রাজধানীর খিলগাঁওয়ের তিলপাপাড়া এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম। সপ্তাহ দুই হয়ে গেল তাঁর বাসায় ওয়াসার সরবরাহ করা পানির সঙ্গে লাল কেঁচো ও সাদা পোকা আসছে। এর মধ্যে দুবার বাসার ট্যাঙ্কি পরিষ্কার করলও সমস্যার কিনারা হয়নি। ঝুঁকি না নিয়ে বাধ্য হয়ে এখন পানি কিনে খাচ্ছেন।

শান্তিবাগের বাসিন্দা মনির হোসেনের কাছে পানির কষ্ট আরও বিরক্তিকর। বললেন, ওয়াসার পানি দেখে গা ঘিনঘিন করে। দুর্গন্ধ তো আছেই, সঙ্গে পানিতে কিলবিল করে ছোট ছোট কেঁচো। ফুটিয়ে যে খাব, সেটারও রুচি হয় না। 

কল্যাণপুর মসজিদ গলিতেও ওয়াসার পানির একই হাল। সেখানকার বাসিন্দারা জানান, মার্চের শুরু থেকেই পানির এমন দুরবস্থা। ওয়াসায় অভিযোগ দিয়েও ফল আসেনি। উল্টো তারা ট্যাপের মুখে পাতলা কাপড়ের ছাকনি ব্যবহার ও ট্যাঙ্কি পরিষ্কারের পরামর্শ দেয়। 

কয়েক মাস ধরেই রাজধানীর তেজগাঁও, মালিবাগ, মগবাজার, মধুবাগ, বাসাবো, মানিকনগরসহ বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে ওয়াসার পানির সঙ্গে পোকা আসার অভিযোগ মিলেছে। ঢাকা ওয়াসা ব্যাপারটি আমলেই নিচ্ছে না। সরকারি সংস্থাটি বলছে, উৎস পর্যায়ে পানির মান সঠিক আছে। গ্রাহকের রিজার্ভ ট্যাঙ্ক ও ওভারহেড ট্যাঙ্ক ঠিকমতো পরিষ্কার না করায় সেখানে এসব ছোট ছোট প্রাণীর অস্তিত্ব তৈরি হচ্ছে। গ্রাহকরা ট্যাঙ্কগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করলে এ ধরনের জীবাণু তৈরির কোনো সুযোগ নেই। এই দায় ওয়াসার নয়, গ্রাহকের। 

গ্রাহকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি ঢাকা ওয়াসা কয়েকটি এলাকার পানির নমুনা নিয়ে তাদের নিজস্ব গবেষণাগারে পরীক্ষা করে। এ ধরনের একটি নমুনার প্রতিবেদন সমকালের হাতে এসেছে। সেখানে ব্যাপক মাত্রায় ক্ষতিকর কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব মেলে।

ওয়াসার গবেষণাগারের প্রতিবেদনটি দেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাকিলা নারগিস খান সমকালকে বলেন, ‘বাসাবাড়ির ট্যাপের পানি সংগ্রহ করে ওয়াসা প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সেখানে ১২টি কলিফর্মের অস্তিত্ব মিলেছে। পানির পানযোগ্যতার মান পরীক্ষার ক্ষেত্রে আরও যেসব নিরীক্ষা লাগে, তা ওয়াসা করেনি।’ তিনি বলেন, ‘ঢাকার অনেক স্থানে ওয়াসার পাইপলাইনের সঙ্গে স্যুয়ারেজ লাইনের সংযোগের অভিযোগ আছে, যে কারণে পানিতে অনেক সময় মলমূত্রের দুর্গন্ধ পাওয়া যায়। মলমূত্রে ফিকল কলিফর্ম নামে মারাত্মক ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকে। গবেষণায় হয়তো ফিকল কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। কাজেই এই রিপোর্ট দিয়ে বোঝা যাবে না ওয়াসার পাইপলাইনের পানি মানবস্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর। সাধারণ যে কলিফর্মের অস্তিত্ব তারা পেয়েছে, সেটাও মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর– এতে কোনো সন্দেহ নেই।’ 

এ ব্যাপারে বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক ডা.

এবিএম আব্দুল্লাহ সমকালকে বলেন, ‘কলিফর্ম ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া। এটি পেটে গেলে ডায়রিয়া, পেটব্যথা, শারীরিক দুর্বলতসহ নানা সমস্যা হতে পারে।’ 

ওয়সার গবেষণা প্রতিবেদন থেকে দেখা গেছে, বাসাবাড়ির পানিতে প্রতি লিটারের পিএইচ পাওয়া গেছে ৬ দশমিক থেকে ৮ দশমিক ৫। ট্রিবিউডিটি মিলেছে ১ দশমিক ৫৭, যার মাত্রা হওয়া প্রয়োজন ৫। বেসিনে সলিড ওয়াটার পাওয়া গেছে ৪১৯ মিলিগ্রাম, অ্যামোনিক্যাল মিলেছে ১ দশমিক ৫-এর স্থলে দশমিক ০৩। ক্লোরিন মিলেছে শূন্য দশমিক ১। কলিফর্ম মিলেছে ১২। 

এ ব্যাপারে ঢাকা ওয়াসার ল্যাবরেটরির ডেপুটি চিফ মাইক্রোবায়োলজিস্ট ড. মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমরা ফিকল কলিফর্মের বিষয়ও অনেক সময় প্রতিবেদনে উল্লেখ করি। হয়তো এ ক্ষেত্রে সেটা উল্লেখ করা হয়নি। কলিফর্মের যে চিত্র রিপোর্টে এসেছে, সেটা ওয়াসার পানির উৎস পর্যায় বা সরবরাহ পর্যায়ে মেলেনি। সেটা মিলেছে গ্রাহকের ট্যাপের পানিতে। অর্থাৎ সেটা তৈরি হয়েছে গ্রাহকের ট্যাঙ্কিতে। আর কোনো স্থানে ভালো পানিও কিছু দিন থাকলে ব্যাকটেরিয়ার জন্ম হয়। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।’ 

রাজধানীর বেশ কিছু এলাকার পানিতে পোকা আসার বিষয়টি স্বীকার করেন ঢাকা ওয়াসার একাধিক কর্মকর্তা। মূলত সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার থেকে সরবরাহ করা পানিতে পোকা পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, ওই শোধনাগার থেকে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ র হক র পর ষ ক র এল ক র দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার বসার দাবি উচ্ছেদ হওয়া হকারদের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা থেকে সম্প্রতি উচ্ছেদের শিকার হকাররা আবারও আগের জায়গায় বসার দাবি জানিয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে শাহবাগে বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশন ভবনের ২ নম্বর কক্ষে জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ ও ভুক্তভোগী হকারদের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মাশরুমচাষি ও ক্যাম্পাসে হকারদের কাছে মাশরুম সরবরাহকারী রুবি আক্তার। সঞ্চালনা করেন জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন ঢাকা জেলার আহ্বায়ক শবনম হাফিজ। এতে বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ, ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শামীম ইমাম, ঢাকা জেলা কমিটির সদস্য ইকবাল কবির ও আঁখি মনি এবং ভাসমান উদ্যোক্তা নুরুজ্জামান কমলসহ উচ্ছেদের শিকার কয়েকজন হকার।

মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন শবনম হাফিজ। তিনি বলেন, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক হকার কাজ করতেন। গত অক্টোবরে মাদক বিক্রি ও সেবনের অভিযোগ এনে ডাকসুর সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। এতে অসংখ্য হকার বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে পড়েছেন।

শবনম হাফিজ আরও বলেন, এই মানুষগুলোকে উচ্ছেদের নামে হয়রানি করা হলো, জিনিসপত্র নষ্ট করা হলো। এই ক্ষতির জবাবদিহি চাই, ক্ষতিপূরণ চাই এবং তাঁদের যেন সসম্মানে কাজের সুযোগ দেওয়া হয়, সেটি চাই। প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ যেন তাঁদের পরিচয়পত্রের ব্যবস্থা করে দেয়।

আয়োজকেরা বলেন, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন ও ভুক্তভোগী হকাররা উচ্ছেদের পর নিজেদের কার কী পরিস্থিতি ও কীভাবে তাঁদের বর্তমান জীবন চলছে, তা জানতে একটি জরিপ পরিচালনা করছেন। এর আওতায় এ পর্যন্ত তাঁরা ৫০ জনের বিস্তারিত সাক্ষাৎকার নিতে পেরেছেন। এর মধ্য দিয়ে যে চিত্র বেরিয়ে এসেছে, তা তুলে ধরার লক্ষ্যেই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে রুবি আক্তার নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারির সময় স্বামীর গাড়ি ভাড়ার ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে তাঁরা মাশরুম চাষ শুরু করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চাহিদার ওপরই নির্ভর ছিল তাঁদের সংসার। হকার উচ্ছেদের পর সেই বাজার প্রায় হারিয়ে গেছে।

রুবি আক্তার বলেন, ‘একজন হকারের সঙ্গে আরও অনেকের আয় জড়িয়ে থাকে—সরবরাহকারী, পানিওয়ালা ও সবজিওয়ালা। একজনের আয় বন্ধ হলে বহু পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা চাই, হকারদের কাজের জায়গা আবারও ফিরিয়ে দেওয়া হোক, বসতে দেওয়া হোক আগের জায়গায়। তাতে আরও অনেক পরিবার বেঁচে যাবে।’

অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, হকার উচ্ছেদ ডাকসুর দায়িত্ব নয়। এটি মানবিক বা ন্যায়সংগত কোনো পদক্ষেপ নয়। হকারদের সম্মানজনক ব্যবসার ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব। এ বিষয়ে যথাযথ পরিকল্পনা করা সম্ভব।

ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শামীম ইমাম বলেন, জনগণের মৌলিক অধিকার ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদ করা অন্যায় ও অমানবিক বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও কয়েকজন হকার নিজেদের বর্তমান সংকটের কথা জানান।

চার দফা সুপারিশ

অনুষ্ঠানে আয়োজকেরা চার দফা সুপারিশ তুলে ধরেন। এগুলো হলো উচ্ছেদ করা হকারদের আগের কাজের জায়গায় ফেরার সুযোগ দেওয়া; কিছুদিন পরপর উচ্ছেদের নামে হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করা এবং যাঁরা এই নির্যাতন করেছেন, তাঁদের বিচার করা; প্রয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা সিটি করপোরেশন বা নিজেদের সমবায় বা ট্রেড ইউনিয়নের পরিচয়পত্র ব্যবহার করার ব্যবস্থা করা এবং কয়েক দফায় ভাসমান উদ্যোক্তাদের হাঁড়িপাতিল ও অন্যান্য যে মালামাল প্রক্টরিয়াল টিম নিয়ে গেছে, তা দ্রুত ফেরত দিতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইউক্রেনের বিদ্যুৎ অবকাঠামোয় রাশিয়ার হামলা, ১০ লাখ বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই
  • আলু দিয়ে রসমালাই, পায়েস, পেঁয়াজুসহ আরও কত কিছু বানানো যায়
  • কেপিএমে চার দিন বাদে ফের ‌‘ব্যালটের কাগজ’ ছাপা শুরু
  • নতুন মাদক এমডিএমবি জব্দ, চক্রের হোতাসহ গ্রেপ্তার ৪
  • কমেছে সবজির দাম, বেড়েছে মাছের দাম
  • বাজারে বাড়তি পেঁয়াজ ও সয়াবিন তেলের দাম
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার বসার দাবি উচ্ছেদ হওয়া হকারদের