রাজশাহীর ময়লার ভাগাড়ে আসমা বেগমের ৩০ বছর
Published: 24th, April 2025 GMT
বিশাল বড় ময়লার ভাগাড়। এই ভাগাড় থেকে বোতল, প্লাস্টিক, লোহাসহ নানা ধরনের সরঞ্জাম কুড়িয়ে চলে আসমা বেগমের (৬০) জীবন। ২৩ বছর ধরে এই ভাগাড় থেকে ভাঙারি কুড়ান তিনি। আগে অন্য ভাগাড়ে ভাঙারি কুড়িয়েছেন। সব মিলিয়ে ময়লার ভাগাড়েই কেটে গেছে জীবনের ৩০টি বছর।
ভাগাড়টির অবস্থান রাজশাহী নগরের সিটি হাট এলাকায়। রাজশাহী শহরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার যে বিষয়, তার জন্য এক হাজারের বেশি পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করেন রাত-দিন মিলিয়ে। প্রায় ১৬ একরের ভাগাড়ে রাজশাহী শহরের প্রতিদিনের ময়লা-আবর্জনা ট্রাকে করে নিয়ে ফেলা হয়। প্রতিদিন গড়ে ৩৫০ টন বর্জ্য এখানে ফেলা হয়। প্রায় ২৩ বছর ধরে এই ময়লা একই জায়গায় ফেলাতে এটি পাহাড়ের মতো হয়ে উঠেছে।
ভাগাড় থেকে নানা ধরনের প্লাস্টিক, কাচ ও লোহার সরঞ্জাম কুড়িয়ে থাকেন বেশ কিছু মানুষ। তাঁরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব কুড়িয়ে নেন। এগুলো সেখান থেকেই কিনে নেন ব্যবসায়ীরা। ফলে দিন শেষে তাঁরা নগদ টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। এখানে নারী–পুরুষ মিলে অন্তত ৬০ জন ভাঙারি কুড়ান। তাঁদের মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি। তাঁরা দৈনিক ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করেন এসব ভাঙারি বিক্রি করে।
সম্প্রতি সিটি হাটে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি বড় বড় স্তূপে শহরের ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়েছে। সেগুলো এত বড় স্তূপ যে তা পাহাড়ে রূপ নিয়েছে। প্রতিনিয়ত ট্রাক এসে ময়লা ফেলে যাচ্ছে, আর সেখান থেকে ‘মূল্যবান’ জিনিস খুঁজতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন একদল নারী ও পুরুষ। অধিকাংশের কাছেই সুরক্ষার সরঞ্জাম নেই।
আসমা বেগমকে একটি ভ্যানের ওপর বসে বিশ্রাম নিতে দেখা গেল। তিনি এই ভাগাড়ের সবচেয়ে পুরোনো ভাঙারি কুড়ানো মানুষদের একজন। এর আগে তিনি শহরে ভাঙারি কুড়িয়েছেন। পরে নগরের বড় বনগ্রাম এলাকায় শহীদ জিয়া শিশুপার্কের পাশে একসময় যে ময়লার ভাগাড় ছিল, সেখান থেকে ভাঙারি কুড়িয়েছেন। পরে ময়লার ভাগাড় সিটি হাট এলাকায় এলে এখান থেকে ভাঙাড়ি কুড়ান তিনি। তাঁর বাড়ি নগরের কালুর মোড় এলাকায়। তাঁর স্বামী ফায়েজ উদ্দিন রিকশা চালান। তিন সন্তানের সবাই বড় হয়ে বিয়ে করেছেন। আলাদা থাকেন।
আসমা বেগম বলেন, ‘এখানে আমাদের রত্ন আছে।’ ময়লার মধ্যে কাজ করতে গিয়ে তাঁর হাত কেটে যায়। সুচ ফোটে। অনেক কিছুই হয়। আবার সামান্য চিকিৎসা করলে ভালো হয়ে যায়। এগুলো এখন অভ্যাস হয়ে গেছে।
আরও কয়েকজন নারীর সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা দৈনিক ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করে থাকেন। তাঁরা প্রতিদিন সকালে কাজে আসেন; কেউ বিকেলে, আবার কেউ সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন। তাঁদের কেউ নিয়মিত, কেউ অন্য কাজ না পেলে ভাগাড়ে চলে আসেন।
তাঁদের কাছ থেকে ভাঙারি কিনে নেন ব্যবসায়ী আয়েস উদ্দিন। তিনি বলেন, এখানে ৬০ থেকে ৬৫ জন নারী–পুরুষ কাজ করেন। এমন দিনও যায় যখন ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা শুধু বিলই দেন। এই কাজ তিনি ২০ বছর আগে শুরু করেছেন।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা শেখ মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ময়ল র ভ গ ড় বর জ য এল ক য় শহর র
এছাড়াও পড়ুন:
ঘুষ গ্রহণকালে হাতেনাতে গ্রেপ্তার ডিএসসিসির ওয়ার্ড সচিব
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২ নম্বর অঞ্চলের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সচিব কুতুবউদ্দিন সোহেলকে ঘুষ গ্রহণকালে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি বিশেষ টিম। আজ বুধবার দুপুরে ঘুষের টাকা গ্রহণের সময় দুদকের ফাঁদ অভিযানে সোহেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ঘুষের টাকাসহ অন্যান্য আলামত জব্দ করা হয়।
দুদক সূত্রে জানা যায়, পূর্ব বাসাবোর লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার মো. সাইফুল ইসলাম দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১ বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, নির্মাণাধীন ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি চালুর জন্য সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র প্রয়োজন। আবেদনপত্র দাখিলের পর সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সচিব কুতুবউদ্দিন সোহেল সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে কোনো ত্রুটি না পেলেও ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য ১০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, সচিব সোহেল হুমকি দেন যে, দাবি করা ঘুষের টাকা না দিলে তিনি কোনোভাবেই ছাড়পত্র দেবেন না।
তিনি আরও জানতে পারেন যে কুতুবউদ্দিন সোহেল আগত সব সেবাপ্রার্থীর কাছ হতেই ছাড়পত্র প্রদান বাবদ ঘুষ হিসেবে এরুপ টাকা গ্রহণ করে থাকেন। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে আইনের আওতায় আনতেই মো. সাইফুল ইসলাম কৌশলগতভাবে টাকা দিতে সম্মত হন।