ভাবুনতো কেউ যদি ইচ্ছা করে বিশ্রামে থাকা কুমিরের পিঠে চড়ে বসে, তার পরিণতি কি হতে পারে?— সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে, কুমিরের পিঠে চড়ে বসেছেন এক পৌঢ় ব্যক্তি।
ভিডিওটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখা গেলো, ‘‘পানির কুমির, ডাঙায় এসে রোদে শুয়ে আরাম করছিল। পাশাপাশি দুইটি কুমির, দুই মুখ করে শোয়া ছিল। হঠাৎ লাঠি হাতে এক ব্যক্তি কুমিরের কাছে গেলেন। বুট পায়ে, হাতে ঘড়ি, মাথায় ক্যাপ। দেখতে পুরো ভদ্রলোক। অথচ একটু পরে ওই লোকটিই এক কুমিরের পিঠে বসার জন্য এগিয়ে গেলেন। তারপর কুমিরের পিঠে বসে পড়লেন।
এখানেই থামতে পারতেন। তা না করে কুমিরকে আস্তে আস্তে থাপ্পড় দিতে শুরু করলেন। পাশের কুমিরটি ওই দৃশ্য দেখে হা করে লোকটির দিকে এলেন। লোকটি দ্রুত উঠে দাঁড়ালেন। এতোক্ষণ যে কুমিরের পিঠে বসে ছিলেন, সেই কুমির আস্তে লোকটিকে সামনে ফেলে দিলো। লোকটি দূরে গিয়ে প্রাণ বাঁচাতে পেরে হাঁপাতে লাগলো।
‘সারনুড আনিরখান’ নামের একটি ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে এই দৃশ্য দেখা গেছে। নেটিজেনদের অনেকেই বলছেন, এটি একটি টিমওয়ার্ক। আরেকজন লিখেছেন, আপনি যখন সিলি খেলা খেলবেন, তখন সিলি উপহারই পাবেন। ভিডিওটি প্রায় আট হাজার মানুষ লাইক করেছেন।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বিবাদ ও বচনের মেলবন্ধন
ছাপ, জলছাপ আর রঙিন কালির জটিল নকশার পুরোনো দলিলে হস্তাক্ষরে সাজানো আছে মানুষের বিবাদের ধারাভাষ্য। এককথায় মামলা-মোকদ্দমার নথিপত্র, যা এখন ‘অ্যান্টিক’ বা পুরোনো নিদর্শন। কাগজের বিবর্ণতা ও অক্ষরের টেক্সচার অনেক ক্ষেত্রে পাঠযোগ্যতাকে হ্রাস করেছে। এই দলিলের জমিনে আরহাম উল হক চৌধুরীর প্রবাদ-প্রবচনের শারীরিক অবয়ব চিত্রায়ণ করেছেন বাংলা অক্ষরমালার আকৃতিগত সৌন্দর্য বিন্যাসে।
বলা যায়, এ যেন ইতিহাস, শিল্প ও ভাষার নন্দনতাত্ত্বিক সম্মিলন, যেখানে লেখার সৌন্দর্য ছাপিয়ে সময়, স্মৃতি ও সাংস্কৃতিক অস্তিত্বের বয়ানও তৈরি হয়েছে।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, ব্রিটিশ রাজ কিংবা পাকিস্তান আমলের নকশাখচিত দৃশ্যরূপ ও বিভিন্ন মামলার হস্তলিপি শিল্পীর নির্মিত বচন-অবয়বকে করেছে দৃষ্টিনন্দন। প্রবচন ও বচনের সাদৃশ্য–অবয়বে লোকজ ভাষার গভীরতা ও তাত্ত্বিক ভার সম্পূর্ণটা স্পষ্ট হয়েছে, তা বলা যায় না। কারণ, প্রবচনগুলোর ব্যাখ্যা বহুমাত্রিক। তবে ভাব ও ব্যঞ্জনা পুরোটা না উঠলেও ক্যালিগ্রাফির বিন্যাসে রয়েছে একধরনের ছন্দময় ভাবনা, যা ফারসি ‘তুঘরা’ অনুপ্রেরণায় হলেও স্বতন্ত্রভাবে ‘বাংলা’ই।
গবেষণা তো অবশ্যই, এ ছাড়া আরহামের শৈলীতে স্পষ্ট একধরনের কাব্যিক অনুশীলনও লক্ষণীয়, যেখানে কেবল অক্ষরের বিন্যাস নয়, কাগজের গঠন, রং এবং লেখার গতিপথ মিলে এক দৃশ্যকাব্য গড়ে ওঠে। কাজগুলো দর্শককে শুধু দেখে যাওয়ার সুযোগ দেয় না, বরং প্রতিটি বচনের মধ্যে লুকানো সময়-স্মৃতি অনুধাবনের আহ্বান জানায়।
শিল্পীর মতে, প্রাচীন বচনগুলোর শক্তি শুধু বাক্যেই নয়, বরং এগুলো বহন করে সময়ের গভীর দর্শন। আর পুরোনো দলিল, যেগুলো অনেক সময় ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে যেতে বসেছে, তাদের শরীরে যখন এসব বচনের রেখা ওঠে, তখন সেটা হয় অতীত ও বর্তমানের মধ্যে একধরনের নীরব সংলাপ।
শিল্পীর এই সত্য অনুধাবন করা যায় ‘কলের পুতুল’, ‘অচিন পাখি’, ‘ভরাডুবি’, ‘গরুর শোকে শকুনি কাঁদে’, ‘কালি-কলম-মন লিখে তিনজন’, ‘ভেজা বেড়াল’ প্রবচন লিখিত ক্যালিগ্রাফিতে। তবে কিছু কাজে ভাব আর রূপে দ্বন্দ্ব রয়েছে—দৃশ্যত চমকপ্রদ হলেও বচনের গভীর অর্থ শিল্পের ভিজ্যুয়াল প্রকাশে পুরোপুরি ফুটে ওঠেনি।
আর্টকনের সহযোগিতায় বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত ‘দলিলে দৃশ্যপট’ শিরোনামের এ প্রদর্শনী আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ঐতিহ্যকে কেবল দেখার নয়, বোঝারও প্রয়োজন আছে। আর শিল্পই পারে সেই বোধ জাগাতে।
আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকার গ্যালারিতে প্রদর্শনীটি ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত দর্শকের জন্য খোলা থাকবে।