ভারতীয় বিমানের জন্য আকাশসীমাবন্ধসহ একগুচ্ছ পাল্টা পদক্ষেপ নিল পাকিস্তান
Published: 24th, April 2025 GMT
কাশ্মীরে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহতের জেরে গতকাল সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি পদক্ষেপ নিয়েছিল ভারত। আজ পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) বৈঠকে তার পাল্টায় বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাহ শরিফের সভাপতিত্বে ওই বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর পাঠানো বিবৃতিতে সিদ্ধান্তগুলো জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তান কঠোরভাবে ভারতের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা নাকচ করেছে। পাকিস্তান বলেছে, এই চুক্তি বিশ্ব ব্যাংকের মধ্যস্থতায় হওয়া একটি বাধ্যবাধকতামূলক আন্তর্জাতিক চুক্তি, এককভাবে এই চুক্তি স্থগিতের কোনো বিধান নেই। পানি ভারতের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যু, তা দেশের ২৪ কোটি মানুষের জীবনরক্ষা করে এবং যে কোনো মূল্যে এই পানি পাওয়ার বিষয়টি রক্ষা করা হবে। সিন্ধু চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তান যে পানি পাবে, তার প্রবাহ বন্ধ বা অন্যদিকে নেওয়ার যে কোনো চেষ্টা এবং ভাটি অঞ্চলের অধিকার ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা যুদ্ধের শামিল বলে বিবেচনা করা হবে এবং জাতীয় ক্ষমতার সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পূর্ণ শক্তি ব্যবহার করে এর জবাব দেওয়া হবে।
পাকিস্তান বলেছে, ভারতের বেপরোয়া ও দায়িত্বহীন আচরণের, যা আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তসমূহ এবং আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে, প্রেক্ষিতে পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে সব দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্থগিতের অধিকার প্রয়োগ করবে এবং তা শুধু সিমলা চুক্তি স্থগিতের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। আর তা ভারত পাকিস্তানের ভেতরে সন্ত্রাসবাদ উসকে দেওয়া, আন্তঃসীমান্ত হত্যা বন্ধ করা এবং আন্তর্জাতিক আইন ও কাশ্মীর নিয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাবসমূহ না মেনে চলা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
পাকিস্তান অবিলম্বে ওয়াগা সীমান্ত চৌকি বন্ধ করছে। এই পথ দিয়ে ভারত থেকে সব ধরনের চলাচল বন্ধ থাকবে। বৈধভাবে যারা এই পথ দিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করেছেন তারা অবিলম্বে এখান দিয়ে ফেরত যেতে পারবেন না। তবে ৩০ এপ্রিলের পরে এই সুযোগ দেওয়া হবে না।
ভারতীয় নাগরিকদের দেওয়া সব সার্ক ভিসা বাতিল করেছে পাকিস্তান। এই ভিসার আওতায় পাকিস্তানে অবস্থানরত সব ভারতীয় নাগরিককে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশটি ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অবশ্য শিখ ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হচ্ছে না।
ইসলামাবাদে ভারতীয় হাই কমিশনে নিযুক্ত দেশটির প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। অবিলম্বে তাঁদেরকে পাকিস্তান ছাড়তে বলা হয়েছে। তাঁদের সহায়তায় নিযুক্ত কর্মীদেরও ভারতে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইসলামাবাদে ভারতীয় হাই কমিশনে কর্মকর্তার সংখ্যা ৩০ জনে নামিয়ে আনতে বলে পাকিস্তান। ৩০ এপ্রিলের মধ্যে তা করতে বলা হয়েছে।
ভারতের মালিকানাধীন বা ভারত থেকে পরিচালিত সব বিমান পরিবহন সংস্থার জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ করার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তান দিয়ে তৃতীয় কোনো দেশের সঙ্গে ভারতের সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিতের ঘোষণাও দিয়েছে ইসলামাবাদ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অ-তালিকাভুক্ত-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করের ব্যবধান ১০ শতাংশ চায় বিএসইসি
পুঁজিবাজারের উন্নয়নে অ-তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের ব্যবধান পূর্বের ন্যায় সর্বনিম্ন ১০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সচিব নাজমা মোবারকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।
দেশি বা বিদেশি বা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজার তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করতে এ করসুবিধা প্রধান আবশ্যক, যা প্রণোদনা হিসেবে কাজ করবে। এছাড়া পুঁজিবাজারে গুণগতমানসম্পন্ন কোম্পানির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে, বাজারকে অধিকতর শক্তিশালী, গতিশীল ও স্থিতিশীল করতে এ করসুবিধা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করে বিএসইসি।
আরো পড়ুন:
৯ মাসে ডরিন পাওয়ারের মুনাফা বেড়েছে ৩৬.৭৭ শতাংশ
পুঁজিবাজারে টানা দরপতন
আট মাসে ডিএসইএক্স সূচক কমেছে ৮০২ পয়েন্ট
খন্দকার রাশেদ মাকসুদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার দীর্ঘদিন ধরেই মৌলভিত্তিসম্পন্ন, লাভজনক ও স্বচ্ছ কোম্পানির অভাবে ভুগছে। এর ফলে বাজারের গভীরতা অত্যন্ত সীমিত, যা দীর্ঘমেয়াদে একটি কার্যকর ও স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গঠনের পথে বড় বাধা। এই পরিস্থিতিতে দেশের পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে, বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের। বাংলাদেশে বহু লাভজনক দেশি ও বহুজাতিক কোম্পানি রয়েছে, যাদের ব্যবসা শক্তিশালী এবং আয়ও উল্লেখযোগ্য।
তবে এসব কোম্পানির অধিকাংশই এখনো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি। এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো-তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে করহারে উল্লেখযোগ্য পার্থক্যের অভাব। ২০২৪ সালের অর্থ আইন-এর তফসিল (২), অনুচ্ছেদ (খ) এর দফা (ক) এর (অ) অনুযায়ী বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার সাড়ে ২২.৫ শতাংশ এবং বর্ণিত অনুচ্ছেদ ও দফার (ক) এর (ঈ) অনুযায়ী অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার সাড়ে ২৭.৫ শতাংশ। তালিকাভুক্ত ও অভালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারে এই ব্যবধান মাত্র ৫ শতাংশ, যা ভালো ও মৌলিকভাবে শক্তিশালী কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওযার ক্ষেত্রে আরো নিরুৎসাহিত করছে।
চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, যেসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়, তারা সাধারণত নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী প্রকাশ করে, সুশাসন মেনে চলে, এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করে। করহারে ছাড় দেওয়ার মাধ্যমে এই দায়িত্ববান আচরণকে পুরস্কৃত করা সম্ভব হবে এবং অন্যান্য ভালো কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য উৎসাহিত করবে। ভালো কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হলে বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ে, কারণ তারা টেকসই আয় ও সুশাসনের আশ্বাস পায়। এটি বাজারকে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল করে এবং বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ায়। এছাড়া ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ে। আপাতদৃষ্টিতে কর ছাড় মানেই রাজস্ব ঘাটতি মনে হলেও, তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বাড়লে ব্যবসার পরিধি ও করনির্ভরতা উভয়ই বাড়ে।
কর আদায়ে স্বচ্ছতা বাড়ে এবং দীর্ঘমেয়াদে মোট রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পায়। অনেক উন্নয়নশীল ও মধ্য-আয়ের দেশ, যেমন মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, ভারত ইত্যাদি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে কর সুবিধা দিয়ে সফলভাবে ভালো কোম্পানিগুলোকে বাজারমুখী করেছে। বাংলাদেশে বর্তমানে অধিকাংশ করপোরেট প্রতিষ্ঠান ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীল। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহের সুযোগ তৈরি হলে ব্যাংক খাতের ওপর চাপ কমে আসবে ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি হ্রাস পাবে। অন্যদিকে বেশি সংখ্যক ও বৈচিত্র্যময় কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে বাজারের গুটি কয়েক কোম্পানির মূল্য ওঠানামার ওপর নির্ভরতা কমে যাবে। এতে সূচকের উঠানামায় অস্থিরতা হ্রাস পায়, যা বিনিয়োগকারীদের ইতিবাচক বার্তা দেয়।
চিঠিতে বিএসইসি চেয়ারম্যান জানান, দেশি/বিদেশি/বহুজাতিক কোম্পানিসমূহ যাতে পুঁজিবাজার হতে মূলধন উত্তোলনে উৎসাহিত হয় সেজন্য কর সুবিধা প্রধান আবশ্যক যা প্রণোদনা হিসেবে কাজ করবে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহের সুশাসন প্রতিষ্ঠাসহ নানাবিধ খরচ বহন করতে হয় বিধায় তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহের মধ্যে উপরিল্লিখিত করহারের ব্যবধান পূর্বের ন্যায় সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। এই পদক্ষেপ পুঁজিবাজারে গুণগতমানসম্পন্ন কোম্পানির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে, বাজারকে অধিকতর শক্তিশালী, গতিশীল ও স্থিতিশীল করে তুলবে এবং দীর্ঘমেয়াদে দেশের আর্থিক খাতের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়।
ঢাকা/এনটি/এসবি