সাভারের রানা প্লাজা ধসের এক যুগ পূর্ণ হলেও অধিকাংশ তৈরি পোশাক কারখানায় বৈদ্যুতিক, অগ্নি ও ভবনের কাঠামোগত ত্রুটি সংশোধনের কাজ সম্পন্ন হয়নি। বর্তমানে দুটি তদারক সংস্থার অধীন ২ হাজার ৫২৭ কারখানার মধ্যে সব সংস্কারকাজ হয়েছে মাত্র ২৯ শতাংশ বা ৭৩৬টিতে।

শ্রমবিশেষজ্ঞ, মালিক ও শ্রমিকনেতা, তদারক সংস্থার সঙ্গে কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোটাদাগে তিন কারণে তৈরি কারখানার সংস্কারকাজে গতি কমে গেছে। প্রথমত, দেশি-বিদেশি চাপ কমে যাওয়ায় ত্রুটি সংশোধনে আগ্রহ কম মালিকদের। দ্বিতীয়ত, আর্থিক সংকটে অনেক কারখানা ত্রুটি সংশোধনে বিনিয়োগ করতে পারছে না। তৃতীয়ত, তদারকি সংস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি না থাকায় পুরো কার্যক্রমের গতি কম।

ভবনধসের পর প্রথম পাঁচ বছর কারখানার সংস্কারকাজ তুলনামূলক দ্রুতগতিতে এগোলেও বর্তমানে শ্লথগতিতে চলছে। ইতিমধ্যে কর্মপরিবেশ উন্নয়নে আন্তর্জাতিক চাপ কিছুটা কমে এসেছে। ফলে অনেক কারখানায় নিরাপত্তাঝুঁকি রয়ে যাচ্ছে।

জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, সংস্কারকাজে অগ্রগতি কিছুটা শ্লথ হলেও বড় ধরনের ঝুঁকি নেই। অধিকাংশ কারখানা ৯০ শতাংশ ত্রুটি সংশোধন করেছে। আর্থিক সংকটসহ বিভিন্ন কারণে কিছু কারখানা সংস্কারকাজে পিছিয়ে আছে।

বাংলাদেশের পোশাক কারখানার নিরাপত্তাব্যবস্থা কতটা দুর্বল, সেটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল সাভারের রানা প্লাজার ধস। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঘটে যাওয়া এই শিল্প–দুর্ঘটনায় পাঁচটি পোশাক কারখানার ১ হাজার ১৩৮ শ্রমিক মারা যান। অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করেন।

দেশের সবচেয়ে বড় এই শিল্প–দুর্ঘটনার পর ক্রেতাদের দুই জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স গঠিত হয়। দুই জোটের অধীন প্রায় দুই হাজার কারখানার সংস্কারকাজ চলে। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর অ্যালায়েন্স চলে যাওয়ার পর এসব কারখানা তদারকিতে নিরাপণ নামে একটি সংস্থা গঠিত হয়। সেটিও অল্প কিছুদিনের মধ্যে কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়। আর অ্যাকর্ডের কারখানাগুলো ২০২০ সালের ১ জুন থেকে তদারকি করছে আরএমজি সাসটেইনিবিলিটি কাউন্সিল (আরএসসি)। বর্তমানে আরএসসির অধীন রয়েছে ১ হাজার ৮৬১টি পোশাক কারখানা। এর মধ্যে গত মার্চ পর্যন্ত ৬৩৮টি কারখানায় সব ধরনের ত্রুটি সংশোধন করা হয়েছে।

আরএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, আরএসসি কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাঝুঁকি হ্রাসে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত কারখানাগুলোতে নিরাপত্তাসংক্রান্ত ঝুঁকি সংস্কারের অগ্রগতির হার ৮৬ দশমিক ১৬ শতাংশ।

অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের বাইরে থাকা ১ হাজার ৫৪৯ কারখানা জাতীয় ত্রিপক্ষীয় কর্মপরিকল্পনার (এনটিএপি) অধীন পরিদর্শিত হয়েছিল। সংশোধন সমন্বয় সেল (আরসিসি) নামে একটি প্রকল্পের অধীন কারখানাগুলোর সংস্কারকাজ তদারক করেছিল কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই)। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। নতুন করে ইন্ডাস্ট্রি সেফটি ইউনিট গঠনের মাধ্যমে সংস্কারকাজ শেষ করার চেষ্টা করছে ডিআইএফই।

ইন্ডাস্ট্রি সেফটি ইউনিটের অধীন বর্তমানে ৬৬৬টি কারখানা রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র ৯৮টি কারখানা শতভাগ সংস্কারকাজ শেষ করেছে। বাকিগুলোর সংস্কারকাজের অগ্রগতি কম। যদিও দুই শতাধিক কারখানা বন্ধ হয়েছে।

গত এক বছরে অগ্রগতি ভালো বলে দাবি করলেন ডিআইএফইর উপমহাপরিদর্শক মো.

আকিদ-উল-হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সংস্কারকাজ নিয়ে যাঁদের আগ্রহ ছিল না, তাঁদের বেশির ভাগই ঝরে পড়েছেন। ফলে বর্তমানে যাঁরা ব্যবসায় আছেন, তাঁরা টিকে থাকার স্বার্থে সংস্কারকাজ করতে চান।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়াকার্স ফেডারেশনের (বিজিআইডব্লিউএফ) সভাপতি বাবুল আখতার প্রথম আলোকে বলেন, কারখানার সংস্কারকাজ ব্যয়বহুল। আগে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স সেই ব্যয় বহন করত। এখন ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান একাংশ ও বাকিটা মালিকদের বহন করতে হয়। সে জন্য মালিকদের মধ্যে একধরনের অনীহা আছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক অ য কর ড

এছাড়াও পড়ুন:

তিন কারণে কারখানার ত্রুটি সংশোধন কাজে গতি কম

সাভারের রানা প্লাজা ধসের এক যুগ পূর্ণ হলেও অধিকাংশ তৈরি পোশাক কারখানায় বৈদ্যুতিক, অগ্নি ও ভবনের কাঠামোগত ত্রুটি সংশোধনের কাজ সম্পন্ন হয়নি। বর্তমানে দুটি তদারক সংস্থার অধীন ২ হাজার ৫২৭ কারখানার মধ্যে সব সংস্কারকাজ হয়েছে মাত্র ২৯ শতাংশ বা ৭৩৬টিতে।

শ্রমবিশেষজ্ঞ, মালিক ও শ্রমিকনেতা, তদারক সংস্থার সঙ্গে কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোটাদাগে তিন কারণে তৈরি কারখানার সংস্কারকাজে গতি কমে গেছে। প্রথমত, দেশি-বিদেশি চাপ কমে যাওয়ায় ত্রুটি সংশোধনে আগ্রহ কম মালিকদের। দ্বিতীয়ত, আর্থিক সংকটে অনেক কারখানা ত্রুটি সংশোধনে বিনিয়োগ করতে পারছে না। তৃতীয়ত, তদারকি সংস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি না থাকায় পুরো কার্যক্রমের গতি কম।

ভবনধসের পর প্রথম পাঁচ বছর কারখানার সংস্কারকাজ তুলনামূলক দ্রুতগতিতে এগোলেও বর্তমানে শ্লথগতিতে চলছে। ইতিমধ্যে কর্মপরিবেশ উন্নয়নে আন্তর্জাতিক চাপ কিছুটা কমে এসেছে। ফলে অনেক কারখানায় নিরাপত্তাঝুঁকি রয়ে যাচ্ছে।

জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, সংস্কারকাজে অগ্রগতি কিছুটা শ্লথ হলেও বড় ধরনের ঝুঁকি নেই। অধিকাংশ কারখানা ৯০ শতাংশ ত্রুটি সংশোধন করেছে। আর্থিক সংকটসহ বিভিন্ন কারণে কিছু কারখানা সংস্কারকাজে পিছিয়ে আছে।

বাংলাদেশের পোশাক কারখানার নিরাপত্তাব্যবস্থা কতটা দুর্বল, সেটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল সাভারের রানা প্লাজার ধস। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঘটে যাওয়া এই শিল্প–দুর্ঘটনায় পাঁচটি পোশাক কারখানার ১ হাজার ১৩৮ শ্রমিক মারা যান। অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করেন।

দেশের সবচেয়ে বড় এই শিল্প–দুর্ঘটনার পর ক্রেতাদের দুই জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স গঠিত হয়। দুই জোটের অধীন প্রায় দুই হাজার কারখানার সংস্কারকাজ চলে। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর অ্যালায়েন্স চলে যাওয়ার পর এসব কারখানা তদারকিতে নিরাপণ নামে একটি সংস্থা গঠিত হয়। সেটিও অল্প কিছুদিনের মধ্যে কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়। আর অ্যাকর্ডের কারখানাগুলো ২০২০ সালের ১ জুন থেকে তদারকি করছে আরএমজি সাসটেইনিবিলিটি কাউন্সিল (আরএসসি)। বর্তমানে আরএসসির অধীন রয়েছে ১ হাজার ৮৬১টি পোশাক কারখানা। এর মধ্যে গত মার্চ পর্যন্ত ৬৩৮টি কারখানায় সব ধরনের ত্রুটি সংশোধন করা হয়েছে।

আরএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, আরএসসি কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাঝুঁকি হ্রাসে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত কারখানাগুলোতে নিরাপত্তাসংক্রান্ত ঝুঁকি সংস্কারের অগ্রগতির হার ৮৬ দশমিক ১৬ শতাংশ।

অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের বাইরে থাকা ১ হাজার ৫৪৯ কারখানা জাতীয় ত্রিপক্ষীয় কর্মপরিকল্পনার (এনটিএপি) অধীন পরিদর্শিত হয়েছিল। সংশোধন সমন্বয় সেল (আরসিসি) নামে একটি প্রকল্পের অধীন কারখানাগুলোর সংস্কারকাজ তদারক করেছিল কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই)। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। নতুন করে ইন্ডাস্ট্রি সেফটি ইউনিট গঠনের মাধ্যমে সংস্কারকাজ শেষ করার চেষ্টা করছে ডিআইএফই।

ইন্ডাস্ট্রি সেফটি ইউনিটের অধীন বর্তমানে ৬৬৬টি কারখানা রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র ৯৮টি কারখানা শতভাগ সংস্কারকাজ শেষ করেছে। বাকিগুলোর সংস্কারকাজের অগ্রগতি কম। যদিও দুই শতাধিক কারখানা বন্ধ হয়েছে।

গত এক বছরে অগ্রগতি ভালো বলে দাবি করলেন ডিআইএফইর উপমহাপরিদর্শক মো. আকিদ-উল-হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সংস্কারকাজ নিয়ে যাঁদের আগ্রহ ছিল না, তাঁদের বেশির ভাগই ঝরে পড়েছেন। ফলে বর্তমানে যাঁরা ব্যবসায় আছেন, তাঁরা টিকে থাকার স্বার্থে সংস্কারকাজ করতে চান।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়াকার্স ফেডারেশনের (বিজিআইডব্লিউএফ) সভাপতি বাবুল আখতার প্রথম আলোকে বলেন, কারখানার সংস্কারকাজ ব্যয়বহুল। আগে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স সেই ব্যয় বহন করত। এখন ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান একাংশ ও বাকিটা মালিকদের বহন করতে হয়। সে জন্য মালিকদের মধ্যে একধরনের অনীহা আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ