবে ভারতের চুক্তি প্রত্যাহারের ঘোষণা নিয়ে পূর্বাভাস ছিল না।
-(ঈষৎ সংক্ষেপিত)

লেখক পরিচিতি: হাসান ফারুক খান টাফটস ইউনিভার্সিটির আরবান অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল পলিসি অ্যান্ড প্ল্যানিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।

ঢাকা/রাসেল পারভেজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন হত প ক স ত ন র জন য প ন র প রব হ ইন ড স ব স ন র জন ত ক প রব হ স র জন য ব অন য ন য র নদ গ ল নদ গ ল র প রব হ র র জন য স ব যবহ র উভয় দ শ পদক ষ প প রকল প পর ম ণ হ র কর ড জ ইন ক জ কর ধ কর র ন করত উপর র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

নিজ নিজ দেশে ফিরছেন ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকেরা

ছবি: এএফপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ