নিহত সাইফুলের বাবা বললেন, ছেলের লাশ দাফনের জায়গা নেই
Published: 23rd, April 2025 GMT
কুমিল্লা বুড়িচংয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত তিন তরুণ স্টেশনে স্টেশনে ঘুরে বোতলসহ পরিত্যক্ত বিভিন্ন জিনিসপত্র কুড়ত বলে জানিয়েছে কুমিল্লা রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি। আজ বুধবার বিকেল পর্যন্ত নিহতের একজনের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে রেলওয়ে পুলিশ। তাদের একজন হলেন সাইফুল ইসলাম (১৮)। তিনি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা সদরের বানিয়াপাড়া এলাকার মোখলেছুর রহমানের ছেলে। সন্তানের মরদেহ শনাক্তের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ছেলের লাশ দাফন করার মতো জায়গা নেই। তাই রেলওয়ে পুলিশকে বলেছি, লাশটি যেন সরকারিভাবে দাফন করা হয়।
কুমিল্লা রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ছেলের মরদেহের সামনে মোখলেছুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ৩ ছেলের মধ্যে সাইফুল সবার বড়। মঙ্গলবার দুপুরে বোতল কুড়াতে কসবা স্টেশনে যাওয়ার কথা বলে সে বাসা থেকে বের হয়। রাতেই ফেরার কথা ছিল। আজ সকালে একজন ভিডিওতে দুর্ঘটনায় নিহতদের মরদেহ দেখালে আমি স্টেশনে এসে মরদেহ শনাক্ত করি।’
মোখলেছুর আরও বলেন, ‘সাইফুলের সঙ্গে নিহত অন্য দুজনও স্টেশনে স্টেশনে বোতলসহ নানা পরিত্যক্ত জিনিসপত্র কুড়িয়ে বেড়াত। তাদের মধ্যে একজনকে তুহিন নামে চিনি। তবে, বাড়ি কই জানি না।’
দেবিদ্বারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোখলেছুর রহমান দীর্ঘ দিন ধরেই শহরে থাকেন। ভিটেমাটি না থাকায় স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে বসবাস করেন।
আজ বুধবার ভোরে বুড়িচং উপজেলার মাধবপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ট্রেনে কাটা পড়ে তিনজন নিহত হয়েছেন। সকাল ১০টার দিকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে রেলওয়ে পুলিশ। তাদের মধ্যে সাইফুল কুমিল্লা রেলস্টেশনে বোতল কুড়ানোর কাজ করতেন। তার মা-বাবা সেখানে পরিচ্ছন্নতা কাজের পাশাপাশি বোতল কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। নিহত অপর দুজনের মধ্যে একজনের নাম তুহিন (১৭) বলে জানা গেলেও আরেকজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তুহিন কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন রেলস্টেশনে বোতল কুড়ত। তবে বিস্তারিত জানতে পারেনি পুলিশ।
কুমিল্লা রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (উপ-পরিদর্শক) সোহেল মোল্লা সমকালকে বলেন, ৩ জন ভোরের দিকে সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিহত সাইফুল ছাড়া বাকি দুজনের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। বিস্তারিত পরিচয় না পেলে মরদেহ দাফনের জন্য আঞ্জুমানে দেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দিনাজপুরে সাপের কামড়ে সাপুড়ের মৃত্যু
দিনাজপুরের খানসামায় নিজের পোষা সাপের কামড়ে শাকিল ইসলাম (৩১) নামের এক সাপুড়ের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার খামারপাড়া ইউনিয়নের গারপাড়া পেশার মেম্বারপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত সাপুড়ে ওই এলাকার ফরমাজ আলীর বড় ছেলে।
এলাকাবাসী ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, শাকিল একজন মাহান (গুনিক)। পাশাপাশি বিভিন্ন সাপ নিয়ে খেলা দেখাতেন। রমজান মাসের কয়েকদিন আগে একটি গোমা (গোখরা) সাপ ধরে বাড়িতে নিয়ে আসেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তার পোষা সেই সাপটি কামড় দেয়।
প্রথমে শাকিল বিষয়টি কাউকে জানাননি, নিজে নিজে বিষ নামানোর চেষ্টা করেন। পরে পরিবারের লোকজন বিষয়টি জানতে পেরে অপর এক গুনিকের কাছে নিয়ে যান। সেই গুনিকও সাপের বিষ নামাতে পারেননি।
তবে, বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে দিনাজপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানে নেওয়ার পর দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, মৃত শাকিলকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নেওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা তার জীবন আসবে এমন বিশ্বাসে রাতে আবারও গুনিক ও ওঝা নিয়ে ঝাড়ফুঁক করেন। এ ঘটনা দেখতে এলাকায় উৎসুক জনতার ভিড় লাগে। অবশেষে আজ বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকাল ১০টায় তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
খামারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক চৌধুরী বলেন, “আমি শাকিলকে দীর্ঘদিন থেকে জানতাম মাহানগিরি (গুনিক) করে। আমি তার মাধ্যমে মৌমাছির চাকও কেটে নিয়েছিলাম। বিভিন্ন সময়ে তাকে সাপ নিয়ে খেলা করতে দেখা যেতো।”
এ বিষয়ে খানসামা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নজমূল হক বলেন, “সাপের কামড়ে একজন সাপুড়ে মারা গেছে, বিষয়টি জেনেছি।”
ঢাকা/মোসলেম/এস