তিন বছর বয়সী ছেলে মারুফের সর্দি-জ্বর। তাকে বুধবার চিকিৎসকের কাছে নিয়ে এসেছেন মা নাজমা আক্তার (৩৫)। বহির্বিভাগের ২ নম্বর কক্ষের সামনে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে ছিলেন বাউফলের নাজিরপুর ইউনিয়নের তাঁতেরকাঠি গ্রামের এই গৃহবধূ। হঠাৎই তাঁর সামনে চলে আসেন আরেক নারী। এই নিয়ে ঝগড়া বেঁধে যায় দু’জনের। উভয়েরই দাবি, তারা আগে এসেছেন, তাই সামনে দাঁড়াবেন। বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এমন চিত্র দেখা মেলে প্রতিদিনই।
সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, জনবল সংকটের কারণে এখানে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়। বাড়তি রোগীর চাপে তারা স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা দিতে পারেন না। বাউফল পৌরসভাসহ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ মানুষের বসবাস। তাদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২০১১ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির শয্যা ৩১ থেকে বাড়িয়ে ৫০টি করে। পুরোনো দ্বিতল ভবনের জায়গায় মাথা তুলে দাঁড়ায় চারতলা ভবন। দীর্ঘ ১৪ বছরেও বাড়েনি জনবল।
তাঁতেরকাঠির নাজমা আক্তার মঙ্গলবার ছেলে মারুফকে নিয়ে এসেছিলেন হাসপাতালে। রোগীর দীর্ঘ সারির কারণে সেদিন চিকিৎসক দেখাতে পারেননি। বাধ্য হয়ে বুধবার সকাল ৮টার দিকে এসে লাইনে দাঁড়ান। সকাল ১০টার দিকেও তিনি লাইনের মাঝামাঝি ছিলেন। এরই মধ্যে অন্য এক নারী এসে সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে ঝগড়া বেঁধে যায়।
ওই নারীর নাম আয়শা আক্তার। তিনি মেয়ে আরিফাকে নিয়ে আসেন সূর্যমনি গ্রাম থেকে। তিনি উল্টো নাজমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। তবে দুর্ভোগ-বিড়ম্বনা তাদের একই। আয়শা-নাজমার মতো শিশুসন্তানের চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন দাসপাড়া গ্রামের সখিনা, ময়না ও কুলসুম। তারা জানান, তীব্র গরমের মধ্যে টানা ৩-৪ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে কোমরে ব্যথা শুরু হয়ে গেছে।
২ নম্বর কক্ষে প্রতিদিন নিজের সাধ্যের বাইরে রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন মেডিকেল অফিসার শাম্মী আক্তার। অতিরিক্ত রোগী সামলাতে গিয়ে গালাগালও শুনতে হয় তাঁকে। হতাশ কণ্ঠে তিনি বললেন, ‘দশজনের খাওয়া যেমন একা খাওয়া যায় না, তেমনি দশজনের কাজ একা করা যায় না। তবুও দায়িত্ব কাঁধে, (এভাবেই) চলতে হবে।’
রোগীদের এই প্রতিদিনের ভোগান্তির সাক্ষী চা দোকানি মো.
রোগীর স্বজনের কাছ থেকে প্রায়ই ফোনকল পান বাউফল পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মিজানুর রহমান খোকন। রোগীর দুর্ভোগের কথা শুনে কোনো জবাব দিতে পারেন না। তিনি বলেন, মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসা এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তাদের সেবাবঞ্চিত হওয়া সবার জন্য লজ্জার।
দীর্ঘদিন ধরে এ হাসপাতালে সংকট চললেও তীব্র মাত্রা পেয়েছে মাস দেড়েক আগে। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে এখান থেকে বদলি হয়ে যান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) প্রশান্ত কুমার সাহা ও মেডিকেল অফিসার এস এম সায়েম। একজন ডেন্টাল সার্জনও বদলি হন একই সময়ে। তখনকার আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) পদে থাকা আব্দুর রউফ পদোন্নতি পান ইউএইচএফপিও পদে। তিনি বৃহস্পতিবার সমকালকে বলেন, এখানে ১১টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে শুধু তিনিই আছেন। এ জন্য ইউনিয়ন পর্যায় থেকে চিকিৎসক নুরজাহান, শাম্মী আক্তার ও তাসরিফ হোসেনকে প্রেষণে এনে হাসপাতাল পরিচালনা করছেন।
এই কর্মকর্তার দেওয়া তথ্যমতে, অন্য পদের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার ৬টি পদ এখন খালি। সহকারী সার্জনের ৯ পদের বিপরীতে তিনজন, স্টাফ নার্সের ১০টি পদ, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ১১টি পদ ও ওয়ার্ড বয়ের ২০টি পদের বিপরীতে আছেন দুইজন করে। এ ছাড়া সহকারী নার্সের ১৫ পদ, সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তার ১৫ পদ, স্টোরকিপারের ১৪ পদ, কম্পিউটার অপরেটরের ১৩ পদ, ক্যাশিয়ারের ১৪ পদ, গাড়িচালকের ১৩ পদের বিপরীতে একজন করে আছেন। ক্লিনিং স্টাফের ২০টি পদের বিপরীতে ৪ জন কর্মরত আছেন। এ ছাড়া হারবাল অ্যাসিস্ট্যান্টের ১৬টি, কার্ডিওগ্রাফারের ১৬টি ও হেড অ্যাসিস্ট্যান্ট কাম অ্যাকাউনট্যান্টের ১৪টি পদই শূন্য।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রউফ বলেন, ‘দিনে গড়ে দুই-তিনশ রোগী আসেন জরুরি বিভাগে। এ ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা রোগী, মারামারির রোগী তো দিনরাতই আসছে। আমি আর পারছি না। ৩০ শয্যার লোকবলই নেই, ৫০ শয্যা চালাবো কীভাবে?’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক পদ র ব পর ত কর মকর ত চ ক ৎসক উপজ ল ব উফল
এছাড়াও পড়ুন:
ইবলিস জিন না ফেরেশতা
মানুষ সৃষ্টির আগে আল্লাহর সৃষ্টিতে ছিল ফেরেশতা ও জিন। ইবলিস আগুনের তৈরি। থাকত ফেরেশতাদের সঙ্গে। একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করত। ফলে ইবলিস জিন নাকি ফেরেশতা—এ নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় পড়ে যান। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি যখন ফেরেশতাদের বললাম, আদমকে সিজদা করো; তখন ইবলিস ছাড়া সবাই সেজদা করল। সে অমান্য করল ও অহংকার করল । তাই সে অবিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হলো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৩৪)
ইবলিসকে সেজদা করতে বলার কারণ
ইবলিসকে কেন ফেরেশতাদের সঙ্গে সেজদা করতে আদেশ করা হলো, সে কি ফেরেশতা? আল্লাহতায়ালা আদমকে সৃষ্টির আগেই ফেরেশতাদের আদেশ দিয়ে রেখেছিলেন।
আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং আমি যখন আদমের সৃষ্টি সম্পন্ন করব এবং তার মধ্যে রুহ ফুঁকে দেব, তখন তোমরা তার সামনে সেজদায় পড়ে যেও’ (সুরা সাদ, আয়াত: ৭২)। তখন ইবলিস সেই মজলিশেই উপস্থিত ছিল। তাই ইবলিস ফেরেশতা না হলেও সে ওই আদেশের অন্তর্ভুক্ত হবে।
আরও পড়ুনএকদল জিন পবিত্র কোরআন শুনে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন২০ নভেম্বর ২০২৩ইবলিস জিন হওয়ার প্রমাণ
ইমাম রাজি (রহ.) বলেন, ইবলিস জিনদের একজন, তার মৌলিক উপাদান আগুন। এ জন্য তিনি তিনটি দলিল উপস্থাপন করেছেন।
এক. ইবলিসের সৃষ্টি আগুন থেকে। কোরআনে এসেছে, ইবলিস বলেছে, ‘তুমি আমাকে আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছ আর তাকে (আদমকে) সৃষ্টি করেছ কাদা মাটি দিয়ে।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ১২)
দুই. ইবলিসের ছেলেমেয়ে আছে, সে বংশবিস্তার করে। ফেরেশতারা এর থেকে মুক্ত। তাদের স্ত্রী-সন্তান নেই। তাদের মধ্যে নেই নারী-পুরুষের বিভাজনও। অথচ আল্লাহ ইবলিস সম্পর্কে বলেছেন, ‘তবে কি তোমরা আমার পরিবর্তে ওকে ও ওর বংশধরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করছ?’ (সুরা কাহফ, আয়াত: ৫০)
তিন. ফেরেশতারা আল্লাহর সব আদেশ মেনে চলে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ তাদের (ফেরেশতাদের) যা আদেশ করেন তা অমান্য করে না এবং যা আদেশ করা হয় তা-ই করে।’ (সুরা তাহরিম, আয়াত: ৬) আল্লাহ কোরআনে অধিকাংশ স্থানে ইবলিসকে ‘শয়তান’ বলে সম্বোধন করেছেন। শয়তান শব্দটি দিয়ে কট্টরভাবে অবাধ্য হওয়াকে বোঝায়। (আত-তাফসিরুল কাবির, ফখরুদ্দিন রাজি, ২/৪২৯-৩০)
আরও পড়ুনসুরা আর রাহমানে জিন ও মানবজাতি উভয়কে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে১০ নভেম্বর ২০২৩তা ছাড়া ‘আল্লাহতায়ালা জিনকে সৃষ্টি করেছেন ধোঁয়াহীন আগুন থেকে’ (সুরা রহমান, আয়াত: ১৫), আর ফেরেশতাদের সৃষ্টি করা হয়েছে নুর বা আলো থেকে (মুসলিম, হাদিস: ২,৯৯৬)।
ইবলিস কোন শ্রেণির জিন
ইবনে আব্দিল বার (রহ.) বলেছেন, জিনদের বিভিন্ন শ্রেণি রয়েছে, ১. সাধারণ জিনদের বলা হয় জিন্নি। ২. যেসব জিন মানুষের সঙ্গে বাসাবাড়িতে অবস্থান করে, তাদের বলা হয় আমির। ৩. যেসব জিন বাচ্চাদের সামনে আবির্ভূত হয়, তারা আরওয়াহ। এটি রুহ শব্দের বহু বচন। ৪. যেসব জিন খারাপ হয়ে যায় এবং মানুষের ক্ষতি করতে চায়, তারা শয়তান। ৫. যেসব শয়তানের দুষ্কৃতি খুব বেড়ে যায়, তাদের বলে মারিদ। ৬. যারা শক্তিশালী ও দুশ্চরিত্র হয়ে ওঠে, তাদের বলা হয় ইফরিত। (আত-তামহিদ, ইবনে আবদিল বার, ১১/১১৭-১১৮)
আরও পড়ুনইবলিসের কাহিনি১২ মে ২০২৪