অপরিকল্পিত নগরী সাভার, দুর্ঘটনার তীব্র ঝুঁকি
Published: 24th, April 2025 GMT
জীবিকার তাগিদে প্রতিদিনই গ্রাম থেকে শহরে ছুটে আসছেন লোকজন। ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, চাকরি, ব্যবসা বাণিজ্যের সুবিধা বেশি থাকায় ঢাকা ও এর আশপাশ এলাকায় আসার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। ফলে এসব অঞ্চলে গড়ে উঠছে অপরিকল্পিত নগরী। ঢাকা থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থান সাভারের। সেখানে নিয়ম না মেনে একের পর এক বহুতল ভবন, কলকারখানা নির্মাণ হচ্ছে। এখনই এসব রোধে ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
সাভার পৌর কর্তৃপক্ষের নিয়ম অনুযায়ী, সর্বোচ্চ সাত তলা ভবন নির্মাণ করা যাবে সাভারে। সাভারে ইমারত নির্মাণ লে-আউট পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০০৩-২০০৪ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত সাভার পৌরসভা ৭,৬৯৮টি ভবনের অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে শিল্পকারখানাও আছে। কিন্তু অনুমোদন নেই এমন ভবনের সংখ্যা জানা নেই কর্তৃপক্ষের।
অন্যদিকে, বহুতল ভবনের অনুমোদন দেয় রাজউক। ২০০৬ সালে রাজউকের এক জরিপ অনুযায়ী, সাভারে অবকাঠামো ছিল ১ লাখ ৪৯ হাজার ১০টি। পরে ২০১৬ সালের আরেক জরিপে দেখা যায়, অবকাঠামো দ্বিগুণের বেশি বেড়ে হয়েছে ৩ লাখ ১ হাজার ৬৫৩টি। গত নয় বছরে অবকাঠামো আরও বেড়েছে।
এদিকে, সাভারের বিভিন্ন এলাকায় বের হলেই ৬ তলা থেকে ১০ তলা ভবন চোখে পড়ে। এমনকি আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোও এমন ভবন নির্মাণ করে ফ্ল্যাট বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে রেখেছে।
সরেজমিনে উপজেলার ব্যাংক কলোনি, রেডিও কলোনি, থানা রোড, বাজার রোড, শিমুলতলা, রাজাসন এলাকায় দেখা যায়, বহু ভবন ৬ তলা থেকে ১০ তলা পর্যন্ত গড়ে তোলা হয়েছে। ভবনের দুই পাশে পর্যাপ্ত জায়গা রাখা হয়নি, নেই পার্কিং সুবিধাও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুরু থেকেই সাভার এক অপরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে উঠেছে। আর নিয়ম না মেনে গড়ে ওঠা শহরটি তীব্রভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে। এজন্য তারা ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল উপজেলার রানা প্লাজা ধসের ঘটনাকে উল্লেখ করেন, ওই ঘটনায় ১১৭৫ শ্রমিক প্রাণ হারান। আহত হন দুই হাজারের বেশি শ্রমিক।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক মো.
তিনি বলেন, “ভবন নির্মাণ সরেজমিনে তদারকির লোকবলও দেখা যাচ্ছে না। এ কারণে যে বিল্ডিং কোড ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, তা খুবই সীমিত পরিসরে হচ্ছে। ফলে মানসম্মত ভবন তৈরি হয় না। কিন্তু নিয়ম হলো, মান ঠিক রাখা। সেটা হচ্ছে না। স্থানীয়ভাবে মিস্ত্রি বা প্রকৌশলী করছে হয়তো। কিন্তু করতে হবে নগর পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞদের। এসব না করায় সাভার একটা ঝুঁকিপূর্ণ নগরে পরিণত হয়েছে।”
বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকির আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে যেকেনো দুর্যোগে এই ভবনগুলোতে নানা রকম অসুবিধা তৈরি হবে। ভবন ধস হতে পারে, ভেঙে যেতে পারে। এমনকি নগরে বিল্ডিং কোড মানা হচ্ছে না। এতে স্থানীয় পর্যায়ে জনস্বাস্থ্যে ঝুঁকি তৈরি হয়। আলো বাতাস ঢুকে না, কলাম বিম ঠিকঠাক থাকে না। রাজউক বা সাভার পৌরসভার তদারকি ছাড়া ভবন নির্মাণ ঝুঁকিপূর্ণ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করে।”
ঝুঁকি এড়াতে পৌরসভা, প্রকৌশলী, নগর পরিকল্পনাবিদদের দায়িত্ব দিতে হবে। ইমরাত পরিদর্শক নিয়োগ করতে হবে স্থানীয় পর্যায়ে পরিদর্শনের জন্য। এটা নিশ্চিত না করা গেলে ঝুঁকি থেকেই যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অন্যদিকে, সাভার পৌরসভা সাত তলা পর্যন্ত ভবনের অনুমোদন দিলেও পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে নির্মাণের সময় তদারকি করতে পারে না। ফলে ভবনটি আসলে কয় তলা পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে, সে তথ্য জানা যায় না।
সাভার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমজাদ হোসেন বলেন, “আমরা সাত তলা পর্যন্ত অনুমোদন দেই। তবে অনুমোদনহীন কত ভবন রয়েছে, এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। আমাদের পর্যাপ্ত জনবলের অভাব রয়েছে। আর সাভার পৌরসভা বহু আগে তৈরি হয়েছে। তখন থেকে তথ্য থাকলে সেটি হালনাগাদ করা যেতো। কিন্তু কখনও করা হয়নি। এত বড় একটা জায়গা। পৌরসভার রুটিন কাজ যারা করে, তাদের দিয়ে এই তথ্য তৈরি করা সম্ভব নয়। একটা জরিপ করলে পাওয়া সম্ভব। কিন্তু অতীতে করা হয়নি। তবে অনুমোদনহীন ভবনের ক্ষেত্রে কোনা অভিযোগ পেলে চেষ্টা করি, সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের।”
এ সংক্রান্ত পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, “এ ধরনের কার্যক্রমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া আসলে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বিষয়। সিদ্ধান্ত হলে হয়তো করা যাবে। তবে এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে ডেটাবেজ কেন হয়নি, বা করা হবে কিনা এমন কিছু বলা সম্ভব নয়। আর এই এলাকা রাজউকের ড্যাপের আওতায় রয়েছে। ফলে কে কার অনুমোদন নিয়ে ভবন করলো সেটাও যাচাইয়ের বিষয় রয়ে যায়।”
ঢাকা/সাব্বির/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ভ র প রসভ ভবন ন র ম ণ দ র ঘটন প রসভ র র জউক ভবন র ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
কক্সবাজারের নদী, বনভূমি ও সি-বিচ দখল-দূষণমুক্ত করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, বিভিন্ন সংস্থার জন্য বরাদ্দকৃত কক্সবাজারের প্রায় ১২ হাজার একর বনভূমি বন বিভাগের কাছে ফেরত দেওয়া হচ্ছে। কক্সবাজারের নদী, বনভূমি ও সি-বিচ দখল ও দূষণমুক্ত করা হবে। প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ)-তে অনুমতি ছাড়া কোনো কিছু নির্মাণ করা যাবে না। পরিবেশ অধিদপ্তর, বন বিভাগ এবং জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কোনো সরকারি বা বেসরকারি নির্মাণ বিবেচনায় নেওয়া হবে না।
বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে কক্সবাজার শহরে বাকখালী নদীর দখল দূষণ পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, বিধি লঙ্ঘিত হলে তা আইনগতভাবে মোকাবিলা করা হবে। সি-বিচ দখল ও দূষণের লাগাম এখনই না টানলে এটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তিতে পরিণত হবে। এটা হতে দেওয়া হবে না। বর্তমান সরকার সীমিত সময় বিবেচনায় কয়েকটি কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করছি।
তিনি জানান, কক্সবাজারের ৭০০ একর বনভূমি ইতোমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। এক ব্যক্তি ১৫০ একর বনভূমিতে বিল্ডিং নির্মাণ করছে, সেটিও বন্ধ করা হচ্ছে। ফুটবল একাডেমির জন্য বরাদ্দ ২০ একর জমি ফেরত আনা হচ্ছে। এছাড়া দায়িত্ব নেওয়ার পর ৫১ একর জমি উদ্ধারে জেলা প্রশাসককে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সোনাদিয়া দ্বীপে বেজার জন্য বরাদ্দকৃত জমিও বন বিভাগের আওতায় ফেরত আনার প্রক্রিয়া চলছে।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন নৌ পরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাজমুল আহসান, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন, পুলিশ সুপার মো. সাইফউদ্দীন শাহীন, চট্টগ্রাম বন সার্কেলের বন সংরক্ষক মোল্লা রেজাউল করিম এবং কক্সবাজার পৌরসভার প্রশাসক রুবাইয়া আফরোজ। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।