পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা বিএনপির নবনির্বাচিত সভাপতি আবদুল মান্নানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে জেলা বিএনপি। বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসরদের থেকে অভিনন্দন গ্রহণের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগ তাঁকে এ শোকজ করা হয়।

আজ বুধবার দুপুরে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহিরুল ইসলাম ও সদস্যসচিব ফরহাদ হোসেন স্বাক্ষরিত শোকজের চিঠি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ফরহাদ হোসেন বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। চিঠি পাওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিএনপি নেতা আবদুল মান্নানকে এ ব্যাপারে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

শোকজের চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনি বোদা উপজেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের দ্বারা আপনাকে অভিনন্দিত করার সম্মিলিত ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় দলের ভাবমূর্তি ভীষণভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে, যা দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থী। এহেন শৃঙ্খলাপরিপন্থী কার্যকলাপের জন্য কেন আপনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা পত্র প্রাপ্তির ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জবাব প্রদানের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৬ বছর পর গত শনিবার বোদা উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে আবদুল মান্নান সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি বোদার ময়দানদীঘি ডিগ্রি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। গত সোমবার সন্ধ্যায় বোদা উপজেলা শহরের ফ্রেন্ডস ক্লাবে বসেন আবদুল মান্নান। তিনি ওই ক্লাবের বর্তমান সভাপতি। এ সময় উপজেলা বিএনপির সভাপতি হওয়ায় ক্লাবের সদস্যরা তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এ সময় ওই ক্লাবের সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলমও তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এসব ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। বিষয়টি জানতে পেরে তাঁকে শোকজ করে জেলা বিএনপি।

জানতে চাইলে বিএনপি নেতা আবদুল মান্নান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ১৯৮৩ সালে নবম শ্রেণির বন্ধুরা মিলে ফ্রেন্ডস ক্লাব করেছিলাম। সেখানে বন্ধুদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন দলের অনেকে আছেন। গত সোমবার সন্ধ্যায় আমি ক্লাবে বসলে অনেকেই আমার সঙ্গে কোলাকুলিসহ হাত মেলান। এ সময় সদস্যরা আমাকে ফুলও দেন। এখানে হয়তো অন্য দলেরও লোক ছিলেন। ওই ছবি কে নাকি ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছেন। কেউ এডিট করেও ছাড়তে পারেন।’ তিনি বলেন, ইতিমধ্যে শোকজের চিঠিটি তিনি হাতে পেয়েছেন। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ফরহাদ হোসেন বলেন, তাঁর এমন কর্মকাণ্ডে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়েছে। এ জন্য এই নোটিশ করা হয়েছে। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সশরীর লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ ল ম ন ন ন র সদস য ব এনপ র ফ সব ক উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

কাশ্মীরে হামলা নিয়ে মন্তব্য করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আক্রমণের শিকার সিপিআইএমের মহম্মদ সেলিম

কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ভারতজুড়ে প্রায় সব রাজনৈতিক দলের নেতারা আরও জাতীয়তাবাদী ও শক্তিশালী নিরাপত্তাব্যবস্থার দাবি তুলেছেন। এর মধ্যে খানিকটা স্রোতের বিপরীতে হাঁটলেন পশ্চিমবঙ্গ সিপিআইএমের (কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া-মার্ক্সবাদী) সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি সাধারণ মানুষকে সাবধান করেছেন, যাতে এই ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে কোনো পক্ষ সাম্প্রদায়িক উসকানি ও বিভাজন বাড়াতে না পারে। কাশ্মীরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতে অনেকটা জাতীয়তাবাদের সুনামি তৈরির মধ্যে তাঁর এই মন্তব্যকে ভালোভাবে দেখেননি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা। মহম্মদ সেলিমের তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, বিশেষত ফেসবুকে।

বুধবার দুপুরে সিপিআইএমের প্রচার বিভাগ ফেসবুকে রাজ্য সম্পাদকের একটি ছবি দিয়ে তাঁর একটি মন্তব্য প্রকাশ করে। সেখানে মহম্মদ সেলিম বলছেন, ‘কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল করে বিজেপি সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছিল, তাতে সন্ত্রাসবাদকে আরও উসকে দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যটকদের ওপর এই হামলা ঘিরে সারা দেশে সাম্প্রদায়িক উসকানি ছড়ানো ও বিভাজনের চেষ্টা হবে। অমরনাথ যাত্রার প্রাক্কালে হামলা বলে দেখিয়ে নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের ওপরে হামলা বলে প্রচার করা হবে। আমরা কাশ্মীরের ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি এবং কোনোরকম সাম্প্রদায়িক উসকানিতে সাড়া না দেওয়ার আবেদন করছি।’

সিপিআইএমের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ পলিটব্যুরোও একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে, কিন্তু এখানেও তারা এই ধরনের ‘সাহসী’ মন্তব্য করেনি বলে মনে করছেন সিপিআইএম দলের সদস্যদের একাংশ। বিবৃতিতে ভুক্তভোগীদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে পলিটব্যুরো বলেছে, ‘এই জঘন্য অপরাধের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে। এই নৃশংস হামলার জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে কেন্দ্রীয় সরকারকে সর্বতোভাবে চেষ্টা করতে হবে। অপরাধকারীরা জাতির ও কাশ্মীরের জনগণের শত্রু। জনাকীর্ণ পর্যটন স্থানগুলোতে নিরাপত্তার অভাবসহ হামলার সমস্ত বিষয় নিয়ে তদন্ত চালানো কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব। চরমপন্থী মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে এই ট্র্যাজেডির মুহূর্তে সিপিআই-মার্ক্সবাদী ভারতের জনগণের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ।’

অর্থাৎ যে কথা মহম্মদ সেলিম বলেছেন, এই ঘটনার জেরে ভারতে আগামী দিনে সাম্প্রদায়িকতা ও বিভাজনের রাজনীতি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে, সেই ধরনের কোনো মন্তব্য করেনি দলের শীর্ষ পর্ষদ।

মহম্মদ সেলিমের মন্তব্যের জন্য তাঁকে প্রবল আক্রমণ করেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা। একজন লিখেছেন, ‘সিপিআইএমের আজ এই অবস্থা আপনাদের এই মতামতের জন্যই।’ সিপিআইএমের প্রচার বিভাগের ওই ফেসবকু পোস্টে রাত পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার মন্তব্য করা হয়েছে এবং এর প্রায় প্রতিটিই মহম্মদ সেলিমকে আক্রমণ করে। আরেক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘সেলিম বিষয়টিকে নিয়ে রাজনীতি করছেন, যা কাম্য নয়।’ ফেসবুকে সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদককে ব্যক্তিগত আক্রমণও করেছেন অনেকে।

তবে সিপিআইএম দলের সদস্যদের একাংশ মনে করছেন, এই মন্তব্যের প্রয়োজন ছিল। দক্ষিণ কলকাতার কসবায় সিপিআইএমের স্থানীয় কমিটির সাবেক সদস্য ও বর্তমানে পার্টির সাধারণ সদস্য কৌশিক রায় এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা বলে আমি যেটা মনে করি সেটা হলো “পপুলিস্ট” চিন্তাভাবনার বিরুদ্ধে গিয়ে পাল্টা ন্যারেটিভ (আখ্যান) আমরা দিতে পারছি না। মানুষ বাম রাজনীতি থেকে সব সময় অন্য কিছু শুনতে চান। অন্য একটা ন্যারেটিভ চান। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা মূলস্রোতের ন্যারেটিভই অনুমোদন করি এবং সেটাই বলি। এই যে রাজ্য সম্পাদক কথাটা বললেন যে, এই ঘটনাকে ব্যবহার করে কিছু সংগঠন সম্প্রদায়িক রাজনীতি করার চেষ্টা করবে, এটা একটা বিকল্প ন্যারেটিভ। কাশ্মীরের ঘটনার ফলে সাম্প্রদায়িক বিভাজন এবং মেরুকরণের রাজনীতি বাড়তে পারে, এটা একটা বাস্তব সত্য এবং বিকল্প ন্যারেটিভও, যেটা এই মুহূর্তে অন্য রাজনৈতিক দল বলছে না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের অনেক মানুষই সেটা মনে করেন। মূলস্রোতের বিরুদ্ধে গিয়ে আমাদের কথা বলাটা এই সময় খুব জরুরি।’

রাজ্য সম্পাদকের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে আগামী শুক্রবার (এপ্রিল ২৫) কাশ্মীরের সহিংসতা এবং সম্ভাব্য সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরোধিতায় পথে নামবে পশ্চিমবঙ্গ সিপিআইএম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ