ইউরোপের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর অর্থ কী
Published: 24th, April 2025 GMT
মার্কিন নেতৃত্বাধীন যে বৈশ্বিক শৃঙ্খলা এত দিন ছিল, তা এখন আর নেই। আগে বিশ্বের নেতৃত্ব দিত যুক্তরাষ্ট্র—একটা নির্দিষ্ট নিয়মকানুনের ভিত্তিতে চলত সবকিছু। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। বিশ্বরাজনীতি পরিবর্তিত হচ্ছে। এখন ইউরোপের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ—নিজের প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকভাবে চালিয়ে যাওয়া, যাতে পৃথিবী আবার এমন অবস্থায় না ফিরে যায়, যেখানে যার কাছে ক্ষমতা বেশি, তার কথাই শেষ কথা। অর্থাৎ সবকিছু শুধু ওয়াশিংটন, মস্কো আর বেইজিংয়ের মতো শক্তিশালী রাজধানীগুলোর ইচ্ছেমতো না চলে, তা নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে বহুদিন ধরে রাখা বিশ্বাস ও ধারণাগুলো সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে হবে। পুরোনো ধ্যানধারণা আঁকড়ে ধরলে চলবে না। শুধু কূটনৈতিক সফট পাওয়ার দিয়ে গণতন্ত্র এবং আমাদের জীবনধারা রক্ষা করা সম্ভব নয়। আমাদের এখন কঠোর শক্তির ভাষা আবার শিখতে হবে। যারা আমাদের মূল্যবোধ ও স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাদের মোকাবিলা করতে এ ভাষাই একমাত্র উপায়।
হ্যাঁ, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় আসার পর প্রতিরক্ষার জন্য ইউরোপের দেশগুলোকে শত শত বিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ করতে হয়েছে। কিন্তু এ প্রতিশ্রুতি যথেষ্ট নয়।
২০১৪ সালে ন্যাটোর লক্ষ্য ছিল জিডিপির ২ শতাংশ প্রতিরক্ষায় ব্যয়—যখন যুক্তরাষ্ট্র, যদিও অনিচ্ছায়, বিশ্ব পুলিশের ভূমিকা পালন করত। এখন সেই সময় আর নেই। রাশিয়ার সামরিক আধুনিকতার সঙ্গে পাল্লা দিতে হলে ইউরোপকে অন্তত দ্বিগুণ প্রতিরক্ষা ব্যয় করতে হবে। আমি আরও এক ধাপ এগিয়ে বলছি, ২০২৮ সালের মধ্যে ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যয় ৪ শতাংশ হওয়া উচিত।
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস ও পোলিশ প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক নিজেদের দেশের জন্য যেসব উচ্চাকাঙ্ক্ষা দেখাচ্ছেন, সেগুলো গোটা ইউরোপে বাস্তবায়িত হতে হবে।
বড় সেনাবাহিনী ও বেশি অস্ত্র সরঞ্জাম সরাসরি হামলার ভয় কমাবে, কিন্তু শুধু এসব যথেষ্ট নয়। যদি ইউরোপের বাড়তি ব্যয় শুধু সামরিক সরঞ্জাম কেনাকাটাতেই সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে ইউরোপ তার নিজের উচ্চপ্রযুক্তি বিপ্লব ঘটানোর সুযোগ হারাবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের শক্তির পেছনে রয়েছে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন—এআই, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো, বায়োটেক। এ জায়গাগুলোতে ইউরোপ পিছিয়ে পড়ছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ওপর আমাদের নির্ভরতা আরও বাড়বে।
অনেক দিন ধরেই ইউরোপ সস্তা রুশ জ্বালানি, সস্তা চীনা পণ্য ও সস্তা মার্কিন নিরাপত্তা ও প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে এসেছে। কিন্তু এই পরনির্ভরশীলতা আর চলে না। আমাদের স্বনির্ভর হতে হবে। এর জন্য শুধু প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তিতে খরচ করলেই চলবে না, আমাদের সমাজের ভেতরেও নতুন এক বোঝাপড়া দরকার।নিয়ম মেনে চলা একটা বিশ্বব্যবস্থা ধরে রাখতে হলে আমাদের নতুনভাবে ভাবতে হবে—কীভাবে একসঙ্গে কাজ করা যায়। পুরোনো কিছু জোট, যেমন জি৭, এখনো কিছু কাজে আসে। কিন্তু এখন সময় হয়েছে নতুন ধরনের জোট গড়ার—যেমন গণতান্ত্রিক দেশগুলো নিয়ে একটা দল, যেটার নাম হতে পারে ‘ডি৭ ’।
এই ডি৭ একসঙ্গে কাজ করতে পারে মুক্ত বাণিজ্য, অর্থনৈতিক সাহায্য, প্রতিরক্ষা, গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি আর গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ পাওয়ার ব্যাপারে। এমনকি তারা এমন এক নিরাপত্তা চুক্তিও করতে পারে, যাতে যদি এক দেশ সাইবার হামলা বা অর্থনৈতিক চাপে পড়ে, তাহলে অন্য দেশগুলো তার পাশে দাঁড়ায়—ঠিক যেমন ন্যাটোর নিয়মে আছে, এক দেশ আক্রান্ত হলে সবাই তাকে রক্ষা করে।
এই লক্ষ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে যুক্তরাজ্যের মতো ঐতিহ্যবাহী মিত্রদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে এবং কানাডা, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করতে হবে। ভারতকে নিয়েও নতুনভাবে ভাবতে হবে—একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, যার জিডিপি গত এক দশকে দ্বিগুণ হয়েছে এবং এই দশকের শেষের আগেই যা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে। উদ্দেশ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে কিছু করা নয়, বরং এমন প্রস্তুতি নেওয়া, যাতে আমেরিকা পাশে থাকুক বা না থাকুক, ইউরোপ নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে।
অনেক দিন ধরেই ইউরোপ সস্তা রুশ জ্বালানি, সস্তা চীনা পণ্য ও সস্তা মার্কিন নিরাপত্তা ও প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে এসেছে। কিন্তু এই পরনির্ভরশীলতা আর চলে না। আমাদের স্বনির্ভর হতে হবে। এর জন্য শুধু প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তিতে খরচ করলেই চলবে না, আমাদের সমাজের ভেতরেও নতুন এক বোঝাপড়া দরকার।
আমরা ইউরোপীয়—এই নিয়ে আমরা যে গর্ব করি, তা ছাড়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু কল্যাণরাষ্ট্রের পুরোনো কিছু নীতির বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতা নিখরচা নয়। আমরা কী চ্যালেঞ্জের মুখে আছি এবং তার জন্য আমাদের কী করতে হবে, তা নিয়ে ইউরোপীয় নেতাদের সত্যি কথা বলতে হবে।
ইউরোপের সামনে আজ এক সুবর্ণ সুযোগ এসেছে মুক্ত বিশ্বের নেতৃত্ব গ্রহণ করার। যদি আমরা এই সুযোগ হাতছাড়া করি, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।
● আঁদেরস ফগ রাসমুসেন ন্যাটোর সাবেক মহাসচিব এবং ডেনমার্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি ‘অ্যালায়েন্স অব ডেমোক্রেসিস ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা
স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র স ইউর প র ন র ভর র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি ও হা-মীম গ্রুপের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই
শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা, গবেষণা ও কর্মসংস্থানে পেশাগত উন্নয়নে শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি ও হা-মীম গ্রুপের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে।
বুধবার শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ সমঝোতা স্মারক সই হয়।
সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে হা-মীম গ্রুপ শান্ত-মারিয়ামের শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপের সুযোগ দেবে এবং স্নাতক উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের চাকরি প্রাপ্তির সুবিধার্থে হা-মীম গ্রুপ ও শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি যৌথভাবে কাজ করবে। এ ছাড়াও ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শিল্প-কারখানার শিক্ষামূলক পরিদর্শন, দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, গবেষণা ও কর্মসংস্থানে পেশাগত উন্নয়নে কাজ করবে।
সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠানে শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শাহ-ই-আলম, রেজিস্ট্রার ড. পার মসিয়ূর রহমান, ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ সোহেল মুস্তাফা, ব্যবসা প্রশাসন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. বেহজাদ নূর।
অন্যদিকে হা-মীম গ্রুপের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন- হা-মীম গ্রুপের মানবসম্পদ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক ইমরান আহমেদ এবং অর্গানাইজেশনাল ডেভেলপমেন্ট ও ট্রেনিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ব্যবস্থাপক উম্মে আফিয়া আখতার।