নিরাপত্তাঝুঁকিতে জম্মু-কাশ্মীরগামী পর্যটকদের ৯০ শতাংশ বুকিং বাতিল
Published: 23rd, April 2025 GMT
ভারতের জম্মু–কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার পর নিরাপত্তা–শঙ্কায় ভুগছেন পর্যটকেরা। দিল্লির একাধিক ট্রাভেল এজেন্সির বরাত দিয়ে দেশটির বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, জম্মু-কাশ্মীরগামী প্রায় ৯০ শতাংশ বুকিং বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।
কনাট প্লেসের আউটার সার্কেলে অবস্থিত শঙ্কর মার্কেটের সোয়ান ট্রাভেলার্স নামের একটি ট্রাভেল সংস্থার কর্ণধার গৌরব রাঠি জানান, তাঁদের প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ২৫ জন পর্যটক জম্মু ও কাশ্মীরে ভ্রমণ বাতিলের অনুরোধ করেছেন।
গৌরব আরও জানান, অধিকাংশ পর্যটক আগামী মাসে কাশ্মীরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু এখন তাঁরা বুকিং বাতিলের অনুরোধ করছেন।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠী পর্যটকদের ওপর গুলি চালায়। হামলায় ঠিক কতজন নিহত হয়েছেন, তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। তবে নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছে, নিহত ব্যক্তির সংখ্যা অন্তত ২৬।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কাশ্মিরে হামলার সময় বেছে বেছে পুরুষদের গুলি চালানো হয়
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় গতকাল মঙ্গলবার পর্যটকদের ওপর হামলা করে বন্দুকধারীরা। এতে অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছেন এবং আরো বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা বলছেন, বন্দুকধারীরা হামলা চালানোর সময় নারী-পুরুষদের আলাদা করে বেছে বেছে পুরুষদের লক্ষ্য করে গুলি করেছিল। খবর বিবিসির।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস আজ বুধবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভয়াবহ এই হামলার দায় স্বীকার করেছে স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)।
আরো পড়ুন:
কাশ্মিরে হামলার দায় স্বীকার করল টিআরএফ
জালিয়াতির মামলা, মহেশ বাবুকে তলব
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, মাত্র কয়েক মিনিটের তাণ্ডবের নেপথ্যে ছিল মাত্র চার থেকে ছ’জন জঙ্গি। সবার হাতে ছিল একে-৪৭।
হামলার ঘটনায় কেউ স্বামী হারিয়েছেন, কেউ আবার পুত্র। পরিজনদের হারিয়ে শোকে পাথর অনেকেই। যাঁরা প্রাণ বাঁচিয়ে ঘটনাস্থল থেকে ফিরতে পেরেছেন তাদের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। আহতদের মধ্যে অনেকে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে একজন নারী বলেছেন, “জঙ্গিরা, আমি বলতে পারছি না ঠিক কতজন, একটি খোলা ছোট তৃণভূমির কাছের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে গুলি চালাতে শুরু করে।”
তিনি বলেন, “স্পষ্টতই তারা মহিলাদের ছাড় দিচ্ছিলেন এবং পুরুষদের দিকে গুলি চালাতে থাকল, কখনও একটি একটি করে, আবার কখনো একাধারে গুলি চলছিল ঠিক ঝড়ের মতো।”
ভারতীয় সংবাদপত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পল্লবী রায় নামে আরেক নারীকে চিহ্নিত করেছে। যার স্বামী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতদের মধ্যে ছিলেন। তিনিও বলেছেন যে, পুরুষদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।
হিন্দুস্তান টাইমসের কাছে আশাবরী নামে এক তরুণী বলেন, “আমরা পাঁচ জনের একটি দল ছিলাম, আমার বাবা-মা সহ। আমরা পাহেলগাঁওয়ের কাছে বইসরান উপত্যকায় ছিলাম এবং যখন গুলি শুরু হয়েছিল তখন মিনি সুইজারল্যান্ড নামক একটি স্থানে ছিলাম। আমরা তৎক্ষণাৎ কাছের একটি তাঁবুতে সুরক্ষার জন্য ছুটে গেলাম। আরও ছয় থেকে সাতজন (পর্যটক)ও সেখানে উপস্থিত হলেন। গুলিবর্ষণের হাত থেকে রক্ষা পেতে আমরা সবাই মাটিতে শুয়ে পড়লাম। আমরা ভেবেছিলাম সন্ত্রাসী এবং নিরাপত্তা কর্মীদের মধ্যে গুলিবর্ষণ হয়েছে। কিন্তু তারপর জঙ্গিরা আমাদের তাঁবুতে এসে আমার বাবাকে বাইরে আসতে বলল। বাবাকে কিছু একটা পড়তে দিয়েছিল জঙ্গিরা। তিনি তা পড়তে না পারায় তিনটি গুলি করে।”
তার বাবার হত্যার পর তার চাচার দিকে এগোয় জঙ্গিরা। আশাবরী বলছেন, ‘আমার চাচা আমার পাশেই ছিলেন। সন্ত্রাসীরা তখন তাকে লক্ষ্য করে চার থেকে পাঁচটি গুলি চালায়। তারা ঘটনাস্থলে থাকা আরও কয়েকজনকে গুলি করে। সাহায্য করার জন্য কেউ ছিল না।’
কাশ্মির দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের কেন্দ্রস্থল, কিন্তু পর্যটকদের উপর আক্রমণের ঘটনা বিরল।
এদিকে, হামলার ঘটনার পর পহেলগাঁও উপত্যকায় নিরাপত্তা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জম্মু-কাশ্মিরের অন্যান্য জায়গাও নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার রাতেই কাশ্মিরে পৌঁছেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার সৌদি আরব সফরসূচি কাঁটছাঁট করে বুধবার সকালে দিল্লি ফিরে এসেছেন।
এখন পর্যন্ত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা যায়নি। তাদের সন্ধানে বিভিন্ন জায়গায় চিরুনি তল্লাশি শুরু করেছে নিরাপত্তাবাহিনী।
ঢাকা/ফিরোজ