বৈষম্য বিলোপের স্লোগান তুলে হাজার হাজার মানুষ জীবন উৎসর্গ করেছেন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন থেকে। কিন্তু সেই স্বপ্ন ক্রমেই অধরা হয়ে উঠছে। গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে এখন একধরনের ব্যবসা শুরু হয়েছে, অসংখ্য নির্দোষ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। এটি গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

ছাত্র ইউনিয়নের ৪২তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী সমাবেশে এ কথা বলেছেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা সামসি আরা জামান। তিনি আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে রাগীব নাঈম ও রাকিবুল রনির নেতৃত্বাধীন ছাত্র ইউনিয়নের সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধনী বক্তব্যে সামসি আরা জামান জুলাই অভ্যুত্থানে তাঁর সন্তানসহ সব হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন। তিনি বলেন, এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকার টালবাহানা করলে ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে স্বজনহারা মানুষ আবারও রাজপথে নামবেন। বৈষম্য বিলোপের স্লোগান তুলে হাজার হাজার মানুষ নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন থেকে। কিন্তু সেই স্বপ্ন ক্রমেই অধরা হয়ে উঠছে। গণ–অভ্যুত্থান নিয়ে এখন একধরনের ব্যবসা শুরু হয়েছে, অসংখ্য নির্দোষ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। এটি নিশ্চিতভাবেই গণ–অভ্যুত্থানের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

ছাত্র ইউনিয়নের সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের আহ্বায়ক তামজীদ হায়দার বলেন, জুলাইয়ে শুরু হওয়া সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি। স্বাধীনতাবিরোধী ও ধর্মকে স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারকারীদের কাছে সরকার একরকম আত্মসমর্পণ করে বসে আছে। দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহলের আজ্ঞাবহতা বর্জন করে সরকারকে গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের পথে ফিরে আসতে বাধ্য করা হবে।

উদ্বোধনী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্র ইউনিয়নের এই অংশের সভাপতি রাগীব নাঈম। তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী সরকারকে হটাতে সক্ষম হলেও ফ্যাসিবাদী কাঠামোর সম্পূর্ণ বিলোপ এখনো সম্ভব হয়নি। জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা নিশ্চিতে টালবাহানা, সব শহীদ পরিবারের কাছে সহায়তা পৌঁছাতে না পারা, শ্রমিকদের ওপর নির্বিচার গুলি চালানো, ছাত্র আন্দোলনে ন্যক্কারজনক পুলিশি হামলা অব্যাহত রাখাসহ নানা ঘটনা লক্ষ করছি। এসব ঘটনায় সরকারের ভূমিকা ও নিষ্ক্রিয়তা নিশ্চিতভাবেই শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি।’

সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ছাত্র ইউনিয়নের এই অংশের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি। বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, ছাত্র ফেডারেশন, হরিজন ছাত্র পরিষদ, বিপ্লবী ছাত্র–যুব আন্দোলনসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা এতে উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশের পর একটি শোভাযাত্রা অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড়, টিএসসি ও দোয়েল চত্বর হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে শেষ হয়।

পরে বৃহস্পতিবার রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়। কাউন্সিল শেষে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বিবাদ ও বচনের মেলবন্ধন

ছাপ, জলছাপ আর রঙিন কালির জটিল নকশার পুরোনো দলিলে হস্তাক্ষরে সাজানো আছে মানুষের বিবাদের ধারাভাষ্য। এককথায় মামলা-মোকদ্দমার নথিপত্র, যা এখন ‘অ্যান্টিক’ বা পুরোনো নিদর্শন। কাগজের বিবর্ণতা ও অক্ষরের টেক্সচার অনেক ক্ষেত্রে পাঠযোগ্যতাকে হ্রাস করেছে। এই দলিলের জমিনে আরহাম উল হক চৌধুরীর প্রবাদ-প্রবচনের শারীরিক অবয়ব চিত্রায়ণ করেছেন বাংলা অক্ষরমালার আকৃতিগত সৌন্দর্য বিন্যাসে।

বলা যায়, এ যেন ইতিহাস, শিল্প ও ভাষার নন্দনতাত্ত্বিক সম্মিলন, যেখানে লেখার সৌন্দর্য ছাপিয়ে সময়, স্মৃতি ও সাংস্কৃতিক অস্তিত্বের বয়ানও তৈরি হয়েছে।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, ব্রিটিশ রাজ কিংবা পাকিস্তান আমলের নকশাখচিত দৃশ্যরূপ ও বিভিন্ন মামলার হস্তলিপি শিল্পীর নির্মিত বচন-অবয়বকে করেছে দৃষ্টিনন্দন। প্রবচন ও বচনের সাদৃশ্য–অবয়বে লোকজ ভাষার গভীরতা ও তাত্ত্বিক ভার সম্পূর্ণটা স্পষ্ট হয়েছে, তা বলা যায় না। কারণ, প্রবচনগুলোর ব্যাখ্যা বহুমাত্রিক। তবে ভাব ও ব্যঞ্জনা পুরোটা না উঠলেও ক্যালিগ্রাফির বিন্যাসে রয়েছে একধরনের ছন্দময় ভাবনা, যা ফারসি ‘তুঘরা’ অনুপ্রেরণায় হলেও স্বতন্ত্রভাবে ‘বাংলা’ই।

গবেষণা তো অবশ্যই, এ ছাড়া আরহামের শৈলীতে স্পষ্ট একধরনের কাব্যিক অনুশীলনও লক্ষণীয়, যেখানে কেবল অক্ষরের বিন্যাস নয়, কাগজের গঠন, রং এবং লেখার গতিপথ মিলে এক দৃশ্যকাব্য গড়ে ওঠে। কাজগুলো দর্শককে শুধু দেখে যাওয়ার সুযোগ দেয় না, বরং প্রতিটি বচনের মধ্যে লুকানো সময়-স্মৃতি অনুধাবনের আহ্বান জানায়।

শিল্পীর মতে, প্রাচীন বচনগুলোর শক্তি শুধু বাক্যেই নয়, বরং এগুলো বহন করে সময়ের গভীর দর্শন। আর পুরোনো দলিল, যেগুলো অনেক সময় ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে যেতে বসেছে, তাদের শরীরে যখন এসব বচনের রেখা ওঠে, তখন সেটা হয় অতীত ও বর্তমানের মধ্যে একধরনের নীরব সংলাপ।

শিল্পীর এই সত্য অনুধাবন করা যায় ‘কলের পুতুল’, ‘অচিন পাখি’, ‘ভরাডুবি’, ‘গরুর শোকে শকুনি কাঁদে’, ‘কালি-কলম-মন লিখে তিনজন’, ‘ভেজা বেড়াল’ প্রবচন লিখিত ক্যালিগ্রাফিতে। তবে কিছু কাজে ভাব আর রূপে দ্বন্দ্ব রয়েছে—দৃশ্যত চমকপ্রদ হলেও বচনের গভীর অর্থ শিল্পের ভিজ্যুয়াল প্রকাশে পুরোপুরি ফুটে ওঠেনি।

আর্টকনের সহযোগিতায় বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত ‘দলিলে দৃশ্যপট’ শিরোনামের এ প্রদর্শনী আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ঐতিহ্যকে কেবল দেখার নয়, বোঝারও প্রয়োজন আছে। আর শিল্পই পারে সেই বোধ জাগাতে।

আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকার গ্যালারিতে প্রদর্শনীটি ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত দর্শকের জন্য খোলা থাকবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিবাদ ও বচনের মেলবন্ধন