বিএনপির কমিটিতে পদ পেলেন নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী
Published: 24th, April 2025 GMT
খুলনার তেরখাদা উপজেলার সাচিয়াদাহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন এ বি এম আলমগীর শিকদার। ২০১৬ সালে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে অংশ নেন। তবে জিততে পারেননি। ২০২১ সালে দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন, সেবারও পরাজিত হন। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় তাকে বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ।
সম্প্রতি তেরখাদা উপজেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ২১ এপ্রিল গঠিত ওই কমিটিতে ৫ নম্বর সদস্যের পদ পেয়েছেন আলমগীর শিকদার। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, ২০২৬ সালে পরবর্তী ইউপি নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গতবছর থেকেই স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন শুরু করেন। ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি পুরোপুরি বিএনপিতে ভিড়ে যান।
ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক আবুল বাশার বলেন, ২০২১ সালের নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর থেকে আলমগীর কবির বিএনপির সঙ্গে রয়েছেন। তার বাড়িতে তিন উপজেলার নেতারা দাওয়াত খেয়েছেন। তবে কমিটিতে তার নাম কে দিয়েছে আমি জানি না।
তবে সাচিয়াদহ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক খান গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আলমগীর আগে কখনো বিএনপির সঙ্গে ছিল না। ৫ আগস্টের পর অনেকের সঙ্গে সেও নতুন বিএনপি হয়েছে।’
ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা ও জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য আলী ইমরাজ জুয়েল বলেন, গত ১৭ বছর আওয়ামী লীগের সব সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন আলমগীর শিকদার। বিএনপির যারা নির্যাতিত হয়েছেন, অনেকেই কমিটিতে পদ পায়নি। এর চেয়ে কষ্টের কিছু হতে পারে না।
এ ব্যাপারে এ বি এম আলমগীর শিকদার বলেন, আমি আওয়ামী লীগের কোনো পদে ছিলাম না। একটা সিস্টেম করে নৌকা প্রতীক পাই। কিন্তু আমাকে জোর হারিয়ে হারিয়ে দেওয়া হয়। গত ৩-৪ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে আছি। প্রকাশ্যে কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছি। এজন্য হয়তো আমাকে কমিটিতে রেখেছে।
তেরখাদা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক চৌধুরী কাওছার আলী বলেন, ভুল করে তার নাম চলে এসেছে। তাকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ আওয় ম ল গ ব এনপ র স কম ট ত উপজ ল আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকাবাসী ৯ বছরে মাত্র ৩১ দিন নির্মল বাতাসে নিশ্বাস নিয়েছেন
বায়ুদূষণে রাজধানী ঢাকা প্রায়ই বিশ্বের শীর্ষে থাকছে। বাতাসে বুকভরে শ্বাস নেওয়াই এখন কঠিন। রাজধানীতে বসবাসকারী মানুষ গত ৯ বছরে (৩ হাজার ১১৪ দিনের হিসাব) মাত্র ৩১ দিন নির্মল বাতাসে নিশ্বাস নিতে পেরেছেন। যা গত ছয় বছরের মধ্যে মাত্র ১ শতাংশ সময়।
ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে পাওয়া ২০১৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ঢাকার বায়ুমানের সূচক বা একিউআইয়ের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এসব তথ্য জানিয়েছে। ক্যাপস বলছে, দেশে প্রতি বছরই বায়ুদূষণ আগের চেয়ে বেড়েছে।
মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘বিশ্ব ধরিত্রী দিবস ২০২৫: বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও ক্যাপসের উদ্যোগে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
গবেষণার তথ্য তুলে ধরে ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার জানান, ঢাকায় গত ৯ বছরে মানুষ মাত্র ৩১ দিন (১%) নির্মল বা ভালো বায়ুতে নিঃশ্বাস নিতে পেরেছে। তবে এক্ষেত্রে ৬২৪ দিন (২০%) মাঝারি বায়ু, ৮৭৮ দিন (২৮%) সংবেদনশীল বায়ু, ৮৫৩ দিন (২৭%) অস্বাস্থ্যকর, ৬৩৫ দিন (২১%) খুব অস্বাস্থ্যকর এবং ৯৩ দিন (৩%) দুর্যোগপূর্ণ বায়ু গ্রহণ করেন। ২০২৪ সালের সবচেয়ে ভাল ও সবচেয়ে খারাপ বায়ুমানের দিনসংখ্যা হলো যথাক্রমে ২ ও ৩৫ দিন।
বিশ্ব ব্যাংকের ২০২২ সালের এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ২০২১ সালে বাংলাদেশে বায়ু দূষণের কারণে অন্তত ২ লাখ ৩৬ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের (সিআরইএ) গবেষণায় বলা হয়েছে, বায়ু দূষণের কারণে প্রতিবছর ৫ হাজার ২৫৮ শিশুসহ ১ লাখ ২ হাজার ৪৫৬ জন মানুষের অকালমৃত্যু হয়।
গবেষণায় বলা হয়, গত ৯ বছরের মধ্যে ঢাকায় ২০২৩ এবং ২০২১ সালে খুব অস্বাস্থ্যকর বায়ুমানের দিনের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ছিল। ২০২১ সালে খুব অস্বাস্থ্যকর দিন ছিল ৮৬ এবং ২০২৩ সালে অস্বাস্থ্যকর দিন ছিল ১৩৩। কিন্তু ২০২৩ সালে ৩৬৫ দিনের মধ্যে ১৪ দিন ছিল অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর বা দুর্যোগপূর্ণ যা অন্য বছরগুলোর তুলনায় বেশি ছিল।
আহমেদ কামরুজ্জামান বলেন, ঢাকায় ৯ বছরে সবচেয়ে বেশি দূষিত বাতাস ছিল ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে। ওই মাসে সূচকে গড় বায়ুমান ছিল ৩০০। আর সবচেয়ে ভালো অবস্থান ছিল ২০২১ সালের জুলাইয়ে। ওই মাসে গড় বায়ুমান ছিল ৯৭। ২০২৪ সালের ৩৬৬ দিনের মধ্যে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর বা দুর্যোগপূর্ণ দিনের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল ৩৫ দিনে।
সম্প্রতি প্রকাশিত আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ একাধিক বছর বিশ্বের শীর্ষ দূষিত বাতাসের দেশের তালিকায় রয়েছে। ২০২১ ও ২০২৩ সালে বাংলাদেশ শীর্ষে ছিল। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। সেই সঙ্গে গত বছর দূষিত বাতাসের শহরগুলোর বৈশ্বিক তালিকায় রাজধানী ঢাকা ছিল তিন নম্বরে।
জেলাভিত্তিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের জেলা গাজীপুর। এ জেলার বাতাসে অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত মানমাত্রার চেয়ে ১৮ গুণ বেশি। অন্যদিকে সবচেয়ে কম দূষিত বাতাসের জেলা সিলেট। যদিও সিলেট শহরের বাতাসে অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণা ডব্লিউএইচওর মানমাত্রার চেয়ে ৯ দশমিক ৭ গুণ বেশি। এমনকি এটা বাংলাদেশের নির্ধারিত জাতীয় আদর্শ (বার্ষিক) মানের চেয়ে ৩ দশমিক ২৩ গুণ বেশি।
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে বাপা ও ক্যাপসের বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। এগুলো হলো—মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধ করে বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড যানবাহনের ব্যবহার বাড়ানো। ব্লক ইটের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ করে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করা। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা। বিদ্যমান জ্বালানি নীতিগুলোতে সংশোধন আনা। নির্মল বায়ু আইন প্রণয়ন করা। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্প কারখানায় বিশ্বমানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নিঃসরণ মান নির্ধারণ এবং এর কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা।