শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নে কমিটি করা হবে: উপদ
Published: 23rd, April 2025 GMT
শ্রম সংস্কার কমিশনের যেসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেন৷ সুপারিশ বাস্তবায়নে কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) সচিবালয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন বিষয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন৷
ডিসেম্বরের মধ্যে কি সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন হতে পারে, জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “আমরা তো বসে থাকব না৷ আগামীকাল থেকেই কাজ শুরু করব৷ আমরা যদি ডিসেম্বরকে ধরে এগোই, তাহলে তো নভেম্বর থেকে শুরু করা হবে৷ যেসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে৷”
তিনি বলেন, “শ্রম মন্ত্রণালয়ে আমরা একটা ইন্টারনাল কমিটি করব৷ এই কমিটি সবকিছু বিবেচনা করে কাজ করবে৷ আমাদের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে যতটুকু বাস্তবায়ন করা যায়, তার সবই করা হবে৷”
প্রধান উপদেষ্টা কী বললেন, তার জন্য অপেক্ষা না করে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট নিয়ে কাজ করা হবে বলেও জানান শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা।
শ্রমিকদের মজুরি বোর্ডের প্রয়োজন আছে, জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমি শুনেছি, ট্যানারি মালিকরা অনেকের বেতন বাড়িয়েছেন আবার অনেকের বেতন বাড়াননি৷ পুরো বিষয়টা নিয়ে আমরা কাজ করব৷
এ সময় শ্রম সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, গণমাধ্যমের ভূমিকা ছাড়া এ প্রতিবেদন তৈরি করা সম্ভব ছিল না৷ বিভিন্ন পেশার মানুষ মিলে আমরা কাজটি করেছি৷ আমরা চেষ্টা করেছি রিপোর্টটি এমনভাবে সাজাতে যেন সংক্ষেপে সবাই বুঝতে পারেন৷ আমরা ফাইলবন্দি কোনো প্রতিবেদন করতে চাই না৷ এটি বাস্তবায়নের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে চাই৷
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতে হলে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, জানিয়ে তিনি বেলেন, আমরা চাই, শ্রমিক হিসেবে তাদের স্বীকৃতি থাকবে৷ একজন মানুষের মানসম্মত জীবনযাপনের জন্য যে বেতন প্রয়োজন, তার জন্য পৃথক মজুরি বোর্ড থাকা জরুরি৷
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট র জন য ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
ডলারের দরে নমনীয়তা দেখায়নি সরকার, আইএমএফের সঙ্গে আজ আবার বৈঠক
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ ঋণের কিস্তি ছাড়ে কোনো সুরাহা ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে– এ মুহূর্তে ডলারের দর বাজারভিত্তিকের ক্ষেত্রে নমনীয় করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার আরেক দফা বৈঠক হবে। আজও ইতিবাচক কোনো বার্তা না এলে আগামী ১৯ মে আরেকটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির চূড়ান্ত সুরাহা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের আগে শর্তের অগ্রগতি যাচাইয়ে গত মাসে একটি মিশন ঢাকা সফর করে। তবে কোনো সমঝোতা ছাড়াই তারা ঢাকা ছাড়ে। মূলত বাংলাদেশ এখন বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে নমনীয়তা দেখাতে চাচ্ছে না। এ কারণে আলোচনা গড়ায় ওয়াশিংটনে। গত মাসের শেষ দিকে আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকের ফাঁকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সাইডলাইনে আলাদা বৈঠক হয়। কিন্তু ঢাকা বা ওয়াশিংটন– কোথাও আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচি থেকে পরবর্তী দুই কিস্তির বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি দুই পক্ষ। গতকাল এ নিয়ে আবার ভার্চুয়াল সভা হয়। সোমবারের এ সভায় বাংলাদেশের পক্ষে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, অর্থ সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, অতিরিক্ত সচিব ড. জিয়াউল আবেদীন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুই ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমান ও কবির আহাম্মদ যুক্ত ছিলেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ এ মুহূর্তে ডলারের দরে নমনীয়তা না দেখানোর নীতিগত অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তি হিসেবে বলা হয়, বর্তমান ডলারের দর বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ কারণে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে দরের তেমন পার্থক্য নেই। আবার বৈধ পথে রেমিট্যান্সে প্রায় ২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আছে। ডলারের দর দীর্ঘদিন ধরে ১২২ টাকায় স্থিতিশীল থাকার পরও এভাবে রেমিট্যান্স বাড়ছে। এ মুহূর্তে ডলারের দরে সামান্য নমনীয়তা দেখালেই দর বাড়তে শুরু করবে। ডলার বাজারে আবার অস্থিরতা শুরু হবে। ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকা মূল্যস্ফীতি আবার বেড়ে যাবে।
এদিকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে বাজেট সহায়তা ছাড় নিয়ে আলোচনার সময়ও আইএমএফের কিস্তির বিষয়ে সমাধানের তাগিদ দেয় সংস্থাটি। গত রোববার ইতালির মিলানে এডিবির বার্ষিক সভায় সংস্থার দক্ষিণ, মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ইংমিং ইয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, বাজেট সহায়তার বিষয়ে আলোচনার সময় এডিবি আইএমএফের বিষয় জিজ্ঞাসা করেছিল। আমরা তাদের বলেছি, আইএমএফের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, চট করে আইএমএফের কঠিন শর্ত মেনে নিয়ে কিছুই করা হবে না। মুদ্রা বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়ে শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের মতো করতে চাই না। আইএমএফের কিস্তি ছাড়াই অর্থনীতি স্থিতিশীল হয়েছে। আমরা যদি আইএমএফ ও এডিবির সহায়তা নাও পাই, তাও নিজেদের মতো করে বাস্তবসম্মত বাজেট দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী দু’জনেই সম্প্রতি বলেছেন, প্রয়োজনে আইএমএফের ঋণ নেওয়া হবে না। তবে সব শর্ত মানা হবে না।
আর্থিক সংকট সামাল দিতে ২০২২ সাল থেকে কয়েক দফা আলোচনা শেষে আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। ওই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের জুনে পাওয়া গেছে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার। তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। এখন বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার। অন্তর্বর্তী সরকার অন্য সব শর্ত মেনে নিলেও বৈদেশিক মুদ্রা বাজারভিত্তিকের শর্ত নিয়ে দরকষাকষি করে আসছে।