কাশ্মীরে ২৬ জন পর্যটকের একটি দল হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার এক দিন পর ভারত সরকার বুধবার দেশটির জনমের শত্রু পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলেছে। তারা প্রতিবেশী দেশটির বিরুদ্ধে একের পর এক শাস্তিমূলক বিবৃতি দিয়েছে, যেখানে আরও জোরালো প্রতিশোধ নেওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে। ভারত সরকার এরই মধ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে একটি পানিচুক্তি বাতিল করেছে, যে চুক্তি ১৯৬০ সালে কার্যকর হয়। তখন থেকে ভারত নদীপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছে, যার ওপর পাকিস্তানের সেচ ব্যবস্থা নির্ভরশীল। ভারত দুই দেশের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থল সীমান্ত বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছিল। দেশটি ঘোষণা করেছিল, তারা নয়াদিল্লি মিশন থেকে পাকিস্তানের সামরিক উপদেষ্টাদের বহিষ্কার এবং নাগরিকদের জন্য ইতোমধ্যে সীমিত ভিসা আরও সীমিত করে কূটনৈতিক সম্পর্ক কমিয়ে আনছিল। 

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানে ভারতবর্ষকে বিভক্ত এবং পাকিস্তানকে একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে আলাদা করা হয়। এর পর থেকে ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই কাশ্মীর দাবি করে আসছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর অঞ্চলে এই দুটি দেশ বিভক্ত হয়ে পড়েছে। প্রতিটি দেশ একটি অংশ পরিচালনা করলেও উভয়ে পুরো অঞ্চলটি দাবি করছে। 

মঙ্গলবারের মতো হামলার নেপথ্যে জঙ্গিদের আশ্রয় ও মদদ দেওয়ার জন্য ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে দোষারোপ করে। ২০১৯ সালে একটি জঙ্গি হামলায় কয়েক ডজন ভারতীয় নিরাপত্তাকর্মী নিহত হয়। ফলে দেশ দুটির মধ্যে বিমানযুদ্ধ শুরু হলেও সর্বাত্মক যুদ্ধ না বেধে তার সমাপ্তি হয়। 
‘আমার মনে হয়, এই হামলার পেছনে পুরো ধারণাটি ছিল এই ভাষ্য ভেঙে দেওয়া– আপনি জানেন, এখানে সবকিছু স্বাভাবিক।’ কাশ্মীরে অবস্থিত ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় কমান্ডের নেতৃত্ব দানকারী অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় সেনা জেনারেল ডি.

এস. হুদা কথাটি বলেন। তিনি বলেন, নিহতরা বেসামরিক নাগরিক এবং ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় জঙ্গিরা হিন্দুদের আলাদা করে চিহ্নিত করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য মোদি বিশ্বমঞ্চে ভারতের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক শক্তির ওপর মনোযোগ দেন। এমনকি দেশটি পাকিস্তানি শিল্পীদের বলিউড থেকে এবং পাকিস্তানি ক্রীড়াবিদদের ভারতীয় ক্রিকেট লিগ থেকে দূরে রেখেছে। অঞ্চলটির জন্য এ দুটি শিল্প অত্যন্ত লাভজনক। মোদি এর আগে পাকিস্তানের এস্টাবলিশমেন্টকে জঙ্গিদের প্রক্সি হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করতে চাপ দেওয়ার কৌশল হিসেবে পানি সরবরাহ সীমিত করার হুমকি দিয়েছিলেন। পাকিস্তানের খাদ্য উৎপাদনের প্রায় ৯০ শতাংশ সিন্ধু নদ ব্যবস্থা থেকে ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত পানির ওপর নির্ভরশীল।
‘রক্ত ও জল একসঙ্গে প্রবাহিত হতে পারে না’– ২০১৬ সালে আরেকটি হামলার পরপরই এক সভায় মোদি পাকিস্তানে নদীপ্রবাহের যুক্ততার কথা উল্লেখ করে সতর্কবাণী হিসেবে এ কথা বলেছিলেন। ২০১৯ সালে ভারত সরকার পানি বন্ধ করার হুমকি দিয়েছিল, কিন্তু তা কার্যকর করেনি। ২০১৯ সালে মোদি কাশ্মীরের আধা স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নিয়েছিলেন এবং নয়াদিল্লির সরাসরি শাসনাধীনে আনার জন্য স্থানীয় গণতন্ত্র ভেঙে দেন। 

বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে ছোট আকারের আক্রমণ অব্যাহত থাকলেও মোদির কর্মকর্তারা ক্রমবর্ধমানভাবে মনে করছিলেন, তাদের কৌশল কাজ করছে। তারা বলেছেন, কাশ্মীর অধ্যায় পাল্টে গেছে এবং তারা এর উন্নয়নের ওপর মনোযোগ দিতে পারে। উন্নতির প্রধান সূচক ছিল সারাদেশ থেকে উপত্যকায় পর্যটকদের আগমন বৃদ্ধি।
মঙ্গলবারের গণহত্যার ঘটনাটি সেই কৌশলের সীমা উদোম করে দিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত তার উত্তর সীমান্তে আরও বড় হুমকির মুখোমুখি ছিল। কারণ ২০২০ সালে আরও উগ্র চীনারা হিমালয় অঞ্চল লাদাখে ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল এবং তারা এ সময় ভারতীয় ভূখণ্ড অতিক্রম করেছিল। 
ভারত ও চীনের সেনাবাহিনী চার বছরেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধাবস্থা পরিস্থিতিতে ছিল। সম্প্রতি তারা নিজেদের সেনা প্রত্যাহার করেছে। সেই সময় ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্তে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়ে দুই ফ্রন্টের সংঘর্ষের আশঙ্কা এড়াতে চেয়েছিল। যদিও তখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগ ছিল ন্যূনতম এবং ভারতে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ অব্যাহত থাকলেও যুদ্ধবিরতি বহাল ছিল।

মুজিব মাশাল ও সুহাসিনী রাজ: সাংবাদিক; নিউইয়র্ক টাইমস থেকে সংক্ষেপিত
ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য প রব হ র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ারে বিনিয়োগে আইসিবির শর্ত শিথিল

ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ‘এ’ ক্যাটাগরির একক শেয়ারে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ সীমা ৫ শতাংশ হতে অব্যাহতি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। অর্থাৎ এখন থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ারে ৫ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ করতে পারবে আইসিবি।

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ৯৫২তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) আবেদনের প্রেক্ষিতে এবং দেশের পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা বিবেচনায় মূলভিত্তি সম্পন্ন ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময় সিকিউরিটিজে অধিক বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানিসমূহের একক শেয়ারে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ সীমা ৫ শতাংশ হতে আইসিবিকে অব্যাহতি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে আইসিবি কর্তৃক বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার অর্জন, অধিগ্রহণ ও কর্তৃত্ব গ্রহণ) বিধিমালা, ২০১৮ এর প্রাসঙ্গিক বিধিমালা যথাযথভাবে পরিপালন করতে হবে। এ ছাড়া,কমিশনের পত্র নং-BSEC/SRMID /2011/1240/847; তারিখ: অক্টোবর ২৯, ২০১৯ এর আওতায় শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালক কর্তৃক শেয়ার ধারণ সংক্রান্ত কমিশনের নোটিফিকেশন নং-BSEC/CMRRCD/2009-193/217/Admin/ 90; তারিখ: মে ২১, ২০১৯ এর প্রাসঙ্গিক শর্তাবলী যথাযথভাবে পরিপালন করতে হবে।

ঢাকা/এনটি/এনএইচ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের কাছে বিকল্প কী?
  • পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সামরিক পদক্ষেপের শঙ্কা
  • কাশ্মীরে হামলা: ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ সম্পর্কে যা জানা গেল
  • ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা কতটা গড়াতে পারে
  • কাশ্মীরে পর্যকটদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলা, নিহত ২০ জনের বেশি
  • ‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ারে বিনিয়োগে আইসিবির শর্ত শিথিল
  • দীর্ঘদিনের প্রেমিকাকে বিয়ে করলেন অভিনেত্রী ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট
  • শ্রীলঙ্কার ইস্টার বোমা হামলায় নিহতদের স্বীকৃতি দিল ভ্যাটিকান