দীর্ঘ ৯ বছর পর আগামী ১৪ মে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পঞ্চম এই সমাবর্তনে অংশ নিচ্ছেন ২২ হাজার ছয়শ’র বেশি শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ১৮ হাজার সনদে নিজ হাতে সই করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াহ্ইয়া আখতার। বাকি শিক্ষার্থীরা সনদ উত্তোলন করেছেন। সমাবর্তন নিয়ে নানা সমালোচনার মধ্যেও উপাচার্যের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন অনেকেই।

সমাবর্তনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানসূচক ডক্টরেট অব লিটারেচার (ডি–লিট) উপাধি দেওয়া হবে। প্রধান বক্তা হিসেবেও উপস্থিত থাকবেন তিনি। 

এদিকে সমাবর্তনকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। গত কয়েকদিন ধরে উপাচার্যের কার্যালয়ের সভাকক্ষে গিয়ে দেখা যায় টেবিলে সারিবদ্ধ করে সাজানো সনদে একের পর সই করছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াহ্ইয়া আখতার। সমাবর্তনে শিক্ষার্থীদের হাতে মূলত স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের  সনদ তুলে দেওয়া হয়। এই সনদে উপাচার্যের সই থাকা প্রয়োজন। সাধারণত এই ধরনের আয়োজনে উপাচার্যের সইয়ের সিল ব্যবহার করা হয়। তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উপাচার্য নিজ হাতে ১৮ হাজার সনদে সই করে সমাবর্তনের আয়োজনে যুক্ত করেছেন ভিন্ন মাত্রা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

নিজ হাতে সই করে একাডেমিক সন্তানদের কাছে নিজের স্মৃতি রাখতে চান বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াহ্ইয়া আখতার। ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন,
‘এটি স্মরণকালের সর্ববৃহৎ সমাবর্তন। সমাবর্তী ২৩ হাজার। মাত্র ১৮ হাজার সনদে স্বাক্ষর করতে হবে। সিল বানিয়ে দেওয়া যেত। সেটা করিনি। সমাবর্তীরা এখানে ৫-৬ বছর পড়েছেন। তারা আমাদের একাডেমিক সন্তান। আমরা চাই, কষ্ট হলেও তাদের সনদে আমাদের হাতের ছোঁয়া থাক। সে জন্য স্বল্প সময়ে স্বাক্ষর করার জন্য এ পদ্ধতিতে কাজ করছি। আল্লাহ সহায় হবেন।’

এ বিষয়ে সমকালকে ড. ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের কাছে সমাবর্তন একটি স্বপ্নের অনুষ্ঠান। তারা এই আয়োজনের জন্য অপেক্ষা করে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স ৫৯ বছর হলেও সমাবর্তন হয়েছে মাত্র চারটি। ২০১১ সাল থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস শিক্ষার্থীরা সমাবর্তন পাননি। বিশাল এই সংখ্যক শিক্ষার্থীদের আয়োজন করতে প্রথমে হিমশিম হবে ভেবেছিলাম। তবুও বিশাল কর্মযজ্ঞে নেমেছি।
 
নিজ হাতে সই দেওয়ার প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, আমি চাইলে সিল বানিয়ে স্বাক্ষরের ব্যবস্থা করতে পারতাম। সেটি দোষের কিছু না। কিন্তু আমার মনে হয়েছে আমার শিক্ষার্থীদের কাছে আমার একটি স্মৃতি থাকুক।

তিনি আরও বলেন, বাজার থেকে কৃত্রিম সোয়েটার আর আমার স্ত্রীর নিজ হাতে বোনা সোয়েটারে তো পার্থক্য আছে। প্রিয়জনের হাতে বোনা সোয়েটারে তাদের ভালোবাসা থাকে। তেমনি আমার হাতে দেওয়া স্বাক্ষর আমার শিক্ষার্থীদের কাছে ভালোবাসা। 
 
উপাচার্য আরও বলেন, সমাবর্তনের আরও ২০ দিন বাকি আছে। এখন পর্যন্ত সই করেছি প্রায় সাড়ে তিন হাজার সনদ। শিক্ষার্থীদের জন্য অনন্য এক আয়োজন উপহার দিতে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। 

চবির সমাবর্তনে আবেদনের সময় ছিল ১৫ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত। এই সময়ে যারা সনদ উত্তোলন করেননি, তারা আবেদনের সুযোগ পেয়েছেন। তবে প্রথম দিকে মূল সনদ উত্তোলনকারী শিক্ষার্থীদের সমাবর্তনে অংশগ্রহণের সুযোগ না রাখা হলেও পরে সমালোচনার মুখে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মূল সনদ উত্তোলনকারী শিক্ষার্থীদের সমাবর্তনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে নতুন করে আবেদনের সময় নির্ধারণ করা হয় ৩ এপ্রিল থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত। এবার সমাবর্তনে অংশ নেবে ২০১১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করা শিক্ষার্থীরা। 

এর আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৪ সালে প্রথম সমাবর্তন, ১৯৯৯ সালে দ্বিতীয়, ২০০৮ সালে তৃতীয় এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপ চ র য র আখত র

এছাড়াও পড়ুন:

কাশ্মীরে হামলায় জড়িত থাকার প্রমাণ চাইলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী 

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ভারতশাসিত কাশ্মীরে হামলায় জড়িত থাকার প্রমাণ চেয়েছেন। ভারতের দাবির পক্ষে প্রমাণ উপস্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। খবর বিবিসির

আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেছেন, ‘যে কোনো হামলায় সবসময় পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত। তারা বার বার দোষারোপের খেলা খেলে। এবারও তাই করছে তারা। কাশ্মীরে হামলায় পাকিস্তান যদি জড়িত থাকে, তবে ভারত এর প্রমাণ বিশ্বের কাছে প্রকাশ করুক।’ 

এদিকে কাশ্মীরে হামলায় জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তির ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, ‘ভারতের আত্মায় আঘাত করে তারা ভুল করেছে। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, যারা এই হামলার পরিকল্পনা করেছে, হামলায় অংশ নিয়েছে, তাদেরকে এমন শাস্তি দেওয়া হবে, যা তারা চিন্তাও করতে পারবে না।

গত মঙ্গলবার ভারতশাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এর জেরে গতকাল বুধবার সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি পদক্ষেপ নিয়েছিল ভারত। এর প্রতিক্রিয়ায় আজ বৃহস্পতিবার একগুচ্ছ পাল্টা পদক্ষেপ নেয় পাকিস্তান।  

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, ভারতের ইস্যু করা সব ভিসা বাতিল করা হলো। এছাড়াও যেসব পাকিস্তানি ভারতে অবস্থান করছেন তাদের দেশ ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

এদিকে হামলার ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার সর্ব ভারতীয় বৈঠকের আহ্বান করেছেন নরেন্দ্র মোদি। পরে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন।

নয়াদিল্লির পাকিস্তান দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে। দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, যে কোনো সময় সামরিক যুদ্ধের দিকে যেতে পারে দুই দেশ।

গত মঙ্গলবার বিকেলে পেহেলগাম শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে বৈসরণ উপত্যকায় পর্যটকদের ওপর ওই হামলা হয়। পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় এ উপত্যকাকে ‘ভারতের সুইজারল্যান্ড’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। ভারত বলছে, গতকালের এ ঘটনা ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীরে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা। হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিতে সম্ভাব্য সবকিছু করার ঘোষণা দিয়েছে ভারত সরকার।

পর্যটকদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইরান, ইতালিসহ অনেক দেশ। হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে পাকিস্তান প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা প্রধান উপদেষ্টার

পর্যটকদের ওপর হামলায় নিন্দা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে এক বার্তায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উদ্দেশ করে ড. ইউনূস বলেন, পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানির ঘটনায় আমার গভীর সমবেদনা গ্রহণ করুন। আমরা এ জঘন্য কাজের তীব্র নিন্দা জানাই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ