খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য ড. মোহাম্মদ মাছুদ এবং উপ-উপাচার্য ড. শেখ শরীফুল আলমকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। উদ্ভূত সংকট নিরসন এবং শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে একটি সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে এ দুটি পদে নতুন নিয়োগ প্রদান করা হবে। অন্তর্বর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম চালু রাখার স্বার্থে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একজনকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে। গতকাল বুধবার রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এদিকে গতকাল আমরণ অনশন কর্মসূচিতে ২২ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সকালে শিক্ষা উপদেষ্টা ড.

চৌধুরী রফিকুল আবরার অনশন ভাঙতে কুয়েট ক্যাম্পাসে যান। এ সময় শিক্ষার্থীরা গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষের পর থেকে এ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো তুলে ধরে উপাচার্যের (ভিসি) অপসারণ দাবি করেন। তারা অনশন না ভেঙে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। বেলা ১১টা ও দুপুর ১২টায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন আন্দোলনকারী অন্য শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে কফিন মিছিল করেন তারা। 

রাত ১টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য ড. তানজীম উদ্দিন খান শিক্ষার্থীদের জুস খাইয়ে অনশন ভঙ্গ করান। পরে তারা নিজ নিজ হলে ফিরে যান।   
উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। 

এদিকে কুয়েটের সার্বিক ঘটনায় তদন্ত কাজ শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তিন সদস্যের কমিটি। গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন।

অন্যদিকে সকাল থেকে অসুস্থ হয়ে পড়া অনশনরত চার শিক্ষার্থীকে কুয়েটের মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে। প্রচণ্ড গরম এবং ক্ষুধায় শারীরিকভাবে দুর্বল ও অসুস্থ হয়ে পড়েন ২২ শিক্ষার্থী। তখন পাশে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি কক্ষে অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প খোলে কুয়েট কর্তৃপক্ষ। অনশনরত ২২ শিক্ষার্থী সেখানে যান।

গতকাল দুপুরে কুয়েট সিন্ডিকেটের সভা অনুষ্ঠিত হয়। একজন কর্মকর্তা জানান, গত ১৪ এপ্রিল সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেই আদেশ গতকাল প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিকেল থেকে ছাত্রদের ৬টি ও ছাত্রীদের একটি হল খুলে দেওয়া হয়েছে। আগামী ৪ মে থেকে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তবে কুয়েট শিক্ষক সমিতি জানিয়েছে, চাপ দিয়ে উপাচার্যকে অপসারণ করা হলে তা মেনে নেওয়া হবে না। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন তারা। প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে দুপুর ১টায় ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. ফারুক হোসেন। শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবির প্রতিবাদে বিকেল সাড়ে ৪টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমাবেশ করেন কুয়েটের কর্মচারীরা।

আরও ছয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনশন

প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা জানিয়েছেন, কুয়েটের কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানিয়ে ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থীরা গতকাল অনশন শুরু করেছেন। এ ছাড়া শহরের জিরো পয়েন্ট মোড় অবরোধ করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন চুয়েট শিক্ষার্থীরা।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপ চ র য গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

হিজরতের ৫টি শিক্ষা

সাহাবিদের হিজরতের ঘটনাবলি কেবল ইতিহাসের অংশ নয়, বরং তা মুমিন জীবনের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। তাদের হিজরতের ঘটনা ও ত্যাগের আদর্শ থেকে কয়েকটি মৌলিক শিক্ষা উঠে আসে:

১. হিজরত প্রথমত আল্লাহর আদেশ পালন

হিজরত কেবল কৌশলগত পরিকল্পনা ছিল না, বরং ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা এক ইবাদতমূলক নির্দেশ। এই কারণে সাহাবিরা সবচেয়ে প্রিয় বস্তু—ঘরবাড়ি, সম্পদ, আত্মীয়স্বজন—সহজে ত্যাগ করতে পেরেছিলেন। (মুহাম্মদ সাইদ রমাদান আল-বুতি, ফিকহুস সিরাহ, পৃষ্ঠা: ১৫৬, দারুল ফিকর, দামেস্ক, ২০০৪)

২. ইমানের জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ

হিজরত শেখায় যে একটি জাতির ভিত্তি স্থাপন এবং সত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য চরম মূল্য দিতে হয়। সুহাইব তাঁর সব সম্পদ, আবু সালামা তাঁর পরিবার এবং বনু জাহশ (রা.) জন্মভূমি ত্যাগ করে এই মূল্য পরিশোধ করেছিলেন। এই ত্যাগ বিনা মূল্যে অর্জিত হয়নি।

আরও পড়ুনমদিনায় হিজরত: ইসলামের ৬টি মাইলফলক০২ জুলাই ২০২৫৩. ইমানের সম্পর্ক অন্য সব সম্পর্ক থেকে ঊর্ধ্বে

ওমর (রা.) আইয়াশকে যখন তার মায়ের দোহাইয়ের ফিতনা থেকে সতর্ক করেছিলেন, তা প্রমাণ করে যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি আনুগত্যের বন্ধন অন্য সব জাগতিক সম্পর্ক (গোত্র, পরিবার, রক্ত) থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী।

৪. ঐকান্তিক প্রচেষ্টার সঙ্গে আল্লাহর ওপর ভরসা

হিজরত মোটেই বিশৃঙ্খল ছিল না। ওমর (রা.)-এর পরিকল্পনা, কাফেলাবদ্ধ হয়ে যাত্রা এবং কৌশল অবলম্বন—সবই প্রমাণ করে যে আল্লাহর ওপর নির্ভরতার পাশাপাশি মানবীয় প্রচেষ্টা ও সুচিন্তিত পরিকল্পনা গ্রহণ করাও আবশ্যক।

আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–র হিজরত মদিনায় হলো যে কারণে২৯ জুন ২০২৫৫. আল্লাহর দয়ার বিশালতা

এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ফিতনা ও দুর্বলতা মানুষের জীবনে আসতে পারে। কিন্তু যখন তারা মক্কায় বন্দী হয়ে নিজেদের পাপী মনে করছিলেন, তখন আল্লাহ তাআলা এই আয়াতটি নাজিল করে আশার দরজা খুলে দেন, ‘বলো, “হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ (পাপ করেছ), তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করে দেন।”’ (সুরা জুমার, আয়াত: ৫৩)

এই আয়াতটি ছিল তাঁদের জন্য এক ঐশী ক্ষমা ও নতুন সুযোগের বার্তা।

হিজরত কেবল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়; এটি একটি অক্ষয়–দর্শন—যেখানে ইমান, ধৈর্য এবং আত্মত্যাগের সমন্বয়ে একটি আদর্শ সমাজ গঠনের বীজ নিহিত ছিল। এই দর্শনই মুসলমানদের নতুন এক দিগন্তে পৌঁছে দেয়।

আরও পড়ুনআবিসিনিয়ায় নারী সাহাবিদের দ্বিতীয় হিজরত১৪ নভেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ