‘ম্যাচটা আমি একা হারিয়ে দিয়েছি, সত্যি কথা’—দায় নিলেন নাজমুল
Published: 23rd, April 2025 GMT
নাজমুল হোসেন টিকে থেকে ভালো কিছু করবেন, এমন আশা নিয়েই সিলেট টেস্টের চতুর্থ দিনটা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু দিনের দ্বিতীয় বলে গিয়েই কিনা বাংলাদেশ অধিনায়ক আউট ফাঁদে পা দিয়ে, ব্লেসিং মুজারাবানির বাউন্সারে অবিবেচকের মতো শট খেলে।
এই আউটেই যেন বদলে গেল সব। বাংলাদেশ আর খুব বেশি দূর যেতে পারেনি। ৪ উইকেটে ১৯৪ রান নিয়ে দিন শুরু করা দলটি অলআউট ২৫৫ রানে। তাতে জিম্বাবুয়েকে নাজমুলরা দিতে পারেন ১৭৪ রানের লক্ষ্য। ওই রান যথেষ্ট হয়নি, জিম্বাবুয়ে ম্যাচটি জিতে গেছে ৩ উইকেটে।
‘আজকের ম্যাচ নিয়ে যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ম্যাচটা আমি একা হারিয়ে দিয়েছি, সত্যি কথা। সকালে ওই আউটটাতে আমার মনে হয় পুরো খেলাটা নষ্ট হয়ে গেছে।নাজমুল হোসেন, অধিনায়ক, বাংলাদেশতাঁর আউটে যে ম্যাচটা পুরোপুরি জিম্বাবুয়ের দিকে হেলে পড়ে, ম্যাচ শেষে সেটি স্বীকার করে নিতে একটুও ইতস্তত করেননি নাজমুল। হারের দায় কাঁধে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘আজকের ম্যাচ নিয়ে যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ম্যাচটা আমি একা হারিয়ে দিয়েছি, সত্যি কথা। সকালে ওই আউটটাতে আমার মনে হয় পুরো খেলাটা নষ্ট হয়ে গেছে। ওখানে যদি একটা ৫০-৬০ রানের জুটি হতো, তাহলে হয়তো ২২০ বা এর বেশি রান হলে কিন্তু আমরা ভালো অবস্থানে থাকতাম। (হারের) পুরো দায়ভার আমি নিতে চাই। খুব বাজে সময়ে আউট হয়েছি।’
ম্যাচশেষে কথা বলছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আমার আউটটাতে আমাদের পুরো খেলাটা নষ্ট হয়ে গেছে: নাজমুল
২০১৮ সালে সিলেটে বাংলাদেশ টেস্ট হেরেছিল ১৫১ রানে। সাত বছর পর আবার একই মঞ্চে ৩ উইকেটে হারল বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে হতশ্রী পারফরম্যান্স। বোলিংয়ে করতে পারল লড়াই। বারবার ব্যাকফুটে গিয়েও বাংলাদেশ আর পারেনি ম্যাচটা বাঁচাতে। জিম্বাবুয়ে ধ্রুপদী পারফরম্যান্সে বাংলাদেশকে উড়িয়ে দুই ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেছে ১-০ ব্যবধানে।
বাংলাদেশ ১১২ রানের লিড নিয়ে বুধবার চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করেছিল। দলের লক্ষ্য ছিল লিড অন্তত ৩০০ রানে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু ৬১ রান করেই বাংলাদেশ আজ হারায় ৬ উইকেট। দিনের দ্বিতীয় বলে নাজমুল হোসেন শান্ত বাজে শট খেলে আউট হন। তার মতে, ওই শটটাই ম্যাচের ভাগ্য লিখে দেয়। ম্যাচ হারের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে শান্ত নানা প্রশ্নের উত্তর দেন। তার কথা শুনেছে রাইজিংবিডিও—
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই হারটা কতোটুকু হতাশার। কোথায় বাংলাদেশ হেরে গেল?
নাজমুল হোসেন শান্ত: অবশ্যই হতাশার। ওভারঅল পুরো ম্যাচটা যদি বিশ্লেষণ করি, আমরা খুব একটা ভালো ক্রিকেট খেলিনি। যার কারণেই ম্যাচ হারা। অতিরিক্ত হতাশার এটা আসলে বলবো না। একটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছিল। আপসেট। ভালো করিনি। এতোটুকুই।
আরো পড়ুন:
সাকিব, তাইজুলের পর মিরাজ
সিলেট, জিম্বাবুয়ে ‘ভূত’ ও ‘বিটিভি যুগের’ বাংলাদেশ
দিনের দ্বিতীয় বলে আপনার আউটা কী ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিয়েছে?
নাজমুল হোসেন শান্ত: আমার কাছে তাই মনে হয়। আমার আউটটা পুরো খেলাটাকে নষ্ট করে দিয়েছে। আমার মনে হয় ওই ছন্দটা ওরা পাওয়াতে আমরা খেলাটা হেরে গেছি।
তারপরও শেষ দিকে বোলিংয়ে কিছুটা লড়াই হয়েছিল?
নাজমুল হোসেন শান্ত: ওখানে মিরাজ ও তাইজুল ভাই অসম্ভব ভালো বোলিং করেছেন। বোর্ডে এরকম রান থাকার পরও ওরা যেভাবে চেষ্টা করেছে সেটাকে ক্রেডিট দিতে হবে। আমার কাছে মনে হয় বোর্ডে পর্যাপ্ত রান ছিল না।
জিম্বাবুয়ে শেষ দশ ম্যাচে জেতেনি। র্যাংকিংয়ে জিম্বাবুয়ে পিছিয়ে। ওদের বিপক্ষে এই হারটা কি অন্য হারের কষ্ট থেকে বেশি?
নাজমুল হোসেন শান্ত: বেশি বলবো না। যে কোনো ম্যাচ হারলেই খারাপ লাগে। অবশ্যই আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারিনি। আমরা বিশ্বাস করি আমরা এর থেকেও ভালো খেলার মতো দল। এজন্য হতাশ। অনেক বেশি হতাশ এই ম্যাচটা হেরে বিষয়টা এরকম না। নরম্যালি ম্যাচ হারলে যেরকম খারাপ লাগে আজকে তেমনই লাগছে।
সিলেটে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হলো। স্বাগতিক সুবিধা আমরা নেইনি। সামনে চট্টগ্রামে ম্যাচ। চট্টগ্রামেও কী এই ধরণের উইকেটে খেলবেন নাকি পুরো স্বাগতিক সুবিধা নেবে বাংলাদেশ?
নাজমুল হোসেন শান্ত: আমার মনে এরকম স্পোর্টিং উইকেটে খেলা উচিত। উইকেট খুবই ভালো ছিল। ব্যাটসম্যানদের জন্য যেরকম সুবিধা ছিল। বোলারদের জন্যও টুকটাক সুবিধা ছিল। এখান থেকে আসলে পেছনে তাকানোর প্রয়োজন নেই। সামনের ম্যাচে এ ধরনের উইকেট থাকা উচিত। সামনের ম্যাচে এ ধরনের স্পোর্টিং উইকেটে খেলা উচিত।
আপনার আউটটা নিয়েই যদি আবার জিজ্ঞেস করি। তখন উইকেটে গিয়ে এভাবে শট খেলার প্রয়োজন কেন হলো? সময় নেওয়া যেত না নাকি?
নাজমুল হোসেন শান্ত: আমার নরম্যালি রানের জন্য চিন্তা থাকে। স্কোরিং অপোরচুনিটির চিন্তা থাকে। যেটা আউট হয়েছে আমার কাছে মনে হয়েছে আমি সময় নিতে পারতাম। আরেকটু সময় নিতে পারতাম। যেটা আপনি বললেন দিনের দ্বিতীয় বল ছিল। আমারও মনে হয় আরেকটু সময় নিলে বেটার হতো। এই শটটা আমি খেলি। পাশাপাশি এটাও সত্য। পাশাপাশি দলের যে পরিস্থিতি ছিল আমি টাইম নিলেও পারতাম।
বাকি ব্যাটসম্যানদের কোথায় সমস্যা হচ্ছে?
নাজমুল হোসেন শান্ত: ব্যাটিং দেখেন আমরা খুবই সফট ডিসমিসাল সবগুলোতে। আমার মনে হয় না আমরা খুব ভালো বলে উইকেট দিয়ে এসেছি। স্কিলের থেকে মেন্টালি অনেক ব্যর্থতা থাকতে পারে। সবাই তার নিজের আউট নিয়ে বলতে পারবে। ব্যাটসম্যানদের আরো দায়িত্ববোধ বাড়ানো উচিত। বিশেষ করে যারা সেট হয়ে আউট হচ্ছে।
এখান থেকে আসলে ঘুরে দাঁড়ানো কিভাবে সম্ভব?
নাজমুল হোসেন শান্ত: পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে অবশ্যই অনুপ্রাণিত হতে হবে। আবার শুধু অনুপ্রাণিত হয়ে কিছু হয় না। যে জায়গায় ভুলে করেছি সেগুলো শুধরে নিতে হয়। ভুল যেন না হয় সেগুলোতে কাজ করতে হয়। আজকের ম্যাচ পুরো আমি একা হারিয়েছি। সকালে ওই আউটটাতে আমাদের পুরো খেলাটা নষ্ট হয়ে গেছে। ওখানে যদি আজ ৫০-৬০ রানের জুটি হতো তাহলে ২২০ কিংবা তার বেশি রান হলে কিন্তু আমরা ভালো অবস্থানে থাকতাম। এই ম্যাচে আমি আসলে সবার দিকে যেতে চাই না। পুরো দায়ভারটা আমি নিতে চাই। খুব ভালো সময়ে আউট হয়েছি।
সিলেট/ইয়াসিন/আমিনুল