নেগেটিভ ইক্যুইটির প্রভিশনের সময়সীমা বাড়ল ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত
Published: 24th, April 2025 GMT
পুঁজিবাজারের সদস্যভুক্ত স্টক ব্রোকার এবং মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজারদের গ্রাহকের মার্জিন অ্যাকাউন্টে আনরিয়েলাইজড লস বা সৃষ্ট নেগেটিভ ইক্যুইটির উপর প্রভিশন সংরক্ষণের সময়সীমা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৫৩তম জরুরি কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো.
আরো পড়ুন:
কারণ ছাড়াই বাড়ছে দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর
স্ত্রীকে শেয়ার উপহার দেবেন ওয়ালটনের উদ্যোক্তা পরিচালক
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৫৩তম জরুরি কমিশন সভায় সার্বিক বিবেচনা পূর্বক ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) এবং বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) আবেদনের প্রেক্ষিতে স্টক ব্রোকার এবং মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজারদের গ্রাহকের মার্জিন অ্যাকাউন্টে আনরিয়েলাইজড লস বা সৃষ্ট নেগেটিভ ইক্যুইটির উপর প্রভিশন সংরক্ষণের সময়সীমা ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, শর্ত থাকে যে, এ সুবিধা গ্রহণ করার জন্য যে সকল স্টক ব্রোকার এবং মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজারের নেগেটিভ ইক্যুইটি বা আনরিয়েলাইজড লস রয়েছে, তাদের প্রত্যেককে নেগেটিভ ইক্যুইটি বা আনরিয়েলাইজড লসের উপর প্রভিশন সংরক্ষণের সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ আগামী ৩০ জুনের মধ্যে কমিশনে জমা দিতে হবে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ২৭ মার্চ জারি করা বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, স্টক ডিলার এবং মার্চেন্ট ব্যাংকারদের পোর্টফোলিওর মার্জিন ঋণ হিসাবে আদায় না হওয়া লোকসানের বিপরীতে প্রভিশন রাখার মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল, যা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। নেগেটিভ ইক্যুইটির বিপরীতে প্রভিশনিং সংরক্ষণের মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য বিএসইসির কাছে প্রস্তাব দিয়েছে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। তবে বিএসইসি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নেগেটিভ ইক্যুইটির উপর প্রভিশন সংরক্ষণের সময়সীমা বর্ধিত করেছে। ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রভিশনিং বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি বাদে পুঁজিবাজারের সদস্যভুক্ত বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের মোট নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৮২৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
ঢাকা/এনটি/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র সময়স ম ব এসইস র
এছাড়াও পড়ুন:
দর পতন থেকে বের হতে পারছে না শেয়ারবাজার
দর পতন থেকে বের হতে পারছে না শেয়ারবাজার। গত সপ্তাহের চার কর্মদিবসের প্রতিদিন ঢাকার শেয়ারবাজারে সূচক কমে যায়। চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই দিনেও একই অবস্থা। প্রতিদিনই বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ সব শেয়ার বিক্রি করে লোকসান নিয়ে বাজার ছাড়ছেন। এ নিয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত টানা ষষ্ঠ দিনের দর পতনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১৬০ পয়েন্ট কমেছে। পতনের হার ৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। সূচক নেমেছে
৫০৪৪ পয়েন্টে। এর আগে গত বছরের নভেম্বরের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহ মিলে এমন দর পতন হয়।
গত ছয় দিনে তালিকাভুক্ত ৩৬০ কোম্পানির মধ্যে ২৮৬টির বা ৭৯ শতাংশের দর পতন হয়েছে।
এ ছাড়া তালিকাভুক্ত ৩৭ মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর হারিয়েছে ৩২টি। লেনদেন কমে গতকাল নেমেছে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে।
কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বাজারে আসা ছেড়ে দিয়েছেন। এখনও যাদের শেয়ার আছে, এমন বিনিয়োগকারীরা জানতে চাচ্ছেন, এ বাজার আদৌ ‘ভালো’ হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা। বিনিয়োগকারীদের তারা কোনো উত্তর দিতে পারছেন না।
অন্তর্বর্তী সরকারের শুরুর দিকে দায়িত্ব গ্রহণের পর বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ ঘোষণা দেন, তাঁর লক্ষ্য অন্তত ৫০ লাখ বিনিয়োগকারী বাড়ানো। ডিজিটাল ব্যবস্থায় শেয়ার ধারণের তথ্য সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ সময়ে উল্টো প্রায় ৬৫ হাজার বিনিয়োগকারী বাজার ছেড়েছেন।
ডিএসইর ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, বিনিয়োগকারী বাড়ানো বা কতজন বিনিয়োগকারী আসবে, তার লক্ষ্য নির্ধারণ করা বিএসইসির কাজ নয়। বিএসইসির কাজ হলো, বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে এমন পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে বিনিয়োগকারীরা স্বচ্ছন্দে বিনিয়োগ করতে আস্থা পান। দুঃখজনক হলেও সত্য, এমন পরিবেশ বিএসইসি তৈরি করতে পারেনি। বিনিয়োগ পরিবেশ ঠিক নেই বলে বাজারও ঠিক নেই।
ডিবিএ সভাপতি বলেন, শেয়ারবাজারই ঠিকভাবে চলছে না। বাজার কোন দিকে যাচ্ছে বা কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে বিনিয়োগকারী এবং বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের কেউ দিকনির্দেশনা পাচ্ছে না। একদিকে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারাচ্ছেন, অন্যদিকে লেনদেন কমে যাওয়ায় ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংকসহ সব মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান আয় হারিয়ে চরম দুর্দশায় পড়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের ঠিকমতো বেতন দিতে পারছে না। গেল ঈদের সময় অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদের পূর্ণ বোনাস দিতে পারেনি। আগামী ঈদেও একই অবস্থা হবে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।
এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সঙ্গে কথা হয়েছে কিনা– জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম বলেন, গত আট মাসে কয়েকবার কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে তারা বাজার নিয়ে উদ্বেগের কথা বলেছেন। কিন্তু কমিশনের কোনো উদ্যোগ দেখছেন না। উদ্যোগ না থাকার কারণ হতে পারে, কমিশন ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না। গত মাসে বিএসইসিতে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মধ্য দিয়ে এর কিছুটা প্রকাশ হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করছেন। এর কোনো সমাধান হয়েছে কিনা– খোদ কমিশন থেকে তেমন কোনো বার্তা নেই। ফলে বিনিয়োগকারীরা যা বোঝার বুঝে নিচ্ছেন। তিনি মনে করেন, বর্তমান কমিশনের কর্মকর্তারা কর্মকর্তা না হয়ে যদি শুধু বিনিয়োগকারী হতেন, তাহলেও তারাও এমন বাজারে বিনিয়োগ করতেন না বা বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিতেন।
করণীয় জানতে চাইলে দীর্ঘ অভিজ্ঞ এ ব্রোকার বলেন, সময় কখনও শেষ হয়ে যায় না। বর্তমান অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সব অংশীজনের একসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের এই বলে আশস্ত করতে হবে, তারা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আছেন। বিনিয়োগকারী জানেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তারা শুধু এটাই দেখতে চান, তাদের বিনিয়োগ সুরক্ষিত রাখতে সংশ্লিষ্টরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন এবং বিনিয়োগ থেকে মুনাফা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে এবং এটা আগে অনুধাবন করতে হবে, যে বাজার নিয়ে তারা কাজ করছেন, তা ঠিক নেই।