শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি বাটা শুর মুনাফা কমে গেছে। গত বছরের শেষে কোম্পানিটির মুনাফা কমে দাঁড়িয়েছে ২৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকায়। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ৪০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বাটার মুনাফা সাড়ে ১০ কোটি টাকা বা ২৬ শতাংশ কমে গেছে।

গত মঙ্গলবার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়। গতকাল বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) মাধ্যমে আর্থিক প্রতিবেদনের কিছু তথ্য বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়েছে। সেখান থেকে মুনাফা কমে যাওয়ার বিষয়টি জানা যায়। মুনাফা কমলেও গত বছরের জন্য রেকর্ড লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানিটি। অন্তর্বর্তীকালীন ও চূড়ান্ত মিলিয়ে বাটা শু গত বছরের জন্য শেয়ারধারীদের ৪৪৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার কথা জানিয়েছে। এর মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ হিসেবে ৩৪০ শতাংশ বা প্রতি শেয়ারের বিপরীতে ৩৪ টাকা লভ্যাংশ এরই মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। আর চূড়ান্ত লভ্যাংশ হিসেবে আরও ১০৫ শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি ১০ টাকা ৫০ পয়সা নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানিটি। এই দুই লভ্যাংশ মিলিয়ে গত বছরের জন্য কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে একজন শেয়ারধারী পাবেন ৪৪ টাকা ৫০ পয়সা।

বাটা শুর ঘোষণা অনুযায়ী, গত বছরের জন্য কোম্পানিটি লভ্যাংশ বাবদ ৬০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বিতরণ করবে। যার মধ্যে সাড়ে ৪৬ কোটি টাকা অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। বাকি প্রায় ১৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা চূড়ান্ত লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করা হবে। আগামী বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) অনুমোদনের পর এ লভ্যাংশ বিতরণ করা হবে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগে বাটা শু শেয়ারধারীদের সর্বোচ্চ লভ্যাংশ দিয়েছিল ২০২৩ সালে। ওই বছর কোম্পানিটি লভ্যাংশ হিসেবে শেয়ারধারীদের মধ্যে ৪৩৫ শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি সাড়ে ৪৩ টাকা নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করেছিল। তাতে কোম্পানিটির এ বাবদ খরচ হয়েছিল ৫৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। গত বছর শেষে লভ্যাংশ বাবদ কোম্পানিটি আগের বছরের চেয়ে দেড় কোটি টাকা বেশি বিতরণ করবে।

মুনাফা কমে যাওয়া ও রেকর্ড লভ্যাংশের বিষয়ে জানতে চাইলে বাটা বাংলাদেশের কোম্পানি সচিব রিয়াজুর রেজা মুহাম্মদ ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতির কারণে গ্রাহক পর্যায়ে ব্যয় কমে যায়। এ ছাড়া জুলাই আন্দোলনের জেরে জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের বিভিন্ন সময়ে বাটার ৫০ শতাংশ দোকান বন্ধ ছিল। যার প্রভাব ব্যবসায় পড়েছে। অনিশ্চিত সময়ে বিনিয়োগকারীরা আমাদের সঙ্গে ছিলেন। তাই তাঁদের উৎসাহ প্রদানের জন্য মুনাফা কমে যাওয়ার পর রেকর্ড লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। আর এটি সম্ভব হয়েছে কোম্পানির শক্তিশালী আর্থিক অবস্থা ও নগদ প্রবাহের কারণে।’

জুতা উৎপাদনকারী বৈশ্বিক কোম্পানি বাটা শু ১৯৮৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। সেই হিসাবে এটি শেয়ারবাজারে প্রায় ৪০ বছরের পুরোনো একটি কোম্পানি। বাটা শুর মূলধন ১৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, যা ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ১ কোটি ৩৬ লাখ ৮০ হাজার শেয়ারে বিভাজিত। গত ডিসেম্বরের শেষে কোম্পানিটির ৯৫ লাখ ৭৬ হাজার বা ৭০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তাদের হাতে। ২৬ লাখ ৬৩ হাজার বা প্রায় সাড়ে ১৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে। ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ১২ লাখ ৬৩ হাজার বা সোয়া ৯ শতাংশ শেয়ার। আর বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ১ লাখ ৭৭ হাজার বা সোয়া ১ শতাংশের বেশি শেয়ার।

শেয়ারধারণসংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জন্য বাটা শুর লভ্যাংশ বাবদ বিতরণ করা ৬০ কোটি ৮৭ লাখ টাকার মধ্যে উদ্যোক্তারা পাবেন ৪২ কোটি ৬১ লাখ টাকা, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পাবেন ১১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পাবেন ৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পাবেন ৭৯ লাখ টাকা।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সফটওয়্যার পাইরেসি বন্ধে দরকার সমন্বিত পদক্ষেপ

অধিকার হরণ ও অধিকার আদায় উভয়ের মাঝেই দুনিয়ার বহু কর্মকাণ্ড ঘটেছে। সামাজিক ভারসাম্য ও ন্যায়নিষ্ঠ সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মানুষের তৎপরতাও কম নয়। কিন্তু তার বিপরীত চেষ্টাও কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। এ জন্য আধুনিক বিশ্বে কপিরাইট বা মেধাস্বত্ব আইনের উদ্ভব ঘটে। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় সমাজের দুষ্টচক্র শুধু মেধাজাত সম্পদের অধিকারই হরণ করছে না, বরং পরিসর 
বাড়িয়ে পাইরেসির মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে পুনরুৎপাদন করে মেধাসম্পদ, সৃজনশীলতা ও অর্থনৈতিক অধিকার ক্ষুণ্ন করছে। সাম্প্রতিক বিশ্বে কম্পিউটার প্রযুক্তিনির্ভর সফটওয়্যার খাতেও পাইরেসি জেঁকে বসেছে।

মোটাদাগে, সফটওয়্যার হলো এক ধরনের প্রোগ্রাম বা নির্দেশনার সমষ্টি, যা কম্পিউটার হার্ডওয়্যারকে বিভিন্ন কাজ করতে নির্দেশ দেয়। বর্তমান চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) যুগে মানুষ হিসাব-নিকাশ থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র, সংগীতসহ নানা ক্ষেত্রে সফটওয়্যারের মাধ্যমে সৃজন প্রতিভার প্রসার ঘটিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ২০২৩ সালে প্রণীত কপিরাইটে পূর্বতন আইনের সীমাবদ্ধতা কাটাতে আর্থসামাজিক অবস্থা আমলে নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সফটওয়্যার পাইরেসির বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। কপিরাইট আইন ২০২৩-এর প্রথম অধ্যায়ের ১০ নম্বর অনুচ্ছেদে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। 
সফটওয়্যার বানাতে সোর্স কোড লাগে, ভাষা লাগে। সোর্স কোডের মাধ্যমে বিষয়টি উপস্থাপিত হয়। এ জন্য এর সুরক্ষায় কপিরাইট প্রয়োজন। যে কোনো ধরনের সফটওয়্যার চাহিদার প্রয়োজনে উন্নত ভার্সনের দরকার পড়ে। আপগ্রেড করে নতুন সংযোজিত মেধার জন্য নবায়নকৃত সফটওয়্যারও কপিরাইট করা যেতে পারে। তবে পুরোনো সফটওয়্যার মোটাদাগে ৫০ শতাংশের বেশি নতুন সংযোজন না হলে কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত হতে পারে।

সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে সোর্স কোড বিন্যাস করে নতুন নামে সামনে আসে। তখন এর সুরক্ষার জন্যও কপিরাইট আবশ্যক। সফটওয়্যারের সুরক্ষার জন্যও ন্যারেটিভের কপিরাইট প্রয়োজন, পাশাপাশি বাণিজ্যিকীকরণের জন্য ব্র্যান্ড হিসেবে ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। এই দুই সুরক্ষা কবচ সফটওয়্যারের সুরক্ষা দেয়। কিন্তু প্রযুক্তিনির্ভর সফটওয়্যার তৈরিতে প্রযুক্তিবিদরা যেমন মেধার কর্ষণে সৃজনের আনন্দ পান, বিপরীতক্রমে পর্দার আড়ালে থাকে পাইরেসি চক্র। তারাও প্রযুক্তির সহায়তায় পাইরেসির মাধ্যমে কপিরাইট লঙ্ঘন করে। 

সফটওয়্যার পাইরেসির ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত নতুন কৌশল নেওয়া হচ্ছে। তাই আইনের মোটাদাগের পরিধির ভেতর সরল ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। বাংলাদেশের কপিরাইট অফিস সফটওয়্যার পাইরেসির ক্ষেত্রে আইনের বিধির মান্যতার অনুশাসন ও অনুসরণ রক্ষা ছাড়াও কপিরাইট বোর্ড এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে ইতোপূর্বে বিরোধ নিষ্পত্তির নজির রয়েছে। সফটওয়্যার পাইরেসির ক্ষেত্রে স্রষ্টা কিংবা বাণিজ্যিক ব্যবহারের স্বত্ব গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের জনতুষ্টির বিষয় অনেক সময় লোভী পাইরেট চক্রকে আরও প্রলুব্ধ করে।
উন্নয়নশীল দেশের জন্য বড় কিছু কোম্পানি অনেক সফটওয়্যার পাবলিক ডোমেন হিসেবে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। সেই সুযোগে সাধারণ গ্রাহক তুষ্ট হলেও অতিলোভী চক্র সংরক্ষিত সফটওয়্যার অবৈধ উপায়ে পাইরেসি করে আয় করতে চায়। বাংলাদেশে এই প্রবণতা এখন বেশ তীব্র। এ জন্য বর্তমান আইনের বুনন বেশ মজবুত ও প্রতিকার রক্ষায় সাজা ও দণ্ড পূর্বতন অবস্থার চেয়ে ঢের বেশি। কপিরাইট আইন ২০২৩-এর ষোড়শ অধ্যায়ে অনুচ্ছেদ ৭৮-এ দেওয়ানি, সপ্তদশ অধ্যায়ে ফৌজদারি প্রতিকারের বিধান আছে। ৮৫ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি চলচ্চিত্রের কপিরাইট বা এই আইনে বর্ণিত অন্য কোনো অধিকার ইচ্ছাকৃতভাবে লঙ্ঘন করেন বা করিতে সহায়তা করেন, তাহা হইলে উহা হইবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ড এবং অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’ 

বর্তমানে সফটওয়্যার পাইরেসির ফলে প্রযুক্তিবিদদের সৃজনের বিনিময়ে আনন্দ, স্বস্তি, স্বীকৃতি ও যথার্থ বিনিময়মূল্য দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে শুধু মেধাস্বত্বের স্রষ্টা নয়; পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করে আপাতদৃষ্টিতে ব্যবহারকারী সুবিধা ভোগ করে, কিন্তু তারা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির সম্মুখীন। অনেক ক্ষেত্রে সামান্য অর্থ প্রদান করে অরিজিনাল সফটওয়্যার পাওয়া গেলেও পাইরেটেড কপির প্রতি নজর বাড়ছে। 
ব্যক্তিগত কাজে ড্রপবক্স অ্যাকাউন্ট খুলে তথ্য, ছবি, নথি ইত্যাদি ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা অনেকাংশে গুগল ড্রাইভের চেয়ে সহজতর। ধারণা করা হচ্ছে, সফটওয়্যারের ওপর নির্ভরতা আমাদের যাপিত জীবনে আরও থিতু হবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে শুধু কপিরাইট আইনের বিধিবিধানের কঠোরতা নয়; জনসমাজে কপিরাইট আইনের ফাঁকফোকর না খুঁজে বরং তা মেনে চলা জরুরি।
এ জন্য বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এ ব্যাপারে পাঠ্যক্রম ও আলাদা বিভাগের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদবিষয়ক পাঠদানে তত্ত্বীয় দিকের চেয়ে প্রায়োগিক দিককে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে, যাতে অর্থনৈতিক বিষয়টির গুরুত্ব থাকে। তবেই পাইরেসি প্রতিরোধে জাগরণ ঘটবে জনসমাজে। 

খান মাহবুব: কপিরাইট বিশেষজ্ঞ ও প্রাবন্ধিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হামাসকে ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়, এমন গালি দিলেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট আব্বাস
  • ফিনটেক ও ই-কমার্স ইকোসিস্টেম: বাংলাদেশের নতুন বাণিজ্যবিপ্লব
  • বিসিসি নির্বাচনের ফলাফল বাতিল চেয়ে আদালতে জাপা প্রার্থী
  • ১০৫ শতাংশ চূড়ান্ত নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করল বাটা
  • কোহলি–আনুশকা থেকে পন্ত–ইশা: ভারতীয় ক্রিকেটারদের ‘লাভ স্টোরি’
  • সফটওয়্যার পাইরেসি বন্ধে দরকার সমন্বিত পদক্ষেপ
  • বিমানবন্দরে ৫৫ কেজি সোনা চুরির মামলাটি পিবিআই থেকে দুদকে হস্তান্তর
  • মেধাস্বত্ত্ব ফিরে পেতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ সিনেমার প্রযোজকরা
  • মাটি, পানি, খাবার থেকে দেহে ঢুকছে প্লাস্টিক