মানহীন পারফরম্যান্সে ক্রিকেট বাজারে অস্থিরতা
Published: 24th, April 2025 GMT
‘সময় একটু খারাপ যাচ্ছে’- বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজ শুরুর আগে বলেছিলেন। সময়টা সত্যিই খারাপ যাচ্ছে। মাঠের ক্রিকেটে কোন ফলাফল নেই। পারফরম্যান্স একেবারেই মানহীন, হতশ্রী। তাই ক্রিকেট বাজারেও অস্থিরতা।
বিসিবির ব্যবসার দোদুল্যমান অবস্থা। ক্রিকেটারদের বাজারে আরো খরা। যা একেবারেই ছড়াচ্ছে অস্বস্তি। দেশের ক্রিকেটের সামগ্রিক মান ও পরিস্থিতি নিয়ে তাই নানান প্রশ্ন ওঠছে।
টিভি সম্প্রচার স্বস্ত বিক্রি না হওয়া
দেশের মাঠে বাংলাদেশের সিরিজগুলো গত কয়েক বছর ধরে সম্প্রচার করে আসছে টি স্পোর্টস ও গাজী টিভি। এছাড়া নাগরিক টিভি ও মাছরাঙা চ্যানেলও নানা সময়ে খেলা সম্প্রচার করেছে। এছাড়া অনলাইনে টফি অ্যাপও সম্প্রচার করেছে খেলা। বাংলাদেশে ক্রিকেট উন্মাদনা যে পর্যায়ের, তাতে কোনো সিরিজ দেখাতে চ্যানেলগুলোর আগ্রহ থাকবে না, কিছুদিন আগেও এটা ছিল অভাবনীয়। কিন্তু বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে সিরিজের সম্প্রচার করতে আগ্রহ দেখায়নি কোনো বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। নিজের প্রোডাকশন রিয়্যাল ইমপ্যাক্টকে দিয়ে বিসিবি দায়সারা কাজ করছে এত বছর। এবারও তাই করছে; কিন্তু সম্প্রচারে এগিয়ে আসছিল না কেউ। শেষ পর্যন্ত দেশের সরকারী চ্যানেল বিটিভি খেলা সম্প্রচারে আগ্রহ দেখানোয় হাফ ছেঁড়ে বাঁচে বিসিবি। সিলেটের পর তারা দেখাবে চট্টগ্রাম টেস্টও।
আরো পড়ুন:
সিলেটে দায়িত্ব পালনকালে বিসিবির নিরাপত্তা কর্মকর্তার মৃত্যু
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে দুদকের অভিযান
স্পন্সর প্রতিষ্ঠান ‘নাখোশ’
২০২৭ পর্যন্ত ঘরের মাঠে বাংলাদেশের সব আন্তর্জাতিক সিরিজের স্বত্বও কিনেছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই সিরিজ হওয়ার কথা ছিল গত বছর। ২ টেস্টের সঙ্গে ৩ টি-টোয়েন্টি। কিন্তু টেস্ট সিরিজ স্থগিত করে বিসিবি ৫ টি-টোয়েন্টি আয়োজন করে। এবার সেই স্থগিত হওয়া সিরিজ খেলতে এসেছে জিম্বাবুয়ে। কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং ক্রিকেটারদের চরম বাজে পারফরম্যান্সের কারণে স্পন্সর প্রতিষ্ঠান পাচ্ছে না প্রত্যাশিত মাইলেজ। যা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি নাখোশ। এর আগেও তারা ২০২৩ সালে, দুই বছরের জন্য ১০টি হোম সিরিজ আয়োজন করে ১৫-২০ কোটি টাকা লোকশানের দাবি করেছিল। বিসিবি দীর্ঘ সময়ের জন্য ডাচ বাংলা ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠান পেলেও ক্রিকেটারদের মাঠের পারফরম্যান্সের কারণে স্পন্সর প্রতিষ্ঠানও এখন ভালো অনুভব করছে না।
ক্রিকেটারদের বিজ্ঞাপন বাজারে ‘ধস’
পারফরম্যান্সের ঘাটতি, তারকা খ্যাতির অভাব এবং প্রবল সমালোচনার মুখে থাকায় ক্রিকেটারদের বিজ্ঞাপন বাজারেও ধস নেমেছে। লম্বা সময় ধরে বিজ্ঞাপনের এই বাজার রাজত্ব করেছেন সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুশফিকুর রহিম। তার সঙ্গে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও টুকটাক করেছেন। এখন মিরাজ, তাসকিন, শান্ত বিজ্ঞাপনের বাজারে থাকলেও বলার মতো অবস্থাতে নেই।
ক্রিকেটাদের সমন্বয়ক হিসেবে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে কাজ করা এক কর্মকর্তা বিজ্ঞাপন বাজার সম্পর্কে পরিস্কার ধারনা দিলেন, “অনেক বড় প্রভাব পড়েছে। ‘পঞ্চপাণ্ডবের’ পর এমনিতেই ক্রিকেটারদের কদর কমে গেছে। এখন যারাই আছে তারা ওই পর্যায়েই নেই। ক্রিকেটারদের যেই বিজ্ঞাপন বাজার সেখানে সাকিব আল হাসান একাই ৫০ ভাগ দখল করে ছিলেন। বাকিরা চারজন মিলে ছিলেন ৫০ ভাগ। কিন্তু বর্তমান পারফরম্যান্সে এবং যেভাবে ক্রিকেট এগিয়ে যাচ্ছে তাতে ক্রিকেটের ব্র্যান্ড ইমেজ অনেক নিচে নেমে গেছে।”
“খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স তো পড়তির দিকে। ওই স্টারডম, তারকাখ্যাতি ও পারফরম্যান্স না থাকার কারণে সব কিছুই কমে গেছে। ব্র্যান্ড একজন তারকাকে নিয়োগ দেয় তার মার্কেট ভ্যালুর কথা চিন্তা করে। কনজিউমার ওই তারকাকে দেখে হয়তো ওই প্রোডাক্টটা নেবে। কিন্তু এই দলটাতে ওই এক্স-ফ্যাক্টর নেই বললেই চলে।”
আরেকটি বিষয়কেও তিনি নজরে এনেছেন, “ক্রিকেট আর ক্রিকেটারদের আমেজটা কমে গেছে। আর ফুটবলে হঠাৎ করে একটা জোয়ার উঠেছে। সেটা হামজা চৌধুরীর কারণে। ওই হাইপটা করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ধরতে চাচ্ছে। যার কারণে ফুটবলে এখন নজর কিছুটা চলে গেছে।”
টিকিট ছাপানোর খরচও ওঠেনি!
বাংলাদেশে টেস্ট ক্রিকেটের দর্শক এমনিতেই কম। প্রতিপক্ষ এবং ভেন্যুর ওপর নির্ভর করে দর্শক সমাগম। সিলেট টেস্টে গ্যালারি খাঁ-খাঁ করেছে। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণক্ষমতা প্রায় ১৮ হাজার। দিনের হিসাবে ৭ হাজার ১০০ টিকিট ছাপা হয়েছে। এই টিকিট বিক্রির দায়িত্ব পেয়েছে মধুমতি ব্যাংক। সিলেটে স্টেডিয়াম কাউন্টার এবং আম্বরখানার মধুমতি ব্যাংক শাখা থেকে টিকিট বিক্রি করা হয়।
টিকিট বিক্রির বুথ ও ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চারদিনে দুই হাজার বেশি টিকিট বিক্রি হয়নি। যার আর্থিক মূল্য আড়াই লাখ টাকার কাছাকাছি। এই টেস্টের জন্য সব মিলিয়ে পাঁচ দিনের জন্য ৩৫ হাজার ৫০০ টিকিট ছাপা হয়েছে। খেলা চারদিনের হওয়াতে একদিনের টিকিট পুরো বিফলে গেছে। বাকি চারদিনের টিকিটেও লোকসান গুনতে হয়েছে।
এই টিকিট ছাপতেই মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করতে হয়েছে বিসিবিকে। আবার মধুমতি ব্যাংককেও টিকিট বিক্রির আয়ের ভাগ দিতে হবে। সিলেট ও চট্টগ্রামে দুই টেস্ট মিলে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা জমা হতে পারে। গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলা দুই টেস্টের সিরিজে টিকিট বিক্রি হয়েছিল ১২ লাখ টাকা।
ফলে টিকিট ছাপানোর যে খরচ উঠে আসবে না তা সিলেটের ভেন্যুর কর্মকর্তার কথাতে উঠে আসল, “মাঠের চিত্র তো সবাই দেখেছে। এখানে আর বলার কি আছে। টেস্টের প্রতি আগ্রহ কম। সঙ্গে দলও খারাপ করেছে। যার কারণে দর্শকও ছিল না। যেই টিকিট ছাপানো হয়েছে তার দশ ভাগও বিক্রি হয়নি। লাভ হতে হলেও অন্তত ৪০ ভাগ টিকিট বিক্রি হতে হয়। সেখানে এবার তো টিকিট ছাপানোর খরচও উঠে আসবে না।”
এই অস্থিরতা, নিজেদের ইমেজ সংকট এবং পারফরম্যান্সের দায় জাতীয় দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত নিজেদের কাঁধেই নিয়েছেন, “পারফরম্যান্স করেই ভ্যালুটা তৈরি করতে হবে। পারফরম্যান্স নেই বলেই ভ্যালুটা নিচের দিকে যাচ্ছে। আমার মনে হয় বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স যখন ভালো হবে তখন এটা (ক্রিকেট ভ্যালু) ওপরের দিকেই যাবে।”
সিলেট/ইয়াসিন/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রফরম য ন স
এছাড়াও পড়ুন:
চেরির দুটি গাড়ি ও ইএলএফ লুব্রিকেন্টস বাংলাদেশে
চেরির নতুন এসইউভি গাড়ি ‘টিগো ৮ প্রো’ এবং ‘টিগো ক্রস’ বাংলাদেশের বাজারে ছাড়া হয়েছে। একই সঙ্গে ফরাসি ব্র্যান্ড ইএলএফের লুব্রিকেন্টস বাজারে ছাড়া হয়। বাংলাদেশে ইএলএফ লুব্রিকেন্টসে অফিশিয়াল ডিস্ট্রিবিউটর এশিয়ান পেট্রোলিয়াম লিমিটেড এবং চেরি বাংলাদেশের অফিশিয়াল ডিস্ট্রিবিউটর এশিয়ান মোটরস্পেক্স লিমিটেড, আজ র্যাডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেনে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ ঘোষণা দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় ও চেরি বাংলাদেশের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ও ইএলএফ লুব্রিকেন্টসের মুখ্য অপিনিয়ন লিডার তামিম ইকবাল খান উপস্থিত ছিলেন। তামিম ইকবাল বলেন, ‘টিগো ৮ প্রো প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে বেশ উন্নত এবং অত্যন্ত আরামদায়ক, যা আমাকে সত্যিই মুগ্ধ করেছে। পাশাপাশি ইএলএফ লুব্রিকেন্টস বাংলাদেশে আসায় আমি আনন্দিত। কারণ, গাড়ি ও মোটরবাইকের স্বাস্থ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
বিশ্বব্যাপী চতুর্থ স্থানে অবস্থানকারী ইএলএফ হাই পারফরম্যান্স প্রযুক্তি, উদ্ভাবন এবং মোটরস্পোর্ট হেরিটেজের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। ফর্মুলা ওয়ান-এ ১৩৬ বারেরও বেশি জয়লাভ এবং সিএফ মোটরস, অ্যালপাইন রেনল্ট ও রয়্যাল এনফিল্ডের মতো বৈশ্বিক ব্র্যান্ডের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্বের পর ইএলএফ এখন বাংলাদেশের মোটরসাইকেল ও প্যাসেঞ্জার গাড়ির জন্য লুব্রিকেন্ট পারফরম্যান্সের এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপনে প্রস্তুত।
ইএলএফ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেওয়ান সাজেদুর রহমান বলেন, ইএলএফ শুধু একটি পণ্য নয়, বরং একটি ঐতিহ্যের নাম। বাংলাদেশের উষ্ণ আবহাওয়া এবং যানজটে ভরা রাস্তাগুলোর কথা মাথায় রেখে ইএলএফ যানবাহনের দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য ও নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করবে। এটি গাড়ি, মোটরবাইক, বাস, ট্রাক কিংবা সিএনজি—সব ধরনের যানবাহনের সুরক্ষায় নতুন মাত্রা যোগ করবে।
অনুষ্ঠানে এশিয়ান হোল্ডিংসের পরিচালক কোসুকে ইয়োশিদা বলেন, ‘এ আয়োজনের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশে চেরির কেবল দুটি নতুন মডেল নয়, জীবনধারার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে যাচ্ছি।’
টিগো ৮ প্রো
চেরির ‘টিগো ৮ প্রো ১.৬টি’ ফ্ল্যাগশিপ মডেলে আছে শক্তিশালী ১৯৫ বিএইচপি টার্বোচার্জড পেট্রল ইঞ্জিন ও প্রিমিয়াম ইন্টেরিওর, যা সবার নজর কেড়েছে। এতে আছে ভেগান চামড়ার আসন, প্যানোরামিক সানরুফ, ৯টি এয়ারব্যাগ, ৩৬০ ডিগ্রি সেফটি সিস্টেম ও জেসচার কন্ট্রোলড টেলগেট, ডুয়েল ১২.৩ ইঞ্চি কার্ভড ডিসপ্লে, ওয়্যারলেস অ্যাপল কারপ্লে ও অ্যান্ড্রয়েড অটো, প্রিমিয়াম সনি সাউন্ড সিস্টেমের মতো উন্নত বিভিন্ন সুবিধা। পার্ল হোয়াইট ও অরোরা গ্রিন রঙে এসইউভি মডেলটি পাওয়া যাবে। এ গাড়িটির দাম ৫৩ লাখ টাকা।
টিগো ক্রস
টিগো ক্রস একটি সুবিধাসমৃদ্ধ এসইউভি। এতে আছে ১৪৫ বিএইচপি ক্ষমতাসম্পন্ন ১.৫ লিটার টার্বোচার্জড ইঞ্জিন, স্টাইলিশ ব্ল্যাক ড্যাশবোর্ড, ডুয়েল-জোন ক্লাইমেট কন্ট্রোল, ১০.২৫ ইঞ্চি টাচস্ক্রিন-এর পাশাপাশি অ্যাডাপটিভ ক্রুজ কন্ট্রোল, ব্লাইন্ড স্পট ডিটেকশন ও ৩৬০ ক্যামেরার মতো উন্নত সেফটি ফিচারস। এ গাড়ির দাম ৩৬ লাখ টাকা।