টাকা পাচারকারীদের ধরা খুব মুশকিল: দুদক কমিশনার
Published: 23rd, April 2025 GMT
টাকা পাচারকারীদের ধরা খুব মুশকিল বলে উল্লেখ করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেছেন, টাকা পাচারকারীদের যদি কোনোভাবে ধরতে পারেন, তাহলে ছাড় দেবেন না। আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেন, ‘পাচারকারীরা হচ্ছে শয়তানের মতো। শয়তান শিরা–উপশিরায় যায়, তাকে দেখা যায় না। শয়তানের কর্মকাণ্ড, দুর্ভোগ মানুষ ভোগ করে। পাচারকারীদের জন্য আমরা দুর্ভোগ ভোগ করছি। পাচারকারীকে যদি আমার কোনো না কোনোভাবে ধরতে পারি, আমরা ছাড় দেব না।’
দুদকের এই কমিশনার বলেন, যাঁরা দুর্নীতিগ্রস্ত, অর্থ পাচারকারী, তাঁরা অবৈধভাবে নেওয়া টাকা হুন্ডি করে বাইরে পাঠিয়ে দেন। আর রেমিট্যান্সের মাধ্যমে দেশে আনান। পরে তিনি রেমিট্যান্সযোদ্ধা হয়ে যান।
টিউলিপ সিদ্দিক গণমাধ্যমে যেসব কথা বলেছেন, সেগুলোর জবাব ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী। তিনি বলেন, ‘জবাব হলো এই যে বাংলাদেশের আদালতে এসে তিনি নিজেকে ডিফেন্ড (অভিযোগ খণ্ডন ও নিজের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরবেন) করবেন।’ কোনো কারণে তিনি না এলে কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আদালতে বিচার চলবে।
দুদকের পক্ষ থেকে টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে দুদকের এই কমিশনার বলেন, ‘না না, কেন যোগাযোগ করা হবে, আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগ কীভাবে করব? তার নির্ধারিত ঠিকানাতে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তার তো ঠিকানা আছে একটা। ইতিমধ্যে সেখানে নোটিশ গেছে। কেউ রিসিভ (গ্রহণ) করেছে কি না, তা জানি না। দুদক বিচারপ্রক্রিয়া কোর্টে দিয়ে দেবে। কোর্ট বিচার করবে।’
অর্থ পাচার রোধে দুদকের টাস্কফোর্স কী করছে জানতে চাইলে মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেন, ‘নিবিড়ভাবে যোগাযোগ চলছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। দুদকের একার পক্ষে অর্থ ফেরত আনা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থা এর সঙ্গে যুক্ত। বিভিন্ন এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।’
আদালতে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আদালতের স্বাধীনতা আছে। আদালত বিচার করবেন, রায় দেবেন। সেই রায়ে যাঁরা সংক্ষুব্ধ হবেন, তাঁরা আপিল করবেন।’
দুদক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রসঙ্গে দুদকের এই কমিশনার বলেন, ‘আমাদের কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কোনো স্মেল (গন্ধ) যদি পাই, তাহলে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। আগে আমরা ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশনে (শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা) যাচ্ছি। ডেফিনেটলি তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে।’
দুদকের ‘ক্যামেরা’ যত দূর সম্ভব বিস্তার করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘কর্মকর্তাদের আমরা রিশাফল (রদবদল) করছি, মফস্সলে যারা চৌকস কর্মকর্তা আছে, তাদের হেডকোয়ার্টারে (প্রধান কার্যালয়) আনছি। হেডকোয়ার্টারে যারা ঝিমুচ্ছে, তাদেরকে মফস্সলে পাঠাচ্ছি। যাদের কাজে শিথিলতা দেখছি, তাদেরকে মফস্সলে পাঠানো হচ্ছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত
এছাড়াও পড়ুন:
ডলারের দরে নমনীয়তা দেখায়নি সরকার, আইএমএফের সঙ্গে আজ আবার বৈঠক
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ ঋণের কিস্তি ছাড়ে কোনো সুরাহা ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে– এ মুহূর্তে ডলারের দর বাজারভিত্তিকের ক্ষেত্রে নমনীয় করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার আরেক দফা বৈঠক হবে। আজও ইতিবাচক কোনো বার্তা না এলে আগামী ১৯ মে আরেকটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির চূড়ান্ত সুরাহা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের আগে শর্তের অগ্রগতি যাচাইয়ে গত মাসে একটি মিশন ঢাকা সফর করে। তবে কোনো সমঝোতা ছাড়াই তারা ঢাকা ছাড়ে। মূলত বাংলাদেশ এখন বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে নমনীয়তা দেখাতে চাচ্ছে না। এ কারণে আলোচনা গড়ায় ওয়াশিংটনে। গত মাসের শেষ দিকে আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকের ফাঁকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সাইডলাইনে আলাদা বৈঠক হয়। কিন্তু ঢাকা বা ওয়াশিংটন– কোথাও আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচি থেকে পরবর্তী দুই কিস্তির বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি দুই পক্ষ। গতকাল এ নিয়ে আবার ভার্চুয়াল সভা হয়। সোমবারের এ সভায় বাংলাদেশের পক্ষে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, অর্থ সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, অতিরিক্ত সচিব ড. জিয়াউল আবেদীন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুই ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমান ও কবির আহাম্মদ যুক্ত ছিলেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ এ মুহূর্তে ডলারের দরে নমনীয়তা না দেখানোর নীতিগত অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তি হিসেবে বলা হয়, বর্তমান ডলারের দর বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ কারণে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে দরের তেমন পার্থক্য নেই। আবার বৈধ পথে রেমিট্যান্সে প্রায় ২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আছে। ডলারের দর দীর্ঘদিন ধরে ১২২ টাকায় স্থিতিশীল থাকার পরও এভাবে রেমিট্যান্স বাড়ছে। এ মুহূর্তে ডলারের দরে সামান্য নমনীয়তা দেখালেই দর বাড়তে শুরু করবে। ডলার বাজারে আবার অস্থিরতা শুরু হবে। ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকা মূল্যস্ফীতি আবার বেড়ে যাবে।
এদিকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে বাজেট সহায়তা ছাড় নিয়ে আলোচনার সময়ও আইএমএফের কিস্তির বিষয়ে সমাধানের তাগিদ দেয় সংস্থাটি। গত রোববার ইতালির মিলানে এডিবির বার্ষিক সভায় সংস্থার দক্ষিণ, মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ইংমিং ইয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, বাজেট সহায়তার বিষয়ে আলোচনার সময় এডিবি আইএমএফের বিষয় জিজ্ঞাসা করেছিল। আমরা তাদের বলেছি, আইএমএফের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, চট করে আইএমএফের কঠিন শর্ত মেনে নিয়ে কিছুই করা হবে না। মুদ্রা বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়ে শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের মতো করতে চাই না। আইএমএফের কিস্তি ছাড়াই অর্থনীতি স্থিতিশীল হয়েছে। আমরা যদি আইএমএফ ও এডিবির সহায়তা নাও পাই, তাও নিজেদের মতো করে বাস্তবসম্মত বাজেট দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী দু’জনেই সম্প্রতি বলেছেন, প্রয়োজনে আইএমএফের ঋণ নেওয়া হবে না। তবে সব শর্ত মানা হবে না।
আর্থিক সংকট সামাল দিতে ২০২২ সাল থেকে কয়েক দফা আলোচনা শেষে আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। ওই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের জুনে পাওয়া গেছে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার। তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। এখন বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার। অন্তর্বর্তী সরকার অন্য সব শর্ত মেনে নিলেও বৈদেশিক মুদ্রা বাজারভিত্তিকের শর্ত নিয়ে দরকষাকষি করে আসছে।