নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবিতে কাল খেলাফত মজলিসের বিক্ষোভ
Published: 24th, April 2025 GMT
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনকে ‘ইসলামবিদ্বেষী’ উল্লেখ করে এই কমিশনের প্রতিবেদনকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে খেলাফত মজলিস। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন ও তাদের প্রতিবেদন বাতিল এবং ভারতে মুসলিম নির্যাতনের প্রতিবাদে ২৫ এপ্রিল সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি। আগামীকাল শুক্রবার বাদ জুমা রাজধানীর গুলিস্তানে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর ফটকে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করবে খেলাফত মজলিস।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ঢাকায় খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে এ কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়। পরে আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কর্মসূচির কথা জানানো হয়েছে। খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী সভায় সভাপতিত্ব করেন। দলের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের সভা সঞ্চালনায় ছিলেন। বৈঠকে দলের যুগ্ম মহাসচিব জাহাঙ্গীর হোসাইন, মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল ও আবদুল জলিল, সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান, কাজী মিনহাজুল আলমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন।
খেলাফত মজলিসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে নেতারা নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রদত্ত প্রতিবেদন ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে অবিলম্বে কমিশন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। বৈঠকে দলের নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, কমিশনের প্রতিবেদনে মুসলিম উত্তরাধিকার আইন বাতিলের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মুসলিম পারিবারিক আইন সংস্কার করে সব ধর্মের জন্য অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যেখানে বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার ও ভরণপোষণে নারী-পুরুষের কথিত সমান অধিকার থাকবে। স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করতে পারবেন। যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব প্রস্তাব অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কার্যকর করারও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নির্দিষ্ট মতাদর্শের রুচির বহিঃপ্রকাশমাত্র। বেশ কিছু প্রস্তাব পবিত্র কুরআনের বিধানের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। বাংলাদেশের মুসলিম নারী সমাজের বাস্তবতা ও স্বকীয়তার সঙ্গেও এর কোনো সম্পর্ক নেই, যা ইসলাম ও মুসলিম পরিচয়ের অস্তিত্বের ওপর একটি সুপরিকল্পিত আঘাত। এসব প্রস্তাব দেশের ধর্মীয় ভারসাম্য ও পারিবারিক কাঠামো ধ্বংস করার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। এই কমিশনের সদস্যরা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চান। তাঁরা নারীদের সর্বসাধারণের আদৌ প্রতিনিধিত্ব করেন না। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানাই। তাদের সব বিতর্কিত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের দাবি জানাই।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ত ব দ
এছাড়াও পড়ুন:
আওয়ামী লীগের ভোট পেতে একটি দল তাদের বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করে না: সালাহউদ্দিন আহমদ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘একটি দল আওয়ামী লীগের ভোট প্রাপ্তির জন্য আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করে না।’
আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সালাহউদ্দিন আহমদ এসব কথা বলেন। বিজয়ের মাস উপলক্ষে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, মিরপুর বাঙলা কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, তিতুমীর কলেজ, ঢাকার বিভিন্ন ইউনিটের নারীনেত্রী এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ও বর্তমান নেতারা অংশ নেন।
একটি দলকে ইঙ্গিত করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘ইনিয়ে-বিনিয়ে বলছে যে তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল। আমরা মাঝেমধ্যে জিজ্ঞাসা করি, সেই মুক্তিযুদ্ধ কি পাকিস্তানের পক্ষে ছিল? জনগণের সামনে কিছুদিন পরে তারা হয়তো বলবে যে তারাই একমাত্র মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, আমরা করিনি। এ রকম অনেক বক্তব্য আপনারা ভোটের ময়দানে শুনতে পাবেন। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ অনেক সচেতন। এখন আর ধর্মের বিড়ি বিক্রি করে বাংলাদেশের জনগণের সামনে ভোট চাওয়া যাবে না। তারপরও আমাদের মাঠে–ময়দানে পরিকল্পনা নিয়ে যেতে হবে।’
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘যারা নিজের দেশের নাগরিককে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে হত্যা করেছে, নারী–শিশুনির্বিশেষে শতসহস্র মানুষকে হত্যা করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে, এই ইতিহাস যেন আমরা ভুলে না যাই।’
বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত ‘শ্বেতপত্র’–এর কথা উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগ যে পরিমাণ টাকা তছরুপ করেছে, সেটা দিয়ে বাংলাদেশের দুটি শিক্ষা বাজেট করা যায়। তিনটি স্বাস্থ্য বাজেট করা যায়। ব্যাংকিং ও নন–ব্যাংকিং ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর থেকে যে লুটপাট হয়েছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় যে ঋণ দেওয়া হয়েছে, যেটি তছরুপ হয়েছে, সেটা দিয়ে ২৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত। ১৪টি মেট্রো সিস্টেম নির্মাণ করা যেত। বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে ব্যাংকিং লুটপাটের মধ্য দিয়ে, সেটা বিলিয়ন ডলারে না বলে অঙ্কে বোধ হয় ২৯ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা প্রসঙ্গেও অনুষ্ঠানে কথা বলেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক যাত্রাকে বিভিন্নভাবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী করার জন্য গণতন্ত্রের উত্তরণ হতে হবে। সেই গণতান্ত্রিক উত্তরণের একটি সফল ঘোষণা গতকাল হয়েছে, যেটাকে আমরা তফসিল বলছি, নির্বাচনী তফসিল।’
কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘কেউ কেউ বলেছে নো পিআর, নো ইলেকশন। কেউ কেউ বলেছে আগে স্থানীয় সরকার ইলেকশন, না হলে নো ইলেকশন। আর কেউ কেউ বলেছে একই দিনে গণভোট আর নির্বাচন হলে আমরা মানি না। আমি কারও নাম নিতে চাই না। তারা গণতন্ত্রের বিপক্ষের শিবির। তারা নিজেদের মতো করে গণতন্ত্র চায়। তাদের গণতন্ত্রের সংজ্ঞা আলাদা।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।