খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য ও সহ–উপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়ার পদক্ষেপকে ন্যায়বিচারের পরাজয় আখ্যা দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি। একই সঙ্গে তারা বলেছে, আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংঘর্ষের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস বর্জন করা হবে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কুয়েট শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সভা শেষে সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস চেয়েছিলাম। তবে বর্তমানে যারা রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের জন্য আন্দোলন করে আসছিল, তাদেরই আজ অন্ধকার রাজনীতির গ্রাসে বন্দী দেখতে পাচ্ছি। এ কারণেই গত ১৮ ফেব্রুয়ারির সংকট নিরসনে শিক্ষকদের কোনো চেষ্টাই সফল হয়নি। শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয়সহ শিক্ষা উপদেষ্টার পাঠানো প্রতিনিধিদলও এ ক্ষেত্রে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়াই চাপের মুখে উপাচার্য ও সহ–উপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্তে মূলত ন্যায়বিচারের পরাজয় হয়েছে।’

ফারুক হোসেন বলেন, গৌরবান্বিত জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের দীর্ঘ আট মাস পরও যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের কার্যক্রম চলতে থাকে, তবে তা শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সমগ্র বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা ভেঙে ফেলতে পারে। তবে কুয়েটের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শিক্ষকেরা সর্বদা সচেষ্ট থাকবেন।

এক প্রশ্নের উত্তরে ফারুক হোসেন বলেন, ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষের ঘটনায় সুষ্ঠ তদন্ত শেষে দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস বর্জনের আগের সিদ্ধান্ত বহাল আছে।

উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থীরা প্রায় ৫৮ ঘণ্টা পর গতকাল বুধবার দিবাগত রাত একটার দিকে কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান তাঁদের জুস পান করিয়ে অনশন ভাঙান।

আরও পড়ুনকুয়েটে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ, বিকেলে বিজয় মিছিল৪ ঘণ্টা আগে

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, কুয়েটের উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যকে সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান। অবশ্য সকালে তিনি তাঁদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ার প্রক্রিয়া চলমান বলে জানিয়েছিলেন।

এর আগে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত সংকট নিরসন এবং শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সহ–উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঅনশন ভাঙলেন কুয়েটের শিক্ষার্থীরা, ক্যাম্পাসে উল্লাস১১ ঘণ্টা আগে

১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পরদিন শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়। ওই দিন দুপুরে সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিতে ১৩ এপ্রিল বিকেল থেকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন।

গতকাল দুপুরে সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ জন শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এ ছাড়া সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গতকাল বিকেল থেকে ছাত্রদের ছয়টি ও ছাত্রীদের একটি হল আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়েছে। সভায় আগামী ৪ মে থেকে পূর্বনির্ধারিত ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

দুই উপদেষ্টার এপিএস ও পিওর বিষয়ে অনুসন্ধানে নামছে দুদক

দুর্নীতির অভিযোগে অব্যাহতি পাওয়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মো. মোয়াজ্জেম হোসেন এবং উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও)
ছাত্র প্রতিনিধি তুহিন ফারাবির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এই তথ্য জানান দুদক মহাপরিচালক ও মুখপাত্র মো. আক্তার হোসেন।
      
তিনি বলেন, তাদের দুর্নীতি নিয়ে গণমাধ্যমে যে প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে আইন অনুযায়ী সেটি কমিশনের যাচাই-বাছাই সেল থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রকাশ্য অনুসন্ধান শুরু হবে। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ জমা হলেও একই সেল সেটি খতিয়ে দেখার পর একই প্রক্রিয়ায় অনুসন্ধান শুরু হবে। দুর্নীতির আমলযোগ্য তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।

জানা গেছে, গত ২২ এপ্রিল প্রজ্ঞাপন জারি করে যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ২২ এপ্রিল প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও উপদেষ্টা তাকে অব্যহতি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন গত ৮ এপ্রিল। চলতি বছরের গত ১৪ আগস্ট মোয়াজ্জেম হোসেনকে এপিএস হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। 

এর আগে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) (ছাত্র প্রতিনিধি) তুহিন ফারাবিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
 


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ