সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করল ভারত, পাল্টা কী করবে পাকিস্তান
Published: 24th, April 2025 GMT
ভারতের চোখে পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের ‘আঁতুড়ঘর’ বলে চিহ্নিত। সন্ত্রাসবাদে উসকানি রুখতে নানা ধরনের ব্যবস্থাও নেওয়ার কথা জানিয়েছে ভারত। তারা আন্তর্জাতিক মহলে জনমত গঠনের চেষ্টা করেছে। দ্বিপক্ষীয় বাক্যালাপ বহু বছর বন্ধ। ক্রিকেট খেলতেও সে দেশে ভারত যায় না।
পাকিস্তানি ক্রিকেটাররাও ভারতের আইপিএলে আসতে পারেন না। এত ব্যবস্থা সত্ত্বেও গত ৬৫ বছরে সিন্ধু পানি চুক্তি ব্যাহত করার পথে ভারত হাঁটেনি। কাশ্মীর উপত্যকার পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর এই প্রথম ভারত সেই রাস্তা বেছে নিল।
গত বুধবার রাতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে পাঁচটি ব্যবস্থা ভারত গ্রহণ করেছে, সিন্ধু পানি চুক্তি আপাতত স্থগিত রাখার বিষয়টি তার অন্যতম। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি সংবাদ সম্মেলন করে সেই খবর জানিয়ে বলেন, পাকিস্তান সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়া পুরোপুরি বন্ধ না করা পর্যন্ত এই চুক্তি ভারত স্থগিত রাখবে।
এর অর্থ, চুক্তি অনুযায়ী যে পানি পাকিস্তানের পাওয়ার কথা, ভারত তা তাদের দেবে না।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এত কঠোর ব্যবস্থা ভারত এর আগে কখনো নেয়নি। ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় এই পানি চুক্তিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আয়ুব খান সই করেছিলেন। এরপর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে তিনবার। একবারও সিন্ধু পানি চুক্তি ব্যাহত হয়নি। পশ্চিমের প্রতিবেশী ‘শত্রুকে’ সবক শেখাতে আন্তর্জাতিক চুক্তির অবমাননার রাস্তায় ভারত হাঁটেনি। হাঁটেনি ‘মানবিকতার খাতিরে’। ন্যায্য পানির হিস্যা বন্ধ করে প্রতিবেশী দেশের জনসাধারণকে শাস্তি দিতে ভারত চায়নি, কিন্তু এবার করল। এই প্রথম। এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বকে ভারত সম্ভবত বোঝাতে চাইছে, দশকের পর দশক ধরে সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদী আক্রমণে তারা কতটা বিরক্ত, ব্যতিব্যস্ত ও রক্তাক্ত। এ সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া কতটা সুদূর পরাহত হতে পারে, আপাতত তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
চুক্তিটা হয়েছিল অভিন্ন নদীগুলোর পানিপ্রবাহ থেকে পাকিস্তান যাতে বঞ্চিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে।
অবিভক্ত ভারতের জম্মু-কাশ্মীর ও পাঞ্জাবের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ছিল মোট ছয়টি প্রধান নদী। দেশভাগের পর ১৯৬০ সালের চুক্তিতে ঠিক হয়, পশ্চিমের তিন নদী—সিন্ধু, ঝিলম ও চন্দ্রভাগা এবং পূর্বাঞ্চলের তিন নদী—বিপাশা, ইরাবতী ও শতদ্রুর প্রবাহিত পানি দুই দেশের মধ্যে ভাগাভাগি হবে। সেই অনুযায়ী ঠিক হয়, সিন্ধু উপত্যকার এই ছয় নদীর মোট ৭০ শতাংশ পানি পাবে পাকিস্তান, ৩০ শতাংশ ভারত। সিন্ধু, ঝিলম ও চন্দ্রভাগার সিংহভাগ পানি পাকিস্তানের প্রাপ্য। পাকিস্তান তা পেয়েও আসছে। পূর্বের তিন নদী বিপাশা, ইরাবতী ও শতদ্রুর বেশির ভাগ পানি ভারতের প্রাপ্য। পশ্চিমের তিন নদীর ওপর বাঁধ দিয়ে কিছু পানি ভারত নিয়ন্ত্রণ করছে ঠিকই, তবে তা যৎসামান্য। চুক্তি স্থগিতের কারণে সেখান থেকে পানিপ্রবাহ এখন আর পাকিস্তানে যাবে না। যদিও অন্যান্য শাখা নদীর প্রবাহে কোনো বাধা সৃষ্টি হবে না। এ সিদ্ধান্তের ফলে ওই তিন নদীর পানি যা দিয়ে পাকিস্তানের দুটি প্রদেশে পানীয় ও সেচের প্রয়োজন মেটানো হয়, তা ব্যাহত হতে পারে বিশেষত এই গ্রীষ্মে।
অবশ্য সিন্ধু উপত্যকার মোট পানিসম্পদ ভারত এত বছরেও চূড়ান্তভাবে ব্যবহার করতে পারেনি। বিরাট বাঁধ প্রকল্প ভারত দিতে পারেনি, দিতে চায়ওনি। পর্যাপ্ত পানি নিয়ন্ত্রের জন্য বাঁধের উচ্চতা বাড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হলে ভারতকে তার কিষেণগঙ্গা বাঁধ ও রাতলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করতে হবে। এ কাজে ভারত এতকাল তেমন আগ্রহ দেখায়নি। পাকিস্তানও তাই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়নি।
পাকিস্তানের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না হওয়ার কারণও ভারতের গড়িমসি। চুক্তি অনুযায়ী ভারত সিন্ধু, ঝিলম ও চন্দ্রভাগার মোট ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন একর ফুট পানি ধরে রাখার মতো জলাধার তৈরি করতে পারে। ভারতের জলাধারের ক্ষমতা তার যৎসামান্য। ফলে ভারত যেখানে ওই তিন নদী থেকে ২০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে, সেখানে তারা করে মাত্র ৩ হাজার ৪৮২ মেগাওয়াট। এই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতাসম্পন্ন জলাধার ভারত এখন পর্যন্ত নির্মাণ করতে পেরেছে।
এ কারণে পাকিস্তান সেভাবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়নি। কিন্তু এবার চুক্তি সাময়িকভাবে স্থগিত বা অকার্যকর করার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর পাকিস্তান পাল্টা কী ব্যবস্থা নেয়, সেদিকে আপাতত ভারতের নজর নিবদ্ধ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ত ন নদ ব যবস থ প রব হ
এছাড়াও পড়ুন:
জেলেনস্কিকে ট্রাম্পের দোষারোপের পরপরই কিয়েভে রাশিয়ার হামলা, নিহত ৯
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে আজ বৃহস্পতিবার ভোররাতে বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যকার শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে দায়ী করার কয়েক ঘণ্টার মাথায় এসব হামলা হয়।
ইউক্রেনের বিমানবাহিনী বলেছে, কিয়েভকে লক্ষ্য করে রাশিয়া ৭০টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ১৪৫টি ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় অন্তত ৯ জন নিহত এবং ৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। জরুরি সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আবাসিক ভবন, বেসামরিক অবকাঠামোসহ কিয়েভের অন্তত ১৩টি স্থানকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
হামলার পরপরই জেলেনস্কি ঘোষণা দেন, তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা সফর সংক্ষিপ্ত করে ইউক্রেনে ফিরছেন। গতকাল বুধবার রাতে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েছিলেন।
জেলেনস্কি বলেন, আসলে কী ঘটছে, তা সারা বিশ্বের মানুষের দেখা ও বোঝা অত্যন্ত জরুরি।
তিনি আরও বলেন, নিজেদের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সহযোগিতা করার জন্য অচিরেই আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে ইউক্রেন।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের একটি এলাকায় হামলার পর ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে উদ্ধারকাজ চলছে। ২৪ এপ্রিল ২০২৫