ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ঘরবাড়ি ও তাঁবুর মতো আশ্রয়কেন্দ্রও ইসরায়েলি বর্বরতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে দখলদার দেশটি। পাশাপাশি আট সপ্তাহ ধরে উপত্যকায় খাদ্য, ওষুধ ও ত্রাণসামগ্রী প্রবেশ বন্ধ করে রেখেছে। এ পরিস্থিতিকে জাতিসংঘ সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট হিসেবে বর্ণনা করেছে। 

আলজাজিরার সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, বুধবার রাতভর এবং বৃহস্পতিবার ভোরে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মধ্য গাজার নুসেইরাতের কাছে একটি তাঁবুতে তিন শিশু এবং গাজা শহরের একটি বাড়িতে এক নারী ও চার শিশু নিহত হয়েছেন। সাম্প্রতিক এক হামলায় স্থানীয় সাংবাদিক সাঈদ আবু হাসানাইনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে কমপক্ষে ২৩২ সাংবাদিক নিহত হলেন।
 
গাজার দেইর এল-বালাহ থেকে আলজাজিরার তারেক আবু আযুম বলেন, অবরুদ্ধ উপত্যকা স্পষ্টতই ইসরায়েলি সেনা বৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকটের সাক্ষী হচ্ছে। এখানকার অক্ষত ও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোও গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকারীরাও অসহায় হয়ে পড়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়াদের কাছে পৌঁছানোর জন্য তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
 
অধিকৃত পশ্চিম তীর পরিচালনাকারী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘ইসরায়েলের আক্রমণের কোনো বিরতি নেই, কোনো করুণা নেই, কোনো মানবতা নেই।’
 
প্রায় দুই মাস ধরে ইসরায়েল ত্রাণ সহায়তা অবরোধ করে রাখায় গাজার মানবিক সংকট আরও তীব্র হয়েছে। এটিকে জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সমন্বয় অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ‘ফিলিস্তিনি জীবনের ইচ্ছাকৃত ধ্বংসাবশেষ’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, গাজা উপত্যকা এখন সম্ভবত ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামলা শুরুর পর ১৮ মাসের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।
 
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অপুষ্টির সম্মুখীন নারী ও শিশুদের বিপজ্জনক ও বিপর্যয়কর ক্ষতির কথা তুলে ধরেছে। তারা অনেকেই পর্যাপ্ত খাবার, পানীয় জল এবং শিশুর খাবারের অভাবের মুখোমুখি হয়েছে। ইসরায়েলের গাজায় সাহায্য পাঠাতে অব্যাহত অস্বীকৃতি ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক আদালতের একটি আদেশকে লঙ্ঘন করে। সেই আদেশে দুর্ভিক্ষ ও অনাহার রোধে জরুরি ভিত্তিতে উপত্যকায় সাহায্য পৌঁছানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
 
গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে রাখা নিয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে) আগামী সপ্তাহে হেগে অনুষ্ঠিত গণশুনানির একটি সূচি প্রকাশ করেছে। সেখানে গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে জাতিসংঘ, এনজিওর কার্যকলাপকে অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে ইসরায়েলের আইনি বাধ্যবাধকতা নিয়ে আলোচনা করা হবে। আগামী সোমবার শুরু হতে যাওয়া এ শুনানির আগে প্রায় ৪৫টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা লিখিত বিবৃতি জমা দিয়েছে।
 
হাসপাতাল সূত্র আলজাজিরাকে জানিয়েছে, বুধবার গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত এবং ১০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ১৮ মাসে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫১ হাজার ৩০৫ জন নিহত এবং ১ লাখ ১৭ হাজার ৯৬ জন আহত হয়েছেন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

তিন মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ৪৭

রাজনৈতিক সহিংসতায় গত তিন মাসে (জানুয়ারি থেকে মার্চ) সারা দেশে অন্তত ৪৭ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বিএনপির অন্তঃকোন্দলে ২৭ জন, আওয়ামী লীগের অন্তঃকোন্দলে ৫ জন এবং আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংঘর্ষে ৮ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সংঘর্ষে ২ জন, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সংঘর্ষে ১ জন নিহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং এইচআরএসএসের সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। সেখানেই এসব তথ্য উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে এইচআরএসএস।

সংস্থাটি বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে কমপক্ষে ৩২৫টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৪৭ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি কমপক্ষে ২৪৫ জন আহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে বিএনপির ৩১ জন, আওয়ামী লীগের ১০ জন, জামায়াতে ইসলামীর ১ জন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ১ জন এবং ইউপিডিএফের ২ জন। অপর ২ জনের রাজনৈতিক পরিচয় মেলেনি, যার মধ্যে একজন নারী রয়েছেন।

আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক প্রতিশোধপরায়ণতা, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন স্থাপনা দখলকেন্দ্রিক অধিকাংশ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত তিন মাসের রাজনৈতিক সহিংসতার তথ্যগুলো পর্যালোচনা করে এইচআরএসএস বলছে, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় মার্চ মাসে বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ কমেছে। তবে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির সংঘর্ষ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া গত তিন মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় ৭০ জনের বেশি গুলিবিদ্ধ, চার শতাধিক বাড়িঘর, রাজনৈতিক কার্যালয়, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও যানবাহনে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এইচআরএসএস জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ, ভুক্তভোগীর পরিবার ও এইচআরএসএসের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে, হেফাজতে ও নির্যাতনে কমপক্ষে ৯ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের নামে তিনজন, নির্যাতনে চারজন, পুলিশ হেফাজতে একজন এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে সারা দেশে কারাগারে কমপক্ষে ২১ জন আসামির মৃত্যু হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯ জন কয়েদি এবং ১২ জন হাজতি। এদের মধ্যে খুলনা ও নওগাঁ কারাগারে আক্তার শিকদার ও সিদ্দিক হোসেন নামে আওয়ামী লীগের দুজন নেতার মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

তিন মাসে গণপিটুনিতে ৩১ জনের মৃত্যু

এইচআরএসএস সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, তিন মাসে গণপিটুনিতে ৭০টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৩১ জন। আহত হয়েছেন আরও ৬৪ জন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, গত ৪ মার্চ দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ছিনতাইকারী সন্দেহে ইরানের দুই নাগরিককে গণপিটুনি দিয়ে আহত করা হয়। গত ৩ মার্চ রাতে চট্টগ্রামের এওচিয়া ইউনিয়নে মাইকে ‘ডাকাত’ ঘোষণা দিয়ে দুজন জামায়াত কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে মাদারীপুরে ডাকাতির ঘটনায় শরীয়তপুরে সাতজনকে গণপিটুনির ঘটনায় পাঁচজন নিহত ও দুজন আহত হয়েছেন। হবিগঞ্জের বাহুবলে মোবাইল ফোন চুরি সন্দেহে জাহেদ মিয়া (২৮) নামে একজন যুবককে গাছের সঙ্গে বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন করার একপর্যায়ে তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পাবনার ঈশ্বরদীতে চুরির অভিযোগ এনে এক নারীকে লোহার খুঁটিতে বেঁধে মারধর করার পর জুতার মালা পরিয়ে নির্যাতন করা হয়।

অন্যান্য ঘটনা

এইচআরএসএসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত তিন মাসে অন্তত ৬৭টি ঘটনায় কমপক্ষে ১১ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্ততপক্ষে ৫৮ জন, লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন ৬ জন, হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন ১১ জন ও গ্রেপ্তার হয়েছেন ৪ জন। এ ছাড়া ১০টি মামলায় ২৪ জন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ সময়ে সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩–এর অধীন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন একজন এবং অভিযুক্ত করা হয়েছে তিনজনকে।

পাশাপাশি গত তিন মাসে সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩–এর অধীন করা অন্তত ৮টি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ৬ জন এবং অভিযুক্ত করা হয়েছে ১৩ জনকে।

২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ১৮টি হামলার ঘটনায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৫ জন বাংলাদেশি নিহত, ১০ জন আহত ও ১৫ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। সিলেট সীমান্তে ভারতীয় খাসিয়াদের গুলিতে শাহেদ আহমদ (২৫) নামের এক বাংলাদেশি তরুণ নিহত এবং অপর ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ২ জন আহত হয়েছেন।

এইচআরএসএস বলছে, গত তিন মাসে কমপক্ষে ৫১২ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এ সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর কমপক্ষে ৭টি হামলার ঘটনায় ২ জন আহত, ১০টি প্রতিমা ভাঙচুর ও জমি দখলের মতো ২টি ঘটনা ঘটেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তিন মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ৪৭
  • ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২৬ ফিলিস্তিনি
  • শরণার্থী শিবির, স্কুলে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, নিহত ২০
  • বন্দরে ঝুটের গোডাউনে অগ্নিকান্ড, ১৬ লাখ টাকা ক্ষতি সাধন  
  • গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৩৯ ফিলিস্তিনির প্রাণহানি