ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরীক্ষার ফল নিয়ে প্রতিযোগিতা না হলেও প্রতিযোগিতা হচ্ছে শক্তি প্রদর্শনের।

এক কিলোমিটারের কম দূরত্বের মধ্যে ঢাকা কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজ অবস্থিত। তিন কলেজের শিক্ষার্থী প্রায় ২৫ হাজার। এর আশপাশে আছে নিউমার্কেট ও নিউ এলিফ্যান্ট সড়কের ব্যবসা-বাণিজ্য। পত্রিকান্তরের খবরে বলা হয়, উল্লিখিত দুই কলেজ ও পার্শ্ববর্তী আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে গত ৮ মাসে ১৩ বার সংঘর্ষ হয়েছে। আহত হয়েছেন ৭০ জনের মতো। সর্বশেষ মঙ্গলবার ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে ঢাকা সিটি কলেজে হামলা করেন আগের দিন এক সহপাঠীকে মারধরের জের ধরে।

গত আট মাসে এ তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৩টি সংঘর্ষের ঘটনা দেখতে হবে জননিরাপত্তা তথা সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আলোকে। এসব ঘটনায় পুলিশ, শিক্ষার্থী, পথচারীসহ আহত হয়েছেন দুই শতাধিক ব্যক্তি। পাঁচ দিন বন্ধ ছিল কলেজগুলোর একাডেমিক কার্যক্রম। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিটি সংঘর্ষে তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা হিসাবে সংঘর্ষগুলোয় অন্তত ৫০ ঘণ্টা বন্ধ ছিল মিরপুর রোডে যান চলাচল। এতে ভোগান্তিতে পড়েন পথযাত্রী ও রোগীরা; লোকসান গুনতে হয়েছে নিউমার্কেট ও আশপাশের ব্যবসায়ীদের। এটা কেবল দুঃখজনক নয়, অপরিমেয় ক্ষতিরও কারণ।

নিউমার্কেট, সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় কোনো অঘটন ঘটলে সেখানকার সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়, জনগণের মধ্যে দেখা দেয় চরম নিরাপত্তাহীনতা। পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘাতকে নৈমিত্তিক ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন। এখন প্রশ্ন হলো নৈমিত্তিক ঘটনা কি ঘটতে থাকবে, না এসব বন্ধ করতে কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে?

এই দুই কলেজে যাঁরা পড়াশোনা করেন, তাঁরা দেশের সেরা শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এই সেরা শিক্ষার্থীরা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দিনের পর দিন যেভাবে জনজীবনে আতঙ্ক তৈরি করছেন, তা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। একটি কলেজের একজন শিক্ষক বলেছেন, রাস্তার মারামারি বন্ধ করা দায়িত্ব তাঁদের নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। রাস্তার মারামারি বন্ধ করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। কিন্তু যে কলেজের শিক্ষার্থীদের মারধর ঠেকাতে বারবার পুলিশ ডাকতে হয়, সেই কলেজের জন্য নিশ্চয়ই তা গৌরবের নয়।

সংঘর্ষের প্রধান দায় অবশ্যই শিক্ষার্থীদের। যে শিক্ষার্থীরা এর সঙ্গে জড়িত, তাঁদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনতে হবে। তবে কোনো কলেজ কর্তৃপক্ষ যদি বরাবর এই মনোভাব দেখায় যে তাদের শিক্ষার্থীরা ভালো, আর অন্য কলেজের শিক্ষার্থীদের কারণে অঘটন ঘটছে, তাহলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না। দুই কলেজ কর্তৃপক্ষকে নিরপেক্ষ ও নির্মোহ দৃষ্টিতে পরিস্থিতি পর্যলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সমস্যা সমাধানে ঢাকা সিটি ও ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে একটি পরামর্শ কমিটিও গঠন করতে পারে, যঁারা নিয়মিত আলোচনায় বসে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবেন।

কলেজের শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করলে সেটি নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ অবশ্যই গৌরব বোধ করতে পারে। আবার কলেজের শিক্ষার্থীরা সংঘাত–সংঘর্ষে লিপ্ত হলে সেটা কলেজের জন্যও লজ্জার। এই লজ্জার দায় কেন নেবে কর্তৃপক্ষ। আমরা মনে করি, অনেক হয়েছে, ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কল জ র শ ক ষ র থ দ র ম দ ই কল জ পর স থ ত স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

ক্রাচ হাতে, হুইলচেয়ারে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের মানববন্ধন

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা সুচিকিৎসার দাবিতে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের (পঙ্গু হাসপাতাল) সামনে দেড় ঘণ্টা মানববন্ধন করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত শতাধিক আহত ব্যক্তি এই মানববন্ধনে অংশ নেন। তাঁরা বর্তমানে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ওই মানববন্ধনে পাশের চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের চিকিৎসাধীন ব্যক্তিরাও অংশ নেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, পঙ্গু হাসপাতালে বিভিন্ন তলায় চিকিৎসাধীন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুলিতে আহত ব্যক্তিরা হুইল চেয়ার ও ক্রাচে ভর করে হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে পাশের জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা এই মানববন্ধনে যোগ দেন।

মানববন্ধনে আহত ব্যক্তিরা বলেন, গুলিতে আহত হয়ে তাঁরা মাসের পর মাস পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কিন্তু তাঁরা ঠিকমতো চিকিৎসা পাচ্ছেন না। সুচিকিৎসার অভাবে তাঁরা সুস্থ হচ্ছেন না। সুচিকিৎসা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আগামী শনিবার থেকে প্রতিদিন পঙ্গু হাসপাতালের বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া মাদ্রাসা ছাত্র মো. রাফি হোসাইন বলেন, ১৮ জুলাই শ্যামলী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর করা গুলির স্প্লিন্টার তাঁর ডান পায়ে লাগে। পরে ৫ আগস্ট সরকার পতনের আন্দোলনে মোহাম্মদপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর করা গুলি তাঁর দু হাতে লাগে। তাঁর দুই হাতেই ২৫০ স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়েছে। এরপর থেকে তিনি পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্প্লিন্টারের অসহনীয় যন্ত্রণা নিয়ে তাঁর দিন কাটছে। চিকিৎসকেরা ব্যথানাশক ট্যাবলেট দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আর কত দিন ব্যথানাশক ওষুধ খাবেন-এই প্রশ্ন রাখেন।

রাফি বলেন, সুচিকিৎসার দাবিতে আগামী শনিবার থেকে তাঁরা প্রতিদিন বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।  

এ ব্যাপারে পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক মো. আবুল কেনান আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ব্যস্ত আছেন। পরে কথা বলবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আট দিন পর চবির অপহৃত ৫ শিক্ষার্থী উদ্ধার
  • ক্রাচ হাতে, হুইলচেয়ারে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের মানববন্ধন
  • আরাকান আর্মির উপস্থিতি ভিডিওতে যেভাবে এসেছে তা সঠিক নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • বিশ্বব্যাপী ক্যান্সারের মতো ছড়াচ্ছে সাইবার অপরাধ
  • জামিনে মুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নজরে রাখার নির্দেশ দিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • বরিশালে র‌্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানে হামলা, গুলিতে তরুণ নিহত
  • দুই বাংলাদেশিকে ভারতে নির্যাতনের অভিযোগ, ভিডিও ভাইরাল
  • ঢাকায় ইইউভুক্ত দেশের ভিসা সেন্টার খোলার অনুরোধ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্ট
  • আমলযোগ্য অপরাধের ঘটনায় মামলা নিতে হবে: ডিএমপি কমিশনার