যুক্তরাষ্ট্রকে একতরফা বাণিজ্য ছাড় দেওয়ার প্রশ্নে বাংলাদেশের পদক্ষেপে উদ্বেগ জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ-ইউরোচেম। এ ধরনের পদক্ষেপকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বৈষম্যমূলক বলা হয়েছে চেম্বারের পক্ষ থেকে। এ ধরনের বৈষম্য এড়াতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।  

গতকাল বুধবার ইউরোচেমের এক বিবৃতিতে চেয়ারপারসন নুরিয়া লোপেজ বলেন, ইইউ বাংলাদেশের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বাণিজ্য অংশীদার। বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের অর্ধেকই আসে ইইউ জোটের দেশগুলো থেকে। ২০০১ সাল থেকে এভরি থিং বাট আর্মস (ইবিএ) অর্থাৎ অস্ত্র ছাড়া সব পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত এবং কোটামুক্ত অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার পেয়ে আসছে বাংলাদেশ। অন্যান্য বাণিজ্য অংশীদারের তুলনায় ইইউর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেশি। গত বছর জোটের দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২২ বিলিয়ন ইউরো। আর বাংলাদেশে ইইউর রপ্তানির পরিমাণ ছিল মাত্র ২ বিলিয়ন ইউরো। এর কারণ, উচ্চ শুল্ক এবং অশুল্ক বাধা ইইউ কোম্পানিগুলোর বাংলাদেশে ব্যবসা এবং রপ্তানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করছে। 

ইইউ জোট এবং বাংলাদেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে কাজ করে ইউরোচেম। ২৭ জাতির জোট ইইউ এবং বাংলাদেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলো ইউরোচেমের সদস্য। 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিধিবদ্ধ বাণিজ্য ব্যবস্থার প্রতি বাংলাদেশ সরকারের যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তা  উৎসাহিত করতে চায় ইউরোচেম; যা প্রয়োজনীয় বাণিজ্যনীতি, শুল্কসংস্কার ও সব বাণিজ্য অংশীদারের প্রতি ন্যায়সংগত আচরণ নিশ্চিত করে। বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং স্বল্পোন্নত দেশের  কাতার  থেকে মসৃণ উত্তরণ এবং টেকসই রূপান্তরে ইউরোচেমের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে  প্রস্তুত। 

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশে নতুন করে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হয়েছে গত ৫ এপ্রিল। এ ছাড়া ৬৫টি দেশের পণ্যে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশসহ বিভিন্ন হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। গত ২ এপ্রিল দেওয়া ঘোষণায় বাংলাদেশের পণ্যে ৩৭ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়। গত ৯ এপ্রিল পরবর্তী ৩ মাসের জন্য এ শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়। এ বাস্তবতায় দুই দেশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে একটি বৈঠক বুধবার  অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। 

এর আগে গত ৭ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড  টাম্পকে লেখা এক চিঠিতে তিন মাসের জন্য বাড়তি শুল্ক স্থগিত রাখার অনুরোধ করেন। একই দিন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জ্যামিসন গ্রিয়ারকে চিঠি দেন। এতে আমদানি করা ১৯০ পণ্যের পাশাপাশি আরও ১০০ পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক তুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। চিঠিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ শুল্কহার কমানো ও সব ধরনের অশুল্ক বাধা দূর করার উপায় খুঁজে দেখছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউর চ ম ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

হিজরতের ৫টি শিক্ষা

সাহাবিদের হিজরতের ঘটনাবলি কেবল ইতিহাসের অংশ নয়, বরং তা মুমিন জীবনের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। তাদের হিজরতের ঘটনা ও ত্যাগের আদর্শ থেকে কয়েকটি মৌলিক শিক্ষা উঠে আসে:

১. হিজরত প্রথমত আল্লাহর আদেশ পালন

হিজরত কেবল কৌশলগত পরিকল্পনা ছিল না, বরং ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা এক ইবাদতমূলক নির্দেশ। এই কারণে সাহাবিরা সবচেয়ে প্রিয় বস্তু—ঘরবাড়ি, সম্পদ, আত্মীয়স্বজন—সহজে ত্যাগ করতে পেরেছিলেন। (মুহাম্মদ সাইদ রমাদান আল-বুতি, ফিকহুস সিরাহ, পৃষ্ঠা: ১৫৬, দারুল ফিকর, দামেস্ক, ২০০৪)

২. ইমানের জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ

হিজরত শেখায় যে একটি জাতির ভিত্তি স্থাপন এবং সত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য চরম মূল্য দিতে হয়। সুহাইব তাঁর সব সম্পদ, আবু সালামা তাঁর পরিবার এবং বনু জাহশ (রা.) জন্মভূমি ত্যাগ করে এই মূল্য পরিশোধ করেছিলেন। এই ত্যাগ বিনা মূল্যে অর্জিত হয়নি।

আরও পড়ুনমদিনায় হিজরত: ইসলামের ৬টি মাইলফলক০২ জুলাই ২০২৫৩. ইমানের সম্পর্ক অন্য সব সম্পর্ক থেকে ঊর্ধ্বে

ওমর (রা.) আইয়াশকে যখন তার মায়ের দোহাইয়ের ফিতনা থেকে সতর্ক করেছিলেন, তা প্রমাণ করে যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি আনুগত্যের বন্ধন অন্য সব জাগতিক সম্পর্ক (গোত্র, পরিবার, রক্ত) থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী।

৪. ঐকান্তিক প্রচেষ্টার সঙ্গে আল্লাহর ওপর ভরসা

হিজরত মোটেই বিশৃঙ্খল ছিল না। ওমর (রা.)-এর পরিকল্পনা, কাফেলাবদ্ধ হয়ে যাত্রা এবং কৌশল অবলম্বন—সবই প্রমাণ করে যে আল্লাহর ওপর নির্ভরতার পাশাপাশি মানবীয় প্রচেষ্টা ও সুচিন্তিত পরিকল্পনা গ্রহণ করাও আবশ্যক।

আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–র হিজরত মদিনায় হলো যে কারণে২৯ জুন ২০২৫৫. আল্লাহর দয়ার বিশালতা

এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ফিতনা ও দুর্বলতা মানুষের জীবনে আসতে পারে। কিন্তু যখন তারা মক্কায় বন্দী হয়ে নিজেদের পাপী মনে করছিলেন, তখন আল্লাহ তাআলা এই আয়াতটি নাজিল করে আশার দরজা খুলে দেন, ‘বলো, “হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ (পাপ করেছ), তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করে দেন।”’ (সুরা জুমার, আয়াত: ৫৩)

এই আয়াতটি ছিল তাঁদের জন্য এক ঐশী ক্ষমা ও নতুন সুযোগের বার্তা।

হিজরত কেবল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়; এটি একটি অক্ষয়–দর্শন—যেখানে ইমান, ধৈর্য এবং আত্মত্যাগের সমন্বয়ে একটি আদর্শ সমাজ গঠনের বীজ নিহিত ছিল। এই দর্শনই মুসলমানদের নতুন এক দিগন্তে পৌঁছে দেয়।

আরও পড়ুনআবিসিনিয়ায় নারী সাহাবিদের দ্বিতীয় হিজরত১৪ নভেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ