যখন গ্রীষ্ম চলছে, এর উত্তাপের প্রতাপ সবটুকু নয়। গ্রীষ্মমণ্ডলের মানুষ কিন্তু এর উপহার দেওয়া রস রূপ রঙের কথাও ভোলে না। শীতমণ্ডলের মানুষের কাছে তো সে গ্রীষ্ম আরও আরাধ্য। যদিও বৈশাখ নামে নয়, সেখানে অন্য নাম আছে। তবু বিশাখা নক্ষত্রের প্রভাব তো আর নাম বদলালে বদলে যায় না। কিছুদিন আগে নববর্ষ এসে মৌলিক রঙের ঢেউ বইয়ে দিয়ে গেল। মৌলিক রঙগুলো কী যে উজ্জ্বল, প্রাণময়, বাঙ্ময়! রঙগুলো যখন কথা বলে, তখন এর মানুষ-দর্শকের কথা থেমে যায়। গ্যালারি ইলিউশনে ‘গ্রীষ্মের রঙ’ নামে একটি প্রদর্শনী গত ১৮ এপ্রিল থেকে চলছে। স্থান পেয়েছে বর্ণিল, অনুপম সমস্ত চিত্রকর্ম। ছবি যারা ভালোবাসেন, দেখতে অথবা সংগ্রহ করতে ব্যগ্র, তাদের জন্যে এ আয়োজন আনন্দদায়ক হবে সন্দেহ নেই। পঞ্চাশজন শিল্পী এতে অংশ নিয়েছেন। একসঙ্গে দেশের অর্ধশত প্রণিধানযোগ্য শিল্পীর কাজ সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করতে পারা এক বড় কাজ। রাজধানীর লালমাটিয়ার গ্যালারি ইলিউশন এ যোগ্যতার পরিচয় যথাসাধ্য দিয়ে চলেছে। প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া দেশবরেণ্য শিল্পীদের ভেতর হামিদুজ্জামান খান, আবদুশ শাকুর শাহ, ফরিদা জামান, বীরেন সোম, জামাল আহমেদ, অলকেশ ঘোষ, সমর মজুমদার, কনকচাঁপা চাকমা, মোহাম্মদ ইউনুস, আফজাল হোসেন, মোহাম্মদ ইকবাল, মাহমুদুর রহমান দীপন, কারু তিতাস প্রমুখ রয়েছেন। হামিদুজ্জামান খানের শিল্পকর্মের নাম সি স্কেপ। সমুদ্রবর্তী মাটির এক রহস্যমিতা চিত্রায়ণ। ছবিটি না-মূর্ত, না-বিমূর্ত। শান্ত সাগরের জল এসে বেলাভূমি ছুঁয়ে যাচ্ছে। কিছু জল কি কোনো খাদে আটকা পড়েছে? সেই জলের রঙ সবুজাভ। যেন সমুদ্র এসে ওইটুকু জলাধারে প্রাণের সঞ্চয় রেখে গেল। ছবিটির দাম পঁচাত্তর হাজার টাকা। আবদুশ শাকুর শাহের ছবিটি তাঁর একান্ত নিজস্ব চিত্রধারার অনুবর্তী। লোকজ পুরাণঘেঁষা। ছবির নাম ভিলেজ স্টোরি। গ্রাম্য মেয়ে তার পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে, প্রকৃতির সঙ্গে লীন। সেখানে আকাশের নীল, ঝরাপাতার হলুদ, টিপের লাল, দেহের শ্যামল রঙ পরস্পরের সঙ্গে সখ্য পাতিয়েছে। দৃষ্টিসুখকর। দাম আশি হাজার টাকা। বীরেন সোম রেখার কাজ করতে ভালোবাসেন। সবচেয়ে বেশি রেখার কাজ তিনি করেছিলেন কভিডের সময়। যখন রঙ কিনতে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল। সেই সময় ও পরবর্তীকালে আঁকা তাঁর নিজস্ব চিত্রধারার ছবিগুলো থেকে চোখ ফেরানোর যায় কি? কালো কাগজে সাদা ও রঙিন কলমের টান। চারটি ছবি। দাম ত্রিশ হাজার টাকা। ফরিদা জামান লাল কিংবা লালচের পটে নিজস্ব শৈলীর এক মোহনীয় নারীকে এঁকেছেন, শাড়ি পরিহিত। আমাদের অন্তরে কিছু মনোজ্যামিতি কাজ করে। বাস্তবানুগ ছবির চেয়ে যে ছবি সেই মনোজ্যামিতির কাছাকাছি, সেটিই আমাদের বেশি আপন বোধহয়। মূর্ত-বিমূর্ত ছবিতে ফুল, নারী, বাসন্তী গোধূলি, নদী বালিয়াড়ি একটা লব্ধি মায়া তৈরি করেছে। এ ছবির দাম আশি হাজার টাকা। শিল্পী জামাল আহমেদের শক্তিশালী আঁচড় বাংলাদেশি চিত্রকলায় এক মত্ত সংযোজন। তাঁর ছবি দ্য বিউটি ইন দ্য রিভারে দেখা যাচ্ছে এক কৈবর্ত তরুণীকে, মোহন তার হেঁটে চলার ভঙি। সুবিপুলা নদীর তীরে সেই তরুণী হয়তো প্রিয়জনের জন্যে অপেক্ষমাণ। হাতে জলের কলস। নদীর ওপারে সন্ধ্যা নেমেছে। আকাশ লালাভ। সান্ধ্যমেঘ তাকে কিছুক্ষণ পর ঢেকে দেবে। ছবির দাম এক লাখ টাকা। কনকচাঁপা চাকমার ছবিটির নাম ফেস্টিভ্যাল। চার-পাঁচজন পাহাড়ি তরুণী জড়ো। তাদের মুখ দেখা যায় না। তাদের মুখের ভাষা ধরা পড়ে। প্রাকৃত শরীর, প্রাকৃত রঙে-পোশাকে তারা এমন সজীব, বুঝি গানের শব্দ শুনতে পাওয়া যাবে এখনই। এ ছবির দাম দেড় লাখ টাকা। গুণী তরুণ শিল্পীদের অন্যতম শাহানুর মামুনের সঙ্গে আলাপ হয়। প্রদর্শনীতে তাঁর ছবিটিও নদী ও তীরবর্তী মানুষ, আকাশের গল্প বলে। এই ছবিগুলো আমাদের স্মৃতিতে ধ্রুপদি ছাপ ফেলে রাখা। শাহানুর মামুন জানান মুহূর্তের সৌন্দর্যের কথা। হয়তো নদীর ধারে দাঁড়িয়ে আছেন, আকাশে মেঘেরা খেলছে, সময়টা হয়তো ঘোর দুপুর, এমন সময়, ভর দুপুরে হঠাৎ ভোর নেমে এলো। হয়তো এক মুহূর্তের জন্য। আলো ছায়ার প্রাকৃত খেলা। এক নিমেষে এসেছে, ফিরেও গেছে। কিন্তু রেশ রেখে গেছে। হয়তো আপনার কৈশোর সেই রেশে আবিল। শাহানুর মামুন সেই আবিলতাকে ধরতে চেয়েছেন। সেখানে চলমান সময়ের অস্থিরতাও কি মিশে যায়নি? প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া অন্যান্য শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন– গৌতম চক্রবর্তী, রনজিৎ দাস, আফজাল হোসেন, আইভি জামান, রশিদ আমিন, কামাল উদ্দিন, মলয় বালা প্রমুখ। প্রদর্শনীটি ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। v
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
গ্রীষ্মের গাঢ় রঙ
যখন গ্রীষ্ম চলছে, এর উত্তাপের প্রতাপ সবটুকু নয়। গ্রীষ্মমণ্ডলের মানুষ কিন্তু এর উপহার দেওয়া রস রূপ রঙের কথাও ভোলে না। শীতমণ্ডলের মানুষের কাছে তো সে গ্রীষ্ম আরও আরাধ্য। যদিও বৈশাখ নামে নয়, সেখানে অন্য নাম আছে। তবু বিশাখা নক্ষত্রের প্রভাব তো আর নাম বদলালে বদলে যায় না। কিছুদিন আগে নববর্ষ এসে মৌলিক রঙের ঢেউ বইয়ে দিয়ে গেল। মৌলিক রঙগুলো কী যে উজ্জ্বল, প্রাণময়, বাঙ্ময়! রঙগুলো যখন কথা বলে, তখন এর মানুষ-দর্শকের কথা থেমে যায়। গ্যালারি ইলিউশনে ‘গ্রীষ্মের রঙ’ নামে একটি প্রদর্শনী গত ১৮ এপ্রিল থেকে চলছে। স্থান পেয়েছে বর্ণিল, অনুপম সমস্ত চিত্রকর্ম। ছবি যারা ভালোবাসেন, দেখতে অথবা সংগ্রহ করতে ব্যগ্র, তাদের জন্যে এ আয়োজন আনন্দদায়ক হবে সন্দেহ নেই। পঞ্চাশজন শিল্পী এতে অংশ নিয়েছেন। একসঙ্গে দেশের অর্ধশত প্রণিধানযোগ্য শিল্পীর কাজ সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করতে পারা এক বড় কাজ। রাজধানীর লালমাটিয়ার গ্যালারি ইলিউশন এ যোগ্যতার পরিচয় যথাসাধ্য দিয়ে চলেছে। প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া দেশবরেণ্য শিল্পীদের ভেতর হামিদুজ্জামান খান, আবদুশ শাকুর শাহ, ফরিদা জামান, বীরেন সোম, জামাল আহমেদ, অলকেশ ঘোষ, সমর মজুমদার, কনকচাঁপা চাকমা, মোহাম্মদ ইউনুস, আফজাল হোসেন, মোহাম্মদ ইকবাল, মাহমুদুর রহমান দীপন, কারু তিতাস প্রমুখ রয়েছেন। হামিদুজ্জামান খানের শিল্পকর্মের নাম সি স্কেপ। সমুদ্রবর্তী মাটির এক রহস্যমিতা চিত্রায়ণ। ছবিটি না-মূর্ত, না-বিমূর্ত। শান্ত সাগরের জল এসে বেলাভূমি ছুঁয়ে যাচ্ছে। কিছু জল কি কোনো খাদে আটকা পড়েছে? সেই জলের রঙ সবুজাভ। যেন সমুদ্র এসে ওইটুকু জলাধারে প্রাণের সঞ্চয় রেখে গেল। ছবিটির দাম পঁচাত্তর হাজার টাকা। আবদুশ শাকুর শাহের ছবিটি তাঁর একান্ত নিজস্ব চিত্রধারার অনুবর্তী। লোকজ পুরাণঘেঁষা। ছবির নাম ভিলেজ স্টোরি। গ্রাম্য মেয়ে তার পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে, প্রকৃতির সঙ্গে লীন। সেখানে আকাশের নীল, ঝরাপাতার হলুদ, টিপের লাল, দেহের শ্যামল রঙ পরস্পরের সঙ্গে সখ্য পাতিয়েছে। দৃষ্টিসুখকর। দাম আশি হাজার টাকা। বীরেন সোম রেখার কাজ করতে ভালোবাসেন। সবচেয়ে বেশি রেখার কাজ তিনি করেছিলেন কভিডের সময়। যখন রঙ কিনতে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল। সেই সময় ও পরবর্তীকালে আঁকা তাঁর নিজস্ব চিত্রধারার ছবিগুলো থেকে চোখ ফেরানোর যায় কি? কালো কাগজে সাদা ও রঙিন কলমের টান। চারটি ছবি। দাম ত্রিশ হাজার টাকা। ফরিদা জামান লাল কিংবা লালচের পটে নিজস্ব শৈলীর এক মোহনীয় নারীকে এঁকেছেন, শাড়ি পরিহিত। আমাদের অন্তরে কিছু মনোজ্যামিতি কাজ করে। বাস্তবানুগ ছবির চেয়ে যে ছবি সেই মনোজ্যামিতির কাছাকাছি, সেটিই আমাদের বেশি আপন বোধহয়। মূর্ত-বিমূর্ত ছবিতে ফুল, নারী, বাসন্তী গোধূলি, নদী বালিয়াড়ি একটা লব্ধি মায়া তৈরি করেছে। এ ছবির দাম আশি হাজার টাকা। শিল্পী জামাল আহমেদের শক্তিশালী আঁচড় বাংলাদেশি চিত্রকলায় এক মত্ত সংযোজন। তাঁর ছবি দ্য বিউটি ইন দ্য রিভারে দেখা যাচ্ছে এক কৈবর্ত তরুণীকে, মোহন তার হেঁটে চলার ভঙি। সুবিপুলা নদীর তীরে সেই তরুণী হয়তো প্রিয়জনের জন্যে অপেক্ষমাণ। হাতে জলের কলস। নদীর ওপারে সন্ধ্যা নেমেছে। আকাশ লালাভ। সান্ধ্যমেঘ তাকে কিছুক্ষণ পর ঢেকে দেবে। ছবির দাম এক লাখ টাকা। কনকচাঁপা চাকমার ছবিটির নাম ফেস্টিভ্যাল। চার-পাঁচজন পাহাড়ি তরুণী জড়ো। তাদের মুখ দেখা যায় না। তাদের মুখের ভাষা ধরা পড়ে। প্রাকৃত শরীর, প্রাকৃত রঙে-পোশাকে তারা এমন সজীব, বুঝি গানের শব্দ শুনতে পাওয়া যাবে এখনই। এ ছবির দাম দেড় লাখ টাকা। গুণী তরুণ শিল্পীদের অন্যতম শাহানুর মামুনের সঙ্গে আলাপ হয়। প্রদর্শনীতে তাঁর ছবিটিও নদী ও তীরবর্তী মানুষ, আকাশের গল্প বলে। এই ছবিগুলো আমাদের স্মৃতিতে ধ্রুপদি ছাপ ফেলে রাখা। শাহানুর মামুন জানান মুহূর্তের সৌন্দর্যের কথা। হয়তো নদীর ধারে দাঁড়িয়ে আছেন, আকাশে মেঘেরা খেলছে, সময়টা হয়তো ঘোর দুপুর, এমন সময়, ভর দুপুরে হঠাৎ ভোর নেমে এলো। হয়তো এক মুহূর্তের জন্য। আলো ছায়ার প্রাকৃত খেলা। এক নিমেষে এসেছে, ফিরেও গেছে। কিন্তু রেশ রেখে গেছে। হয়তো আপনার কৈশোর সেই রেশে আবিল। শাহানুর মামুন সেই আবিলতাকে ধরতে চেয়েছেন। সেখানে চলমান সময়ের অস্থিরতাও কি মিশে যায়নি? প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া অন্যান্য শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন– গৌতম চক্রবর্তী, রনজিৎ দাস, আফজাল হোসেন, আইভি জামান, রশিদ আমিন, কামাল উদ্দিন, মলয় বালা প্রমুখ। প্রদর্শনীটি ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। v