ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় হারানো স্বায়ত্তশাসন ফিরে পেতে চায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।

তবে অধীন দপ্তর-সংস্থার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে পূর্বানুমতির প্রয়োজন আছে বলে মনে করে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, টেলিযোগাযোগ একটি আকর্ষণীয় খাত। এই খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর একসময় সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপের সুযোগ তেমন ছিল না। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে নিজেদের স্বার্থে টেলিযোগাযোগ খাতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। তখন বিটিআরসিতে বাড়তে থাকে রাজনৈতিক প্রভাব। সরকার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন, ২০০১-এর সংশোধনী (২০১০) আনে। এ সংশোধনীর মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ সেবা দেওয়ার জন্য লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন, প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ, লাইসেন্সের নাম পরিবর্তন, ট্যারিফ অনুমোদনসহ বিভিন্ন অপারেশনাল কার্যক্রমে সরকারের পূর্বানুমোদনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিগত সরকারের সময়ে গত বছর টেলিযোগাযোগ আইন নতুন করে করার উদ্যোগ নিয়ে খসড়া তৈরি করা হয়। খসড়ায়ও পূর্বানুমোদনের বিষয়গুলো ছিল।

আওয়ামী লীগ সরকারে থাকাকালে বিষয়টি নিয়ে কিছু না বললেও ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর বিটিআরসি এখন তার হারানো স্বায়ত্তশাসন ফিরে পেতে চায়। এ দাবি জানিয়ে ১৬ এপ্রিল ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বিটিআরসি।

মন্ত্রণালয়কে দেওয়া চিঠিতে বিটিআরসি বলছে, সরকারের এই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার কারণে কাজের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতার পাশাপাশি নেতিবাচক রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আনার জন্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে সরকারের পূর্বানুমোদন গ্রহণের বিষয়টি বিটিআরসির স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার ক্ষমতা খর্ব করছে। এ কারণে টেলিযোগাযোগ খাতে একটি অসম বাজারব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।

আরও পড়ুনকথা বলা ও ইন্টারনেট সেবায় মধ্যস্বত্বভোগী কমবে, গ্রাহকের লাভ কী২৩ এপ্রিল ২০২৫

চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.

) মো. এমদাদ উল বারী প্রথম আলোকে বলেন, ২০১০ সালের আইনে (সংশোধনী) সামান্য পরিবর্তন এনে বড় ধরনের প্রভাব তৈরির সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। বিটিআরসির স্বাধীনতা খর্ব করে ফেলা হয়। কাকে লাইসেন্স দেওয়া হবে, কাকে দেওয়া হবে না, কারটা বাতিল হবে, কাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া যাবে—এই সবকিছুর জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হয়। তাহলে এই কমিশনের ভূমিকা কী, সে প্রশ্ন এসে যায়। সরকারই বিষয়টি স্পষ্ট করুক। বিটিআরসির জবাবদিহি থাকবে, কিন্তু সেটা সরকারের প্রভাবের বাইরে গিয়ে।

বিটিআরসির কাজে সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদাহরণ হলো আইজিডব্লিউ লাইসেন্স নিয়ে শামীম ওসমান পরিবারের জালিয়াতির ঘটনা। আওয়ামী লীগ নেতা ও নারায়ণগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের পরিবার সরকারের ১২৬ কোটি টাকা পাওনা ফাঁকি দিতে নিজেদের কোম্পানি তিন ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করে। এ ক্ষেত্রে জালিয়াতি করে তাঁদের মালিক দেখানো হয়। বিটিআরসি সূত্র জানায়, মালিকানা হস্তান্তরের সময় এ-সংক্রান্ত অনুমোদন খুব দ্রুত দিয়েছিল মন্ত্রণালয়।

আরও পড়ুনটেলিযোগাযোগ সংস্কার নীতিকে টাকার বস্তা দিয়ে প্রভাবিত করবেন না: ফয়েজ আহমদ১৯ এপ্রিল ২০২৫

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর টেলিযোগাযোগ খাতে অনেক লাইসেন্স দেওয়া হয়। কমিশন সূত্র বলছে, বিটিআরসি এত লাইসেন্স দেওয়ার পক্ষপাতী নয়। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে সরকারের অনুমোদনে এসব লাইসেন্স দিতে হয়েছে। এর অন্যতম উদাহরণ আইজিডব্লিউ অপারেটর। আওয়ামী লীগের টানা ১৫ বছরের শাসনকালের শুরুর দিকে তৎকালীন সরকারঘনিষ্ঠরা এই লাইসেন্স নিয়ে মুনাফা করে রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। পরে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে বিটিআরসির নির্ধারিত নম্বরের চেয়ে মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে বাড়তি নম্বর দিয়ে রাজনৈতিক কারণে অনেক লাইসেন্স দিতে হয়েছে।

মন্ত্রণালয়কে দেওয়া চিঠিতে বিটিআরসি আরও বলেছে, সম্প্রতি আয়োজিত বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিটে বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে ইন্টারনেট–সেবা বন্ধের সংস্কৃতি ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের ঘাটতির বিষয়ে তাঁদের উদ্বেগ জানিয়েছেন। বিটিআরসি এই ইন্টারনেট বন্ধ করার আইনি ধারা রহিত করার বিষয়ও চিঠিতে যুক্ত করেছে।

আরও পড়ুনটেলিযোগাযোগ খাতকে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে গড়তে রোডম্যাপ দেবে বিটিআরসি২১ জানুয়ারি ২০২৫

টেলিযোগাযোগ আইন নতুন করে করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, এ জন্য তিন ধরনের ‘টার্গেট’ (লক্ষ্য) দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো বিটিআরসির স্বাধীনতা ও জবাবদিহির মধ্যে ‘ট্রেড-অফ’ (ভারসাম্য) করা। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন যে ৬টি প্রতিষ্ঠান আছে, তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়কে যুক্ত করা এবং সেসব বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি চাওয়া, অর্থাৎ যে বিষয়গুলোতে লাইসেন্সিং, রেগুলেটরি পলিসিসহ এই প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বার্থ আছে, সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতির দরকার আছে। আর ইন্টারনেট যেন কোনো সরকার বন্ধ করতে না পারে, সে জন্য প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা।

আরও পড়ুনটেলিযোগাযোগ খাতের ছোট অপারেটর সুরক্ষা চায়৩১ ডিসেম্বর ২০২৪আরও পড়ুনসরকারের পাওনা ১২৬ কোটি টাকা, ফাঁকি দিতে অভাবনীয় জালিয়াতি ওসমান পরিবারের১৪ জানুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প র ব ন মত ব ট আরস র সরক র র প র জন ত ক ক ষমত আওয় ম ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

শিবগঞ্জে ৯৯টি ককটেল ও  ৪০টি পেট্রোল বোমা উদ্ধার

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৯৯টি ককটেল ও ৪০টি পেট্রোল বোমা উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি। 

বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের কয়লাবাড়ী ট্রাক ট্রার্মিনাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিস্ফোরক বস্তুগুলো উদ্ধার করা হয়। তবে এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। 

মহানন্দা ব্যাটালিয়নের (৫৯ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া জানান, দুপুর বেলায় চকপাড়া বিওপির টহল দলের সদস্যরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শিবগঞ্জ উপজেলার কয়লাবাড়ী ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৯৯টি ককটেল ও ৪০টি পেট্রোল বোমা উদ্ধার করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

ঝিনাইদহ সীমান্তে নারী-শিশুসহ ১১ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার

কুষ্টিয়ায় দেড় কেজি স্বর্ণ উদ্ধার, গ্রেপ্তার ১  

তিনি আরো বলেন,  ‘‘যারা এতগুলো বিস্ফোরকবস্তু রেখেছিল, তারা নিশ্চয় ভালো কাজের জন্য রাখেনি। ককটেল-পেট্রোল বোমার মালিককে শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’’ 

ঢাকা/শিয়াম/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ