মায়ের সেবাযত্ন না করায় স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ ফেলেন সেপটিক ট্যাংকে
Published: 24th, April 2025 GMT
আড়াই মাস আগে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে শাহিদা বেগম (৬৫) নামের এক নারীকে হত্যার পর লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলা হয়। ঘটনার পর ওই নারীর স্বামী আবদুল মোমিন (৬৮) প্রচার করেন, স্ত্রীকে ফজরের নামাজ পড়তে বলে তিনি মসজিদে চলে যান। ফিরে এসে স্ত্রীকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। পরে টানাহেঁচড়ার চিহ্ন দেখে সেপটিক ট্যাংকের স্ল্যাব খুলে স্ত্রীর লাশ দেখতে পান।
এ ঘটনায় বৃদ্ধার ছেলে মামলা করার পর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করতে গিয়ে বারবার হোঁচট খায় পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বৃদ্ধার স্বামীকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে তিনি একেকবার একের রকম তথ্য দেন। একপর্যায়ে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলা ভাইয়ের পরিবারকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন। সর্বশেষ তাঁর স্ত্রীকে ‘দুষ্টু জিনে’ মেরেছে বলে জানান।
দীর্ঘ তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদের পর হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন আবদুল মোমিন। গতকাল বুধবার বিকেলে কুমিল্লার আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে মোমিন বলেন, পারিবারিক কলহ ও তাঁর বৃদ্ধ মায়ের সেবাযত্ন করতে অনীহা প্রকাশ করায় কথা–কাটাকাটির এক পর্যায়ে তিনি স্ত্রীকে হত্যা করেন। পরে লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেন।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি সকালে চৌদ্দগ্রামের ঘোলপাশা ইউনিয়নের ধনুসাড়া গ্রাম থেকে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার আবদুল মোমিন স্থানীয় একটি মসজিদে দীর্ঘদিন ধরে ইমামতি করতেন। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেন চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দীন আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে ওসি বলেন, ঘটনার পর বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে আবদুল মোমিনের ওপর তাঁদের সন্দেহ হয়। এরপর তাঁরা তাঁকে নজরদারিতে রাখেন। একপর্যায়ে গত ২৭ মার্চ তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ২১ এপ্রিল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে কারাগার থেকে চৌদ্দগ্রাম থানায় আনা হয়। এরপর দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তিনি স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। সর্বশেষ গতকাল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঘটনার বিস্তারিত প্রকাশ করেন।
জবানবন্দিতে আবদুল মোমিন দাবি করেন, তাঁর মায়ের বয়স ১৩০ বছরের কাছাকাছি। তিনি চলাফেরা করতে পারতেন না, তবে সুস্থ আছেন। তিনি ও তাঁর ভাই পালাক্রমে এক মাস করে মায়ের দায়িত্ব নিয়ে সেবাযত্ন করতেন। মায়ের সেবাযত্ন নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে প্রায়ই তাঁর ঝগড়া হতো। ঘটনার দিন বাড়িতে ফিরে গভীর রাতে মায়ের সঙ্গে খারাপ আচরণের বিষয়ে স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেন। এতে স্ত্রী রাগান্বিত হয়ে তাঁকে (মোমিন) গালমন্দ শুরু করেন। এতে বিরক্ত হয়ে বালিশ দিয়ে স্ত্রীর নাক-মুখ চেপে ধরেন। কিছুক্ষণ পর দেখেন, স্ত্রী আর নড়াচড়া করছেন না।
জবানবন্দিতে মোমিন আরও বলেন, এ ঘটনার পর ভোর সাড়ে চারটার দিকে স্ত্রীর লাশ কাঁধে করে বাড়ির উত্তর পাশে শৌচাগারের সেপটিক ট্যাংকে ফেলে ঢাকনাটি আবার লাগিয়ে দেন। এরপর বাড়ির নলকূপে গোসল করে তিনি মসজিদে চলে যান। মসজিদ থেকে ফিরে ছেলেকে ফোন দিয়ে বলেন, ‘তোমার মাকে পাওয়া যাচ্ছে না।’ পরে ছেলেসহ আশপাশের লোকজন তাঁর স্ত্রীকে খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে সকাল সাড়ে সাতটার দিকে সেপটিক ট্যাংকে লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হেশাম উদ্দিন বলেন, আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে মোমিন একাই পুরো হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। আশা করছেন দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা সম্ভব হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবদ ল ম ম ন স ব যত ন পর য য় মসজ দ ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
রূপগঞ্জে প্রবাসী রায়হান হত্যা মামলার পলাতক ৩ আসামি গ্রেপ্তার
রূপগঞ্জে আলোচিত প্রবাসী রায়হান হত্যা মামলার তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১। গ্রেপ্তাররা হলেন, কায়েতপাড়া ইউনিয়নের বরুনা পুবেরটেক এলাকার মৃত ইয়ানুছের ছেলে তাইজুল, তার স্ত্রী রাহিমা, মেয়ে তাইরিন।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) র্যাব ১১ কোম্পানি কমান্ডার মো. ইশতিয়াক হোসাইন গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এরআগে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে আড়াইহাজার উপজেলার বেপারি বাড়ি বায়তুল নুর জামে মসজিদ পাশের একটি বাড়ি থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব জানায়, প্রবাসী রায়হানের কাছ পাঁচ লাখ টাকা ধার নেন তাইজুল। এরপর থেকে ধার নেওয়া টাকা দিতে গড়িমসি করতে থাকেন। পরে চলতি বছরের ২৪ মার্চ সকালে পাওনা টাকা চাইতে গেলে তার সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। সন্ধ্যায় তাইজুল টাকা দিবে বলে রায়হানকে তার বাসায় ডেকে নিয়ে হত্যা করে।
এরপর তারা রায়হানের মরদেহ তাইজুলের বাসার দোতলায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় রায়হানের বাবা বাদী হয়ে থানায় অজ্ঞাতের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনার পর থেকে তাইজুল তার স্ত্রী রাহিমা, মেয়ে তাইরিন পলাতক ছিলেন।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব জানতে পারে পলাতক আসামিরা আড়াইহাজার উপজেলার বেপারি বাড়ি বায়তুল নুর জামে মসজিদ পাশের একটি বাড়িতে অবস্থান করছিল। পরে র্যাব-১১ একটি অভিযানিক দল অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করে রূপগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা করে।
রূপগঞ্জ থানার ওসি লিয়াকত আলী বলেন, আলোচিত রায়হান হত্যা মামলার তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে থানায় হস্তান্তর করেছে র্যাব-১১। গ্রেপ্তারদের নারায়ণগঞ্জ আদালতে পাঠানো হয়েছে।