মানবজাতির প্রকৃতিতে ভুল করা একটি সাধারণ ব্যাপার। আদমকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তাকে তার প্রকৃতির অংশ হিসেবে লোভ-লালসা ও বাসনা দান করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা শয়তান সৃষ্টি করেছেন, যারা আদমের সন্তানদের পাপের দিকে আহ্বান করে এবং তাদের পথভ্রষ্ট করে। ফলে, যখন মানুষ সৎ ও ন্যায়পরায়ণ হতে চায়, তখন তারা সর্বোচ্চ মর্যাদা অর্জন করে, হয় ফেরেশতাদের চেয়েও উচ্চতর। তবে তারা কখনো কখনো এতটাই নিচু হতে পারে যে, শয়তানের সঙ্গে তুলনা করা যায়।

আল্লাহ তাআলার বিরাট অনুগ্রহ হলো যে, তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, মহান এবং আমাদের তাওবা কবুল করেন। তিনি আমাদের পাপ ক্ষমা করেন, যদি সত্যিকারভাবে তাওবা করি এবং পুনরায় তা না করার সংকল্প করি, তবে আমাদের সমস্ত ভুল ও অপরাধ তিনি মাফ করে দেন। ক্ষমা প্রার্থনা করাকে তাই আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য ইবাদত নির্ধারণ করেছেন।

আরও পড়ুননামাজের ভেতরে দরুদ পড়ার নিয়ম০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ক্ষমা প্রার্থনা করার শ্রেষ্ঠ সময়গুলো

কোরআন ও হাদিসের বহু বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, আল্লাহ তাআলা চান, আমরা তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। এমনকি তিনি নবীজিকেও ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলেছেন কোরআনে বহুবার। তিনি বলেছেন, ‘জানো, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং তোমাদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো।’ (সুরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ১৯)

অন্য আয়াতে বলেন, ‘তুমি তোমার পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো (হে মুহাম্মদ), এবং তোমার প্রভুর প্রশংসা করো রাত্রি ও দিনকাল।’ সুরা মু’মিন, আয়াত: ৫৫)

এ ছাড়াও বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ অসীম ক্ষমাশীল, খুবই দয়ালু।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ১০৬)

মুগিরাহ ইবনে শুবা থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, একদিন নবীজিকে (সা.

)-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল কেন তিনি রাতের সময় এত বেশি নামাজ পড়েন, যার ফলে তার পা ও গোড়ালি ফুলে যায়? তার তো পূর্বাপর সমস্ত পাপ ক্ষমা করা হয়েছে। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন: ‘তাহলে কি আমি কৃতজ্ঞ দাস হব না?’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,১৩০; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৮১৯)

আরও পড়ুনপাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যেভাবে এল১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বেশ কয়েকটি সময়ের বিষয়ে জানা যায়, তখন ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাআলা সবচেয়ে বেশি খুশি হন। তেমন তিনটি সময় হলো:

১. ইবাদত সম্পাদনের পর: এটি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের ইবাদতের কমতি পূরণ করতে পারি এবং আমাদের ইবাদতের কারণে অহংকার বা আত্মসন্তুষ্টি থেকে রক্ষা পেতে পারি।

কোরআনের শেষ দিকে নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে অবতারিত হওয়া আয়াত গুলির মধ্যে একটি, ‘যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে এবং তুমি মানুষদের আল্লাহর ধর্মে প্রবেশ করতে দেখবে, তখন তোমার প্রভুর প্রশংসা করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। তিনি তাওবা কবুলকারী।’ (সুরা নাসর, আয়াত: ১-৩)

এই আয়াত মহানবী (সা.)-এর কাছে এসে পৌঁছানোর পর, তিনি প্রতি নামাজের পর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। নবীজি (সা.) প্রতিটি ভালো কাজ শেষ করার পর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। হজ সম্পন্ন করার পর, তিনি মদিনার দিকে রওনা হওয়া শুরু করতেন এই বলে: ‘আমরা ফিরে যাচ্ছি তাওবা করে, ইবাদত করে এবং আমাদের প্রভুর প্রশংসা করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮১৫।

২. পাপ করার পর: আল্লাহ বলেছেন, ‘এবং যারা কোনো খারাপ কাজ করলে বা নিজেদের প্রতি অবিচার করলে, আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে—আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ মাফ করবে—তাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করেন, যদি তারা সে পাপের দিকে ফিরে না যায়।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৫)

নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন: ‘যদি আল্লাহর কোনো বান্দা পাপ করে, তারপর সঠিকভাবে অজু করে, দুই রাকাত নামাজ পড়ে, এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন।’ এরপর তিনি কোরআনের এই আয়াতটি পাঠ করেন, ‘যারা খারাপ কাজ করে বা নিজেদের প্রতি অবিচার করে…’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৭১৫)

৩. গাফিলতিতে থাকার পর: সব মানুষই ভুল করে, এবং অধিকাংশই তারা যা করছে তার প্রতি গাফিল থাকে এবং গাফিলতিতে থেকে তারা আরও পথভ্রষ্ট হয়। যদি আমরা মহানবী (সা.)-এর উদাহরণ দেখি, তবে দেখতে পাব তিনি কখনোই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে গাফিল হতে দেননি। তিনি বলেছেন, ‘কখনো কখনো আমার মনে একটি পর্দা অনুভব করি এবং আমি একদিনে একশত বার আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৭০২)

আল্লাহ তাদের প্রশংসা করেন যারা তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং প্রতিশ্রুতি দেন যে, তিনি তাদের ক্ষমা করবেন। অবশ্যই, এতে অন্তর্ভুক্ত হল পাপ থেকে বিরত থাকা।

আমাদের পূর্ববর্তী পুণ্যবান মনীষীদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছিলেন, ‘যদি কেউ ক্ষমা প্রার্থনা করে কিন্তু তার পাপ থেকে বিরত না থাকে, তবে সে ক্ষমা প্রার্থনাতে মিথ্যা বলছে।’

পাপ থেকে বিরত থেকে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে, আমরা সত্যিই আশা করতে পারি যে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করবেন। তবে যদি আমরা ‘আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি’ বলি কিন্তু আমাদের অন্তরে পাপ ত্যাগ না করি, তবুও ক্ষমা প্রার্থনা থেকে যেন কিছুতেই বিমুখ না থাকি। আশা করা যায়, আল্লাহ আমাদের অন্তর বদলে দেবেন এবং পাপ থেকে ফিরে থাকার আগ্রহও তৈরি করে দেবেন।

 সূত্র: ইসলাম টুডে ডট কম

অনুবাদ: মনযূরুল হক

আরও পড়ুনপ্রতিবেশীকে কষ্ট দিলে জান্নাতে যাওয়া যাবে না১৪ এপ্রিল ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল ল হ ত আল আম দ র বল ছ ন র জন য ক রআন

এছাড়াও পড়ুন:

‘হঠাৎ ফোন দিয়ে দিব্যি বলে, মা আমি রাঙামাটি আছি’

অপহরণকারীদের কবল থেকে মুক্ত হওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা সুস্থভাবে ফেরি এলেও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে সমকালকে এ কথা জানান দিব্যি চাকমার মা ভারতী দেওয়ান।

তিনি বলেন, আমার সন্তানকে ফেরত পেয়েছি, এটাই আমার কাছে বেশি। আজ দিব্যির ফোন থেকে হঠাৎ কল আসে। সে বলে আমি রাঙামাটি আছি। আমরা দ্রুত গিয়ে তাকে নিয়ে আসি।

ভারতী দেওয়ান আরও বলেন, দিব্যিকে কিছু জিজ্ঞেস করিনি। সে আপাতত মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। কিছু জিজ্ঞেস করাও উচিত হবে না। আমি নিজেও অসুস্থ। আমার মেয়ের বন্ধুরাও মুক্তি পেয়েছে শুনেছি।  তারা সুস্থ হলে বিস্তারিত জানা যাবে।

খাগড়াছড়ি থেকে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে মুক্তি দিয়েছে অপহরণকারীরা। তবে কোথায়, কীভাবে, কাদের জিম্মায় ছিলেন এ বিষয়ে এখনও বিস্তারিত জানা যায়নি।

আজ বিকেলে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) পাঁচ শিক্ষার্থীর মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বিবৃতি দিয়েছে। খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চবি শাখার সভাপতি অন্বেষ চাকমা বলেন, তারা মুক্তি পেয়েছেন তবে কোথায় কীভাবে ছিলেন জানতে পারিনি। বর্তমানে তারা নিজেদের গ্রামের বাড়ি ও আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান করছেন।

এর আগে পিসিপি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তথ্য ও প্রচার সম্পাদক রিবেক চাকমার দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পিসিপি চবির শাখা সদস্য রিশন চাকমা ও তার চার বন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের দিব্যি চাকমা, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের লংঙি ম্রো এবং চারুকলা বিভাগের অলড্রিন ত্রিপুরাকে ধাপে ধাপে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে পিসিপি। 

পাহাড়ের বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ি থেকে চবি ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে জেলা সদরের গিরিফুল এলাকা থেকে ১৬ এপ্রিল সকালে পাঁচ শিক্ষার্থীকে দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে। তারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ