নতুন নিরীক্ষা অধ্যাদেশে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলেছে, এতে মহাহিসাব নিরীক্ষকের (সিএজি) স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। এই অধ্যাদেশে এমন কিছু বিধান রাখা হয়েছে, যেগুলো সিএজির সাংবিধানিক মর্যাদা খর্ব করবে এবং সরকারি অর্থব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিকে হুমকিতে ফেলবে।

টিআইবি আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে নতুন অধ্যাদেশ নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি সরকারি হিসাব নিরীক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছে।

বিবৃতিতে টিআইবি বলেছে, সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও এই অধ্যাদেশে সিএজির জন্য রাজস্ব নিরূপণ ও আদায় নিরীক্ষার সুযোগ রাখা হয়নি। এতে যেকোনো আঞ্চলিক, আন্তর্জাতিক ও বিদেশি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের আগে সরকারের অনুমতি নেওয়ার বিধান এবং বিধি প্রণয়নের ক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে।

এসব বিধান সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সিএজিকে সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত থেকে স্বাধীনভাবে কার্যসম্পাদনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে টিআইবি। পাশাপাশি অধ্যাদেশে এসব বিধান রাখাকে স্বার্থান্বেষী মহলের প্রভাবদুষ্ট ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য বিব্রতকর বলে মনে করছে সংস্থাটি।

বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অধ্যাদেশে এ ধরনের মৌলিক দুর্বলতা বহাল রাখা সিএজির সাংবিধানিক মর্যাদাকে অবজ্ঞা ও প্রতিষ্ঠানটির মৌলিক স্বাধীনতা নিশ্চিতে অনীহার সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অধ্যাদেশের ৭ ধারায় রাজস্ব নিরূপণ ও আদায় নিরীক্ষার ক্ষমতা সিএজির এখতিয়ার থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটি কর ফাঁকি ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবে। রাজস্ব নিরূপণ ও আদায়ে অনিয়ম এবং যোগসাজশমূলক জালিয়াতি যে বাংলাদেশে কর ফাঁকির অন্যতম মাধ্যম, তা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কেন উপেক্ষা করছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। এ ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্বার্থান্বেষী মহল দ্বারা সরকার প্রভাবিত হচ্ছে কি না? এ প্রশ্ন তোলা মোটেই অমূলক হবে না।

এ ছাড়া অধ্যাদেশের ১৭ ও ১৮ ধারায় চুক্তি সম্পাদন ও বিধি প্রণয়নে সরকারের অনুমতির বাধ্যবাধকতা যুক্ত হওয়ায় সিএজির স্বাধীনতা সীমিত হয়ে পড়বে বলে অভিমত টিআইবির। সংস্থাটি মনে করে, এ ধরনের বিধান প্রতিষ্ঠানটির সাংবিধানিক মর্যাদাকে অবজ্ঞা করার শামিল।

টিআইবি আরও জানায়, এ–জাতীয় বিধান বহাল রেখে অধ্যাদেশটি কার্যকর ঘোষণা করা হলে সরকারের আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে সিএজির জন্য নিয়ন্ত্রণমুক্ত স্বাধীন ভূমিকা পালন করা সম্ভব হবে না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র ট আইব

এছাড়াও পড়ুন:

মন্ত্রিপরিষদ সচিব‌কে বাদ দেওয়াসহ আইন‌ঢেলে সাজানোর আহ্বান: টিআইবি

মন্ত্রিপরিষদ সচিব‌কে বাদ দেওয়াসহ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ‍্যাদেশটি ঢেলে সাজানোর জন‍্য সরকারের প্রতি আহ্বান জা‌নি‌য়ে‌ছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

শ‌নিবার (১৩ ডিসেম্বর) এক বিবৃ‌তি‌তে সংস্থা‌টি ব‌লে‌ছে, বহুল প্রত্যাশিত সংস্কার-প্রক্রিয়াকে কীভাবে আমলাতান্ত্রিক অনমনীয়তা, এমনকি অন্তর্ঘাতের মাধ্যমে জিম্মি করা হচ্ছে, তার উদাহরণ হিসেবে অধ‍্যাদেশ প্রণয়ন-প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত অংশীজনকে অন্ধকারে রেখে বাছাই কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে শুধুমাত্র এই প্রক্রিয়ায় সরকারি নিয়ন্ত্রণের কর্তৃত্ববাদি চর্চা অব্যাহত রাখার জন‍্য। যা সংস্কারবিরোধী আমলাতন্ত্রের স্বার্থান্বেষী মহলের কাছে সরকারের আত্মসমর্পণের বিব্রতকর দৃষ্টান্ত।

আরো পড়ুন:

প্রতিটি আইন করার ক্ষেত্রে গোপনীয়তার আশ্রয় নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার: টিআইবি

জাহানারার যৌন হয়রানির অভিযোগ, তদন্তে বিশেষজ্ঞ সদস্য চায় টিআইবি

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ‍্যাদেশ ২০২৫-এ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মৌলিক পরিবর্তন ঘটিয়ে কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া আমলাতন্ত্রের করায়ত্ত করার ফলে সরকারি প্রভাবের বাইরে থেকে কমিশন গঠনের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, তা সম্পূর্ণ ধূলিসাৎ করায় গভীর উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছে টিআই‌বি।

সংস্থাটির টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ গেজেট আকারে ৯ নভেম্বর ২০২৫ প্রকাশের পর টিআইবিসহ সব অংশীজন এতে কিছু দুর্বলতা সত্ত্বেও আশান্বিত হয়েছিল যে, আমলাতন্ত্রের হাতে জিম্মিদশা কাটিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন জনপ্রত‍্যাশা ও আন্তর্জাতিকমানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গঠিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। কিন্তু ঠিক একমাসের মধ্যে ৮ ডিসেম্বর যে বাছাই কমিটি এই সম্ভাবনা বাস্তবায়নের মূলভিত্তি হতে পারতো, সেই কমিটিকেই সরকারি নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছে। বাছাই কমিটিতে এই পরিবর্তন বস্তুত ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মানবাধিকার কমিশনসহ বাংলাদেশের অন‍্য সব কমিশনের অকার্যকরতার পেছনে যেভাবে সরকারি প্রভাব দীর্ঘকাল ধরে ভূমিকা রেখেছে, সেই একই প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার ষড়যন্ত্রের একটি দৃষ্টান্তমাত্র, কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।”

বাছাই কমিটির ওপর এ আমলাতান্ত্রিক জবরদখল ও সরকারের তা মেনে নেওয়া চরম হতাশাজনক উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “এই সংশোধনের মাধ্যমে নিষ্ঠুর, অমানবিক আচরণ প্রতিহত করার লক্ষ‍্যে জাতীয় প্রতিরোধ ব‍্যবস্থা বিভাগ প্রতিষ্ঠার যে প্রশংসনীয় বিধান সংযুক্ত করা হয়েছে তার এবং সার্বিকভাবে এ আইনের ভিত্তিতে গঠিতব‍্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও কার্যকরতার সব সম্ভাবনাকে ধূলিসাৎ করার জন‍্য শুধুমাত্র বাছাই কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের অন্তর্ভুক্তিই যথেষ্ট।”

“তাছাড়া কমিশনের আদেশ প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে গৃহীত পদক্ষেপ কমিশনকে অবহিত করার বাধ্যবাধকতার পরিবর্তে ‘অবহিত করা যাইবে’ প্রতিস্থাপন করার মতো আরো কিছু বিধান সংযোজন করার ফলে অধ‍্যাদেশটির মাধ্যমে প্রত‍্যাশিত সব ইতিবাচক সম্ভাবনা পদদলিত করা হয়েছে,” বলে মন্তব্য করেন ড. জামান।

অনতিবিলম্বে আমলাতন্ত্রের অন্তর্ঘাতমূলক সংস্কারবিরোধী চক্রের কাছে আত্মসমর্পণের বিব্রতকর অবস্থান থেকে সরে এসে অধ‍্যাদেশটির ওপর চাপিয়ে দেওয়া বিধান, বিশেষ করে বাছাই কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত বাতিল করে নতুন করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ‍্যাদেশটি ঢেলে সাজানোর জন‍্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গঠনের জন‍্য ৬২ নম্বর অধ্যাদেশ, যা ৯ নভেম্বর ২০২৫ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়, তার অনুচ্ছেদ ৭-এ বর্ণিত বাছাই কমিটিতে আমলাতন্ত্রের কোনো প্রতিনিধি ছিলো না, যা মানবাধিকার কমিশনের অকার্যকরতার দীর্ঘদিনের তিক্ত অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সরকারসহ সব অংশীজনের স্বীকৃতির পরিচায়ক। অথচ, পরবর্তীতে ৮ ডিসেম্বরের গেজেটে প্রকাশিত সংশোধিত অধ্যাদেশ ৭৪-এ বাছাই কমিটিতে আমলাতান্ত্রিক আধিপত্য নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে এ অধ‍্যাদেশ প্রণয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত সব অংশীজনকে অন্ধকারে রেখে একতরফাভাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তির নীতিমালা প্রণয়নে কমিটি গঠন
  • মন্ত্রিপরিষদ সচিব‌কে বাদ দেওয়াসহ আইন‌ঢেলে সাজানোর আহ্বান: টিআইবি
  • কম্বাইন্ড ডিগ্রি কারিকুলাম বিলম্বে উদ্বেগ বাকৃবিতে
  • ২০২৭ সালে কি নতুন শিক্ষাক্রম পাওয়া যাবে