পোপের মৃত্যুতে দেওয়া শোকবার্তা মুছে ফেলল ইসরায়েল
Published: 24th, April 2025 GMT
রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট দিয়েছিল ইসরায়েল। তবে এখন সেগুলো মুছে ফেলা হয়েছে।
ইসরায়েল সরকারের এক্স অ্যাকাউন্টে সোমবার পোস্ট করা একটি বার্তায় লেখা ছিল, ‘চির শান্তিতে ঘুমান, পোপ ফ্রান্সিস। তাঁর স্মৃতি আশীর্বাদস্বরূপ হোক।’ কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেই বার্তা সরিয়ে ফেলা হয়।
হিব্রু গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত ইসরায়েলি কূটনৈতিক মিশনগুলোকে একই ধরনের সব শোকবার্তা মুছে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং ভ্যাটিকানের দূতাবাসগুলোর শোকবইয়ে স্বাক্ষর না করতে বলা হয়েছে।
পোপের মৃত্যুতে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হেরজোগ শোকবার্তা দিলেও দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এ বিষয়ে এখনো নীরব আছেন।
এক্সে দেওয়া এক পোস্টে আইজ্যাক হেরজোগ লিখেছেন, ‘খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মহান আধ্যাত্মিক পিতা, মহামান্য পোপ ফ্রান্সিসের প্রয়াণে আমি খ্রিষ্টানদের প্রতি, বিশেষ করে ইসরায়েলে থাকা খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতি গভীর শোক জানাচ্ছি। তিনি এক গভীর বিশ্বাসী এবং সীমাহীন সহানুভূতিসম্পন্ন মানুষ ছিলেন। মানবতা ও শান্তির জন্য তিনি তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন।’
জেরুজালেমের কেন্দ্রীয় ক্যাথলিক গির্জা ল্যাটিন প্যাট্রিয়ার্কেট পরিদর্শনে গিয়ে বিরোধী দলের পার্লামেন্ট সদস্য গিলাদ কারিভ বলেন, ‘ইসরায়েল সরকার ও নেসেট (পার্লামেন্ট) থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক শোকবার্তা না দেওয়ায় আমি লজ্জিত। ইসরায়েলের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের পক্ষ থেকে শোক জানাতে আমি এখানে এসেছি।’
এটি এমন এক প্রেক্ষাপটে ঘটেছে, যখন ফিলিস্তিনের সাধারণ জনগণের প্রতি সহানুভূতি দেখানোর কারণে ইসরায়েলে পোপের প্রতি সন্দেহের দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলাকে কেন্দ্র করে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তিনি ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে কথা বলে আসছিলেন।
২০২৩ সালের নভেম্বরে পোপ ফ্রান্সিস গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সম্পর্কে বলেছিলেন, এটা ‘যুদ্ধ নয়, বরং সন্ত্রাসবাদ’। এই মন্তব্যের পর জেরুজালেম পোস্টের সম্পাদক তাঁকে ‘হামাসের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থনকারী’ বলে অভিযুক্ত করেন।
হামাস হলো ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং আরও কয়েকটি দেশ হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়েছে।
ল্যাটিন প্যাট্রিয়ার্ক অব জেরুজালেমের কার্ডিনাল পিয়েরবাতিস্তা পিজ্জাবাল্লাকে গাজা অঞ্চলে প্রবেশের অনুমতি না দিতে ইসরায়েল সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেছিলেন পোপ ফ্রান্সিস।
পোপ তাঁর শাসনকালের শুরুতে বেথলেহেমের বিভাজক প্রাচীরের সামনে প্রার্থনা করেছিলেন। ওই দেয়াল পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের দৈনন্দিন সংগ্রামকে তুলে ধরে। পোপ সেখানে প্রার্থনা করায় অনেক ইসরায়েলি ক্ষুব্ধ হয়েছিল।
চলমান যুদ্ধের সময়ও তিনি গাজা সিটির হোলি ফ্যামিলি নামের একমাত্র ক্যাথলিক গির্জার সঙ্গে প্রতিদিন যোগাযোগ রাখতেন। তিনি গাজার জনগণের দুর্ভোগের কথা বারবার তুলেছেন।
পোপের জন্য দেওয়া শোকবার্তা সরিয়ে ফেলার বিষয়ে ইসরায়েলি গণমাধ্যম ওয়াইনেটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দেশটির এক কূটনীতিক বলেন, ‘আমরা কোনো ব্যাখ্যা পাইনি, শুধু একটি সুস্পষ্ট আদেশ পেয়েছি যে মুছে ফেলতে হবে। যখন আমরা প্রশ্ন করেছি, তখন বলা হয়েছে, “বিষয়টি পর্যালোচনার অধীন”। এই উত্তর আমাদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। যাঁদের কাছে আমরা ইসরায়েলের প্রতিনিধিত্ব করি, সেই মানুষদেরও সন্তুষ্ট করতে পারেনি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র
এছাড়াও পড়ুন:
শেষ ভাষণে ফিলিস্তিনিদের নিয়ে যা বলেছিলেন পোপ ফ্রান্সিস
পোপ ফ্রান্সিস মারা যাওয়ার আগে সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার বারান্দায় তাঁর শেষ বার্তায় গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন। ইস্টার সানডের ওই বার্তা উচ্চ স্বরে পড়েছিলেন তাঁর সহযোগী।
পোপ ফ্রান্সিস গতকাল সোমবার সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে ভ্যাটিকানে নিজ বাসভবন কাসা সান্তা মার্তায় মারা গেছেন।
৮৮ বছর বয়সী পোপ চিকিৎসকদের নির্দেশে তার কাজের চাপ সীমিত রেখে ইস্টারের জন্য ভ্যাটিকানের প্রার্থনায় সভাপতিত্ব করেননি। তবে অনুষ্ঠানের শেষে ‘উরবি অ্যাট অরবি’ নামে পরিচিত বার্ষিক আশীর্বাদ এবং বার্তার জন্য উপস্থিত হন।
নিউমোনিয়ার জন্য পাঁচ সপ্তাহ হাসপাতালে থাকার আগে পোপ ফ্রান্সিস গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের সমালোচনা জোরদার করে তুলছিলেন। গত জানুয়ারি মাসে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের গাজায় মানবিক পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর এবং লজ্জাজনক।
ইস্টারের বার্তায় পোপ বলেন, গাজার পরিস্থিতি নাটকীয় ও শোচনীয়। একই সঙ্গে তিনি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের কাছে থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানান।
পোপ তাঁর বার্তায় বলেন, ‘আমি সমস্ত ইসরায়েলি জনগণ এবং ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্দশার প্রতি আমার একাত্মতা প্রকাশ করছি। আমি যুদ্ধরত পক্ষগুলোর কাছে আবেদন করছি, যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করুন, জিম্মিদের মুক্তি দিন এবং শান্তির ভবিষ্যতের আকাঙ্ক্ষা পোষণকারী ক্ষুধার্ত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসুন।’
গত সপ্তাহে হামাস আরেকটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েলি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এর পরিবর্তে জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধ শেষ করার জন্য একটি চুক্তি দাবি করেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু শনিবার বলেছেন, তিনি হামাসের ওপর চাপ বাড়ানোর জন্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়। এতে এক হাজার ২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এরপর থেকে ইসরায়েল গাজায় হামলা চালিয়ে আসছে। এতে ৫১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে যার অধিকাংশ নারী ও শিশু।