কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ধনুসাড়া গ্রামে সাহিদা বেগম নামে বৃদ্ধাকে হত্যা করেন তাঁর স্বামী আবদুল মমিন। তিনি ধনুসাড়া জামে মসজিদের ইমাম। গত ৩ ফেব্রুয়ারি ভোর রাতে স্ত্রীকে হত্যা করে লাশটি কাঁধে করে নিয়ে বাড়ির একটি সেপটিক ট্যাঙ্কের ভেতর গুম করে রাখেন। এর পর গোসল করে ফজরের নামাজের ইমামতি করতে মসজিদে চলে যান। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার চৌদ্দগ্রাম থানায় সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান ওসি মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ। 

তিনি জানান, আবদুল মমিনের মায়ের বয়স প্রায় ১৩০ বছর। সুস্থ থাকলেও বয়সের ভারে চলাফেরা করতে পারেন না। তাই তাঁর মায়ের সেবাযত্ন নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া হতো। এ অবস্থায় আবদুল মমিন (৭০) ও তাঁর ভাই এক মাস করে পালাক্রমে মায়ের দায়িত্ব নিয়ে সেবাযত্ন করছেন। মমিনের ছেলে তাদের পুরাতন বাড়িতে মা ও পরিবার নিয়ে থাকেন। মমিন ও তাঁর স্ত্রী সাহিদা বেগম (৬০) ধনুসাড়া পূর্বপাড়ায় তাদের নতুন বাড়িতে থাকেন। তিনি স্থানীয় মসজিদে ইমামতি করেন। তাঁর মা যখন তাঁর পুরাতন বাড়িতে অবস্থান করছিলেন তখন মমিন সেখানে মায়ের খোঁজখবর নিতে যান। তখন মা নালিশ করেন তাঁর স্ত্রী (সাহিদা) দুর্ব্যবহার করেছেন। তখন মমিন মনে মনে রাগান্বিত হন।

ওসি হিলাল উদ্দিন বলেন, গ্রেপ্তার ইমাম পুলিশকে জানিয়েছে, ওইদিন রাতে মমিন তাঁর স্ত্রী সাহিদা বেগমকে মায়ের সঙ্গে খারাপ আচরণের কথা জিজ্ঞাসা করেন। এতে সাহিদা বেগম গালমন্দ শুরু করেন। মমিন বিরক্ত হয়ে বালিশ চাপা দিয়ে তাঁর স্ত্রীকে হত্যা করেন। পরে ভোর সাড়ে ৪টার দিকে স্ত্রীর লাশ কাঁধে করে বাড়ির পাশে সেপটিক ট্যাঙ্কের ভেতরে রেখে ঢাকনা লাগিয়ে দেন। লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় সাহিদা বেগমের পেটিকোটটি তাঁর শরীর থেকে পড়ে যায়। লাশ সেপটিক ট্যাঙ্কে রেখে বাড়ির নলকূপ গোসল করে ভোর ৫টায় আবদুল মমিন মসজিদে চলে যান। মসজিদ থেকে এসে তাঁর ছেলেকে ফোন করে বলেন, তাঁর মাকে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে লাশটি খুঁজে পান তারা। লাশ খোঁজার সময় আবদুল মমিন সবার সঙ্গেই ছিলেন। তাই তাঁকে কেউ সন্দেহ করেনি।

চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি জানান, এ ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা করেন তাঁর ছেলে মাছুম বিল্লাহ। প্রধান সাক্ষী করা হয় তাঁর বাবা আবদুল মমিনকে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৭ মার্চ আবদুল মমিনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আবদুল মমিন তাঁর স্ত্রী সাহিদা বেগমকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। আদালতেও জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি।


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হত য মসজ দ

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলার ঘটনায় জাতিসংঘ মহাসচিবের তীব্র নিন্দা

সুদানে জাতিসংঘের এক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় ছয় শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। তাঁরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘আমি সুদানের কাদুগলিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর লজিস্টিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে নৃশংস ড্রোন হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের লক্ষ্য করে হামলা আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।’

সুদানের কোরদোফান অঞ্চলের কাদুগলি শহরে অবস্থিত জাতিসংঘের ভবনটিতে গতকাল শনিবার এ হামলা হয়।

গুতেরেসের বিবৃতিতে বলা হয়, হামলায় আরও আট শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন। হতাহত ব্যক্তিদের সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। তাঁরা ইউএন ইন্টারিম সিকিউরিটি ফোর্স ফর আবেইয়ের (ইউএনআইএসএফএ) হয়ে দায়িত্বরত ছিলেন।

গুতেরেস বলেন, ‘দক্ষিণ কোরদোফানে আজ (শনিবার) শান্তিরক্ষীদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।’

হামলায় নিহত শান্তিরক্ষীদের সবাই বাংলাদেশি। তাঁরা ইউএন ইন্টারিম সিকিউরিটি ফোর্স ফর আবেইয়ের (ইউএনআইএসএফএ) হয়ে দায়িত্বরত ছিলেন। হামলায় আরও আট শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন।

সুদানের সেনাবাহিনী ওই হামলার দায় র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) নামে দেশটির আধা সামরিক বাহিনীর ওপর চাপিয়েছে।

সুদানে দুই বছরের বেশি সময় ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে। দেশটির সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে এ লড়াই চলছে।

আরএসএফ তাৎক্ষণিকভাবে হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

সুদানের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, এ হামলা বিদ্রোহী মিলিশিয়া এবং এর পেছনে যাঁরা আছেন, তাঁদের ধ্বংসাত্মক কৌশলের স্পষ্ট প্রকাশ।

সুদান সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করেছে। ভিডিওতে একটি স্থান থেকে ঘন কালো ধোঁয়া আকাশে উঠতে দেখা যাচ্ছে। তারা বলেছে, এটি জাতিসংঘের স্থাপনা।

বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী হতাহত হওয়ার এ ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

দক্ষিণ কোরদোফানে আজ (শনিবার) শান্তিরক্ষীদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।.আন্তোনিও গুতেরেস, জাতিসংঘ মহাসচিব

যেখানে হামলা হয়েছে, সেই তেলসমৃদ্ধ অঞ্চল আবেই নিয়ে সুদান ও দক্ষিণ সুদানের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। ২০১১ সালে সুদান থেকে আলাদা হয়ে দক্ষিণ সুদান একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এর পর থেকে সেখানে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশন মোতায়েন রয়েছে।

দুই দেশের সীমান্তে অবস্থিত আবেই বিশেষ প্রশাসনিক মর্যাদার অঞ্চল।

সুদানের আবেই অঞ্চলে একটি সড়কে দায়িত্ব পালন করছেন জাতিসংঘের একজন শান্তিরক্ষী

সম্পর্কিত নিবন্ধ