মিয়ানমারে ভূমিকম্প বাংলাদেশের জন্য কতটা আতঙ্কের
Published: 24th, April 2025 GMT
২৮ মার্চ ২০২৫। স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ২০। মিয়ানমারসহ আশপাশের দেশগুলো কেঁপে ওঠে মিয়ানমারের মান্দালয়ের জাগাইং শহরে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের আঘাতে। এতে অসংখ্য মানুষ নিহত হন এবং অসংখ্য স্থাপনা ধসে পড়ে।
ভয়াবহ এ ভূমিকম্পের পর মিয়ানমারে দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়। অনেক মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েন। ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহৎ শহর মান্দালয়। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল থেকে ১ হাজার কিলোমিটার দূরে থাইল্যান্ডে কম্পন অনুভূত হয়, ক্ষয়ক্ষতি হয়। ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে ৩০ তলা নির্মাণাধীন ভবন ধসে পড়া নিয়ে।
ভূমিকম্পের উৎস, ক্ষয়ক্ষতি কোথায়, কেন হলো এবং এতে বাংলাদেশের জন্য কী কী শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে, তা নিয়ে এই প্রবন্ধ।
ভূমিকম্পটির উৎস, মাত্রা এবং বৈশিষ্ট্যভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল মান্দালয়ের জাগাইং হলেও এটি মান্দালয় থেকে টাউঙ্গু পর্যন্ত বিস্তৃত উত্তর-দক্ষিণ বরাবর একটি স্লিপ ফল্ট লাইনের দুই পাশে দুই প্লেটের নড়াচড়ার কারণে সংঘটিত হয়েছে। পৃথিবীর ওপরের স্তরটি বিভিন্ন অংশে বিভক্ত, যাকে বলা হয় টেকটোনিক প্লেট, যেগুলো সবই ক্রমাগত নড়াচড়া করছে। কিছু একে অপরের পাশাপাশি নড়াচড়া করে, আবার কিছু একে অপরের ওপরে বা নিচে পরস্পরের দিকে সরতে চায়। এই গতিবিধিই ভূমিকম্প এবং আগ্নেয়গিরির সৃষ্টি করে।
মিয়ানমারকে বিশ্বের ভূতাত্ত্বিকভাবে ‘সক্রিয়’ অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটি চারটি টেকটোনিক প্লেট—ইউরেশিয়ান প্লেট, ভারতীয় প্লেট, সুন্দা প্লেট এবং বার্মা মাইক্রোপ্লেটের অভিসরণস্থলের ওপরে অবস্থিত। ৪০-৫০ মিলিয়ন বছর আগে ইউরেশিয়ান প্লেটের সঙ্গে ভারতীয় প্লেটের সংঘর্ষের ফলে হিমালয় পর্বতমালার সৃষ্টি হয়েছে। বার্মা মাইক্রোপ্লেটের নিচে ভারতীয় প্লেট সরে যাওয়ার ফলে ২০০৪ সালে সুনামি সৃষ্টি হয়েছিল।
জাগাইং ফল্ট নামে একটি বড় ফল্ট রয়েছে, যা মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত এবং ১ হাজার ২০০ কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ। শুক্রবারের ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের কারণ ছিল ‘স্ট্রাইক-স্লিপ’, যেখানে দুটি প্লেট একে অপরের সঙ্গে সমান্তরালে এবং অনুভূমিকভাবে কিন্তু বিপরীত দিকে সরে যায়। প্লেটগুলো একে অপরের পাশ দিয়ে সরে যাওয়ার সময় ঘর্ষণশক্তির কারণে আটকে যায়। ঘর্ষণশক্তির সীমা যখন অতিক্রম করে যায় তখন হঠাৎ ছেড়ে দেয় এবং প্লেট দুটি হঠাৎ সরে যায়, যার ফলে ভূমিকম্প হয়।
ভূমিকম্প এত দূরে কেন অনুভূত হয়েছিলভূপৃষ্ঠের ৭০০ কিলোমিটার নিচ পর্যন্ত ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল হতে পারে। মান্দালয়ে ভূমিকম্প ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার নিচে ছিল, এ রকম অগভীর ভূমিকম্পে ভূপৃষ্ঠে কম্পনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়। ভূমিকম্পটিও বড় ছিল—রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার। পরাঘাত ছিল ১২ মিনিট পর ৬ দশমিক ৭ মাত্রার। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ অনুসারে, প্রধান কম্পনটি ছিল হিরোশিমায় ফেলা পারমাণবিক বোমার চেয়েও বেশি শক্তিশালী। উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত ২০০ কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ ফল্ট লাইন বরাবর এই ভূমিকম্প হওয়ার কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ উত্তর-দক্ষিণ বরাবর অধিক অঞ্চলে বিস্তৃত হয়। এই ফল্ট লাইনটি দক্ষিণে মাটির নিচে থাইল্যান্ডের দিকে ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত, যার কারণে মিয়ানমারের পরে থাইল্যান্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে।
ভূপৃষ্ঠে ভূমিকম্প কত মাত্রায় আঘাত করবে, তা মাটির ধরনেও নির্ধারিত হয়। ব্যাংককের মাটি নরম কাদা যেখানে ভূমিকম্পের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এটাকে ইঞ্জিনিয়ারিং ভাষায় অ্যামপ্লিফিকেশন বলে। তাই ব্যাংককের ভূতত্ত্বগত গঠন ভূমিকম্পের মাত্রা বৃদ্ধি করেছে।
সারমর্ম হলো, ফল্ট লাইনের বিস্তৃতি এবং নরম কাদামাটির স্তরের কারণে দূরে হওয়ার পরও থাইল্যান্ডে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাংকক থেকে কাছে হলেও প্লেটের সরণের দিকের সঙ্গে বাংলাদেশের দিক ছিল ৯০ ডিগ্রি। যার কারণে কম্পন অনুভূত হলেও মাত্রা কম ছিল বাংলাদেশে।
ব্যাংককে কেন কেবল একটি আকাশচুম্বী ভবন ধসে পড়লভূমিকম্পের সময় ব্যাংককের উঁচু ভবনগুলো দুলছে, বিভিন্ন ভবনের ছাদের পুল থেকে পানি পড়ছে—এ রকম ভিডিও ফুটেজ দেখা গেছে বিভিন্ন মিডিয়ায়। তবে ব্যাংককের চাতুহাক জেলার অডিটর জেনারেলের অফিসের নির্মাণাধীন সদর দপ্তরটিই ধসে পড়া একমাত্র আকাশচুম্বী ভবন বলে মনে হচ্ছে, এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী।
এখানে বলে রাখা ভালো, সাধারণত আকাশচুম্বী ভবনগুলো ভূমিকম্পে ধসে পড়ার সম্ভাবনা কম। কারণগুলো হলো ১.
থাইল্যান্ডের স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক আমর্ন পিমার্নমাস বলেন, ভূমিকম্পসহনীয় ভবনের বিষয়ে ৪৩টি প্রদেশে নিয়মকানুন থাকলেও ১০ শতাংশের কম ভবন ভূমিকম্পসহনীয় বলে অনুমান করা হয়। কিন্তু যে ভবনটি ধসে পড়েছে, তা ভূমিকম্পের সময় নির্মাণাধীন ছিল এবং হালনাগাদ বিল্ডিং কোড মেনে ডিজাইন করার কথা, যা তদন্তের পর জানা যাবে।
ড. পিমার্নমাস বলেন, ব্যাংককের নরম মাটিও এর পতনের পেছনে ভূমিকা পালন করতে পারে, কারণ এটি ভূমিকম্পের মাত্রা তিন থেকে চার গুণ বাড়িয়ে তুলতে পারে। কিন্তু এই কারণ আমার কাছে যুক্তিতে টেকে না, কারণ তাহলে আশপাশের অনেক ভবন ধসে পড়ার কথা, তা হয়নি। অ্যামপ্লিফিকেশন হয়েছে অবশ্যই, তাই তো সবাই তীব্র কম্পন অনুভব করেছে। তারপরও ব্যাংককে কম্পনের মাত্রা ৩-৪-এর মধ্যে ছিল। তিনি আরও বলেন, ‘অন্যান্য কারণও থাকতে পারে, যেমন কংক্রিটের গুণগত মান এবং কাঠামোগত ব্যবস্থায় কোনো ডিজাইন ত্রুটি। এগুলো এখনো বিস্তারিতভাবে তদন্ত করা বাকি।’ এটার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
আরও পড়ুনথাইল্যান্ডের মতো ভূমিকম্পে ঢাকার কী পরিণতি হতে পারে২৮ মার্চ ২০২৫চায়না অবজারভারের ভিডিও দেখে বুঝতে পারলাম, ভবন নির্মাণ হচ্ছিল প্রিকাস্ট স্ল্যাব দিয়ে। অর্থাৎ, কলাম (পিলার), বিম, কংক্রিটের শিয়ার ওয়ালের কোর নির্মাণের পর প্রিকাস্ট স্ল্যাব অন্যত্র ঢালাই করে ক্রেন দিয়ে চার বিমের মাঝখানে বসিয়ে দেওয়া হয়। ফাঁপা কোর স্ল্যাবগুলোকে বিমের সঙ্গে একীভূত করার জন্য সঠিক লোড ট্রান্সফার এবং কাঠামোগত অখণ্ডতা নিশ্চিত করা একান্ত আবশ্যক, যা অতিরিক্ত সংযোগ রড, শিয়ার কানেক্টর এবং প্রিকাস্ট স্ল্যাবের ওপর রডসহ কংক্রিট ঢালাই ইত্যাদি পদ্ধতির মাধ্যমে অর্জন করা হয়।
ভবনটির মেইন স্ট্রাকচার সম্পন্ন হওয়ার পরও মোট কাজের অগ্রগতি মাত্র ৩০ শতাংশ নির্দেশ করে ভবনটির প্রিকাস্ট স্ল্যাবগুলোকে মেইন স্ট্রাকচারের সঙ্গে যথাযথভাবে সংযোগ করার কাজটি হয়তো সম্পন্ন হয়নি। যার কারণে, স্ল্যাবগুলো শুধু বোঝা হিসেবে কাজ করেছে, ভূমিকম্পের লোড সব কটি কলাম এবং শিয়ার ওয়ালে ট্রান্সফারের কাজটি করতে পারেনি।
পুরো ভবনের ভূমিকম্পের আগের ছবিতে আরেকটা বিষয় লক্ষণীয় ছিল, ভবনের নিচে ডাবল বা ট্রিপল উচ্চতার কিছু কলাম যা ভূমিকম্পে ধসে পড়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। হাইওয়ে থেকে ধারণ করা বিবিসির ওয়েবসাইটে প্রচারিত একটি ভিডিওতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল ভবনের নিচতলার সব কলাম এবং শিয়ার ওয়াল একসঙ্গে ফেল করার কারণে পুরো ভবন একসঙ্গে সোজা নিচে ধসে পড়ে। একপাশে কয়েকটা কলাম ফেইল করলে ধসের ধরনটা অন্য রকম হতো।
চীনে ব্যাপকভাবে প্রচারিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধসে পড়া ভবনটি একটি কোর টিউব এবং ফ্ল্যাট স্ল্যাব সিস্টেম দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছিল। কোরটি স্লিপফর্ম কাস্টিং ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছিল, যখন ফ্ল্যাট স্ল্যাবগুলো একটি উত্তোলন পদ্ধতি ব্যবহার করে ইনস্টল করা হয়েছিল। অতিরিক্ত উচ্চতায় কংক্রিটের মান নিশ্চিত করার জন্য বহিরাগত কাঠামোতে একটি ক্লাইম্বিং ফ্রেমওয়ার্ক সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছিল। এটা যদি সত্যি হয়, তাহলে বলতে হবে, এটা একটা বড় ধরনের ডিজাইন ত্রুটি এই ধরনের আকাশচুম্বী ভবনের ক্ষেত্রে।
সবকিছু মেলালে, এটা পরিষ্কার হয় যে তড়িঘড়ি করে ভবনটির মেইন স্ট্রাকচারটি সম্পন্ন করে প্রিকাস্ট স্ল্যাবগুলোকে মেইন স্ট্রাকচারের সঙ্গে যথাযথভাবে সংযোগ না করার কারণে ভবনটি ধসে পড়ার মূল কারণ বলে প্রতীয়মান হয়। তার সঙ্গে যোগ হতে পারে, ডিজাইন ত্রুটি, নির্মাণত্রুটি, কংক্রিটের গুণগত মান এবং রডের যথাযথ সাজানো।
বাংলাদেশের রাজধানীর প্রথম ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কনট্রাক্টর হলো ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (আইটিডি), চীনের শানডং হাইস্পিড গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড (এসডিএইচএস) এবং পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না এর (সিনোহাইড্রো) জয়েন্ট ভেঞ্চার। ৩০ তলা ভবনের কন্ট্রাক্টর ছিল ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (আইটিডি) এবং চায়না রেলওয়ে নম্বর টেন লিমিটেড এর জয়েন্ট ভেঞ্চার। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ডিজাইন ভূমিকম্পসহনীয় কিনা যাচাই করে দেখা উচিত বলে আমি মনে করি। স্ট্রাকচারটা দেখে ডিজাইন যথার্থ কি না, সন্দেহ তৈরি হয়।
বাংলাদেশে ভূমিকম্পের আশঙ্কা কতটাবাংলাদেশ এবং বিশ্বব্যাপী গবেষণা রিপোর্টগুলো স্টাডি করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া বড় প্লেট বাউন্ডারিগুলো, বাংলাদেশের ভেতরে এবং অতি নিকটের ফল্ট লাইনগুলোর কারণে ১০০ থেকে ১৫০ বছর অন্তর ৭-এর অধিক মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে। ৮-এর অধিক মাত্রার ভূমিকম্পও হতে পারে, যা ২৫০-১০০০ বছর পরপর ফিরে আসে। বাংলাদেশের মধ্যে ও আশপাশে ৭-এর অধিক মাত্রার ভূমিকম্পগুলো ছিল:
• কাচার ভূমিকম্প (১৮৬৯): কেন্দ্র ছিল সিলেটের সিলচরে, মাত্রা ৭.৪।
• বেঙ্গল ভূমিকম্প (১৮৮৫): কেন্দ্র ছিল মানিকগঞ্জে, মাত্রা ৭.০।
• শ্রীমঙ্গল ভূমিকম্প (১৯১৮): কেন্দ্র শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার। মাত্রা ৭.৬।
• মেঘালয় ভূমিকম্প (১৯২৩): মাত্রা ৭.১।
• ধুবড়ি ভূমিকম্প (১৯৩০): কেন্দ্র ধুবড়ি, আসাম, ভারত। মাত্রা ৭.১।
বাংলাদেশ ও এর আশপাশে বড় ভূমিকম্পের মধ্যে আছে ১৭৬২ সালের গ্রেট আরাকান ভূমিকম্প, যার মাত্রা ছিল ৮.৫। এরপর ১৮৯৭ সালে আসামে সংঘটিত হয়েছিল ৮.০/৮.৭ মাত্রার গ্রেট ইন্ডিয়ান ভূমিকম্প, যার কেন্দ্র শিলং, ভারত। আসামে ১৯৫০ সালে সংঘটিত হয় আরেকটি ৮.৭ মাত্রার ভূমিকম্প।
এসব অতীত ভূমিকম্পগুলো নির্দেশ করে বাংলাদেশে এবং এর আশপাশের খুব কাছে ৭-এর বেশি মাত্রার ভূমিকম্প আসন্ন। কারণ বিগত ১০০ বছরের মধ্যে এ মাত্রার ভূমিকম্প হয়নি। এখনো হতে পারে আবার ১০-২০ বছর পরও হতে পারে। তবে এটা হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। ৮-এর বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হয়তো আরও ৫০-২০০ বছর পরে হতে পারে।
ভূমিকম্প হলে বাংলাদেশের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হবেরানা প্লাজা ধসের পর বিদেশি ক্রেতাদের চাপে বাংলাদেশের পোশাক কারখানার ভবনগুলো নিরাপদ কি না যাচাই করা হয়। তাতে দেখা গেছে, অধিকাংশ ভবন ডিজাইন এবং নির্মাণত্রুটির কারণে ব্যয়বহুল মেরামত এবং শক্তি বৃদ্ধি করতে হয়েছে, তাতে অনেক মালিক লোকসানে পড়েছেন, ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়েছে অথবা অতিরিক্ত মূলধন জোগান দিতে হয়েছে।
ঢাকা শহর এবং এর আশপাশের এলাকাগুলোয় ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের লোনে রাজউকের তত্ত্বাবধানে বিদেশি এবং দেশি পরামর্শকদের দ্বারা আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট (নগর সক্ষমতা প্রকল্প) সম্পন্ন করেছে প্রায় ৬০০ কোটি ব্যয় করে। এর অধীনে যে পরিমাণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে, রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে এবং সাজেশন দেওয়া হয়েছে, তার সব কটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা শহর ভূমিকম্পসহ অন্যান্য দুর্যোগ মোকাবিলায় অনেক এগিয়ে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এই প্রজেক্টের অধীনে একটা সাবপ্রজেক্ট ছিল রাজধানীর ভবনগুলোর নিরাপত্তা যাচাই করা। তাতে দেখা গেছে অধিকাংশ ভবন ডিজাইন এবং নির্মাণত্রুটির কারণে ভূমিকম্পসহনীয় নয়।
আমি যখন ব্যক্তিগত এবং প্রফেশনাল কাজে বিভিন্ন জেলায় সাইট ভিজিটে যাই, তখন রাস্তার দুই পাশে নির্মাণাধীন ভবনগুলোর কলাম, বিম এবং স্ল্যাবগুলো লক্ষ করি। প্রচুর ভবন ফ্ল্যাট স্ল্যাব এবং কলাম দিয়ে তৈরি হচ্ছে। এ ধরনের ভবন ডিজাইনে শিয়ার ওয়াল ব্যবহার করে, কলামের সাইজ বাড়িয়ে এবং স্ল্যাবের পুরুত্ব বাড়িয়ে ডিজাইন করতে হয়, যা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অনুপস্থিত। অনেক ভবন দেখি, যেগুলোতে চিকন চিকন কলাম এবং বিম দিয়ে তৈরি হচ্ছে।
এই ভবনগুলো হয় অনভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার অথবা মিস্ত্রি দিয়ে মালিকের নির্দেশনায় তৈরি হচ্ছে। এসব ভবনের ফাউন্ডেশনের অবস্থা বলা বাহুল্য। মিরপুরে একটা বিশাল ১৪ তলা ভবনের একপাশে ১২ ইঞ্চি বসে গেছে কিছুদিন আগে। এসব ভবন ভূমিকম্পের সময় মুহূর্তের মধ্যেই ধসে পড়বে, সেটা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই।
আমি ব্যক্তিগতভাবে ডিজাইন চেকিং করতে গিয়ে দেখেছি,
• অনেক সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ডিজাইনে পারদর্শী নন, বিল্ডিং কোড সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখেন না।
• অধিকাংশ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বাংলাদেশের গভীর নরম মাটিতে ভূমিকম্পসহনীয় ফাউন্ডেশন ডিজাইন সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা রাখেন না। যেমন, উত্তরা ৩য় প্রকল্প, বসুন্ধরা, জলসিঁড়ির গভীর নরম মাটিতে চিকন লম্বা পাইলের ওপর ১০ তলা ভবন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
• অধিকাংশ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার লিকুইফ্যাকশন উপযোগী নরম বালু মাটিতে ফাউন্ডেশন ডিজাইনের প্রশিক্ষণ পায়নি। নরম বালু মাটি যা ভূমিকম্পের সময় লিকুইফ্যাকশন হয়ে তরল পদার্থের মতো হয়ে যায়। এ রকম মাটিতে বিল্ডিং ডিজাইন সতর্কতার সঙ্গে করতে হয়।
• অধিকাংশ কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ার এবং নির্মাণশ্রমিকেরা ভূমিকম্পসহনীয় রড সাজানোর নিয়মকানুন জানেন না।
• আর্কিটেক্টরা মেজানাইন এবং ডাবল-ট্রিপল উচ্চতার পিলার পছন্দ করেন। মালিকেরা পছন্দ করেন, কারণ, দেখতে ভালো লাগে। এ ক্ষেত্রে ডিজাইনে অতিসতর্কতার সঙ্গে করা না হলে, ভূমিকম্পঝুঁকি কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়।
• প্রিকাস্ট পাইলগুলো লিকুইফ্যাকশন উপযোগী মাটি ভেদ করে হার্ড লেয়ারে ঢোকানো সম্ভব হয় না, এ ক্ষেত্রে ভূমিকম্পের সময় এসব ভবন ফাউন্ডেশনের দুর্বলতার কারণে ধসে পড়বে।
• কাস্ট ইন সিটু পাইলগুলো নির্মাণত্রুটির কারণে পাইলের তলার মাটি নরম থেকে যায়। ফলে ভূমিকম্পের সময় বেশি লোড আসার কারণে ভবন কাত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি।
• জেলা শহর এবং গ্রামগঞ্জে অভিজ্ঞ বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারের অভাবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ডিজাইন ছাড়া অথবা অনভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে ডিজাইন করা হয়।
বাংলাদেশের বেশির অঞ্চলের মাটি হয় নরম কাদা অথবা লিকুইফ্যাকশনপ্রবণ নরম বালু। এসব মাটিতে ফাউন্ডেশন এবং স্ট্রাকচার ডিজাইনে বিল্ডিং কোড মানার পাশাপাশি উচ্চশিক্ষা অথবা এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দরকার। ঢাকা শহরে অনেক হাউজিং প্রজেক্ট আছে, যেগুলোতে নরম কাদার ওপর ড্রেজিং করে বালু ভরাট করার মাধ্যমে ডেভেলপ করা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে নরম কাদার কারণে ভূমিকম্পের মাত্রা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায় আবার লিকুইফ্যাকশনপ্রবণ নরম বালুর কারণে মাটির ভারবহন ক্ষমতা থাকে না।
সব মিলিয়ে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, ৭-এর বেশি মাত্রার ভূমিকম্প বাংলাদেশে হলে, যে ক্ষয়ক্ষতিগুলো হতে পারে, তা হলো:
• বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা এবং রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, এগুলো নরম কাদা অথবা নরম বালুর ওপর তৈরি করা। অনেক ক্ষেত্রে, ঠিকমতো কম্প্যাকশন করা হয়নি।
• অনেক ব্রিজ ভেঙে পড়বে অথবা ব্রিজের অ্যাপ্রোচ ধসের কারণে ব্রিজ ব্যবহার করা যাবে না মেরামত না করা পর্যন্ত।
• গ্যাসলাইন, পানির লাইন লিক করতে পারে।
• বেশির ভাগ ভবন হয় ভেঙে পড়বে অথবা ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যাবে।
• শহরগুলোতে যেখানে রাস্তা সরু, সেখানে উদ্ধার তৎপরতা অত্যন্ত কঠিন হবে।
ভূমিকম্প মোকাবিলায় আমাদের করণীয়ভূমিকম্পের কোনো আগাম সতর্কতা জারি করা যায় না। আমরা জানি না কোন মুহূর্তে ভূমিকম্প হবে। আমরা শুধু বলতে পারি ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা কতটুকু। ভূমিকম্প প্রতিহত করার কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা করতে পারি একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় টিকে থাকবে এ রকম ভূমিকম্পসহনীয় স্থাপনা। স্থাপনার ধরন অনুযায়ী সেই মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যেমন পাওয়ার প্ল্যান্ট যেই মাত্রার জন্য ডিজাইন করা হয়, আবাসিক ভবন সেই মাত্রার জন্য করা হয় না। কেউ চাইলে করতে পারে, কিন্তু অনেক ব্যয়বহুল হবে বলে কেউ করে না। আমরা চাই, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হসপিটাল যেন ভূমিকম্পের সময় কোনোমতেই ধসে না পড়ে।
আমাদের ভবনগুলোয় রড এমনভাবে সাজাতে হয় যাতে, বড় ভূমিকম্পে ভবন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলে কোনোমতেই ধসে না পড়ে। তাতে জীবন রক্ষা পাবে, পরে সামান্য মেরামতের মাধ্যমে ভবন আবার ব্যবহারযোগ্য হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, ভূমিকম্প মানুষ মারে না, মানুষ মরে তাদের নির্মিত ত্রুটিযুক্ত ভবনের নিচে চাপা পড়ে। তাই আমাদের উচিত ব্যক্তিগতভাবে এবং সামগ্রিকভাবে সচেতন হওয়া।
ভূমিকম্পসহনীয় স্থাপনা এবং উন্নয়ন নিশ্চিত করতে যা করা উচিত
• ডিজাইন অনুমোদন: গ্রাম থেকে শহরে যেখানেই বিল্ডিং করা হোক, বিল্ডিং কোড (বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ২০২০) মেনে ডিজাইন করতে হবে। এটা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনিক সংস্কার এবং দক্ষ জনবল প্রয়োজন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশন বা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষগুলোয় দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এবং আর্কিটেক্ট নিয়োগ দিয়ে তাদের মাধ্যমে এটা নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ, যাঁরা বিল্ডিংয়ের ডিজাইন অনুমোদন দেবেন, তাঁদের অবশ্যই দক্ষ এবং অভিজ্ঞ হতে হবে। মনে হতে পারে এতে সরকারে ব্যয় বেড়ে যাবে। আসলে সরকারের ব্যয় বাড়বে না, বরং রাজস্ব আয় বেড়ে যাবে। কারণ, অনুমোদনের জন্য এমন ফি নির্ধারিত করতে হবে, যা থেকে কর্তৃপক্ষের জনবলের বেতন দেওয়া যাবে। তবে সরকারনির্ধারিত ফির বাইরে যাতে আর কোনো অতিরিক্ত উৎকোচ দেওয়া না লাগে, সেটা করতে পারলে একটা বিশাল অর্জন হবে। পাশাপাশি বড় শহরগুলোতে ভবনের ডিজাইন ড্রয়িং একটি নিবন্ধিত ডিজাইন ফার্ম দিয়ে করতে হবে এবং আরেকটি নিবন্ধিত ফার্ম দিয়ে চেক করতে হবে। এ রকম অনেকগুলো ফার্ম নিবন্ধিত করতে হবে তাদের অভিজ্ঞতা, যোগ্যতার ভিত্তিতে।
• পুরোনো ভবনগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ভবনমালিকদের নোটিশ দিতে হবে, হয় ভেঙে ফেলুন না হয় ভবনের শক্তি বৃদ্ধি করুন। সরকারি ভবনগুলো সবার আগে এর আওতায় আনা উচিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ফায়ার ব্রিগেড, পাওয়ার প্ল্যান্ট, সরকারি সব গুরুত্বপূর্ণ অফিস ইত্যাদি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিরাপদ কি না যাচাই করে হয় ভেঙে নতুন ভবন করা অথবা পুরোনো ভবনের শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। প্রথমে ২০ বছরের বেশি পুরোনোগুলো এর আওতায় এনে তারপর ১০-২০ বছর পুরোনো এবং সবশেষে ১-১০ বছর পুরোনো ভবনগুলো এর আওতায় আনতে হবে।
• শহরগুলোয় আগামী ৫০ বছরের উন্নয়ন, শহর বর্ধন মাথায় রেখে জমিগুলো কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে, রাস্তা এবং প্লটিং করে জমির মালিকদের বরাদ্দ দিতে হবে তাদের জমির আনুপাতিক হারে। এটা একটা বিশাল কাজ। এর জন্য প্রয়োজন অনেক চিন্তাভাবনা, গবেষণা। অন্যথায় সরু রাস্তার দুই পাশে বিশাল অট্টালিকা নির্মাণ বন্ধ করা সম্ভব হবে না। ঢাকাসহ সব শহরে এটা লক্ষণীয়।
• আর্কিটেক্ট, প্ল্যানার এবং ইঞ্জিনিয়ারদের প্রফেশনাল বডি (IAB, IEB etc.) অথবা স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে ডিজাইন এবং কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে সরকারের একটা বাজেট থাকতে পারে অথবা যারা প্রশিক্ষণ নেবেন তাদের কাছ থেকে ফি নিয়ে কম বাজেটে সম্পন্ন করা সম্ভব।
• প্রতিবছর পরীক্ষার মাধ্যমে প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ার নিবন্ধনের ব্যবস্থা করলে এবং সেই নিবন্ধিত ইঞ্জিনিয়ার ছাড়া কেউ ডিজাইন করতে পারবে না—এ রকম নিয়ম কঠোরভাবে পালন করলে, ডিজাইনে ত্রুটি অনেকাংশে কমবে। নিবন্ধিত ইঞ্জিনিয়ারদের কাছ থেকে সরকার প্রতিটি ভবনের ডিজাইনের জন্য প্রতি বর্গফুটে একটা নির্দিষ্ট হারে ট্যাক্স এবং ভ্যাট নিতে পারে। এই রাজস্ব আয় থেকে ফ্রেশ ইঞ্জিনিয়ারদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
• নির্মাণশ্রমিকদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেশে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে বেকারত্ব কমানোর ব্যবস্থা নিলে দুই দিকেই লাভ। টেকসই উন্নয়ন এবং বেকারত্ব হ্রাস।
• বড় শহরগুলোয় প্লানিংয়ের ক্ষেত্রে মাটির অবস্থা এবং সাইসমিক মাইক্রোজোনেশন বিবেচনায় নিলে ভূমিকম্পঝুঁকি কমবে।
ভূমিকম্প মানুষ মারে না, আমরা মরি আমাদের নির্মিত ভবনের নিচে চাপা পড়ে। শুধু বিল্ডিং কোড (বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ২০২০) মেনে চললেই ৬০ শতাংশ সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। তাই নীতিনির্ধারকদের এবং আমাদের উচিত সচেতন হওয়া এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
মো. জাহাঙ্গীর আলম অধ্যাপক, পুরকৌশল বিভাগ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ ম কম প র ম ত র ম ত র র ভ ম কম প দশম ক ৭ ম ত র র ভ ম কম প র সময় ব যবহ র কর ন ভ ম কম প ন শ চ ত কর র ব যবস থ ভবন র ন চ এসব ভবন র জন য প র ড জ ইন ন বন ধ ত য চ ই কর র র জন য ন ড জ ইন নরম ব ল র আশঙ ক নরম ক দ আশপ শ র বছর পর শহরগ ল ভবনগ ল কর র ক ন অন ভ পর ম ণ ত কর র আম দ র র ওপর ব ভবন ন ভবন এ রকম সরক র বছর প ত করত হওয় র র ভবন অবস থ সবচ য় অপর র
এছাড়াও পড়ুন:
নকশা না মেনে গড়ে তোলা ৩৩৮২ ভবন ভাঙা হবে: রাজউক চেয়ারম্যান
নকশা না মেনে ঢাকায় নির্মাণাধীন ৩ হাজার ৩৮২টি ভবনের অবৈধ অংশ চিহ্নিত করে ভেঙে সঠিক জায়গায় নেওয়ার কাজ শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম।
সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম-বাংলাদেশ আয়োজিত ‘সমস্যার নগরী ঢাকা: সমাধান কোন পথে?’ শীর্ষক এক নগর সংলাপে তিনি একথা জানান।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান।
রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ‘অবৈধ ভবনগুলোর কাজ স্থগিত রাখতে নির্দেশ দিয়ে পর্যায়ক্রমে ভবনগুলোর আংশিক অংশ ভেঙে ফেলা হবে। প্রথম ধাপে সেবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন, ফৌজদারি মামলা দায়ের করা, নকশা বাতিল এবং প্রয়োজনে ভবনগুলো সিলগালা করা হবে। রাজউক এলাকায় নির্মাণাধীন ৩ হাজার ৩৮২টি ভবন চিহ্নিত করেছি যেগুলো নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। এই ভবনগুলোর যতটুকু অংশেই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে সেটুকু ভেঙে ফেলবো। আমি যতোদিন দায়িত্বে আছি তার মধ্যে এই কাজ চালিয়েই যাবো। এগুলো ভেঙে হোক কিংবা অন্যভাবে হোক তাদেরকে নিয়মের মধ্যে আনবো। আমরা নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি।’
নগর সরকার এক ছাতার নিচে আনার মতো ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব উল্লেখ করে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ঢাকাকে এক ছাতার নিচে না আনলে যতো পরিকল্পনাই করা হোক না কেন কাজে আসবে না। সকল কাজের সিদ্ধান্ত একটি জায়গা থেকে আসতে হবে। নগরের পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, সেবাসহ সকল সেবার বিষয়ে একটি জায়গা থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই মুহূর্তে যারা বাড়ি করে ফেলেছে সেগুলোর ব্যবস্থা পরে নেব। সব কাজ একসাথে করা সম্ভব নয়। তবে আন্ডার কনস্ট্রাকশন বিল্ডিং এ কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না সেটা নিশ্চিত করছি। আমাদের নতুন করে প্লট বরাদ্দ দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। আমরা বেদখল হওয়া প্লটগুলো উদ্ধার করে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করবো।’
সংগঠনের সিনিয়র সদস্য খালেদ সাইফুল্লাহ'র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মতিন আব্দুল্লাহ। অনুষ্ঠানে সংগঠনটির প্রকাশনা ‘ঢাকাই’ ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। একইসঙ্গে সংগঠনের উপদেষ্টা হেলিমুল আলম বিপ্লব এর ঢাকার খালগুলো নিয়ে প্রকাশিত ‘Dhaka’s Canals on Their Dying Breath, An In-Depth Look at How the capital’s Waterways Are Being Choked’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
এছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিআইপির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র-ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. নুরুল্লাহ, স্থপতি সুজাউল ইসলাম খান, রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম প্রমুখ।