Samakal:
2025-04-24@21:45:39 GMT

প্রাচীন তাম্রলিপি

Published: 24th, April 2025 GMT

প্রাচীন তাম্রলিপি

কোন এক প্রাক-বসন্তে এভাবেই কয়েকটা
পরিণামহীন আর কোলাহলবর্জিত লোকালয় পেরিয়ে
আমরা দু’জনে হাত ধরাধরি করে 
এক প্রহেলিকাপূর্ণ সূর্যাস্তের বুলন্দ দরওয়াজার 
পাদদেশে এসে দাঁড়িয়েছিলাম। 

তোমার সবুজ মায়াবী জুতোর গায়ে
সুগন্ধি পাথর খোদাই করা–
বসরাই এবং সুবর্ণগ্রামের বাণিজ্যপথের উপঢৌকন;
তোমার হাতের আঙুলে জড়ানো মসলিন
ক্রমশ প্রসারিত হয়েছিল এক সুডৌল, প্রেতযৌবনা শঙ্খে।
শিহরনে সমর্পিত হয়েছিলাম, হয়তো তুমিও;
রক্তে-ঘামে লেখা হয়েছিল বুঝি আমাদের যৌথ ললিতকাব্য।

অবশেষে, আমারই ইশারায় আর তোমার বিলম্বিত সম্মতিতে
এক জটিল পথ পরিক্রমার পরিকল্পনা করেছিলাম যখন
তোমার নিজস্ব বিশ্বাসকে তুমি ত্যাগ করতে সম্মত হয়েছিলে।
তোমার সেই স্খলনকে এক অতিপ্রাকৃত, প্রেত-তাড়িত প্রেম 
বলে শনাক্ত করতে পেরেছিলাম। 
মসলিন-আবৃত, প্রসারিত বাহু তোমার কোমল নখরে
আমাকে রক্তাক্ত করার সম্মতিও দিয়েছিলাম।
সে এক আশ্চর্য চৈত্রের দহনের স্মৃতি। 

অতঃপর, 
আলোকস্পৃষ্ট পতঙ্গ আমরা
চক্রাকার কাল-সমুদ্রে
পাক খেতে খেতে 
বাঁক ঘুরে ঘুরে
মন্দ্রসপ্তকে সঞ্চারমান এক মোহন কামারশালার
সামনে এসে পৌঁছেছিলাম।
যেন ঋষ্যশৃঙ্গের গুল্ম-গ্রন্থিল আশ্রমের প্রবেশমুখে
প্রার্থনারত নিঃসন্তান দম্পতি।
হাতুড়ি-ছেনির দ্বৈরথ মিথুন আমাদের দু’জনকেই প্রত্যক্ষ করতে হলো;
অবশেষে, প্রাচীন এক তাম্রলিপিতে শিহরিত হলো আমাদের নাম;
এভাবেই আমরা বিস্মরণীর নখর হতে মুক্ত হতে চেয়েছিলাম।

শুধু আমি জানি 
সেই রাতে তুমি তোমার নিজস্ব ঈশ্বরকে ক্ষমা করে দিয়েছিলে।

তারপর ফিরে আসা
ফিরে যাওয়া 
ফিরে দেখা
ফিরে চাওয়া
ঘুরে ঘুরে সেই 
বক্রিম চঞ্চল পথ 
স্পর্শালোকিত তোমার।

আজও শুনি সেই শঙ্খের হ্রেষা রব
পুরোনো পৃথিবীর পথ চিনে নেবার,
যদিও ফাটল ধরেছে তার
বাহু, কবন্ধ, হাড়
বৃথা আক্রোশে কেবল অনুতপ্ত হাওয়ায়,
বাতাসে নিঃশ্বাস ফেলে।
অথচ চেয়ে দেখো–
এই তো যেন স্পর্শ করছি
তোমার খয়েরি চোখ, চৌচির বল্লভ
তোমার সমুদ্র শ্লোক, মন্থর বিজ্ঞান
তোমার প্রাচীন প্রস্তর জ্ঞান, 
লুপ্ত সভ্যতায় বিস্মৃত দেবতার হাহাকার। 

এসবই আজ 
আমাদের যূথস্মৃতিতে অস্তিত্বমান
কেবল পিছু ফিরে তাকাবার পাপে
অদৃশ্য সেই দরওয়াজা– জানি আর কখনও খুলবে না। 


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হয় ছ ল আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রাচীন তাম্রলিপি

কোন এক প্রাক-বসন্তে এভাবেই কয়েকটা
পরিণামহীন আর কোলাহলবর্জিত লোকালয় পেরিয়ে
আমরা দু’জনে হাত ধরাধরি করে 
এক প্রহেলিকাপূর্ণ সূর্যাস্তের বুলন্দ দরওয়াজার 
পাদদেশে এসে দাঁড়িয়েছিলাম। 

তোমার সবুজ মায়াবী জুতোর গায়ে
সুগন্ধি পাথর খোদাই করা–
বসরাই এবং সুবর্ণগ্রামের বাণিজ্যপথের উপঢৌকন;
তোমার হাতের আঙুলে জড়ানো মসলিন
ক্রমশ প্রসারিত হয়েছিল এক সুডৌল, প্রেতযৌবনা শঙ্খে।
শিহরনে সমর্পিত হয়েছিলাম, হয়তো তুমিও;
রক্তে-ঘামে লেখা হয়েছিল বুঝি আমাদের যৌথ ললিতকাব্য।

অবশেষে, আমারই ইশারায় আর তোমার বিলম্বিত সম্মতিতে
এক জটিল পথ পরিক্রমার পরিকল্পনা করেছিলাম যখন
তোমার নিজস্ব বিশ্বাসকে তুমি ত্যাগ করতে সম্মত হয়েছিলে।
তোমার সেই স্খলনকে এক অতিপ্রাকৃত, প্রেত-তাড়িত প্রেম 
বলে শনাক্ত করতে পেরেছিলাম। 
মসলিন-আবৃত, প্রসারিত বাহু তোমার কোমল নখরে
আমাকে রক্তাক্ত করার সম্মতিও দিয়েছিলাম।
সে এক আশ্চর্য চৈত্রের দহনের স্মৃতি। 

অতঃপর, 
আলোকস্পৃষ্ট পতঙ্গ আমরা
চক্রাকার কাল-সমুদ্রে
পাক খেতে খেতে 
বাঁক ঘুরে ঘুরে
মন্দ্রসপ্তকে সঞ্চারমান এক মোহন কামারশালার
সামনে এসে পৌঁছেছিলাম।
যেন ঋষ্যশৃঙ্গের গুল্ম-গ্রন্থিল আশ্রমের প্রবেশমুখে
প্রার্থনারত নিঃসন্তান দম্পতি।
হাতুড়ি-ছেনির দ্বৈরথ মিথুন আমাদের দু’জনকেই প্রত্যক্ষ করতে হলো;
অবশেষে, প্রাচীন এক তাম্রলিপিতে শিহরিত হলো আমাদের নাম;
এভাবেই আমরা বিস্মরণীর নখর হতে মুক্ত হতে চেয়েছিলাম।

শুধু আমি জানি 
সেই রাতে তুমি তোমার নিজস্ব ঈশ্বরকে ক্ষমা করে দিয়েছিলে।

তারপর ফিরে আসা
ফিরে যাওয়া 
ফিরে দেখা
ফিরে চাওয়া
ঘুরে ঘুরে সেই 
বক্রিম চঞ্চল পথ 
স্পর্শালোকিত তোমার।

আজও শুনি সেই শঙ্খের হ্রেষা রব
পুরোনো পৃথিবীর পথ চিনে নেবার,
যদিও ফাটল ধরেছে তার
বাহু, কবন্ধ, হাড়
বৃথা আক্রোশে কেবল অনুতপ্ত হাওয়ায়,
বাতাসে নিঃশ্বাস ফেলে।
অথচ চেয়ে দেখো–
এই তো যেন স্পর্শ করছি
তোমার খয়েরি চোখ, চৌচির বল্লভ
তোমার সমুদ্র শ্লোক, মন্থর বিজ্ঞান
তোমার প্রাচীন প্রস্তর জ্ঞান, 
লুপ্ত সভ্যতায় বিস্মৃত দেবতার হাহাকার। 

এসবই আজ 
আমাদের যূথস্মৃতিতে অস্তিত্বমান
কেবল পিছু ফিরে তাকাবার পাপে
অদৃশ্য সেই দরওয়াজা– জানি আর কখনও খুলবে না। 


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ