নারী মহাকাশচারীর গ্রাফিক উপন্যাস সরিয়ে নিল নাসা
Published: 24th, April 2025 GMT
‘ফার্স্ট ওম্যান: নাসা’স প্রমিস টু হিউম্যানিটি’ শিরোনামের ডিজিটাল গ্রাফিক উপন্যাসটি নাসার ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি চাঁদে একজন নারী ও অশ্বেতাঙ্গ মানুষকে পাঠানোর প্রতিশ্রুতির বিষয়টিও সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
চাঁদে মহাকাশযাত্রীদের নেতৃত্বদানকারী কমান্ডার ক্যালি রদ্রিগেজের অসামান্য গল্প ঘিরে তৈরি উপন্যাস ‘ফার্স্ট ওম্যান: নাসা’স প্রমিস টু হিউম্যানিটি’। পরবর্তী প্রজন্মের অভিযাত্রীদের আগ্রহী করে তুলতে নাসা ২০২১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর প্রথম প্রকাশ করে ডিজিটাল এ উপন্যাস। ক্যালির বিস্ময়কর অভিযাত্রার অপ্রতিরোধ্য সব গল্প উপস্থাপন করা হয়েছিল এতে। তুলে ধরা হয়েছিল–আবেগ, নিষ্ঠা এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে কীভাবে তিনি স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করেন। বইটি প্রকাশের দিন থেকে বিনামূল্যে বইটি ডাউনলোড করা যেত। এখন আর এটি নাসার ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে না। একই সঙ্গে এর সিক্যুয়াল ‘ফার্স্ট ওম্যান: এক্সপ্যান্ডিং আওয়ার ইউনিভার্স’ও নেই প্রতিষ্ঠানটির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে। তবে, বইটির জন্য তৈরি একটি অ্যাপ এখনও অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের চাপে মার্কিন সরকারের বিভিন্ন বিভাগ এবং সংস্থাগুলো বৈচিত্র্য, ন্যায্যতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসূচি এবং উপকরণ (ডিইআই) বাদ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নাসার ওয়েবসাইট থেকে গ্রাফিক উপন্যাসগুলো সরিয়ে ফেলার বিষয়টি বেশ উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে, নাসা হোয়াইট হাউসের নির্দেশ মেনে চলছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘ডাইভারসিটি’ বা বৈচিত্র্য অপসারণ নীতি অব্যাহত থাকায় প্রতিষ্ঠিত বিষয়গুলো বাদ দেওয়া হয়। এমনকি ‘কোডেড বা অস্পষ্ট ভাষা ব্যবহার করে এই প্রোগ্রামগুলো ছদ্মবেশে রাখার’ চেষ্টা করতে পারে এমন যেকোনো সহকর্মীর বিরুদ্ধে রিপোর্ট তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বিচার, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন দাবি
সাভারে রানা প্লাজা ধসের এক যুগ পূর্ণ হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার। ক্ষোভ আর কান্নায় নিহতদের স্মরণ করা হয়েছে। এ ঘটনার বিচার, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন চেয়েছেন নিহতের স্বজন, আহত ব্যক্তি ও বিশিষ্টজন।
সকাল থেকে রানা প্লাজার সামনে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। সকাল ৭টায় বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি বাজার বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু হয়ে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে এসে শেষ হয়। পরে সংগঠনের পক্ষ থেকে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ ছাড়া রাষ্ট্র সংস্কার শ্রমিক আন্দোলন, গার্মেন্টস টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন ও গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র শ্রদ্ধা জানায়।
এ সময় টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, ‘এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির আয়োজনে রানা প্লাজার সামনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। তিনি অভিযোগ করেন, বিদেশি সংস্থাগুলো উদ্ধার কার্যক্রম চালাতে চাইলে শেখ হাসিনা রাজি হননি। এ সময় তিনি এই দিনটিকে জাতীয় শ্রমিক দিবস ঘোষণার দাবি জানান।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের আইনবিষয়ক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, ‘ভবন মালিক এক যুগ ধরে জেলে আছেন, বিচারকাজ শেষ হয়নি। কারখানা মালিকরা বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।’
সাভারের রানা প্লাজা ধসের এক যুগেও জড়িতদের শাস্তি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নারী শ্রমিক শিলা বেগম। তিনি জানান, সেদিন তার ডান হাতের রগ কেটে যায়। পেটে ভিম পড়ে নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যায়। ভেঙে যায় মেরুদণ্ড। এখন অন্যের সহায়তায় বেঁচে আছেন। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। মেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগাতে পারছেন না। তাদের পুনর্বাসন করা না হলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনশনে বসবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
দোষীদের বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আরেক শ্রমিক ইয়ানুর বলেন, ‘আমরা আর্থিক সহযোগিতা, সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন চাই।’
বাংলাদেশ টেক্সটাইল-গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম ইসমাইল বলেন, রানার জায়গা ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে আহত এবং নিহত শ্রমিক পরিবারকে পুনর্বাসন করতে হবে।
ক্ষতিপূরণ পাওয়া শ্রমিকের অধিকার
ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকের আজীবন আয়ের মানদণ্ডে ক্ষতিপূরণ পাওয়াকে অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজন। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে ‘কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা কনভেনশন ২০২৫’ অনুষ্ঠানে তারা এ দাবি জানান। সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের উদ্যোগে এ কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়।
শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুলের পরিচালনায় কনভেনশনে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী। বক্তব্য রাখেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, অর্থনীতিবিদ এমএম আকাশ, মানবাধিকার কর্মী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক আনোয়ার হোসেন, চৌধুরী আশিকুল আলম, এনসিসিডাব্লিউইর চেয়ারম্যান বাদল খান, জিআইজেড সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরামের সদস্য সচিব সিকান্দার আলী মিনা প্রমুখ।
দ্রুত বিচার চায় আইবিসি
দায়ীদের দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানসহ আট দফা দাবি তুলে ধরেছে ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিল (আইবিসি)। নেতারা বলেছেন, রানা প্লাজা নিছক ভবনধস নয়, এটি ব্যর্থ রাষ্ট্রীয় শিল্প কাঠামোর প্রতীক। এই ভবন ধসের ১২ বছর পরও শ্রমিকদের নিরাপত্তা, কণ্ঠস্বর এবং সংগঠিত হওয়ার অধিকার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
গতকাল ডিআরইউ মিলনায়তনে আইবিসি আয়োজিত ‘রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১২ বছর, শ্রদ্ধা, উপলব্ধি ও করণীয়’ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন আইবিসির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সালাউদ্দিন স্বপন। উপস্থিত ছিলেন আইবিসির সভাপতি তৌহিদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ভবন ধসে ১ হাজার ১৩৮ শ্রমিক মারা যায় এবং আহত হয় প্রায় ২ হাজার শ্রমিক।