ফের ৫০০০ পয়েন্টের নিচে শেয়ারবাজারের সূচক
Published: 24th, April 2025 GMT
ঢাকার শেয়ারবাজার ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স এখন ৫০০০ পয়েন্টের নিচে। গতকাল বৃহস্পতিবারের প্রায় ৫০ পয়েন্টসহ টানা ৯ দিনের দর পতনে ২৩২ পয়েন্ট হারিয়ে সূচকটি নেমেছে ৪৯৭২ পয়েন্টে। গত বছরের ২৮ অক্টোবর বা প্রায় ছয় মাস পর ফের এ সূচক বিনিয়োগকারীদের ‘মনস্তাত্ত্বিক বাঁধ-সীমা’ ৫০০০ পয়েন্ট পেরিয়ে নিচে নামল।
বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসসহ শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্ট বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মতে, সূচকের এমন পতনের কারণ বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়েছেন। শেয়ারবাজারে কী হচ্ছে বা আগামীতে কী হতে যাচ্ছে– এ বিষয়ে কোনো ধারণা পাচ্ছেন না তারা।
বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ও বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেন, শেয়ারবাজার বর্তমান পতনের বড় কারণ ‘নেতৃত্ব সংকট’। শেয়ারবাজারকে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের সততা নিয়ে হয়তো কোনো প্রশ্ন নেই, তবে সংবেদনশীল এ বাজারকে নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতা রাখেন কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
জানতে চাইলে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেন, গত আগস্টে দুর্নীতিগ্রস্ত শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আট মাস কেটে গেছে। এখন রাষ্ট্র ব্যবস্থার সর্বক্ষেত্রে সংস্কার কার্যক্রম চলছে। বিনিয়োগকারীরা এখন জানতে চান– শেয়ারবাজারে কী ধরনের সংস্কার হবে, ওই সংস্কার বিনিয়োগকারীবান্ধব হবে কিনা, এ জন্য কতটা সময় লাগবে, অতীতের দুর্নীতি ও অনিয়মের জন্য কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তার জন্য শেয়ারবাজারের বিদ্যমান ব্যবস্থায় বড় কোনো পরিবর্তন আসবে কিনা? বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে এমন অনেক মৌলিক প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন সবাই। কিন্তু উত্তর নেই। এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির দেওয়ার কথা। কর্মকর্তারা জানান, সংস্থাটির নেতৃত্বে যারা আছেন, তাদের নানাভাবে বলা হলেও এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না। সংস্কারের বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নে সাত মাস আগে টাস্কফোর্স গঠন হলেও শেয়ারবাজারে সুশাসন ফেরানো এবং যোগ্য নেতৃত্ব সংকট দূর করার বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো প্রস্তাব করতে পারেনি। ভবিষ্যতে এমন প্রস্তাব দিলেও তা বাস্তবায়নে কতদিন লাগবে, তা নিয়ে সন্দিহান সবাই। এর প্রভাব রয়েছে শেয়ারবাজারে।
দর পতনের স্বরূপ
গত ৯ দিনের দর পতনে ৮৮ শতাংশ শেয়ারই দর হারিয়েছে। গতকালের লেনদেনেও তালিকাভুক্ত তিন-চতুর্থাংশ শেয়ার দর হারাতে দেখা যায়। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ৯ কর্মদিবসে তালিকাভুক্ত ৩৬০ কোম্পানির শেয়ার ও ৩৭ মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৪৯টির দর হারিয়েছে। এর মধ্যে কমপক্ষে ১০ থেকে ৩৯ শতাংশ পর্যন্ত দর হারিয়েছে ১৩০ শেয়ার, যেখানে মাত্র ৭টির দর ১০ শতাংশের ওপর বেড়েছে। এক সময়ের হাজার কোটি টাকার লেনদেন নেমেছে তিনশ কোটির ঘরে।
দেশের শেয়ারবাজারে এর আগে টানা ৯ দিন দর পতন হয়েছিল গত বছরের ১৩ থেকে ২৬ মে পর্যন্ত। তখন সূচকটি হারিয়েছিল প্রায় ৪৪৬ পয়েন্ট। অবশ্য গত বছরের টানা ৯ দিনের দর পতনের প্রেক্ষাপট আর এবারের দর পতনের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা।
গত বছরের মে মাসের দর পতন ছিল স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার পতনের মাত্র তিন মাস আগের ঘটনা। পতিত ওই সরকারের লাগামহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে অর্থনীতি ভেতর থেকে যে ভেঙে পড়ার দশায় উপনীত হয়েছিল, তার স্বরূপ প্রকাশ হচ্ছিল। বৈদেশিক মুদ্রার সংকট তীব্র হয়ে উঠেছিল, যার কারণে আমদানি-রপ্তানি ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছিল। অনেক আমদানি এলসির বিপরীতে অর্থ পরিশোধ করতে পারছিল না। ফলে রপ্তানি বাণিজ্য তো বটেই, অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বড় সংকটে পড়ে। ওই অবস্থায় শেয়ারবাজারের দর পতন ছিল অবসম্ভাবী ঘটনা। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সে অবস্থার অনেকটাই বদল হয়েছে। দেশ পরিচালনায় অভিজ্ঞ না হওয়া সত্ত্বেও ড.
সংশ্লিষ্টদের মন্তব্য
জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন সমকালকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কিছুটা অস্থিরতা থাকলেও অর্থনীতিতে বড় সংকট নেই। নতুন করে বিনিয়োগ না হলেও অর্থনীতি ক্রমে রুগ্ণ দশা কাটিয়ে উঠছে– এর স্পষ্ট ইঙ্গিত আছে। অথচ এর প্রতিফলন শেয়ারবাজারে নেই। শেয়ারবাজারের একটা লোকসানি কোম্পানি যখন একটা প্রান্তিকে মুনাফা করেছে বলে খবর দেয়, তখনই ওই শেয়ারের দর বেড়ে যায়। অথচ একটা দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়ার থেকে বেঁচে গেছে, এর কোনো প্রভাব ওই দেশের শেয়ারবাজারে নেই, এটা কল্পনাতীত বিষয়। বিনিয়োগকারীরা কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ পরিবেশ না পেলে বিনিয়োগ করেন না। বিনিয়োগ না এলে পতন অবসম্ভাবী। এখনকার বাজারে এটাই হচ্ছে।
বিনিয়োগকারীরা কী ধরনের বিনিয়োগ পরিবেশ প্রত্যাশা করেন– এমন প্রশ্নে ডিবিএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোহাম্মদ সাইফুজ্জামান বলেন, শেয়ারবাজারে তথ্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তথ্যপ্রবাহে ঘাটতি থাকলে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আগ্রহী হন না। দেশের বড় ধরনের পরিবর্তনের এ সময়ে মানুষ সম্ভাব্য পরিবর্তনগুলো বিষয়ে ধারণা পেতে চান। তারা নিশ্চিত হতে চান, এখন বিনিয়োগ করলে ভবিষ্যতের কোনো পরিবর্তন তাঁর বিনিয়োগ নষ্ট হবে না।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র শ য় রব জ র র র দর পতন কর মকর ত গত বছর র পতন র প র পতন র সরক র র দর হ র ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
সেই রাহুলই লক্ষ্ণৌয়ে ফিরে গড়লেন রেকর্ড, জিতল দিল্লি
প্রথমে করলেন ফিফটি। সেই ফিফটিতেই পৌঁছালেন আইপিএলে দ্রুততম ৫০০০ রানের মাইলফলকে। এরপর ছক্কা মেরে দিল্লি ক্যাপিটালকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন। সাবেক দল লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসকে জবাব দিতে লোকেশ রাহুলের আর কী চাই!
ঘরের মাঠ অটল বিহারী বাজপেয়ী স্টেডিয়ামে আজ আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬ উইকেটে ১৫৯ রান করেছিল লক্ষ্ণৌ। জবাবে রাহুলের অপরাজিত ৫৭ রানের সুবাদে ৮ উইকেট ও ১৩ বল বাকি রেখে জিতে গেল দিল্লি।
৮ ম্যাচের ৬টিতে জেতা দিল্লির পয়েন্ট হলো ১২। সমান পয়েন্ট গুজরাট টাইটানসেরও। কিন্তু নেট রান রেটে এগিয়ে থাকায় গুজরাট শীর্ষে আর দিল্লি দুইয়েই রয়ে গেল।
আইপিএলে সর্বশেষ তিন মৌসুম লক্ষ্ণৌর হয়ে খেলেছেন রাহুল। ভারতের উত্তর প্রদেশের দলটিকে প্রত্যেক মৌসুমেই নেতৃত্বও দিয়েছেন। তাঁর অধিনায়কত্বে ২০২২ ও ২০২৩ সালে লক্ষ্ণৌ প্লে–অফে উঠলেও ২০২৪ সালে ব্যর্থ হয়েছে। গত বছর একটি ম্যাচে দল হারার পর লক্ষ্ণৌ মালিক সঞ্জীব গোয়েঙ্কার ধমকও খেতে হয়েছে রাহুলকে। শেষ পর্যন্ত তাঁকে ছেড়েও দিয়েছে।
রাহুলকে এবারের মেগা নিলাম থেকে কিনে নেয় দিল্লি ক্যাপিটালস। সেই তিনিই প্রতিপক্ষ খেলোয়াড় হিসেবে প্রথমবার লক্ষ্ণৌয়ে গিয়ে তাদের কষ্ট দিলেন; সঙ্গে গড়লেন আইপিএলে দ্রুততম ৫০০০ রানের রেকর্ড।
এই মাইলফলকে পৌঁছাতে রাহুলের লাগল ১৩০ ইনিংস। তিনি পেছনে ফেললেন ডেভিড ওয়ার্নারকে। অস্ট্রেলিয়ার এই কিংবদন্তির আইপিএলে ৫০০০ রান ছুঁতে লেগেছিল ১৩৫ ইনিংস। আইপিএল ইতিহাসের অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে পাঁচ হাজারি ক্লাবে নাম লেখালেন রাহুল।
তবে আজ লক্ষৌকে অল্পতে বেঁধে ফেলার কাজে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছেন মুকেশ কুমার। দিল্লির এই পেসার ৩৩ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট, যা তাঁর আইপিএল ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং। ম্যাচসেরার পুরস্কারও মুকেশের হাতে উঠেছে।
সংক্ষিপ্ত স্কোরলক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস: ২০ ওভারে ১৫৯/৬ (মার্করাম ৫২, মার্শ ৪৫, বাদোনি ৩৬; মুকেশ ৪/৩৩, স্টার্ক ১/২৫, চামিরা ১/২৫)।
দিল্লি ক্যাপিটালস: ১৭.৫ ওভারে ১৬১/২ (রাহুল ৫৭*, পোরেল ৫১, অক্ষর ৩৪*, নায়ার ১৫; মার্করাম ২/৩০)।
ফল: দিল্লি ক্যাপিটালস ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মুকেশ কুমার।