যেখানে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডই প্রথম
Published: 24th, April 2025 GMT
আইসিসির প্রথম পূর্ণ সদস্য হিসেবে ভিন্ন একটি দেশে ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানায় যুক্ত হয়েছে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট (এনজেডসি)। ২০২৭ যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ ক্রিকেটে (এমএলসি) অভিষেক হতে যাওয়া একটি ফ্র্যাঞ্চাইজির অংশ হয়েছে ক্রিকেট সংস্থাটি। আইসিসির আর কোনো সদস্য বোর্ড অন্য কোনো দেশের লিগে দলের মালিকানায় নেই।
ট্রু নর্থ স্পোর্টস ভেঞ্জার্স (টিএনএস) নামের একটি কনসোর্টিয়ামের মালিকানায় থাকা ফ্র্যাঞ্চাইজিটিতে এনজেডসি দুই ধরনের ভূমিকায় থাকবে। একটি মালিকানায় শেয়ার, আরেকটি ফ্র্যাঞ্চাইজির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ দেখভাল করা।
টিএনএসের বেশির ভাগ শেয়ারের মালিক মেজর লিগ ক্রিকেটের অন্যতম সহপ্রতিষ্ঠাতা সমির মেহতা ও বিজয় শ্রীনিবাসন। উত্তর আমেরিকাভিত্তিক ক্রিকেট সম্প্রচার চ্যানেল উইলো টিভিরও সহপ্রতিষ্ঠাতা তাঁরা।
মেজর লিগ ক্রিকেটে দুটি নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানাস্বত্ব নিয়ে রেখেছেন সমির ও বিজয়। এর একটি কানাডার টরন্টোভিত্তিক, আরেকটি যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টাভিত্তিক হবে। যার প্রথমটি চালু হবে ২০২৭ সালে।
আরও পড়ুনযে চাকরিতে ভালো না করলেও বেতন বাড়ে৯ ঘণ্টা আগেক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ জানিয়েছে, নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজির কোচিং, ম্যানেজমেন্ট, সাপোর্ট স্টাফসহ হাই পারফরম্যান্সের দিকগুলো দেখবে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট।
এ বিষয়ে এনজেডসির প্রধান নির্বাহী স্কট উইনিংক বলেছেন, ‘চুক্তিটি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের (এনজেডিসি) জন্য একটি অনন্য এবং রোমাঞ্চকর মাইলফলক। যেহেতু ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধি পাচ্ছে, আমাদের ক্রিকেট নেটওয়ার্কের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে এনজেডসিকে কৌশলগত সুযোগগুলো কাজে লাগাতে হবে। এটি আমাদের আয়ের উৎস বৈচিত্র্যময় করে, আমাদের বৈশ্বিক ব্র্যান্ড ও অনুসারী বৃদ্ধি করে এবং আমাদের খেলোয়াড় ও কোচ উভয়ের জন্য নতুন প্রতিভা উন্নয়ন ও ধরে রাখার পথ তৈরি করতে সাহায্য করবে।’
২০২৩ সালে শুরু হওয়া মেজর লিগ ক্রিকেট গত বছর আইসিসি কর্তৃক ‘লিস্ট এ’ মর্যাদা পেয়েছে। বর্তমানে লিগটিতে ৬ দল খেলে, যা ২০২৭ সালে আট ও ২০৩১ সালে ১০ দলে উন্নীত হওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুনগুগলের সুন্দর পিচাই এবার দ্য হানড্রেডে, সঙ্গে মাইক্রোসফটের সত্য নাদেলাও১৬ জানুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ র য ঞ চ ইজ র আম দ র এনজ ড
এছাড়াও পড়ুন:
২০২৭ সালে কি নতুন শিক্ষাক্রম পাওয়া যাবে
২০২২ সালে সর্বশেষ যে নতুন শিক্ষাক্রম প্রণীত হয়েছিল, অন্তর্বর্তী সরকার আসার পরে তা বাতিল করা হয়। কারণ, এই শিক্ষাক্রমের ব্যাপারে প্রবল জন–অসন্তোষ ছিল। বিপরীতে ঘোষণা দেওয়া হয়, ২০২৭ সালে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম চালু করা হবে। কিন্তু এ জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম পাওয়া আদৌ সম্ভব হবে কি না।
একটি শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করার জন্য কতটুকু সময় লাগতে পারে, সেটি বলা মুশকিল। কারণ, শিক্ষাক্রমের কতটা বদল করা হবে এবং কারা, কীভাবে এই সংস্কারের কাজ করবেন, তার ওপর সময়ের ব্যাপ্তি নির্ভর করে। অন্য দেশের শিক্ষাক্রম গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সময় বেশি লাগে; কারণ তখন এর ভালো-মন্দ পাইলটিং করে যাচাই করার দরকার হয়। শিক্ষাক্রম প্রণয়ন বা সংস্কারে অর্থের জোগানদাতা অন্য রাষ্ট্র বা বিদেশি সংস্থা হলেও সময় বেশি লাগতে পারে। আবার বিদ্যমান শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে কেবল সংশোধনের কাজ করলে সময় কম লাগে। ২০২৭ সালের শিক্ষাক্রমে বদল কতটুকু, কীভাবে আনা হবে, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা দেওয়া হয়নি।
শিক্ষাকে যুগোপযোগী রাখার স্বার্থেই শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকের বদল আনতে হবে। তবে যেকোনো কিছু নতুন করে প্রতিষ্ঠা করার কাজটি সব সময় সহজ হয় না। বিদ্যমান কাঠামোকে বিবেচনায় নিয়েই পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ভালো হবে।২০২২ সালের শিক্ষাক্রম প্রণয়নের জন্য প্রায় চার বছর সময় লেগেছিল। এই শিক্ষাক্রমে পাঠদানের পদ্ধতি, শিখন কার্যক্রম ও মূল্যায়নের প্রক্রিয়ায় আমূল পরিবর্তন আনা হয়। মূলত ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থাকে অনুসরণ করে এই শিক্ষাক্রম প্রণীত হয়েছিল। অতীতের পাঠদানের পদ্ধতিতে শিক্ষকের লেকচার বা বক্তৃতাদানের প্রাধান্য ছিল। সে ক্ষেত্রে শিক্ষাদানের ব্যাপারটি ছিল একমুখী। নতুন পদ্ধতিতে শুরুতে শিক্ষার্থীদের বিষয় উপস্থাপনের সুযোগ রাখা হয়, যাতে এর মাধ্যমে শিক্ষক তাঁদের জ্ঞান সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন। শিক্ষকের পড়ানোর কাজটি এর পরে শুরু করার নির্দেশনা ছিল।
মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও আনা হয় ব্যাপক পরিবর্তন। গ্রেড ও নম্বরের বদলে যোগ্যতার স্তরভিত্তিক মূল্যায়নব্যবস্থা চালু করা হয়। অভিভাবকদের সবচেয়ে আপত্তি ছিল এখানে। তাঁরা জোর দিয়ে বলেছেন, নম্বর ও গ্রেড না থাকার কারণে বুঝতে পারছেন না শিক্ষার্থীর পড়াশোনার অবস্থা কী। তবে সবচেয়ে বেশি আপত্তি ছিল শিক্ষাক্রমকে অনুসরণ করে রচিত পাঠ্যবইয়ের বিভিন্ন কনটেন্ট বা উপকরণ নিয়ে। যেমন সমাজ বইয়ের ক্ষেত্রে অনেকেই বলেছেন, সেখানে বাংলাদেশের ইতিহাসকে একপেশে করে তুলে ধরা হয়েছে। বিজ্ঞান বইয়ের ক্ষেত্রে ওয়েবসাইট থেকে হুবহু অনুকরণের অভিযোগ ছিল। এ ছাড়া পাঠ্যবইয়ের বানান ও তথ্যগত প্রচুরসংখ্যক ভুল নিয়েও সমালোচনা হয়েছে।
আরও পড়ুনশিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবই: পরিমার্জন ও সংস্কারের আগে যা বিবেচনায় নিতে হবে১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে পাঠ্যবই প্রণীত হয়। বর্তমানে ২০২৫ ও ২০২৬ সালে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত যেসব পাঠ্যবই পড়ানো হয়েছে কিংবা ছাপার কাজ চলছে, সেগুলো মূলত ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে রচিত। পুরোনো বই কিছু সংশোধন করেই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এই সংশোধন-পরিমার্জনসহ অন্যান্য কাজে এবারও এত বেশি সময় লেগেছে যে আগামী শিক্ষাবছরে যথাসময়ে সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হবে কি না, সে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
এখন যদি পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে ২০২৭ সালে নতুন পাঠ্যবই প্রণয়ন করতে হয়, তবে আরও আগে এর রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনা হাজির করার দরকার ছিল। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার এ কাজে হাত না দিয়ে নতুন সরকারের ওপর দায়িত্ব বর্তাতে চায়। সে ক্ষেত্রে কয়েক মাসের মধ্যে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন এবং সেই ভিত্তিতে পাঠ্যক্রম রচনা ও প্রকাশের উদ্যোগ নিলে লেজেগোবরে অবস্থা হবে। তা ছাড়া এনসিটিবির চেয়ারম্যান ও সদস্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোও ২০২৪-এর জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে শূন্য থেকেছে। এর ফলে নতুন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের কাজটিও গতিশীল হয়নি। সুতরাং ভালো পরিবর্তন চাইলে আরেকটু সময় নেওয়া উচিত। আর শিক্ষাক্রমের ব্যাপারটিই এমন, একসঙ্গে সব কটি শ্রেণিতে এর প্রয়োগ করা যায় না—নিচের ক্লাস থেকে ধীরে ধীরে ওপরে উঠতে হয়।
শিক্ষাকে যুগোপযোগী রাখার স্বার্থেই শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকের বদল আনতে হবে। তবে যেকোনো কিছু নতুন করে প্রতিষ্ঠা করার কাজটি সব সময় সহজ হয় না। বিদ্যমান কাঠামোকে বিবেচনায় নিয়েই পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ভালো হবে।
তারিক মনজুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক